আত্মা দেহের কোথায় থাকে?
অদ্বৈত বেদান্তের দর্শনের পরিসরে উত্তরটা দিচ্ছি কারণ অদ্বৈতবাদের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন সনাতন দর্শনে সবচেয়ে স্বীকৃত তেমনই আকর্ষণীয় ।
প্রথমেই যেটা বলা উচিত তা হল “আত্মা দেহের কোথায় থাকে?” এই জিজ্ঞাসার উত্তর যদিও সরাসরি দেওয়া সম্ভব, অদ্বৈতবাদের অধিবিদ্যা (metaphysics) সম্পর্কে কিছু ধারণা না দিলে সেই উত্তর খুব অর্থপূর্ণ হবে না ।
অদ্বৈতবাদ অনুসারে ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীবাত্মা ও ব্রহ্ম অভিন্ন । আমাদের বাইরের জগতের বৈচিত্রের মধ্যে যা সাধারণভাবে বর্তমান, অনিত্যের মধ্যে যা নিত্য, বিশেষের মাঝে যা নির্বিশেষ, তাই ব্রহ্ম; তেমনই আমাদের অন্তরের মনোজগতের বিভিন্ন অবস্থায় যা সাধারণভাবে বর্তমান, তাই আত্মা । অন্যভাবে বললে, বিষয়গত ভাবে (objectively) যা ব্রহ্ম, বিষয়ীগতভাবে (subjectively) তাই আত্মা ।
ব্রহ্ম বা আত্মা হল সত্য বা সৎ । কোনো বস্তু সৎ বলার অর্থ তা নিত্য, নির্বিশেষ, এবং তার স্বরূপের কোনো অন্যথা হয় না । বিপরীতে কোনো বস্তু অসৎ বলার অর্থ তা অলীক এবং কখনই প্রত্যক্ষিত হয় না । বেশ, তবে মিথ্যা কী?
মিথ্যা হল তাই যা সত্যকে আশ্রয় করে প্রতিভাসিত এবং প্রত্যক্ষিত হয় । অন্যভাবে বললে নির্বিশেষের উপর বিশেষের আরোপ ঘটলেই মিথ্যার প্রতিভাস (appearance) ঘটে । কিন্তু এই মিথ্যার প্রকৃতি কী? একদিকে দেখা যাচ্ছে সে সৎ নয়, আবার অন্যদিকে সে অসৎও নয় । তবে তা কী? এর উত্তর হল— মিথ্যা সৎ ও অসৎ দুইয়ের থেকেই ভিন্ন; অর্থাৎ মিথ্যা না সৎ, না অসৎ ।
এইবারে আমরা মূল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি— নির্বিশেষ আত্মার উপর যখন বিশেষ জড়দেহের আরোপ ঘটে তখন তাকে বলা হয় “জীব” বা “জীবাত্মা” । কিন্তু যদি জানতে চাই এই জীবাত্মা জীবদেহে কোথায় অবস্থিত তবে এর উত্তর হল—কোথাও নয় । কারণ যা নির্বিশেষ তাকে কোনো বিশেষে, কিংবা যা নিরাকার তাকে কোনো আকারবিশিষ্ট সত্তায় পাওয়া যেতে পারে না । যেহেতু দেহমাত্রই বিশেষ ও আকারযুক্ত, এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী আত্মাকে দেহের কিংবা দেহের কোনো স্তরেই পাওয়া সম্ভব নয় ।
আবার যা কিছুই বিশেষ ও আকৃতিবিশিষ্ট তা পরিণামজন্য, অর্থাৎ কোনো কোনো কিছুর পরিণাম হিসেবে সৃষ্ট, এবং বিশেষ স্থান ও কালে (সময়ে) প্রতিভাসিত হয় । আমাদের দেহও পরিণামজন্য এবং বিশেষ স্থান ও কালেই প্রত্যক্ষিত হয় । কিন্তু আত্মা অপরিণামী এবং কোনো নির্দিষ্ট স্থান-কালে সে বাধিত হতে পারে না কারণ তা নিত্য । অতএব এই যুক্তিও বলে দেহের কোথাও আত্মাকে পাওয়া যেতে পারে না ।
শেষ করার আগে বলব— আমি জানি না প্রশ্নকারী আব্রাহামিক ধর্মের Soulএর ধারণার প্রেক্ষিতে এই উত্তর চেয়েছিলেন কিনা । সেক্ষেত্রে আমি দুঃখিত, এই উত্তর হয়তো যথার্থ হবে না । কিন্তু আমি যদ্দুর জানি, Soulএরও কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান দেহে চিহ্নিত করা হয় না । বরং তা দেহেরই আকার ধারণ করে বলে মনে করা হয় । তবে এই বিষয়ে পাঠক কোনো ত্রুটি খুঁজে পেলে তা মন্তব্যে জানাতে স্বাগত ।
