RE: আবেগ কমানোর জন্য আপনি আমাকে কী উপদেশ দেবেন?
আবেগ কমানোর জন্য আপনি আমাকে কী উপদেশ দেবেন?
আবেগ থাকা ভালো, কিন্তু বেশি মাত্রায় আবেগ থাকা এবং আবেগ প্রকাশ করা ভালো নয়। মাত্রাতিরিক্ত আবেগের কারণে বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন অনেকে। আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেকে অনেক ভুল করে ফেলেন যার ফলে পরবর্তীতে অনেক পস্তাতে হয়। যেসব মানুষ আবেগপ্রবণ হন তারা জীবনে অনেক বেশিমাত্রায় কষ্ট ভোগ করে থাকেন। আবেগপ্রবণ মানুষ যে কারো ওপর বেশি মাত্রায় বিশ্বাস করে ফেলেন খুব সহজেই। যখন এই বিশ্বাস ভাঙে তখন বিশ্বাসভাঙার কষ্টটা শুধুমাত্র আবেগপ্রবণ মানুষটিই ভোগ করে থাকেন।
আবেগ নিয়ন্ত্রণেঃ
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন
বেশি আবেগপ্রবণ মানুষ আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন না। তাই সব চাইতে প্রথমে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। এতে আবেগের মাত্রা কমে আসবে। স্বার্থপর হতে বলা হচ্ছে না, শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছেটাকে সামান্য গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। এতে করে নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরে পাবেন। আবেগ নিয়ন্ত্রণে আনতে শিখুন।
নিজেকে চিনুন
নিজেকে বুঝুন। চিন্তা করে বের করুন আপনি কোন জায়গায় সব চাইতে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কোন মানুষটি আপনার আবেগপ্রবনতার কারণ কিংবা কোন কাজটি আপনাকে বেশি মাত্রায় আবেগী করে তোলে। আগে নিজের আবেগপ্রবনতার কারণটি খুঁজে বের করুন। যদি সম্ভব হয়ে কারণটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার অতিরিক্ত আবেগ কমে আসবে। দুঃখ কম পাবেন।
নিজেকে সময় দিন
অনেকক্ষেত্রে সময় মনের ক্ষত পূরণ করতে সহায়তা করে। তেমনই নিজেকে সময় দিন আবেগটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। এতে করে আপনার নিজের মন ঠিকই খুঁজে নেবে আপনার কষ্টের কারণ এবং নিয়ন্ত্রণে আনবে আপনার আবেগ।
‘না’ বলা শিখুন
আবেগপ্রবণ মানুষের সব চাইতে বড় সমস্যা তারা সহজে কাউকে না বলতে পারেন না। ‘অনুরোধে ঢেঁকী গেলা’ প্রবাদ মুলত আবেগপ্রবণ মানুষের জন্যই তৈরি হয়েছে।
একারনে অনেকে আবেগপ্রবণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কাজ উদ্ধার করে নেয়। তাই সবার প্রথমে না বলা শিখুন যত কষ্টই হোক না কেন। এতে করে অযথা কোন ঝামেলায় পরে আবেগী হয়ে ভুল করার প্রবণতা কমবে।
আপনার জন্য ক্ষতিকর মানুষগুলোকে জীবন থেকে চলে যেতে দিন
আবেগপ্রবণ মানুষের প্রধান সমস্যা তারা যতই কারো কাছ থেকে কষ্ট পাক না কেন তাদের জীবন থেকে চলে যাওয়া সহ্য করতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভুলকে ক্ষমা করে আবার নতুন করে ভুল করে বসেন। এই কাজটি কখনো করবেন না। এতে আপনি নিজের আবেগপ্রবনতাকে কখনো অতিক্রম করতে পারবেন না। নিজের জন্য ক্ষতিকর এই সকল মানুষের ভুল চাইলে ক্ষমা করতে পারেন কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে আগের মত গুরুত্ব দেবেন না। এতে আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন। আবেগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
দ্রুত প্রতিক্রিয়া না দেওয়া
কোনো কিছু নিয়ে তাৎক্ষণিক হৈ-হুল্লোড় করা উচিত নয়। কোনো পরিস্থিতিকে আবেগ দিয়ে বিবেচনা না করে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করুন।
সঠিক সমাধান
