RE: স্বপ্ন কত প্রকার?

      ZoomBangla Answer Default Asked on August 11, 2025 in No Category.
      Add Comment
      1 Answers

        রহমানী (যেগুলো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হয়), নফসানী (মনস্তাত্বিক, এগুলো ব্যক্তির নিজের পক্ষ থেকে হয়) এবং শয়তানী (যেগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়)। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “স্বপ্ন তিন প্রকারেরঃ এক প্রকারের হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, আরেক প্রকার যা মানুষকে ভারাক্রান্ত করে, আর তা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে, আরেক প্রকারের স্বপ্ন সংঘটিত সে সমস্ত ব্যাপার থেকে যা ব্যক্তি জাগ্রত অবস্থায় চিন্তা করেছে যা ঘুমের ঘোরে সে দেখতে পায়।” (আল-বুখারী, ৬৪৯৯; মুসলিম, ৪২০০) নবীদের স্বপ্ন হল ওয়াহী কারন কারন তাঁরা শয়তান থেকে সুরক্ষিত। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা রয়েছে। এজন্যই ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে দেখেই তাঁর পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) কুরবানী করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

        নবীদের ছাড়া অন্য লোকদের স্বপ্নকে সুস্পষ্ট ওয়াহীর (কুর’আন ও সুন্নাহ্) আলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। যদি সেগুলো কুর’আন ও সুন্নাহ্ সমর্থিত হয় তাহলেতো ভাল; নাহলে সে স্বপ্নের ভিত্তিতে কোন কাজ করা যাবেনা। এটা একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, কারন অনেক বিদ’আতপন্থী ও সূফীরা তাদের স্বপ্নের উপর নির্ভ্র করেই গোমরাহ হয়ে গিয়েছে।

        কেউ যদি সত্য স্বপ্ন দেখার আশা করে তবে তার উচিৎ সত্য কথা বলার জন্য সদা সচেষ্ট থাকা, হালাল খাওয়া, শরীয়তের হুকুম আহকামগুলো মেনে চলা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা, সম্পূর্ণ পবিত্র অবস্থায় কিবলা মূখী হয়ে শয়ন করা এবং চক্ষু বুজে আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকরে লিপ্ত থাকা। যদি কেউ এমন করে তাহলে কদাচ তার স্বপ্ন অসত্য হতে পারে।

        সবচেয়ে সত্য স্বপ্ন হচ্ছে যা সেহরীর সময়ে দেখা যায়, কারন এ সময়ে আল্লাহ্ তা‘আলা নেমে আসেন এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা আমাদের নিকটবর্তী থাকে। আরো ব্যাপার হচ্ছে এ সময়ে শয়তানরাও চুপ থাকে; অন্যদিকে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকার নেমে আসলে শয়তানরা ও শয়তানী লোকেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।

        [দ্রষ্টব্যঃ ইবন আল-কায়্যিম, “মাদারিজ আস-সালিকীন” ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০-৫২] ইমাম ইবন হাজার আল-আসক্বালানী বলেছেনঃ স্বপ্ন সাধারণত দু’ধরণের হয়ে থাকে।

        প্রথম প্রকার হচ্ছে সত্য স্বপ্ন। এগুলো হচ্ছে নবীদের ও তাঁদের অনুসারী নেককার লোকদের স্বপ্ন। অন্যলোকদের ক্ষেত্রেও এগুলো ঘটতে পারে, তবে এটা বিরল, যেমন মিশরের কাফির বাদশার স্বপ্ন যা তার জন্য ইঊসুফ (আঃ) ব্যাখ্যা করেছিলেন। সত্য স্বপ্নগুলো বাস্তব জীবনেও সত্য হয়ে দেখা দেয় যেমন স্বপ্নে দেখা হয়েছে।

