আল্লাহ তা’আলা কি ছোট বড় সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করবেন?

আল্লাহ তা’আলা কি ছোট বড় সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করবেন?

Add Comment
1 Answer(s)

    অপরাধ যত বড়ই হোক আল্লাহর ক্ষমা তার চেয়েও বড়

    অপরাধ ও গুনাহ যত বড় বা বেশি হোক না কেন, যখন বান্দা তাওবা করবেন, আল্লাহ তা’আলা তার অপরাধকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আমাদের কারো মনে এমন কোন প্রশ্ন  জাগে যে, আল্লাহ তা’আলা কি ছোট বড় সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করবেন?। অপরাধ যদি বড় হয় তাও কি তিনি ক্ষমা করবেন?। তার উত্তর হল হ্যাঁ যত বড় অন্যায় হোক না কেন আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

    ﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥ ﴾ [الشورى: ٢٥]

    “আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন”।[23] আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

    ﴿ غَافِرِ ٱلذَّنۢبِ وَقَابِلِ ٱلتَّوۡبِ شَدِيدِ ٱلۡعِقَابِ ذِي ٱلطَّوۡلِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ إِلَيۡهِ ٱلۡمَصِيرُ ٣ ﴾ [غافر: ٣]

    “তিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবূলকারী, কঠোর আযাবদাতা, অনুগ্রহ বর্ষণকারী। তিনি ছাড়া কোন [সত্য] ইলাহ নেই। তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন”। [24]

    আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,

    ﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [النساء : ١١٠]

    “আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।[25]

    যদি আপনি এ পরিমাণ অপরাধ করেন, ফলে আপনার গুনাহ আকাশ ছুঁয়ে গেল, অতঃপর আপনি লজ্জিত হয়ে ফিরে আসলেন এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার তাওবা অবশ্যই কবুল করবেন এবং আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।

    عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله – صلى الله عليه وسلم – يقول: قال الله تبارك وتعالى: [يا ابن آدم إنك ما دعوتني ورجوتني غفرت لك على ما كان فيك ولا أبالي، يا ابن آدم لو بلغت ذنوبك عنان السماء ثم استغفرتني  غفرت لك ولا أبالي، يا ابن آدم إنك لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا لأتيتك بقرابها مغفرة .

    আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমাকে পাওয়ার আশা করবে, আমি তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি আছে, সেগুলো নির্বিঘেœ ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহের স্তুপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে, তারপরও তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইলে, আমি নির্বিঘেœ তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইতে আসলে যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করোনি, আমি জমিন ভর্তি ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব”।[26]

    عن أنس-رضي الله عنه -عن النبي-صلى الله عليه وسلم -فيما يرويه عن ربه- عز وجل- قال: [إذا تقرب العبد إليّ شبراً تقربت إليه ذراعاً، وإذا تقرب إلي ذراعاً تقربت منه باعاً، وإذا أتاني يمشي أتيته هرولة] رواه البخاري،

    আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন কোন বান্দা আল্লাহর দিক এক বিঘাত অগ্রসর হয়, আল্লাহ বলেন, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর যখন কোন বান্দা এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। আর যখন কোন বান্দা আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।[27]

    একশজন লোক হত্যাকারীর তাওবা

    একজন মানুষ যত গুনাহ করুক না কেন, সে যখন গুনাহ থেকে ফিরে এসে অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। নিম্নে আমরা আগেকার উম্মতদের মধ্য থেকে একজন লোকের কাহিনী উলে¬খ করছি, যিনি একশ লোককে হত্যা করেন।