যে বিষয়গুলো আপনাকে আবেগপ্রবণ করে, সেগুলো মন থেকে মুছে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে অন্য কিছুর প্রতি মনোযোগী হোন। যদি কারো মাধ্যমে মনঃক্ষুণ্ণ হোন, তাহলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমাধান করুন।
সচেতনতা বাড়ান
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজন সচেতনতা। কোন কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে রাখতে পারছেন না, সেগুলো খেয়াল করুন। রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, অস্থিরতা ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়ের কারণ চিহ্নিত করতে পারলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
চিন্তা পরিবর্তন করুন
যেসব বিষয় নিয়ে ভাবলে আপনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, সেসব বিষয় মনে পড়লে চিন্তা পরিবর্তন করুন। সে সময় ভালো কোনো স্মৃতির কথা মনে করুন। চিন্তাধারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করলে কম আবেগাপ্লুত হবেন।
ইতিবাচক হওয়া
ইতিবাচক হোন। জীবনের ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন। যোগব্যায়াম করুন, নিজেকে সময় দিন, অন্যকে সাহায্য করুন। এভাবে কাজ করলে আবেগ থাকবে হাতের মুঠোয়।
সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন
যখন আপনার ইমোশন কন্ট্রোল বা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। আবেগ খুব বেড়ে যাবে, তখন স্থিরতা আনতে একমনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন। চোখ বন্ধ করুন কিছু সময়ের জন্য। এবার আপনি যে ধর্মেরই বিশ্বাসী হন না কেন, তা স্মরণে আনুন। সৃষ্টি কর্তার সাহায্য প্রার্থনা করুন। দেখবেন ধর্মীয় অনুভূতি আপনার শরীর ও মনকে শান্ত করে দিবে। যা আপনাকে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজুন
ইমোশোন কন্ট্রোল করার স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজুন। যাতে করে সহজে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আবেগ বা ইমোশন বাড়তে দিবেন না। যখন কোন বিষয়ে অধিক ইমোশন কাজ করবে তখন বিশ্বস্ত কারো সাথে আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন। সেটা সাক্ষাতে বা মুঠফোনেও হতে পারে। তার কাছে বিষয়টি বর্ননা করুন। এবার সে বিষয়ে অন্যের মতামত শুনে নিজের জ্ঞানকে প্রসারিত করে সিদ্ধান্ত নিন।
অনেকেই ইমোশন বেড়ে গেলে কিকবক্সি করেন, অনেকে হাতে পাঞ্চ বল নিয়ে পাঞ্চ করেন। নিজের ইমোশন গুলো মনের ভেতর থেকে বের করতে অনেকেই তা খাতায় লিখে ফেলেন। এতে আপনার হালকা অনুভূতি আসবে। নিজেকে শান্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন
আমাদের জীবনে ভালো বা মন্দ যাই ঘটুক না কেন, তা আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়। তাই অতীত অভভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন। অতীতের আবেগের বশে নেয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা ভুল বা ঠিক হয়েছে? নিজেকেই প্রশ্ন করুন, অতীতে ইমোশন কন্ট্রোল করার জন্য আপনি কি কি টেকনিক ব্যবহার করেছেন? কারণ একেক জনের ইমোশন নিবৃত্ত করার পদ্ধতি একেক রকম। যখন আপনি ইমোশনালী বেশি ডিপরেস থাকবেন, তখন নিজেকে বুঝান। খারাপ সময় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তাই এ সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ পজিটিভ ইমোশন আপনার সিদ্ধান্তকে পজিটিভ করে, আর নেগেটিভ ইমোশন সিদ্ধান্তকে নেগেটিভ করে।
চিন্তা পরিবর্তন করুন
