RE: সফলতার সঠিক মূলমন্ত্র কী?
অনেকেই সফলতার মূলমন্ত্র জানতে চান। আসলে সফলতার মূলমন্ত্র জিনিসটা আপেক্ষিক। একেকজনের সফলতার কারণ একেক রকম। তারপরও কিছু মিনিমাম বিষয় এক্ষেত্রে আবশ্যিক নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। আবার সফলতার বিষয়টি একটা ধারাবাহিক ও পর্যায়ক্রমিক বিষয়ও হতে পারে।
এক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ১. স্রষ্টার আশির্বাদ, ২. পরিশ্রম, ৩. ধৈর্য্য ও ত্যাগ, ৪. আত্মপ্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাস, ৫. একাগ্রতা ও আন্তরিকতা ৬. দৃঢ় মানসিকতা, ৭. সাহসিকতা ও ঝুঁকি গ্রহণ, ৮.জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা, ৯. কর্মনিষ্ঠা এবং ১০. যুগোপযোগী শূন্যতাপূরণ ও পারিপার্শ্বিকতা।
সফলতার কোনো শর্টকাট ফর্মুলা নাই। আকস্মিক বা বিলম্বিত সফলতার ক্ষেত্রেও উপর্যুক্ত বিষয়গুলো কোনো না কোনোভাবে প্রাসঙ্গিক। স্রষ্টার আশির্বাদ ছাড়া কোনো কাজই সমাপণ বা পূরণ সম্ভব নয়। সব কাজ গুছালো, তারপরও সামান্য ভুলের কারণে পুরো আয়োজন ভেস্ত যেতে পারে। এ যেন তীরে এসে তরী ডোবার মতো। তাই সবসময় স্রষ্টার কাছে মনে প্রাণে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণের জন্য চাইতে হবে। পরিশ্রম ও অব্যহত প্রচেষ্টা এ কাজকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
শ্রম না দিয়ে ফল লাভের চেষ্টা করা বাতুলতা মাত্র। তাই পরিশ্রমীরাই দিন শেষে বিজয়ী হয়। একবার চেষ্টায় সফল হতে না পারলে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এজন্য চরম ধৈর্যের দরকার হলেও তা করতে হবে। লেগে থাকতে হবে নাছোড়বান্দার মতো। প্রয়োজনে অনেক ত্যাগও স্বীকার করতে হবে। পরাজয় মানে সবসময় হেরে যাওয়া নয়। অনেক সময় তা আশির্বাদস্বরূপ। শিক্ষা নেওয়ার মতো হলে অবশ্যই তা গ্রহণ করা উচিত। নিজের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে ও করাতে হবে যে আমি সংশ্লিষ্ট কাজে সফলতা চাই।
যদি মনে করেন ‘আমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না’ তাহলে তো আপনি নিজেই সার্টিফাই করলেন যে তা আপনাকে দিয়ে হবে না। সত্যিই তখন তা আপনাকে দিয়ে হবে না। কারণ আপনিই তখন নিজের শত্রু হিসেবে গণ্য হলেন। নিজের মধ্যে আত্নবিশ্বাস ও মনোবল লালন ও পালন করতে হবে। যা করবেন পূর্ণ মনোযোগ দিয়েই করবেন। ফাঁকিবাজি করলেন তো নিজেই নিজেকে ধোঁকা দিলেন। তাই একাগ্রচিত্তে যে কোনো কাজকে সানন্দে গ্রহণ করা উচিত। মন ভাঙবে একবার, দুই বার কিংবা বহুবার। অনেক সময় কাছের মানুষও ভুল বুঝবে। তাতে কী হয়েছে। বিপদের সময় কেউ আপনার পাশে ছিল না, থাকবে না তা স্বাভাবিক।
যদি কেউ থাকে তো আপনি সৌভাগ্যবান। অন্যথায় কারো সমালোচনা গায়ে না মেখে স্বপদে দৃঢ়ভাবে বহাল থাকা উচিত। আপনি নিজেই নিজের ড্রাইভার হবেন তখন। অনেকটা ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে’ এর মতো। হতাশ হওয়া যাবে না কোনো সময়। কিছু কাল (সময়) হয় সুকাল (ভালো সময়), আর কিছু কাল হয় আকাল (খারপ ভালো), উত্থান- পতন নিয়েই মানবজীবন। সফল মানুষদের জীবনে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি বেশি।
তাই চরম সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে নিজেকে। যতটা প্রয়োজন ততটা ঝুঁকি গ্রহণ করতে হবে প্রয়োজনে। প্রয়োজনীয় জ্ঞানটুকু অবশ্যই অর্জন করতে হবে। বুদ্ধিমানের কাজ হলো জ্ঞানার্জন করা। এজন্য শেখার জগতকে বিস্তৃত করতে হবে। ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত যা শিখেছেন সবই প্রয়োজনীয়। তা ভালো হোক আর মন্দ হোক। কারণ তা আপনার অভিজ্ঞতাকে সঞ্চিত ও সমৃদ্ধ করেছে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আপনি তার যথাযথ ব্যবহার ও মূল্যায়ন করতে পারবেন।
জানা থাকলে ভুল কম হয়। আর অজানা থেকে ভয়ের উৎপত্তি। তাই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেও জ্ঞানলাভের চেষ্টা করুন। কর্মই এগিয়ে রাখে সবসসয়। কর্মই ধর্ম। আর কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি কখনো চূড়ান্তভাবে হারে না। হারলেও সহজে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। তাই কর্মনিষ্ঠ হোন। অলসতা কখনো সফলতার পথে চালিত করে না। বরং সফলতার পথকে রুদ্ধ করে। আর সফলতা দৈবাৎ আসে না। একে আমন্ত্রণ জানাতে হয়।
আপনি না চাইলে তা আপনার দ্বারে আসবে না। আপনি যে বিষয়ে সফলতা চান তাতে যুগোপযোগী হোন। সনাতনী মন- মানসিকতা ঝেড়ে ফেলুন। এখন প্রতিযোগিতার যুগ। নিজেকে সেভাবে তৈরি করুন। নিজেকে নিজের সহযোগী করুন। নিজের জগতকে কখনও অন্যের সাথে মিলাবেন না। আপনার উদাহরণ আপনিই।
সক্রেটিস, প্লেটো, আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণই। কেউ যত এগিয়ে যাক তাদের মতো না। হয় তাদের চেয়ে বেশি অথবা কম। তাই অনুকরণপ্রিয় না হয়ে স্বতন্ত্র হওয়াই শ্রেয়। নিজস্ব ফর্মুলা ও চিন্তা- চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সফলতার জন্য যুদ্ধে নামা উচিত। আপনি যে জগতেই সফলতা চান সে জগতেই সাঁতার কাটুন। এক সময় তীরে পৌঁছাবেন। একটু আগে বা পরে। তাতে কী হয়েছে! আপনি তো সফল হতে চান তাই না? তাই লেগে থাকুন, লেগে থাকুন আর লেগে থাকুন। একসময় সফলতা সে আপনারই হবে। এটাই সফলতার মূলমন্ত্র।