RE: নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে জানাবেন প্লিজ?

      ZoomBangla Answer Default Asked on November 13, 2025 in No Category.
      Add Comment
      1 Answers

        নোবেল পুরস্কার । বিশ্বের সর্বোচ্চ ও মর্যাদাপূর্ন পুরস্কার। ১৯০১ সালে শুরু হওয়া এই মর্যাদাপূর্ন পুরস্কারের ১১০তম আসর বসেছিলো ৩-১৩ অক্টোবর নরওয়েতে।

        এই পুরস্কারের প্রবক্তাঃ

        ১৮৩৩ সালের ২১ অক্টোবরের কোন এক প্রহরে সুইডেনের স্টকহোমে জন্মগ্রহন করেন শিল্পপতি ইমানুয়েল নোবেল ও মা অ্যানড্রিয়েটি নোবেলের ৩য় সন্তান আলফ্রেড বার্নার্ড নোবেল। ।
        তার অপর দুই ভাই হলো রবার্ট নোবেল ও লুডিগ নোবেল। আলফ্রেড নোবেল ছিলেন তৃতীয় ও সর্বশেষ ভাই। তিনি ব্যক্তিজীবনে ছিলেন রসায়নবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভাবক ও অস্ত্রনির্মান প্রতিষ্ঠানের মালিক।

        আলফ্রেড নোবেলের মোট আবিষ্কারের সংখ্যা ৩৫৫। যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আবিষ্কার ডিনামাইট। এতো বিশাল সংখ্যক আবিষ্কার করে প্রচুর টাকা রোজগার করেন সুইডেনে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী। সেই টাকা দিয়েই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার ‘নোবেল পুরষ্কার’।

        পুরস্কার প্রতিষ্ঠার পিছনের কাহিনীঃ

        নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটা বেশ মজার। আলফ্রেড নোবেলের অধিকাংশ আবিষ্কারই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। ডিনামাইট বা অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র যেমন মানুষের কল্যানের কাজে ব্যাবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ধ্বংসাত্বক কাজেও। সে কারনে অনেক নিন্দা জোটে আলফ্রেড নোবেলের কপালে।

        ১৮৮৮ সালের মার্চে আলফ্রেডের বড়ভাই লুডভিগ ফ্রান্সে ঘুরতে গিয়ে ক্যানসিসে মারা যান। লুডভিগ ছিলেন তুখোড় একজন প্রকৌশলী, ভালো ব্যবসায়ী ও অসাধারন মানবিক। এক ফ্রেঞ্চ পত্রিকা ভুলে ধরে নেয় আলফ্রেড নোবেলই মারা গেছেন।

        সেই পত্রিকা তখন আলফ্রেডের মৃত্যুর সংবাদ ছাপে।অথচ আলফ্রেড তখনো জীবিত। সেখানে তারা আলফ্রেডেকে বর্ণনা করে ‘মার্চেন্ট অব ডেথ বা মৃত্যুর সওদাগর’ হিসাবে, যার শিরোনামে লিখেছিলো “The merchand of death is dead”। আলফ্রেড মানুষ হত্যার বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করেছেন, কিন্তু সেই টাকা পুরো মানব জাতির কল্যানের কোনো কাজে ব্যয় করেননি বলে তার প্রচন্ড নিন্দা করে এমনি তার বৈজ্ঞানিক আবিস্কার উদ্ভাবনের কথা উল্লেখও করেনি। পত্রিকার এই লেখাটি আলফ্রেড নোবেল নিজে পড়েন। পড়া শেষে তিনি বেশ কষ্ট পান।

        তিনি উপলদ্ধি করলেন তিনি নিজেকে একজন “মৃত্যু ব্যবসায়ী” হিসেবে পরিচিত করে মরতে দিতে পারেন না। মানুষের মনে তার সম্পর্কে সম্মানজনক ইতিবাচক পরিচয় রেখেই মরতে হবে। কী করা যায় ? সে ভাবনায় পেয়ে বসে । ১৮৯৫ সালে এসে এ প্রশ্নের সমাধান তিনি পান।

        অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন তাঁর উপার্জিত অর্থ মানব কল্যানের কাজে ব্যয় করবেন। এরপর ১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন নোবেল পুরষ্কার।

        এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। ১৯৬৮ যোগ হয় অর্থনীতিতে।

        আলফ্রেড নোবেলের উইলঃ

        আমার সম্পত্তির পুরোটাই নিম্নলিখিতভাবে কাজে লাগানো হবে : ‘আমার অছিমণ্ডলী সমস্ত মূলধন নিরাপদ কোম্পানির কাগজে বিনিয়োগ করে একটি ফান্ড গঠন করবেন। এই মূলধন থেকে উপার্জিত সুদ প্রতি বছর পুরস্কারস্বরূপ বণ্টন করা হবে। আগের বছর যারা মানবজাতির কল্যাণে সর্বোত্তম সেবা করেছেন বলে গণ্য হবেন, চলতি বছর এ পুরস্কার তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে। উল্লিখিত সুদের অর্থকে সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে বণ্টন করা হবে— * পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছেন যিনি, একভাগ পাবেন তিনি। * সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাসায়নিক তথ্য আবিষ্কার বা তার উন্নয়ন করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি। * শরীরবৃত্ত অথবা ভেষজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি। * সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ আদর্শপূর্ণ অভিনব কিছু যিনি সৃষ্টি করেছেন—একভাগ পাবেন তিনি। * জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্য স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলোপসাধন বা হ্রাস করার জন্য এবং শান্তি পরিষদগুলোর অনুষ্ঠান ও উন্নয়নের জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক অথবা শ্রেষ্ঠ কাজ করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি। পদার্থ ও রসায়নবিদ্যা সংক্রান্ত পুরস্কারগুলো সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক প্রদত্ত হবে। শরীরবৃত্ত অথবা ভেষজ সংক্রান্ত পুরস্কার বিতরণ করবে স্টকহোমের ক্যারোলাইন ইনস্টিটিউট। সাহিত্য ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রদান করবে স্টকহোম একাডেমি। শান্তিসেবীদের জন্য নির্দিষ্ট পুরস্কার বিতরণ করবে নরওয়েজিয়ান স্ট্যাটিং নির্বাচিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি। আমার সুস্পষ্ট ইচ্ছে যে, পুরস্কারগুলো বিতরণ সম্পর্কে প্রার্থীর জাতীয়তার কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না। তিনি স্ক্যানডিনেভিয়ান হন বা বা না হন, যোগ্যতম ব্যক্তিমাত্রই পুরস্কার লাভ করতে পারবেন। প্যারিস স্বাক্ষর ২৭ নভেম্বর আলফ্রেড নোবেল

        নোবেল ফাউন্ডেশনঃ

        আলফ্রেড নোবেল উইলে স্বাক্ষর করেন ১৮৯৫ সালে, কিন্তু পুরষ্কার ঘোষণার সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর এই উইল বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় রাগনার সোহলমান এবং রুডলফ লিলিযেকুইস্ট নামের দুই ভদ্রলোকের উপর। ১৮৯৭ সালে আইনসভায় নোবেলের উইল পাস হওয়ার পর এই দুই ভদ্রলোক গঠন করেন নোবেল ফাউন্ডেশন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নোবেল ফাউন্ডেশন থেকে পুরষ্কার দেওয়া হলেও এই ফাউন্ডেশন নোবেল পুরষ্কারের বিজয়ী নির্বাচন করে না। এই ফাউন্ডেশনের মুল কাজ হলো নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরষ্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা।

        পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব নোবেল ভাগ করে দিয়ে যান তার উইলে
        * পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন এর পুরষ্কার ঘোষনা করার দায়িত্ব দেন রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সকে।
        * চিকিৎসা শাস্ত্রের পুরষ্কার দেওয়ার দায়িত্ব দেন ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটকে।
        * সুইডিশ একাডেমি কে দায়িত্ব দেন সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ঘোষনা করার দায়িত্ব।
        * শান্তি পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব দেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে।
        এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার আছে। তা হলো, যে সময় নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন সুইডেন ও নরওয়ে ছিলো একসঙ্গে যা পরবর্তীতে ভেঙ্গে যায়। ফলে নোবেল পুরষ্কার ঘোষনার দায়িত্ব ভাগ হয়ে যায় দুই দেশের মধ্যে।

        নোবেল মনোনয়ন প্রক্রিয়াঃ

        শুরুতে নির্বাচক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নসুত্র থেকে কয়েক হাজার নাম সংগ্রহ করে নিজ নিজ বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠায়। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরী করা হয় । পরবর্তীতে তৈরী করা হয় মনোনয়নের সংক্ষিপ্ত তালিকা।

        সেপ্টেম্বর মাসে পরবর্তী বছরের জন্য মনোনয়ন আহবান করে। ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে। সেই মনোনয়ন থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এই তালিকার উপরে কমিটির সদস্যদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় পুরস্কার। পুরস্কার ঘোষনা হয় অক্টোবর মাসে। আর পুরো বছরে ধরে চলে মনোনয়ন প্রক্রিয়া।