আগেই বলেছি নেগেটিভ চিন্তা আপনার ইমোশনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই যেসব বিষয় চিন্তা করলে আপনি বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়েন, তা সচেতনভাবে এড়িয়ে চলুন। অনুভাবেও বলা যায়, নেগেটিভ ইমোশন আপনাকে অন্ধ করে রাখে নেগেটিভ চিন্তার প্রতি। ফলে আপনি নেগেটিভাবেই কোন সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেন। তাই যখন আপনার আবেগ নেতিবাচক হিসেবে কাজ করবে, তখন ভিন্ন চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন। এতে আপনার নেতিবাচক আবেগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। ধরুণ, আপনার মাথায় কোন বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা এসেছে, তখন ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করুন।
নিজের ওপর দখল বাড়ান
নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজের উপর দখল থাকা। নিজের উপর দখল না থাকায় আপনার আবেগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পরে। দেখবেন আপনি যখন রেগে যাচ্ছেন তখন অল্পতেই তুলকালাম শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু যখন নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন, তখন অনেক জটিল বিষয়েও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছেন সহজভাবে। তাই ইমোশনাল বা আবেগতাড়িত হওয়ার আগে বিষয়টি যুক্তি, প্রজ্ঞা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করতে হবে। কেননা অনেক ইমোশনাল সিদ্ধান্ত বৃহৎ ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় খেয়াল করতে হবে, তা যেন কোনভাবেই সীমা লঙ্ঘন না করে। কারণ পরিস্থিতি এক সময় শান্ত হবে কিন্তু এর মধ্যেই আপনি যেন বৃহত্তর স্বার্থের ক্ষতি করে না ফেলেন। তাই যা করতে যাচ্ছেন তা একটু ভেবে চিন্তে করুন। যে বিষয়ে যতটা প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে, ঠিক ততটাই দেখান।
এবার জানা যাক, সময়মত ইমোশন কন্ট্রোল করতে না পারলে তা আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তাই বলা হয়, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আপনি আবেগতাড়িত হলে আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে। তবে জেনে নেয়া যায়, আপনার কোন ধরণের আবেগের বহিঃপ্রকাশে আপনার কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে তা তুলে ধরা হলো।
রাগ
আপনার অতিরিক্ত রাগ আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। কারণ অতিরিক্ত রাগের ফলে আপনার লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তাই যতদূর সম্ভব রাগকে না বলুন।
দুঃখ
দুঃখ বুকে বেশিদিন চেপে রাখলে ফুসফুসে চাপ পড়ে। যা আপনার স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তাই দুঃখ বেশিদিন চেপে রাখবেন না। যত দ্রুত সম্ভব দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করুন, তা সমাধান করে নিন। এতে আপনার স্ট্রেস কমে যাবে। ফুরফুরা অনুভব করবেন।
দুঃশ্চিন্তা
দুঃশ্চিন্তা আরেক ব্যাধি। দুঃশ্চিন্তায় আক্রান্ত হলে পাকস্থলীর উপর প্রভাব পরে। তাই যতটুকু পারেন আবেগ নিয়ন্ত্রণ রাখুন। এতে আপনার দুঃশ্চিন্তার কারণ কমে যাবে।
স্ট্রেস
অতিরিক্ত স্ট্রেস ভালো না। কারণ অতিরিক্ত স্ট্রেস সরাসরি মস্তিষ্কে ও হার্টে প্রভাব ফেলে। তাই স্টেস কমিয়ে শান্ত থাকুন। স্ট্রেস বেড়ে যায় তা এড়িয়ে চলুন।
ভয়
ভয় থেকেও স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে ভয়কে জয় করতে হবে। তাই দীর্ঘদিন ভয়ের অনুভূতিতে ভুগলে তা কিডনির উপর প্রভাব ফেলে। ভয়কে জয় পেলে বেশি পরিমান পানি পান করুন।
ধন্যবাদ।🙂