Zohad's Profile
Doctor
235
Points

Questions
303

Answers
1

  • আরবি ১২ মাসের অন্যতম মাস পবিত্র রমজান। এই মাসকে ইবাদতের মৌসুম বলা হয়। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এই মাসে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই মাসে অন্যান্য আমলের প্রতিদান অন্য মাসগুলোর তুলনায় বেশি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র রমজানের পূর্ণময়ী আমল রোজা। সঠিক ও শুদ্ধভাবে রমজান মাসের রোজা পালন করার জন্য বেশ কিছু নিয়ম-কানুন ও নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা আবশ্যক।

    জীবনযাপনের তাগিদেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে চলতে হয় আমাদের। হোক তা ব্যবসায়িক স্বার্থে কিংবা অন্য কোনো সৎ উদ্দেশ্যে। পবিত্র রমজান মাসেও থেমে থাকে না আমাদের জীবনযাপন প্রক্রিয়ার এই গতি। কাজের তাগিদে ছুটে যেতে হয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। কখনো কখনো এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে হয়। পর্যটক- ইসলামী শরিয়তের ভাষায় যাকে মুসাফির বলা হয়। সফরকালীন রোজা রাখা না রাখা নিয়ে আমাদের মাঝে বেশ বিভ্রান্তি ও সংশয় রয়েছে। অনেকেই এ বিষয়টিকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, রমজান মাস, এ মাসেই কোরান অবতীর্ণ হয়েছে, যা বিশ্ব মানবতার জন্য পথপ্রদর্শক ও দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সংবলিত এবং হক ও বাতিলের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টিকারী। কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এই মাসের সাক্ষাৎ লাভ করবে, তার জন্য সম্পূর্ণ মাস রোজা রাখা অপরিহার্য। আর যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত বা সফরে থাকবে, সে যেন অন্য সময় রোজার সংখ্যা পূর্ণ করে। আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে উদার নীতি অবলম্বন করতে চান; কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না। তাই তোমাদের এ পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হিদায়াত দিয়েছেন, সে জন্য তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো। [২ : ১৮৫]

    পবিত্র কোরানের আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে কিছু শ্রেণীর মানুষের ওপর রোজা রাখার বাধ্যবাধকতাকে কিছুটা নরম করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। রোগাক্রান্ত, মুসাফির বা সফরকারী, গর্ভবতী নারী, দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা এবং রোজা রাখতে অক্ষম বৃদ্ধ-বৃদ্ধা- এসব শ্রেণীভুক্ত মানুষের রোজা রাখা না রাখাকে তাদের ইচ্ছা ও পছন্দের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে; এবং বলা হয়েছে- এরা যেন রমজান মাস ছাড়া অন্য সময় এসব রোজার সংখ্যা পূর্ণ করে, অর্থাৎ কাজা আদায় করে।

    রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। তিনি সফরে থাকাকালে কখনো রোজা রেখেছেন, আবার কখনো রাখেননি। সাহাবা আজমাইনরা অনেক সময় রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বিভিন্ন সফরে যেতেন। রমজান মাসের সফরে সাহাবিদের কেউ কেউ রোজা রাখতেন, আবার কেউ কেউ রাখতেন না; এবং এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) কাউকে কিছু বলতেন না। আর সাহাবিরাও পরস্পর কেউ কারো বিরোধিতা করতেন না। বর্ণিত আছে, এক সাহাবি একবার রোজা রেখে সফরে বের হলেন এবং কোনো কারণে বেহুশ হয়ে পড়লেন। লোকজন এসে তাঁর আশপাশে ভিড় জমালো। এ অবস্থা দেখে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে, তার? তাঁকে জানানো হলো, রোজা রেখে সফর করায় দুর্বলতাবশত এমনটি হয়েছে। তখন রাসুল (সা.) বললেন, এটা কোনো সৎকাজ নয়। রাসুল (সা.)-এর এই বাণী থেকে বোঝা যায়, সফরকালে রোজা রাখাটা জরুরি কোনো বিষয় নয়। তবে সফরকালে রোজা রাখাকে যাঁরা হারাম বা অবৈধ বলেন, তাঁদের মতামতও সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।

    কোরান-হাদিসের আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, সফরকালে রোজা রাখার বিষয়টিকে ইচ্ছা ও পছন্দের সঙ্গে সম্পর্কিত করার কারণ হলো সফরকারীর কষ্ট লাঘব করা। আর এই ছেড়ে দেওয়া মানে একেবারে ছেড়ে দেওয়া নয়। রমজান মাসে সফর বা অন্য কোনো কারণে যে কয়টি রোজা রাখা সম্ভব হয়নি, রমজানের পর অন্য যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে তা আদায় করতে হবে। আর যদি সফরকারী কোনো ব্যক্তি মনে করে, সফরকালে রোজা রাখলেও তার কোনো অসুবিধা হবে না, তাহলে সে রোজা রাখতে পারবে; এবং এটাই হবে তার জন্য অতি উত্তম।

    এক দেশে রোজা শুরু করে অন্য দেশে চলে গেলে :
    রমজান মাসে মুসাফির ব্যক্তির জন্য আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা হলো- এক দেশে রোজা রাখা শুরু করে মধ্যবর্তী সময়ে অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়া হয়। এতে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। রোজা কম-বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ পরিস্থিতিতে একজন পর্যটক কী করবে? এক দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখার পর কেউ যদি অন্য কোনো দেশে চলে যায়, তাহলে সে ওই দেশের সংখ্যা ও নিয়ম মেনে বাকি রোজা পালন করবে এবং ওই দেশের সময় ও জনসাধারণের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। আর এই স্থান পাল্টানোর কারণে মাঝখান থেকে যে কয়টি রোজা তার কম হবে, সেগুলোকে রমজান মাসের পর কোনো সুবিধাজনক সময়ে কাজা আদায় করে নেবে। উদাহরণস্বরূপ : কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নিয়ম ও সময় অনুযায়ী চাঁদ দেখে রোজা রাখা শুরু করলেন। ১০টি রোজা রাখার পর কোনো কারণে অন্য দেশে যেতে হলো তাঁকে। সেখানে গিয়ে দেখলেন, ১২তম রোজা চলছে। তখন তিনি ওই দেশের নিয়ম ও সময় মেনে বাকি রোজা রাখবেন এবং সেখানে থাকলে ঈদ উদযাপন করবেন। এবং যে রোজা তার মাঝখান থেকে কম হলো, রোজার পর সুবিধাজনক কোনো এক সময়ে সেটার কাজা আদায় করে নেবে। [ফাতওয়ায়ে শামী- ৩/৩১; ফাতওয়ায়ে রহমানিয়া- ৫/১৮০-৮১]

    • 897 views
    • 1 answers
    • 0 votes