RE: জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

      জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

      zidane Doctor Asked on February 10, 2025 in অনুসরণ.
      Add Comment
      1 Answers

        ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল।

        সকাল আনুমানিক ৯টা বেজে ৩০ মিনিট। চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠে শুনি সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে পড়েছে। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পাশের গ্রামের এক ছোট ভাই দৌড়ে এসে জানালো তার এক আত্মীয়া ওখানের আশেপাশে কোন একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। আর সাতপাঁচ না ভেবে প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা তিনজন।

        রাস্তায় এসে দেখি কোন যানবাহন নেই। ক্যাম্পাস থেকে সাভার প্রায় ৪.৫ কিলোমিটার দূরে। কোন উপায় না পেয়ে হাঁটা ধরলাম। পথিমধ্যে আরেক ছোটভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলো, ওর পুরো শরীর রক্তে ভেজা, জানালো আমরা যার খোঁজে যাচ্ছি সে নিরাপদ আছে। অর্ধেক পথ এসে গেছি দেখে মনে হল ঘটনাটা দেখে আসা যাক।

        বিধ্বস্ত ভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে যা দেখেছিলাম তা রীতিমত শিউরে ওঠার মতো।

        পুরো নয়তলা ভবন যেন একটা স্যান্ডউইচ। দুর্ঘটনার সময়ে ভবনটিতে তিন হাজারের উপর লোকজন ছিল যার পুরোটাই বলতে গেলে গার্মেন্টস শ্রমিক। একের পর এক আহত, নিহত মানুষকে সেখান থেকে বের হচ্ছে যা দেখে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল।

        ভাবলাম গিয়ে কাজে হাত লাগানোটাই ঠিক হবে। অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য ঘটনার কেন্দ্রে আর সেদিন ঢুকতে পারিনি। তবে কাজের লোকের অভাব ছিল না। যে যার মতো উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। শুধু শুধু ভিড় না বাড়িয়ে হেঁটে হেঁটে আবার ক্যাম্পাস ফিরে আসলাম, তবে খারাপ লাগছিল এই ভেবে দুর্দিনে কাজে লাগতে পারলাম না।


        দুই দিন বাদে ৮/১০ জনের একটা গ্রুপ তৈরি করে, কিছু যন্ত্রপাতি কিনে সকাল সকাল আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছলাম। তখনও সেখানে লোকের অভাব ছিল না। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। দুপুর পর্যন্ত কাজ করে মনে হলো আমাদের এমন কোন অভিজ্ঞতা নেই যা দিয়ে ওখানে সাহায্য হবে। তাছাড়া তখন কাজটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে অনভিজ্ঞরা থাকা মানেই বাড়তি ঝামেলা।

        সাথে থাকা সমস্ত সরঞ্জাম ওখানের লোকদের দিয়ে আমরা চলে গেলাম সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে যেখানে বেওয়ারিশ লাশগুলো রাখা ছিল। এবার লেগে গেলাম লাশ শনাক্তকরণের সাহায্যে। নিখোঁজ হওয়া মানুষগুলোর আত্মীয়স্বজন সেখানে দিনরাত অপেক্ষা করে থাকতো খোঁজ পাওয়ার আশায়। আমরা ওনাদের দেয়া তথ্যের সাথে লাশ মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম।

        সেখানে রাখা বেশির ভাগ লাশই ছিল বীভৎস, এতোটাই বীভৎস যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রথম দিন লাশগুলো দেখার পর ঘণ্টা খানেক পায়ের কাঁপুনি থামেনি। চেহারা দেখে কাউকে চেনার উপায় ছিল না।

        এরপরও আশায় বুক বেঁধে থাকতো সবাই, হয়তো তার আত্মীয়কে খুঁজে পেয়ে যাবে। খাওয়া গোসল বাদ দিয়ে দিনের পর দিন অনেকেই পড়ে ছিল আশেপাশে। ঘণ্টা পার হতেই ত্রাণবাহী গাড়ি চলে আসতো। সেখান থেকে পাওয়া টুকটাক শুকনা খাবারেই কাজ চালিয়ে নিতো সেই হতভাগা মানুষগুলো। আমরাও খেয়েছি কয়েকদিন সেই ত্রাণের খাবার।