        দ্বীতিয় প্রকার হল মিশ্র ধরণের মিথ্যা স্বপ্ন, যা কোন ব্যাপারে সতর্ক করে। এ গুলো আবার দু’ধরণের। এক প্রকার হচ্ছে শয়তানের খেলা যা দিয়ে সে ব্যক্তিকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। যেমন সে দেখল যে তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে এবং সে সেই কাটা মাথার অনুসরণ করছে; অথবা সে এমন কোন সঙ্কটে পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোন সাহায্যকারী সে পাচ্ছেনা।

        অন্য প্রকার হল যখন সে দেখে যে ফেরেশতারা তাকে কোন হারাম কাজ করতে বলছে; অথবা এমন সব বিষয় যা সাধারণত অর্থহীন।
        যখন কেউ দেখে এমন কিছু যা বাস্তব জীবনে ঘটছে, অথবা তা ঘটার আশা করে এবং সে তা বাস্তবতার মতই স্বপ্নে দেখে। এমনও হয় যে সে দেখে যা সাধারণত তার জীবনে ঘটে অথবা যা তার চিন্তায় থাকে। এ স্বপ্নগুলো সাধারণত বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলে, কদাচ অতীত সম্পর্কে।
        [ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫২-৩৫৪]

        আবূসাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেছেনঃ নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি এমন কোন স্বপ্ন দেখে যা সে পসন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ আল্লাহ্র প্রসংশা আদায় করা ও অন্যদেরকে স্বপ্ন সম্পর্কে বলা। কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিৎ এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এবং কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এরূপ করলে তার কোন ক্ষতি হবেনা।” [আল-বুখারী, ৬৫৮৪; মুসলিম ৫৮৬২]

        আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “ভাল স্বপ্ন হয়ে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তাহলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। [আল-বুখারী ৬৫৯৪; মুসলিম ৫৮৬২] থুথু ফেলা বলতে এখানে এমন থুতু ফেলা বুঝানো হয়েছে যাতে মুখ থেকে শুষ্ক বাস্পাকারে বের হওয়া থুতু বুঝানো হয়েছে যাতে মুখের লালা মিশ্রিত থাকেনা।

        জাবের (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “কেউ যদি এমন কিছু দেখে যা সে অপসন্দ করে তাহলে সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলে এবং শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় চায়; যেন পাশ ফিরে শোয়। [মুসলিম ৫৮৬৪]
        ইবন হাজার (রঃ) বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা তিনটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ

        1. ভাল স্বপ্নের জন্য ব্যক্তির আল্লাহর প্রসংশা আদায় করা উচিৎ।
        2. স্বপ্ন দ্রষ্টার এ জন্য খুশী হওয়া উচিৎ।
        3. সে যাদেরকে ভালবাসে তাদের কাছে তার স্বপ্ন বর্ণনা করা উচিৎ; তাদের কাছে নয় যাদেরকে সে অপসন্দ করে। ইবন হাজার (রঃ) আরো বলেছেনঃ খারাপ স্বপ্ন সম্পর্কে সংক্ষেপে যা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা চারটি বিষয় নির্দেশ করতে পারিঃ
        1. স্বপ্নদ্রষ্টার উচিৎ এর খারাবী থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া,
        2. শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লার আশ্রয় চাওয়া
        3. ঘুম থেকে জাগরিত হওয়ার পর নিজের বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলা; এবং
        4. কারো কাছেই তার এটা বর্ণনা না করা।

        আল-বুখারীর বাব আল-ক্বায়দ ফী আল-মানামে পঞ্চম একটা বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে; আর তাহল নামাজ পড়া। বর্ণনাটা নিম্নরূপঃ যদি কেউ কোন অপসন্দনীয় কিছু স্বপনে দেখে সে যেন তা কাউকে না বলে; বরং তার উচিৎ শোয়া থেকে উঠে নামাজ পড়া। ইমাম মুসলিমও তাঁর সহীহ্তে এটাকে মাউসূল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
        মুসলিম ষষ্ঠ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন; তা হল পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া।
        উপসংহারে বলা যায় স্বপ্ন দেখলে উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ে আমল করা উচিৎ।
        [দেখুনঃ ফাতহ আল-বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০]

