RE: ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতাগুলো কী কী?

      ডিম আমার প্রিয় একটি খাবার। শুনেছি ডিম খেলে উপকারও পাওয়া যায় পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও আছে। আমি জানতে চাই এই উপকারিতা এবং অপকারিতাগুলো সম্পর্কে? 

      Add Comment
      1 Answers

        সহজলভ্য পুষ্টির উত্স হিসেবে ডিমের তুলনা কেবল ডিমই হতে পারে। তাই বাড়িতে বা রেস্তোরাঁয় সকাল-বিকেলের নাশতাতেই হোক কিংবা দুপুর-রাতের খাবারে ডিমের একটা মেন্যু ঘুরেফিরে আসেই। আর ব্যাচেলরদের জীবনে সহজে রান্নার সহজ মেন্যু হিসেবে ডিম তো প্রায় ‘জাতীয় খাদ্য’ই বটে!

        অবশ্য ডিমের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অনেক দিন ধরেই এই ধারণাও ব্যাপকভাবে প্রচারিত যে, ডিমের কুসুম খাওয়া অনেক সময়ই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত যাদের হৃদরোগ বা এ রোগের ঝুঁকি আছে, তাঁদের ডিমের কুসুম খেতে নিষেধ করা হয়। বলা হয়ে থাকে, ডিমের কুসুমে থাকা ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ ও ‘উচ্চমাত্রার কোলেস্টরল’ উচ্চ রক্তচাপজনিত স্বাস্থ্যসমস্যা এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বহুল প্রচলিত এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছেন হালের বিজ্ঞানীরা।

        পুষ্টিবিদ লিজ উলফি ডিমের কুসুম খাওয়ার লাভ-লোকসান নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তাঁর মতে, ডিমের কুসুম না খেলে লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি। কেননা, কুসুম না খেলে ভালো মানের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবেন আপনি। কুসুম খেলে শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছেন উলফি। তিনি জানান, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টরলের উত্স কুসুম নিয়ে হইচই শুরু হয় বিশ শতকের গোড়ায় নিকোলাই আনিচকভের গবেষণার পর। আনিচকভ খরগোশের ওপর এ নিয়ে পরীক্ষা চালান এবং দেখেন, কোলেস্টরলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

        ওই গবেষণার ফল চ্যালেঞ্জ করে লিজ উলফি বলেন, ‘খরগোশের সঙ্গে মানুষের শরীরের তেমন কোনো সাধারণ মিল নেই। আর কোলেস্টরল ওদের ডায়েটের অংশও নয়।’ কিন্তু ওই গবেষণাই ডিমের কুসুমের বিষয়ে প্রচারণার ভিত্তি।

        পরবর্তী সময়ে ১৯৫০ সালের দিকে গবেষক অ্যাঙ্কেল কিজ স্যাচুরেটেড ফ্যাট নিয়ে তাঁর বিখ্যাত ‘সাত দেশের গবেষণা’ করেন। কিজ দেখিয়েছিলেন, বেশি মাত্রায় ‘অ্যানিমেল ফ্যাট’ গ্রহণ করে এমন মানুষেরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। কিন্তু তাঁর গবেষণাও পূর্ণাঙ্গ ছিল না বলে দাবি করেন উলফি।

        ২০১০ সালে দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন এ বিষয়ে একটা বিশদ বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২১টি আলাদা গবেষণার ফল নিয়ে প্রকাশিত ওই বিশ্লেষণে জানানো হয়, ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক কিংবা করোনারি ভাসকুলার ডিজিজের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ তা ছাড়া, চলতি বছরের শুরুর দিকে টাইম সাময়িকী তাদের ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যাতে বলা হয়েছিল—ডিম এবং অন্যান্য উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার ক্ষতিকর।

        হৃদরোগের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে পুষ্টিবিদ উলফি বলেন, স্থায়ী দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ এবং উদ্ভিজ্জ তেল ও প্রক্রিয়াজাত শর্করাজাতীয় খাবারের সৃষ্ট প্রদাহ থেকেই হৃদরোগ হয়ে থাকে। এই পুষ্টিবিদ আরও বলেন, ডিমের কুসুম ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-বি-এর খুবই ভালো উত্স। ভিটামিন-এ ত্বকের জন্য ভালো। ভিটামিন-বি শরীরে শক্তি জোগায়, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং মাংসপেশির গঠনে সহায়ক। এ ছাড়া গর্ভধারণের জন্যও ডিমের কুসুম খাওয়া উপকারী। ডিমের কুসুমে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোনের উত্পাদন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ায়। খাবারদাবারে মোট ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কুসুমসহ পুরো ডিম খেলেও ওজন বাড়বে না, বরং তা শরীরের জন্য উপকারী।

        Professor Answered on March 1, 2015.
        Add Comment

        Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.