রূপচর্চার কি কি ক্ষেত্রে লেজার চিকিৎসা নেয়া যায়?

রূপচর্চার কি কি ক্ষেত্রে লেজার চিকিৎসা নেয়া যায়?

Train Asked on April 2, 2015 in সাধারণ.
Add Comment
1 Answer(s)

    সৌন্দর্যচর্চার আদি ধারণা এবং নিয়মগুলো নিয়ে হয়তো আপনি সন্তুষ্ট নন কিংবা বাজারের কেমিক্যাল প্রসাধনীতে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তখন নতুন এবং বিকল্প কোন উপায় ভাবতে গেলে প্রথমেই আসে লেজারের কথা। আর আপনি যদি লেজার করানো নিয়েই ভেবে থাকেন, তবে আপনার জন্যই আমাদের আজকের এই আয়োজন। লেজার ট্রিটমেন্ট সৌন্দর্যচর্চায় এনেছে ভিন্নমাত্রা। এটি এক ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি। চিকিৎসার মাধ্যমে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখা বা বাড়িয়ে তোলা অথবা বডি শেপিং করা, সবই সম্ভব লেজারের বদৌলতে। ব্যথামুক্ত এবং কোনো রকম কাটা-চেড়া ছাড়াই করা যায় এ চিকিৎসা। তাই দিন দিন এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    চিকিৎসক সমাচারঃ

    যেহেতু এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, তাই লেজার করাতে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। আপনি যেখানেই লেজার ট্রিটমেন্ট করাতে চান না কেন অবশ্যই চিকিৎসকের কোয়ালিফিকেশন দেখে নিন। যিনি লেজার ট্রিটমেন্ট দিবেন তিনি একজন ডারমাটোলোজিস্ট হবেন এবং লেজার বিষয়ে তার একটি বিশেষ ডিগ্রি থাকবে। এমন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানেই আপনি লেজার ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। যদি চোখে লেজার করাতে চান তবে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে করতে হবে।

    লেজার কিঃ

    সূর্যের আলোর একটি নির্দিষ্ট ওয়েভ লেংথকে আলাদা করে তার ক্ষমতা অনেক গুণ বাড়িয়ে মানুষের শরীরে বিশেষ পরিবর্তন আনা সম্ভব। লেজার করা হয় এমনই এক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি একটি ফোটন রশ্মি, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক নয়। তাই নিশ্চিন্তে এ চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।

    লেজারের ক্ষেত্রঃ

    লেজারের মাধ্যমে মুখের বলিরেখা, ব্রণ সমস্যা, মুখের কালো দাগ, চুল পড়া, জন্ম দাগ, অবাঞ্ছিত লোম তোলা, বডি শেপিং – এসব কিছুই করা সম্ভব। লেজার ট্রিটমেন্ট এর জন্য কয়েকটি সেশনের প্রয়োজন। চিকিৎসার সুফল পেতে হলে ধৈর্য্য ধরে সবকটি সেশনেই অংশ নিতে হবে। যদি না করা হয়, তবে সমস্যাগুলো আবার দেখা দেয়।

    ০১. বলিরেখা ও বয়সের ছাপঃ

    বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে, বিশেষ করে মুখে, চোখের চারপাশে বলিরেখা পড়তে শুরু করে। বাজারে অনেক অ্যান্টি এজিং প্রসাধনী পাওয়া যায়, কিন্তু এতে কাজ হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আবার দুশ্চিন্তায়-ও অনেকের মুখে বলিরেখা পড়তে পারে। এ সব কিছু থেকে লেজার চিকিৎসা সহজেই মুক্তি দিতে পারে।

    ০২. অবাঞ্ছিত লোম অপসারণঃ

    এক্ষেত্রে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মানুষ লেজারের ট্রিটমেন্ট নিয়ে থাকেন। লেজার রশ্মির সাহায্যে খুব সহজেই দেহের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করা সম্ভব। অনেকেই লোম রিমুভ করার জন্য নানা রিমুভার, রেজর, ওয়াক্সিং ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। অনেক মেয়েদের-ই হরমোনের প্রভাবে মুখে বা অপ্রীতিকর কোন স্থানে লোম গজাতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে লোম অপসারণ করার উপায় হল লেজার ট্রিটমেন্ট।

    ০৩. অ্যান্টি মার্কস ট্রিটমেন্টঃ

    মুখে ব্রনের দাগ, পক্সের দাগ, মেছতা অথবা জন্মদাগ, এগুলো সাধারণ চিকিৎসা বা সাধারণ রূপচর্চায় দূর করা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে লেজারের অ্যান্টি মার্কস ট্রিটমেন্ট চিকিৎসা নিলে দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

    ০৪. বডি শেপিং :

