RE: ৮-১০ মাস বয়সী বাচ্চাকে কী কী খাওয়াতে হবে?

      ৮-১০ মাসের বাচ্চাদের কী কী খাওয়াবো? স্পেশাল কিছু খাওয়াতে হবে? 

      Kaosar Vice Professor Asked on February 26, 2015 in স্বাস্থ্য.
      Add Comment
      1 Answers

        সন্তান আমাদের সেই সম্পদ, যার কল্যাণের জন্য আমরা করতে পারি অনেক কিছুই। নতুন শিশু পরিবারে আসার পরে তার সুস্থতা ও যত্নের দিকেই পিতা মাতার খেয়াল থাকে সব চাইতে বেশি। এবং তারই সূত্র ধরে আসে শিশুর খাদ্যের ব্যাপারটি। নতুন শিশুর খাবারের দিকে রাখতে হবে সর্বাধিক নজর, কেননা এই খাদ্যের ওপরেই অনেকাংশে নির্ভর করবে তার সুস্থতা। নতুন শিশুর মঙ্গলের কথা বিবেচনা করেই আমাদের নিয়মিত আয়োজন শিশুদের খাবার দাবার। সেই ধারাবাহিকতায় আজ রইল ৮ থেকে ১০ মাস বয়সী শিশুর খাবারের বিষয়টি।

        আপনার শিশু সন্তানের বয়স ৮-১০ মাসের মধ্যে হলে এখন বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবারও খাচ্ছে। পাতলা খিচুড়ি, সুজি এসবে সে এখন অভ্যস্ত। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার আরও খাবারের দরকার। এই সময় বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়। তাই ঠিক মত পুষ্টিকর খাবার না পেলে তাদের বৃদ্ধি অনেকটাই বাধাগ্রস্থ হতে পারে। তাই তাদের খাবারের প্রতি হতে হবে আগের থেকে আরও বেশি যত্নশীল।

        আপনার সন্তান এখন আগের থেকে ধীরে ধীরে খাওয়ার পরিমান বাড়িয়েছে নিশ্চয়। খিচুড়ি, সবজি পিউরি, সুজি খাচ্ছে নিয়মিতই। এসব ছাড়াও এখন সে হয়তো আপনাকে খেতে দেখলে তার ছোট ছোট হাত দুটি বাড়িয়ে দেয়। ২/১টা ভাতের দানা তার মুখে তুলে দিতে আপনারও নিশ্চয় অনেক ভালো লাগে।এসব কিন্তু বলে দেয় এখন তার দরকার আর বেশি পরিমানে খাবার।

        এখন আপনার সন্তান বসতে শিখে গেছে। হয়ত ছোট ছোট পায়ে হামাগুড়ি দেয়ার চেষ্টাও করে। এছাড়াও খেয়াল রাখবেন সে তার হাতের আঙুল ব্যাবহার করে ছোট ছোট জিনিস তুলতে পারে কি না সেই সাথে সব কিছু মুখে নেবার প্রবনতা তো থাকবেই। এক হাত থেকে আরেক হাতে জিনিস নিতেও হয়তো শিখে গেছে সে। এসব বা এসবের কিছু যদি আপনার সন্তানকে করতে দেখেন তাহলে বুঝতে হবে সে ঠিক মতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই এখন বাড়াতে হবে তার খাবার পরিমানটাও।

        ৮-১০ মাস বয়সী বাচ্চার খাবারঃ

        বাচ্চা অন্যান্য খাবার খাচ্ছে মানে এই নয় যে আপনি তাকে বুকের দুধ খেতে দেয়া বন্ধ করে দিবেন। সেটা কখনই উচিৎ হবেনা। মনে রাখবেন বাচ্চার ২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত বুকের দুধ খুব উপকারি। তবে আপনার কোন মেডিকেল বিধি নিষেধ থাকলে আলাদা কথা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চাকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে পারেন। এছাড়া এখন তার রেগুলার খাবারের পাশাপাশি দিতে পারেন পাস্তুরিত চীজ বা দই। সরাসরি দেয়ার থেকে ভালো হবে তার খাবারে মিশিয়ে দিলে। খিচুড়িতে এখন অল্প তেল দিতে পারেন, বা তেলের বদলে চীজ দিতে পারেন। আর স্বাদের জন্য লবনতো আছেই। এই সময় আপনি চাইলে এক কোয়া রসুনের অল্প একটু করে নিয়ে খিচুড়িতে যোগ করে দিতে পারেন। ইচ্ছা না করলে দেয়ার দরকার নেই। আর দইটা সরাসরিই দিতে পারেন। তবে ঠাণ্ডা না হলেই ভালো। কিন্তু গরুর দুধ দিতে যাবেন না। আপনার সন্তানের জন্য এই বয়সে গরুর দুধ ভালো হবেনা। আর এখন গরম পড়েছে প্রচুর তাই বাচ্চাকে পানিও খাওয়াতে হবে অনেক।