        যে সব বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়ঃ

        * পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছেন যিনি, একভাগ পাবেন তিনি।
        * সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাসায়নিক তথ্য আবিষ্কার বা তার উন্নয়ন করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।
        * শরীর অথবা ভেষজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যার আবিস্কার গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বলে বিবেচিত হবে, তিনি পাবেন এক অংশ( উইলকৃত অর্থ মনোনীত ব্যক্তিকর্তৃক নিরাপদ খাতে বিনিয়োগপ্রাপ্ত লাভের)
        * সাহিত্য ক্ষেত্রে যার কাজ মানবের আদর্শকে সবচেয়ে দারুন ভাবে চিত্রায়িত করেছে – একভাগ পাবেন তিনি।
        * যিনি জাতিতে জাতিতে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্য স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলোপসাধন বা হ্রাস করার জন্য এবং শান্তি পরিষদগুলোর অনুষ্ঠান ও উন্নয়নের জন্য সর্বাপেক্ষা অধিক অথবা শ্রেষ্ঠ কাজ করেছেন যিনি—একভাগ পাবেন তিনি।

        অর্থনীতিতে কোন নোবেল নাই

        আলফ্রেড নোবেলের উইলে অর্থনীতিতে নোবেল দেয়ার কোন উল্লেখ নাই। মূলতঃ নোবেলে স্মৃতিতে দ্য ব্যাংক অব সুইডিশের দেয়া পুরস্কার ।যা নোবেলের একই সময় ও একই সমমানের হওয়ায় তা নোবেল পুরস্কারের মতো। সুইডেনের ব্যাংকের ৩০০ তম বার্ষিকীতে ১৯৬৮ সালে প্রবর্তিত হয়ে ১৯৬৯ সাল থেকে দেয়া হয় এই পুরস্কার। এর নাম “The Sveringes Riksbank Prize in Economic Scicenes in Memory of Alfred Nobel”

        পুরস্কার হিসাবে যা প্রদান করা হয়ঃ

        ১৯০০ সালের নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার কিছু নিয়ম নির্ধারন করা হয়। সেই নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা, একটি গোল্ড মেডেল এবং একটি সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে। এই অর্থের পরিমান নির্ভর করে নোবেল ফাউন্ডেশনের আয় এর উপর। যদি একাধিক ব্যক্তি একই ক্ষেত্রে পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হন, তাহলে তাদেরকে এই ভাগ করে দেয়া হয়। শুধু মাত্র শান্তি পুরষ্কারের জন্য কোনো ব্যাক্তির বাইরে কোন প্রতিষ্ঠানকেও নির্বাচন করা যায়।

        প্রথম নোবেলঃ

        এই সব নিয়ম কানুন ঠিক করে প্রথম পুরষ্কার ঘোষণা করা হয় ১৯০১ সালে- আলফ্রেড নোবেলের উইল স্বাক্ষরের ৫ বছর পর।
        * পদার্থ বিজ্ঞানে পুরষ্কার পান জার্মান বিজ্ঞানী রন্টজেণ্ট। এক্স-রে আবিষ্কার করার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরষ্কার পান তিনি।
        * রসায়নে অনবদ্য অবদান রাখায় জ্যকব হান্ট হফ নোবেল পান সেই বছর।
        * চিকিৎসায় নোবেল পান এমিল বেরিংডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ।
        * সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয় সুলি ফরুডহোমকে।
        * শান্তিতে যুগ্ম ভাবে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন ফরাসী নাগরিক ফেডেরিক পুসি এবং রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরী ডুনান্ট।
        আর এভাবেই পথ চলা শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার- নোবেল পুরষ্কার।

        নোবেল প্রদানের সময়কালঃ

        আলফ্রেড নোবেলে মৃত্যুদিবস ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের অসলোতে শান্তিু পুরস্কার এবং সুইডেনের স্টকহোমে বাকী পুরস্কার তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। শান্তি পুরস্কার অসলোতে দেয়া হয় নোবেলের ইচ্ছানুযায়ী।

        পুরস্কার ঘোষনাকারী সংস্থাঃ

        ১.নোবেল কমিটি অব দ্য নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট : শান্তি
        ২.রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সাইন্সেস : পদার্থ,রসায়ন,অর্থনীতি
        ৩.সুইডিশ একাডেমি : সাহিত্য
        ৪.ক্যারেলিনস্কা ইনস্টিটিউট : চিকিৎসাবিজ্ঞান

        Professor Answered on March 3, 2015.
        Add Comment

        Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.