    عن أبي سعيد الخدري أن نبي الله صلى الله عليه وسلم قال كان فيمن كان قبلكم رجل قتل تسعة وتسعين نفسا فسأل عن أعلم أهل الأرض فدل على راهب فأتاه فقال إنه قتل تسعة وتسعين نفسا فهل له من توبة فقال لا فقتله فكمل به مائة ثم سأل عن أعلم أهل الأرض فدل على رجل عالم فقال إنه قتل مائة نفس فهل له من توبة فقال نعم ومن يحول بينه وبين التوبة انطلق إلى أرض كذا وكذا فإن بها أناسا يعبدون الله فاعبد الله معهم ولا ترجع إلى أرضك فإنها أرض سوء فانطلق حتى إذا نصف الطريق أتاه الموت فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب فقالت ملائكة الرحمة جاء تائبا مقبلا بقلبه إلى الله وقالت ملائكة العذاب إنه لم يعمل خيرا قط فأتاهم ملك في صورة آدمي فجعلوه بينهم فقال قيسوا ما بين الأرضين فإلى أيتهما كان أدنى فهو له فقاسوه فوجدوه أدنى إلى الأرض التي أراد فقبضته ملائكة الرحمة قال قتادة فقال الحسن ذكر لنا أنه لما أتاه الموت نأى بصدره

    “আবু সাঈদ সাদ বিন মালেক বিন সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের জাতির একটি লোক নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করে, এরপর সে সবচেয়ে বড় একজন জ্ঞানী লোকের [আলেমের] খোঁজ করে, তখন তাকে একজন আবেদের কথা বলা হয়। সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি নিরানব্বই জন মানুষকে খুন করেছি, আমার তাওবা আছে কি? সে বলল, না তোমার তাওবা নাই। অতঃপর লোকটি তাকেও হত্যা করে এবং সে একশ জন লোক পুরা করে। অতঃপর সে আবারও একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির খোঁজ করলে একজন আলেমের খোঁজ দেয়া হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি একশটি লোক হত্যা করেছি, আমার কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। কে তোমার ও তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে? তুমি উমুক স্থানে যাও সেখানে কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদাত করে, তুমি তাদের সাথে গিয়ে আল্লাহর ইবাদাত কর। আর তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যেও না। কেননা, তোমার এলাকাটা খুব খারাপ এলাকা। সে তখন যাত্রা শুরু করে। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার সময় তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার ব্যাপারে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতারা বিবাদে লিপ্ত হয়। রহমতের ফেরেশতারা বলে, সে তাওবা করে আল্লাহর পানে ছুটে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতারা বলে, সে কখনো কোন ভালো কাজই করেনি। অতঃপর সেখানে মানুষের বেশে একজন ফেরেশতা আসে। তারা তাকে বিচারক মানে। তিনি বলেন, তোমরা দুদিকটা মেপে দেখ। সে যেদিকে নিকটবর্তী হবে, তাকে সেদিকের বলে ধরে নেয়া হবে। অতঃপর মেপে দেখা গেল যে, সে যেদিকে যাচ্ছিল সে দিকটাই নিকটে। এর ফলে তাকে রহমতের ফেরেশতারা নিয়ে যায়।[28]

    অপর বর্ণনায় এসেছে- সে ছিল ভাল গ্রামটার দিকে এক বিঘত পরিমাণ আগানো যার ফলে তাকে সেদিকের ধরে নেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ অহি করে দেন যেন এদিক দূরে হয়ে যায় এবং ঐদিকটা নিকটে হয়ে যায় এবং বলেন এর মধ্যখান মাপো যার ফলে তারা মাত্র এক বিঘত পরিমাণ এর দিকে আগান পায়, যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়”।

    একটু ভেবে দেখুন, লোকটি এত বড় অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। আমরা যারা আজকে তাওবা করতে চাই তাদের কেউ আশা করি এত বড় অপরাধী নই। তাহলে আমাদের ক্ষমা পাওয়া তো আরও সহজ। আমরা যদি খালেস মন নিয়ে আল্লাহর দরবারে তাওবা করার জন্য উপস্থিত হই তখন আমার তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। আমাদের গুনাহ তো এ ব্যক্তির চেয়ে বেশী নয় এবং বড় নয় তাহলে হতাশা কেন? আল্লাহতো আমাদের ক্ষমা করবেনই।

    Professor Answered on May 11, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.