        বাজারে বাচ্চাদের জন্য অনেক ধরনের সিরিয়াল বা সেরিলাক পাওয়া যায়। অনেক বাবা মা’ই সেসব খাওয়ান বাচ্চাকে, যদিও এসবের থেকে বাসার খাবার অনেক পুষ্টিকর। বাচ্চা সিরিয়াল বা সেরিলাক খেতে পছন্দ করলে তাকে সুজির নরম হালুয়া করে দিতে পারেন। মজাদার করার জন্য সাথে চিনি আর ফলের টুকরাও যোগ করে দিতে পারেন। তবে যায়ই দিন না কেন খেয়াল রাখবেন খাবারে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখবেন। এই সময় তাদের জন্য আয়রন খুব দরকারি একটা উপাদান। সুজির সাথে বারলি, ওট, গম ইত্যাদি শস্যদানা পিষে মেশাতে পারেন। যেহেতু আপনার সন্তান এখন ধরা শিখেছে তাই সে নিজের খাবারটাও নিজে ধরে খেতে চাইবে। তার হাতে কিছু খাবার ধরিয়ে দিলে সে নিজে হাতে খেতে পছন্দ করবে সেই সাথে খাবারের প্রতিও তার আগ্রহ বাড়বে। একে বলে “ফিঙ্গার ফুড। ফিঙ্গার ফুড হিসাবে পাকা কলা ছোট করে কেটে দিতে পারেন, বা বাসায় তৈরি রুটি ছোট ছোট করে টুকরা করে অথবা স্পাইরাল পাস্তা সেদ্ধ করে দিতে পারেন সামনে। এতে খেলাও হবে আবার খাওয়াও হবে। তবে হাতে কিছু দিয়ে থাকলে তা চোখে চোখে রাখবেন, কেননা বাচ্চা নিজে খেতে গেলে গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

        শুধু খিচুড়ি বা সুজি খেতে খেতে অনেক সময় আপনার বাচ্চার ভালো নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের সেদ্ধ চটকানো সবজি বা ফলমূল দেয়া যেতে পারে যেমন আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, কলা, আপেল, আঙুর ইত্যাদি। আরেকটা পুষ্টিকর খাবার হল ডিমের কুসুম। বাচ্চাকে দিনে একটি ডিমের কুসুম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। তবে বেশি দিলে পেট খারাপ হতে পারে। সেই সাথে মুরগির কলিজা দেয়ার চেষ্টা করবেন। বাচ্চাকে অল্প পরিমানে বড় মাছ এবং মুরগির মাংস দিতে পারেন। সেই সাথে বিভিন্ন ডাল ঘন করে রান্না করে অল্প করে খাওয়াতে পারেন। এসব থেকে বাচ্চা তার পর্যাপ্ত প্রোটিন পাবে।

        দিনে কতটুকু দিতে হবেঃ

        বাচ্চাকে তার খাবারের চাহিদা অনুযায়ী খেতে দিতে হবে। এত দিনে তার কিছুটা হলেও পছন্দ অপছন্দ তৈরি হয়ে গেছে খাবারের ব্যাপারে। তাই সুস্বাদু খাবার দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে সে কোনটা বেশি খেতে পছন্দ করে। খিচুড়ি বেশি খেতে পছন্দ করলে তাকে দিনে ১/৩ থেকে ১/২ কাপ খিচুড়ি দিতে হবে। সুজির হালুয়া ১/৩ থেকে ১/২ কাপ দেয়া যেতে পারে। চটকানো সবজি ও ফলমূল ১/৩ থেকে ১/২ কাপ করে দিতে পারেন। এছাড়া ফলমূল জুস করেও দিতে পারেন। দই বা চীজ বা তেল দিনে একটু কম পরিমানে দিতে পারেন। পরিমানটা হতে পারে ১/৪ থেকে ১/৩ কাপ। তবে আপনার সন্তান সহ্য করতে না পারলে আরও কম করে দিন। সেই সাথে আয়রন যুক্ত খাবার ১/৪ থেকে ১/২ ভাগ ও প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাছ মাংস দিনে ১/৮ থেকে ১/৪ কাপ দিতে পারেন।

        এখন যেহেতু সে হামাগুড়ি দিতে পারে, তাই সে ঘুরে ফিরে খেলতে চাইবে অনেক বেশি। ধীরে ধীরে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রন আনা শিখছে আপনার সন্তান। তাই খাবারটাও সেভাবে হিসাব করেই দিতে হবে। আর মনে রাখবেন যে আপনার সন্তান হয়ত সবটা খেতে পারবেনা। সব বাচ্চার খাবারের চাহিদা এক নয়। কেউ কম কেউ বেশি খাবে। তাই জোর করবেন না। আর নতুন খাবার খাওয়ালে তা পুনরায় দেয়ার আগে অন্তত ২ দিন সময় নিয়ে দেখুন এলার্জির কোন সমস্যা হচ্ছে কি না। কোন খাবারে সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। এবং পুরানো বাসি খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। ঠিক ভাবে খাবার-দাবার আর আপনার কাছ থেকে আদর ভালবাসা পেলেই দেখবেন আপনার সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে।

        Professor Answered on February 26, 2015.
        Add Comment

        Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.