যৌন হয়রানির শিকার হলে কি করব?
যৌন হয়রানির শিকার হলে কি করব?
পৃথিবীর সকল ধর্মে বলা হয়েছে নারীকে সম্মান করতে, তাদের রক্ষা করতে। এ কথা কি মেনে চলা হয়? নারীকেই অবদমন করা হয় সবচেয়ে বেশি, নারীকেই করা হয় প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত। যৌন হয়রানি তার অন্যতম উদাহরণ। সভ্য মানুষের অসভ্যতার অন্যতম নিদর্শন যেন এটি। যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন হয়রানির ঘটনাও দিন দিন বেড়ে চলছে। রাস্তাঘাটে, ভীড়ের সুযোগে, বাসে, অফিসে, মার্কেটে – কোথাও নারীরা নিরাপদ নন। কুরুচিপূর্ণ কিছু পুরুষের কাছে তারা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হয়ে চলছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো নারীরা তাদের আপনজনদের কাছেই নিরাপদ না। অর্থাত্ আত্মীয়স্বজন দ্বারাই যৌন হয়রানির ঘটনা বেশি ঘটে। পড়ে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি!
যৌন হয়রানি কিন্তু কখনো কখনো যৌন নির্যাতনের রূপও ধারণ করে। যৌন হয়রানি মানে যে শুধু গায়ে হাত দেয়া তা নয়। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, অশ্লীল মন্তব্য করা, অশ্লীল ছবি প্রদর্শন ইত্যাদি সবই যৌন হয়রানির অন্তর্ভুক্ত। ধরুন, আপনার কোনো মামাত ভাই আপনাকে অনবরত অশ্লীল জোকস বলে যা আপনি পছন্দ করেন না। এটাও কিন্তু এক প্রকার যৌন হয়রানি। এভাবে প্রায়শই মেয়েরা নিজের অজান্তেই যৌন হয়রানি শিকার হয়ে থাকেন।
যৌন হয়রানির শিকার হলে বেশির ভাগ মেয়েরাই তা চেপে যান। এটা মোটেও ঠিক নয়। এর ফলে পরবর্তীতে যৌন হয়রানি নিতে পারে যৌন নির্যাতনের রূপ, আপনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আরো অনেকেই। তাই চুপ করে থাকবেন না, প্রতিবাদ করুন বা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।
কী করবেন :
ভীড়ভাট্টায় হঠাত্ করে যৌন হয়রানির শিকার হলে তখন তাত্ক্ষণিক ভাবে তেমন কিছু করার থাকে না। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো নিতে পারেন যথাযথ পদক্ষেপ। বিশেষ করে অফিসে বা আত্মীয়স্বজনদের দ্বারা এমন ঘটনা ঘটলে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া আপনার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
নিজ গৃহে :
নিজের বাড়িতেই মেয়েরা অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হয়। শতকরা প্রায় ৮৭% মেয়ের জীবনেই থাকে আপনজনদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা। বাড়িতে বেড়াতে আসা পুরুষ আত্মীয়রা অথবা আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে সাধারণত এসব ঘটনা ঘটে। আপনার সাথে এমন কিছু ঘটলে ভয় পাবেন না বা চেপে যাবেন না। প্রথমেই ব্যাপারটি আপনার অভিভাবকদের জানান। তাদেরকে বলুন ব্যবস্থা নিতে। আত্মীয় বলে তাকে ছেড়ে দেয়াটা ভুল হবে।
কারণ যারা যৌন হয়রানি করতে পারে তারা ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধও করতে পারে। তাই প্রয়োজন পড়লে পুলিশের সাহায্য নিন। অনিরাপদ মনে হলে অপরাধীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। তাকে এড়িয়ে চলুন এবং তার কাছ থেকে সাবধানে থাকুন।
কর্মক্ষেত্রে :
কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারাও যৌন হয়রানি ঘটনা প্রায়শই ঘটে। এক্ষেত্রে প্রথমেই ঘটনাটি আপনার নারী সহকর্মীদের জানান। অফিসেও একা একা চলাফেরা করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময়েও সাথে একজনকে নিয়ে যান। এরপর অফিসের প্রধান কর্মকতাকে জানান। আর যদি বসই যৌন হয়রানি করে থাকেন, তাহলে ব্যাপারটি অফিসের অন্যান্য সহকর্মীদের জানান এবং সম্ভব হলে অফিস অথরিটিকে অভিযোগ করুন। ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে চাকরি ছেড়ে দেয়াটাই মঙ্গলজনক হবে। এক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন। আর যদি একান্তই চাকরি ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করুন। একা অফিসে থাকবেন না এবং আপনার সমস্যার কথা সকলকে জানিয়ে রাখুন।
পাবলিক প্লেসে :
আপনি একা থাকলে ওই জায়গা থেকে চলে যাওয়াটাই ভালো হবে। সাথে সঙ্গী থাকলে ব্যাপারটি তাকে জানান। অপরাধীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন এবং লোকজনকে জানান। জনতা অবশ্যই সাহায্য করবে। তবে আশেপাশে লোকজন না থাকলে নিজেরা মারপিট বা গালাগালি করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আর ভিড়ভাট্টার সুযোগে কেউ গায়ে হাত দিলে চেষ্টা করুন তাকে সনাক্ত করতে, আর সম্ভব হলে সেই ভিড়ের সুযোগেই মাড়িয়ে দিন পা। কিংবা সেফটিপিন ফুটিয়ে দিন হাতে। এমন মানুষদেরকে এতটুকুন শিক্ষা তো দেয়া যেতেই পারে!