চিন্তা করা ছাড়া আমার মস্তিষ্ক কি করে? …
চিন্তা করা ছাড়া আমার মস্তিষ্ক কি করে? …
এটা খুব ভালো প্রশ্ন হয়েছে। আমরা চিন্তা, ভাবনা, ইত্যাদি বিষয়ে মস্তিস্কের ব্যবহার জানি। কিন্তু মস্তিস্ক আর কি করে, সেটা জানি না।
বিজ্ঞানের ছাত্র এবং যারা কম্পিউটার যন্ত্রটি বোঝেন, তাদের জন্য বিষয়টি বোঝা সহজ হবে।
কখনো কি এমন হয়েছে? – আপনি খালি মনে করে টেবিলের উপর থেকে একটি (ভরা) কাপ উচু করলেন। আশেপাশে পানি ছিটকে পড়লো। অথবা, এমন হয়েছে? – ভরা মনে করে একটি (খালি) কাপ উচু করলেন। সেটা খুব দ্রুত মুখের কাছে এসে গেল।
এমন হবার কারন কি?
এমন হবার একমাত্র কারন – হিসাব। কাপটি খালি নাকি ভরা, কাপের ওজন কত, ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে আপনি একটি হিসাব করে, কাপটি উচু করেন। ভরা কাপকে খালি মনে করলে, আপনার সেই হিসাবটা ভুল হয়ে যায়। আর সেজন্যই এলেমেলো ঘটনা ঘটে।
এতক্ষণ হিসাব বিষয়টা বুঝেছেন। এবার বিজ্ঞানের ছাত্ররা বুঝবে, সেই হিসাবটা কেমন।
- তিন ফুট উচু একটি টেবিলের উপরে, পানি ভরা একটি স্থির কাপ আছে, যেটার ভর আনুমানিক ৩৫০ গ্রাম। সেই কাপটির উপরে কতটুকু বল প্রয়োগ করলে সেটা উত্ক্ষেপিত হয়ে অর্ধ-বৃত্তাকার পথে আরো দুই ফুট উপরে তোমার ঠোট পর্যন্ত পৌঁছাব? কাপটির সেই অর্ধ-বৃত্তাকার উত্ক্ষেপণ পথের কোন স্থানে কতটা মন্দন শুরু হলে, ঠোটের সামনে এসে কাপটি স্থির হয়ে যাবে?
উপরের এটাই হলো (পদার্থবিজ্ঞান) গতিবিদ্যার ভাষায়, টেবিলের থেকে কাপ উঠিয়ে ঠোটের সামনে আনার হিসাব। উপরের এই গণিত সমাধান করতে সর্বনিম্ন কতক্ষণ লাগবে? এক মিনিটে পারবেন? ৫ মিনিটে পরবেন? ১০ মিনিট?
টেবিলের উপর থেকে কাপটি তুলে মুখে নেবার আগে, আপনি কতক্ষণ ধরে হিসাব করেন?
- আপনার মস্তিস্ক এক সেকেন্ডের ১০ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যেই এই জটিল গণিত সমাধান করে ফেলে।
মানুষের মস্তিস্ক সুপার কম্পিউটারের চেয়ে লক্ষগুন শক্তিশালী।
শুধুমাত্র এক কাপ পানি খাওয়ার হিসাব দেখিয়ে উদাহরন দিয়েছি। আপনি সারাদিন কত জটিল হিসাবের কাজ করেন, সেটা কখনো চিন্তা করেছেন?
হাটা-হাটি, দৌড়-ঝাপ, সাইকেল চালানো, গাড়ী চালানো, ইত্যাদি কতখানি হিসাবের কাজ, সেটা কখনো ভেবেছেন? আপনার মস্তিক প্রতি মুহুর্তে, অতি দ্রুত জটিল হিসাব নিকাশ করে, আপনাকে চলমান রেখেছে। নইলে, এক পনির গ্লাস উচু করতেই ১০ মিনিট সময় লাগতো।
এতক্ষণ মস্তিস্কের হিসাব বুঝেছি ; এবার বুঝবো সফটওয়্যার।
কখনো কি এমন হয়েছে? – সফটওয়্যার মুছে যাবার কারনে, আপনার কম্পিউটারের কোন একটি যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। পরে সেই সফটওয়্যার ইনস্টল করার পরে, যন্ত্রটি আবার কাজ করা শুরু করেছে?
মানুষের দেহেরও ঠিক একই অবস্থা। আপনার প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ হলো যন্ত্র, আর আপনার মস্তিস্কে আছে সেটার সফটওয়্যার। মস্তিকের সেই সফটওয়্যার মুছে গেলে, সেই অঙ্গটা কাজ করা বন্ধ হয়ে যাবে।
আপনারা সবাই stroke চেনেন (ছবি দেখুন)। বাংলায় এটাকে বলে – মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ। এর ফলে আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে। Stroke এর রোগীর একটি সমস্যা প্রায়ই দেখা যায় – তাদের হাত, পা, ইত্যাদি অঙ্গ অকেজো হয়ে যায়।
লক্ষ্য করুন, তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কোন আঘাত পায়নি ; এমনিতেই অকেজো হয়ে গেছে। এটাই হলো সফটওয়্যারের সমস্যা। মস্তিকে অসুখের কারনে, সফটওয়্যার কাজ করছ না ; তাই অঙ্গ কাজ করছে না।
কি বুঝলেন?
চিন্তা-ভাবনা করা, স্মরণ রাখা, বুদ্ধি খাটানো ইত্যদি সবই মস্তিকের বাড়তি কাজ। মস্তিস্কের মুল কাজ হলো – সফটওয়্যার ও জটিল হিসাব। মস্তিস্ক আপনার পুরো দেহকে চলমান রাখে।