    দেহের যেসব জায়গায় মেদ বেশি, সেসব জায়গায় লেজারের মাধ্যমে মেদ গলিয়ে দেয়া হয়। একে বলে লাইপোলাইসিস। কেভিটেশন, ভ্যাকুয়াম, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, লেজার লাইপোসাকশন এবং ডায়েট প্লানের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত বেশ কয়েকটি সেশন লেগে যায়। এতে করে খুব সহজেই আপনি আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী হতে পারেন।

    ০৫. চুল গজানোর ক্ষেত্রেঃ

    লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে নতুন চুল গজানো সম্ভব। এজন্য বিশেষ ধরনের লেজার ব্যবহার করা হয়।

    ০৬. ব্রণ এবং লেজার ফেসিয়ালঃ

    আজকাল ব্রণের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হচ্ছে লেজার এর মাধ্যমে। ফেসিয়ালের কাজেও লেজার ব্যবহার করা হয়। এতে করে মুখ হয়ে ওঠে সজীব এবং সতেজ। ফিরে আসে হারানো উজ্জ্বলতা।

    ০৭. অন্যান্য ক্ষেত্রঃ

    শ্বেত রোগ চিকিৎসায়-ও লেজার সফল। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ লেজারের মাধ্যমে করা সম্ভব। তা হল ল্যাসিক। আপনার চোখের পাওয়ার ফিরিয়ে আনার কাজে লেজার রশ্মি অব্যর্থ হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে আপনাকে একজন চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।

    পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াঃ

    লেজার ট্রিটমেন্ট এর কিছু সাইড ইফেক্ট হতে পারে। এগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন-

    ০১. সানবার্নের মতো ইফেক্টঃ

    লেজার করার পর ত্বকে সানবার্নের মতো পোড়া ভাব দেখা যেতে পারে। দেখে মনে হতে পারে পুড়ে গেছে। কিন্তু এটা অস্থায়ী। কিছুদিন পর সেরে যায়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে আক্রান্ত স্থানে ধরা, চুলকানো এগুলো যেন করা না হয়। এতে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে।

    ০২. ব্যথাঃ

    লেজার ট্রিটমেন্ট এর পর একটু ব্যথা হতে পারে কিন্তু যেহেতু এই চিকিৎসায় কোন কাটাচেঁড়ার ব্যাপার নেই,তাই ব্যথা দ্রুত কমে যায়।

    ০৩. পিগমেনটেশনঃ

    চিকিৎসার পর ত্বকের রং পরিবর্তন হতে পারে। ত্বকে গাঢ় রং হতে পারে অথবা রং হালকা হয়ে যেতে পারে। কিছু কিছু স্থায়ী হলেও অধিকাংশই অস্থায়ী।

    ০৪. হেয়ার রিমুভাল রিএকশনঃ

    লেজারের মাধ্যমে হেয়ার রিমুভ করার পর, ঐ স্থানে চুলের গোড়ায় ফুলে যেতে পারে। ফোসকার মতো হতে পারে। লাল রং হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ-ও হতে পারে। ১ থেকে ৩ দিনে সাধারণত ভালো হয়ে যায়।

    ০৫. চোখের সমস্যাঃ

    চোখে লেজার ট্রিটমেন্ট করার পর কয়েক দিন পর্যন্ত চোখে নাও দেখতে পারে। চোখে ঘোলা দেখা এবং রাতে কম দেখতে পাওয়া যেতে পারে। সাধারণত এক সপ্তাহেই তা সেরে যায়।

    এছাড়া আরও কিছু সমস্যা হতে পারে-

    ০৬. ত্বকের নিচে লাল লাল ফোটা হতে পারে। এটা মূলত রক্ত জমে হয়।

    ০৭. লেজার দেয়া ত্বক এবং সাধারণ ত্বকের মাঝে ভেদকারী লাইন দেখা যেতে পারে।

    ০৮. স্কার গঠন হতে পারে।

    ০৯. ত্বকের বিশেষ করে মুখের মেদ কমে যেতে পারে।

    ১০. সমস্যাটি পুনরায় ফিরে আসতে পারে।

    করনীয়ঃ

    ০১. আপনি যদি লেজার ট্রিটমেন্ট গ্রহণ করতে চান, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আসলেই চান কিনা অথবা সাধারণ চিকিৎসা নিতে চান কিনা।

    ০২. আপনার মন স্থির করুন এবং প্রস্তুতি নিন।

    ০৩. হেয়ার রিমুভ করতে চাইলে ৬ সপ্তাহ আগে থেকে লোম উঠানো, ওয়াক্সিং করা বন্ধ করুন।

    ০৪. লেজার ট্রিটমেন্ট এর পর ৬ সপ্তাহ সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন।

    ০৫. কোন সমস্যা হলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

    ০৬. শুধু লেজার চিকিৎসাই না, পাশাপাশি আরও নিয়ম মেনে চলুন। যেমন – খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রন করা, ব্যায়াম করা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা করা ইত্যাদি।

    এভাবে আপনি পেতে পারেন একটি সফল লেজার ট্রিটমেন্ট।

    Professor Answered on April 2, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.