        তিরমিজী্তে আবূ রাজ়ীন থেকে বর্ণনা করা এক হাদীস মতে, স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিত নয় শুধুমাত্র এমন অন্তরঙ্গ বন্ধুকে ছাড়া যে তাকে অত্যন্ত ভালবাসে এবং যে প্রজ্ঞাবানও। অন্য বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা কাউকেই বলা উচিৎ নয় শুধুমাত্র জ্ঞানী ও প্রিয়জন ছাড়া। অন্য আরেকটি বর্ণনা মতে স্বপ্নের কথা শুধু কোন আলেমকে বা এমন ব্যক্তি যে আন্তরিক সদুপদেশ দিতে পারে তাকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবেনা। কাজী আবূ বকর ইবন আল-আরাবী (রঃ) বলেছেনঃ আলেমের ব্যাপারটা হচ্ছে তিনি তাঁর জ্ঞানের আলোকে সাধ্যমত ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন; আর আন্তরিক উপদেশদানকারী হয়তো তাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেবেন যা তার জন্য উপকারী প্রমাণিত হবে অথবা কাজটা করতে তাকে সাহায্য করবেন। যিনি প্রজ্ঞাবন তিনি জানবেন কীভাবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে হয় এবং স্বপ্নদ্রষ্টাকে শুধু তাই বলবেন যা তার জন্য সাহায্যকারী হবে; নতুবা তিনি চুপ থাকবেন। তার প্রিয় ব্যক্তির অবস্থা হচ্ছে তিনি যদি ভাল কিছু জানেন তাহলে বলবেন; আর যদি না জানেন বা সন্দেহে থাকেন তাহলে তিনি চুপ থাকবেন। [দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল বারী, দ্বাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯]

        ইমাম বাগাওয়ী (বাগাভী) তাঁর শারহ্ আস—সুন্নাহতে (১২/২২২) উল্লেখ করেছেনঃ জেনে রেখ যে স্বপ্নের তাবীর বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা যায় কুর’আন অথবা সুন্নাহ্র আলোকে, অথবা জনগণের মধ্যে প্রচলিত বাগবিধির আলোকে অথবা বিভিন্ন নাম ও রূপকের মাধ্যমে অথবা বিপরীত কোন বিষয়ের আলোকে।

        তিনি নিম্নরূপ উদাহরণ দিয়েছেনঃ
        কুর’আনের আলোকে ব্যাখ্যাঃ রশিকে কৃত ওয়াদা বা চুক্তি হিসেবে গ্রহন করা যায়, কারণ আল্লাহ্ বলেছেন, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধারণ কর।” [আলে ইমরান, ৩/১০৩]

        সুন্নাহর আলোকে ব্যাখ্যাঃ দাড় কাক কোন পাপাচারী ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করা, কারন রসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাই বলেছেন।
        বাগধারা/বাগবিধির আলোকে ব্যাখ্যাঃ কোন গর্ত খনন করা মানে কোন চক্রান্ত, কারন লোকেরা বলে থাকে, “যে কোন গর্ত খনন করে সে তাতে পতিত হয়।”

        নামের আলোকে ব্যাখ্যাঃ কেউ যদি রাশেদ নামে কাউকে দেখে তার মানে হবে বুদ্ধিমত্তা।.
        বিপরীত বিষয়ের আলোকে ব্যাখ্যাঃ ভয় দেখা মানে নিরাপত্তা, কারণ আল্লাহ্ বলেছেন (তর্জমা), “তিনি নিশ্চয়ই তাদের ভীতির পরে এর পরিবর্তে দান করবেন নিরাপত্তা।” [আন-নূর, ২৪/৫৫]

        অন্যদিকে ইবন সীরীন (সঃ) এর স্বপ্নের তাবীর নামে যে বইটি বাজারে প্রচলিত অনেক গবেষকের মতে এটা আসলে এই মহান আলেম লিখেছেন বলে কোনভাবেই প্রমান করা যায় না।

        Professor Answered on June 28, 2015.
        Add Comment

        Your Answer

        By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.