‘এপ্রিল ফুল’ কেন উদযাপন করা হয়?
‘এপ্রিল ফুল’ কেন উদযাপন করা হয়?
আমরা অনেকেই না জেনে শুনে শধু মজা করার জন্যই এপ্রিলের ১ তারিখে ‘এপ্রিল ফুল দিবস’ বা April Fool Day’ হিসেবে পালন করে থাকি। এপ্রিল ইংরেজী বর্ষের চতুর্থ মাস , ফুল (FOOL) একটি ইংরেজী শব্দ , যার অর্থ বোকা । এপ্রিল ফুলের অর্থ ‘এপ্রিলের বোকা’ । কিন্তু এর ইতিহাস বেশ লোমহর্ষক আর হৃদয়বিদারক।
ইতিহাস :
‘মুসলিম বাহিনী, তোমাদের সম্মুখে শত্রু সেনা আর পশ্চাতে ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা। তোমরা কি ভূমধ্যসাগরে ডুবে আত্মহত্যা করতে চাও, নাকি অত্যাচারী স্পেনীয় শাসক রডারিকের বিরুদ্ধে জেহাদ করে ইসলামের বিজয় নিশান স্পেনের বুকে ওড়াতে চাও? যদি তাই হয়, সামনে অগ্রসর হও।’ ৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বাহিনীর নৌবহর ভূমধ্যসাগরের তীরে জ্বালিয়ে দিয়ে বীর সেনানী নাবিক যখন এই ঘোষণা দেন, তখন রডারিকের রণসম্ভারে সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুসলিম বাহিনী এবং জয় করে নিয়েছিল স্পেন। এমনিভাবে গ্রানাডা-কর্ডোভায় গড়ে উঠেছিল আটশ’ বছরের এমন এক মুসলিম সভ্যতা, যা সমগ্র ইউরোপে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু মুসলিম শাসকরা যখন কোরআন ও সুন্নাহের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে জনসাধারণের সুখ-শান্তির মূলে পদাঘাত করে ভোগবিলাসে মত্ত হয়, তখনই হারিয়ে ফেলে ইসলামী চেতনা। এই সুযোগে খ্রিস্টান নৃপতিরা চারদিকে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে ঘোষণা করে, ‘পিরিনিজ পর্বতমালা আক্রমণকারী দুর্ধর্ষ মুসলিম বাহিনীকে যদি তাড়ানো না যায়, তা হলে আগামী দিনগুলোতে ইউরোপের সকল গির্জা থেকে মুসলমানদের আজান ধ্বনি শোনা যাবে।’ এই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পতুর্গিজ রানি ইসাবেলা পার্শ্ববর্তী রাজ্যের ফার্ডিন্যান্ডের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং উভয়ে নেতৃত্ব দেন খ্রিস্টান বাহিনীর। একের পর এক স্পেনের অধিকাংশ এলাকা খ্রিস্টানদের দখলে চলে যায়। মুসলিম বাহিনী তখন উপায় না দেখে আশ্রয় নেয় রাজধানী গ্রানাডায়। অবশেষে ফার্ডিন্যান্ড বাহিনীও গ্রানাডার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে। মুসলিম বাহিনী তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এমনি সময়ে ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করেন, ‘মুসলমানরা যদি শহরের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করে, তাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেওয়া হবে।’ অসহায় মুসলমানরা আল্লাহর উপর ভরসা না রেখে ভীত-সস্ত্রন্ত হয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয় এবং তাদের কথা বিশ্বাস করেই আশ্রয় নেয় মসজিদে। কিন্তু হায়! বিশ্বাসঘাতক ফ্যার্ডিন্যান্ড তার কথা রাখেনি বরং মসজিদগুলোর চারদিকে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলমানকে। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে গ্রানাডার রাজপথ, বলপূর্বক করা হয় খ্রিস্টান। সেদিন ছিল ১ এপ্রিল ১৪৯২। এইভাবে প্রায় আটশ’ বছরে গড়ে উঠা ইসলামী সভ্যতা খ্রিস্টানরাজ ফ্যার্ডিন্যান্ডের নৃশংসানলে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফ্যার্ডিন্যান্ড তখন হেসে বলেছিলেন, ‘হায় মুসলিম, তোমরা এপ্রিলের বোকা (অঢ়ৎরষ ভড়ড়ষ)’। খ্রীষ্ঠানদের দ্বারা মুসলমানদের ভড়ড়ষ বা বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকতা বা ধোঁকাবাজি স্মরণীয় করে রাখার জন্য খ্রিস্টান জগৎ প্রতিবছর ১ এপ্রিলে খেলে থাকে রসিকতার খেলা, যা বড়ই অসহনীয় এবং এজন্যই প্রত্যেক মুসলমানের এ দিবসটিতে সেই রসিকাতর খেলা বর্জন করা উচিত।