অদ্বৈত বেদান্তের দর্শনের পরিসরে উত্তরটা দিচ্ছি কারণ অদ্বৈতবাদের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন সনাতন দর্শনে সবচেয়ে স্বীকৃত তেমনই আকর্ষণীয় ।
প্রথমেই যেটা বলা উচিত তা হল “আত্মা দেহের কোথায় থাকে?” এই জিজ্ঞাসার উত্তর যদিও সরাসরি দেওয়া সম্ভব, অদ্বৈতবাদের অধিবিদ্যা (metaphysics) সম্পর্কে কিছু ধারণা না দিলে সেই উত্তর খুব অর্থপূর্ণ হবে না ।
অদ্বৈতবাদ অনুসারে ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীবাত্মা ও ব্রহ্ম অভিন্ন । আমাদের বাইরের জগতের বৈচিত্রের মধ্যে যা সাধারণভাবে বর্তমান, অনিত্যের মধ্যে যা নিত্য, বিশেষের মাঝে যা নির্বিশেষ, তাই ব্রহ্ম; তেমনই আমাদের অন্তরের মনোজগতের বিভিন্ন অবস্থায় যা সাধারণভাবে বর্তমান, তাই আত্মা । অন্যভাবে বললে, বিষয়গত ভাবে (objectively) যা ব্রহ্ম, বিষয়ীগতভাবে (subjectively) তাই আত্মা ।
ব্রহ্ম বা আত্মা হল সত্য বা সৎ । কোনো বস্তু সৎ বলার অর্থ তা নিত্য, নির্বিশেষ, এবং তার স্বরূপের কোনো অন্যথা হয় না । বিপরীতে কোনো বস্তু অসৎ বলার অর্থ তা অলীক এবং কখনই প্রত্যক্ষিত হয় না । বেশ, তবে মিথ্যা কী?
মিথ্যা হল তাই যা সত্যকে আশ্রয় করে প্রতিভাসিত এবং প্রত্যক্ষিত হয় । অন্যভাবে বললে নির্বিশেষের উপর বিশেষের আরোপ ঘটলেই মিথ্যার প্রতিভাস (appearance) ঘটে । কিন্তু এই মিথ্যার প্রকৃতি কী? একদিকে দেখা যাচ্ছে সে সৎ নয়, আবার অন্যদিকে সে অসৎও নয় । তবে তা কী? এর উত্তর হল— মিথ্যা সৎ ও অসৎ দুইয়ের থেকেই ভিন্ন; অর্থাৎ মিথ্যা না সৎ, না অসৎ ।
এইবারে আমরা মূল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি— নির্বিশেষ আত্মার উপর যখন বিশেষ জড়দেহের আরোপ ঘটে তখন তাকে বলা হয় “জীব” বা “জীবাত্মা” । কিন্তু যদি জানতে চাই এই জীবাত্মা জীবদেহে কোথায় অবস্থিত তবে এর উত্তর হল—কোথাও নয় । কারণ যা নির্বিশেষ তাকে কোনো বিশেষে, কিংবা যা নিরাকার তাকে কোনো আকারবিশিষ্ট সত্তায় পাওয়া যেতে পারে না । যেহেতু দেহমাত্রই বিশেষ ও আকারযুক্ত, এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী আত্মাকে দেহের কিংবা দেহের কোনো স্তরেই পাওয়া সম্ভব নয় ।
আবার যা কিছুই বিশেষ ও আকৃতিবিশিষ্ট তা পরিণামজন্য, অর্থাৎ কোনো কোনো কিছুর পরিণাম হিসেবে সৃষ্ট, এবং বিশেষ স্থান ও কালে (সময়ে) প্রতিভাসিত হয় । আমাদের দেহও পরিণামজন্য এবং বিশেষ স্থান ও কালেই প্রত্যক্ষিত হয় । কিন্তু আত্মা অপরিণামী এবং কোনো নির্দিষ্ট স্থান-কালে সে বাধিত হতে পারে না কারণ তা নিত্য । অতএব এই যুক্তিও বলে দেহের কোথাও আত্মাকে পাওয়া যেতে পারে না ।
শেষ করার আগে বলব— আমি জানি না প্রশ্নকারী আব্রাহামিক ধর্মের Soulএর ধারণার প্রেক্ষিতে এই উত্তর চেয়েছিলেন কিনা । সেক্ষেত্রে আমি দুঃখিত, এই উত্তর হয়তো যথার্থ হবে না । কিন্তু আমি যদ্দুর জানি, Soulএরও কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান দেহে চিহ্নিত করা হয় না । বরং তা দেহেরই আকার ধারণ করে বলে মনে করা হয় । তবে এই বিষয়ে পাঠক কোনো ত্রুটি খুঁজে পেলে তা মন্তব্যে জানাতে স্বাগত ।