RE: মানুষের জীবনে শান্তি নেই কেন?

      মানুষের জীবনে শান্তি নেই কেন?

      Zontu Train Asked on February 27, 2025 in অনুসরণ.
      Add Comment
      1 Answers

        মানুষ চিরকাল শান্তির সন্ধানে ছুটে চলে, অথচ শাশ্বত শান্তি তার নাগালের বাইরে থেকেই যায়। সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব—সব মিলিয়ে মানুষের জীবন যেন এক অন্তহীন সংগ্রাম। দার্শনিকেরা যুগে যুগে এই অশান্তির কারণ বিশ্লেষণ করেছেন, কেউ একে নিয়তির অংশ বলেছেন, কেউ সমাজব্যবস্থার ফল, আবার কেউ মানুষের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অতৃপ্তির প্রতিচ্ছবি বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

        ১. মানুষের অস্থিরতা ও অপ্রাপ্তির বেদনা

        গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন—
        “He who is not contented with what he has, would not be contented with what he would like to have.”
        (যে ব্যক্তি যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট নয়, সে যা চাইবে তা পেলেও সন্তুষ্ট হবে না।)

        মানুষের মনে চিরকাল এক অতৃপ্ত বাসনা কাজ করে। যা সে পায় না, সেটির আকাঙ্ক্ষাই তাকে অশান্ত করে রাখে। অর্থ, খ্যাতি, ক্ষমতা—সব কিছুই মানুষের চাহিদার তালিকায় থাকে, অথচ এগুলোর কোনোটিই তাকে স্থায়ী সুখ দিতে পারে না।

        ২. সমাজের বৈষম্য ও সংঘর্ষ

        কার্ল মার্ক্স বলেন—
        “The history of all hitherto existing society is the history of class struggles.”
        (মানব সভ্যতার ইতিহাস শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস।)

        সমাজে ধনী-গরিব, শক্তিমান-দুর্বল, শাসক-শোষিত—এই দ্বন্দ্ব চিরকালই বিরাজমান। শ্রেণিবৈষম্য মানুষের জীবনে এক ধরনের অশান্তির সৃষ্টি করে, কারণ শোষিত শ্রেণি তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, আর শাসক শ্রেণি ক্ষমতা হারানোর ভয় নিয়ে বেঁচে থাকে।

        ৩. ব্যক্তিগত ও সামাজিক দ্বন্দ্ব

        সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেন—
        “The first human who hurled an insult instead of a stone was the founder of civilization.”
        (প্রথম যে ব্যক্তি পাথরের বদলে গালি ছুড়েছিল, সে-ই সভ্যতার পথ দেখিয়েছিল।)

        মানুষের ভেতরকার আক্রমণাত্মক প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই সভ্যতার বিকাশ হয়েছে। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ যত বাড়ে, ততই মানুষের ভেতরে এক অবদমন তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত মানসিক দ্বন্দ্ব ও অশান্তির জন্ম দেয়।

        ৪. অস্তিত্বের সংকট ও অর্থহীনতা

        জ্যাঁ-পল সার্ত্র বলেন—
        “Man is condemned to be free; because once thrown into the world, he is responsible for everything he does.”
        (মানুষ স্বাধীন হতে বাধ্য; কারণ একবার পৃথিবীতে আসার পর সে যা কিছু করে তার দায়-দায়িত্ব তার নিজেরই।)

        মানুষ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পায়, কিন্তু সেই স্বাধীনতার ভার তার উপর চাপ ফেলে। সে জানে না কোন পথ বেছে নিলে প্রকৃত সুখ মিলবে, ফলে তার মনে অস্থিরতা লেগেই থাকে।

        ৫. লালসা ও মোহের ফাঁদ

        বৌদ্ধদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন—
        “Desire is the root of all suffering.”
        (সব কষ্টের মূল কারণ ইচ্ছা।)

        মানুষ সব কিছু পেতে চায়, আর এই চাওয়ার মাঝেই তার দুঃখের বীজ লুকিয়ে থাকে। সে যা পায়, তাতে তৃপ্ত হতে পারে না, বরং আরও চাইতে থাকে।

        ৬. আধুনিক জীবনের জটিলতা

        জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিটশে বলেন—
        “He who has a why to live can bear almost any how.”
        (যার জীবনে বেঁচে থাকার কারণ আছে, সে যেকোনো কিছু সহ্য করতে পারে।)

        আধুনিক মানুষ অনেক কিছুই অর্জন করেছে, কিন্তু তার জীবনের অর্থ কোথায়, সে তা খুঁজে পায় না। যান্ত্রিক জীবনযাপন, অসীম প্রতিযোগিতা, প্রযুক্তির বাড়াবাড়ি—এসবই তাকে আরও বেশি অস্থির করে তুলছে।

        মানুষের জীবনে শান্তি নেই, কারণ সে চিরকাল এক অনিশ্চয়তার মাঝে বাস করে। অর্থ, ক্ষমতা, মোহ, সামাজিক বৈষম্য, অস্তিত্বের সংকট—এসবের মাঝেই তার অশান্তির মূল কারণ লুকিয়ে আছে। তবে শান্তি কি একেবারে অসম্ভব?

        সম্ভবত নয়। দার্শনিকরা যেমন বলেছিলেন, প্রকৃত শান্তি তখনই আসবে, যখন মানুষ নিজের চাহিদা ও বাস্তবতার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে, যখন সে স্বীকার করবে যে জীবন কখনোই নিখুঁত হবে না, কিন্তু তার মধ্যেও কিছু সৌন্দর্য আছে।

        শেষ কথা

        “Happiness depends upon ourselves.” — অ্যারিস্টটল
        (সুখ আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে।)

        মানুষ যদি অন্তরের জাগতিক চাহিদার পরিবর্তে মানসিক শান্তির গুরুত্ব বুঝতে শেখে, তবে হয়তো সে তার জীবনকে অশান্তির যন্ত্রণার বদলে এক নতুন আলোয় আলোকিত করতে পারবে।

        Professor Answered on February 27, 2025.
        Add Comment

        Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.