        দুর্বল হৃদয় দিয়ে সেখানেও টিকতে পারলাম না। ঘটনার কেন্দ্রে একদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছিল পর্যাপ্ত সাপ্লাই থাকার পরেও মাঝে মধ্যেই সেখানে কিছু সরঞ্জামের ঘাটতি পড়ে। শুরু করে দিলাম এবার তহবিল সংগ্রহের কাজ। সাভারের আশেপাশে ঘুরে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে কিছু যন্ত্রপাতি কিনে সেখানে দিয়ে আসতাম।

        এভাবে গেল আরও বেশ কিছু দিন।

        মনে হলো এটাতেও কাজের কাজ হচ্ছে না। এবার প্লান করা হলো বেশ বড় পরিসরে টাকা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্থদের কোনভাবে সাহায্য করা যায় কিনা। কয়েকজন দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে লাগলো। আর দলের বাকিরা তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে। বেশ ভালো সংগ্রহ হয়েছিল, বণ্টনও হয়েছিল সুন্দরভাবে।


        টাকা তুলতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

        • কিছু মানুষের কাছ থেকে এতটাই তিক্ত মন্তব্য শুনতে হয়েছে যে ঐ সময়ে আমাদের অনেকেই কান্না করে দিত। ভালো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাবার পরেও আমাদের সরাসরি বাটপার, ভণ্ড বানিয়ে দিত।
        • পর্যাপ্ত টাকা তুলতে না পেরে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম তখনই ঘটলো একটা আশ্চর্য ঘটনা। একটা বাজার হয়ে বের হচ্ছি। মাটিতে বসে থাকা এক ভিক্ষুক আমাদের কাছে এসে জানতে চাইলেন আমরা কেন টাকা তুলে বেড়াচ্ছি। পুরো বিষয়টা শুনে উনি উনার পুরো দিনের ইনকাম আমাদের দিয়ে দিয়েছিলেন। অনেক বলেও সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে পারিনি। এই উদারতা দেখে বাকরুদ্ধ না হয়ে থাকা যায়না।
        • এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাসে যেতে হতো। ঢাকা শহরের মতো জায়গাতে বেশির ভাগ বাসেই আমরা বিনা পয়সাতে যাতায়াত করেছিলাম। সেই রসকষহীন, কাঠখোট্টা বাস সুপারভাইজার টাকা তো নেয়ই নি বরং দান পর্যন্ত করেছে।
        • সাভার অঞ্চলে তখন যানবাহনের অবস্থা খুবই খারাপ। হেঁটে হেঁটেই অনেক জায়গাতে যাওয়া লাগতো। স্কুল কলেজের পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখতাম শিক্ষার্থীরা শরবত, পানি, স্যালাইন, শুকনা খাবার নিয়ে স্কুল-কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ক্লান্ত পথচারীদের অপেক্ষায়।

        এখান থেকে পাওয়া কিছু ধারণাঃ

        • হুট করেই সাজানো জীবন এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। একে গ্রহণ করার মতো মানসিক শক্তি থাকা চাই।
        • ভালো কাজ করতে গেলে সবসময় প্রশংসা পাবেন না, অনেক ক্ষেত্রেই জুটবে তিরস্কার।
        • অন্যের জন্য কিছু একটা করুন, আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঘুমোতে যেতে পারবেন।
        • জীবনে টাকা পয়সার যথেষ্ট দরকার আছে। ‘অর্থ-সম্পদ ঝামেলার বস্তু’- এগুলো বিত্তবানদের কথাবার্তা।
        • আমোদ ফুর্তি করে কাটিয়ে দিবো- জীবন এতোটাও সোজা নয়।
        • দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য দরিদ্রের মন কাঁদে, অল্প সংখ্যক বিত্তবানের মনে সামান্য সহানুভূতি তৈরি হয় মাত্র।
        • চাইলেই সবাই মিলেমিশে জীবনকে সুন্দর করে তুলতে পারি।
        • মারা যাবো এটাই স্বাভাবিক, বেঁচে আছি এটাই বরং মনে হয় অস্বাভাবিক।

        এগুলো ঠিক কেমন ধরনের ধারণা ঠিক জানিনা নাজমুল ভাই। এছাড়া অবশ্য কিছু ভাবতেও পারছি না।

         

        #Collcted

        Professor Answered on February 10, 2025.
        Add Comment

        Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.