নবাবগঞ্জ জমিদারবাড়ি সম্পর্কে জানতে চাই।
ঢাকার কাছেই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনা সমৃদ্ধ একটি জায়গা নবাবগঞ্জ । যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এ জায়গাটিতে খুব অল্প সময়েই পৌছানো যায় ঢাকা থেকে । নবাবগঞ্জের মূল আকর্ষণ হলো এ এলাকার প্রাচীন কিছু জমিদার বাড়ি ।
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শহরের মহাকবি কায়কোবাদ মোড় থেকে পশ্চিম দিকে কলাকোপায় অবস্থিত । নবাবগঞ্জ যেতে হয় দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা ব্রিজ দিয়ে কেরানীগঞ্জ হয়ে । চারপাশে চিরায়ত সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে চলে যাওয়া যাবে ২০০ বছরের ইতিহাস সংবলিত নবাবগঞ্জে জমিদার ব্রজেন সাহার জমিদার বাড়িতে । যা এখন জজ বাড়ি নামে খ্যাত । জজবাড়ির সামনে রয়েছে খানিকটা বাগান, বিভিন্ন ফল ও ফুল গাছে পরিপূর্ণ ।
কলাকোপার মূল আকর্ষণে এই জজবাড়ি যা আগে জমিদার ব্রজেন সাহার সময়ে ব্রজ নিকেতন হিসেবে পরিচিত ছিল । পরে আশির দশকে এক বিচারক পরিবার এখানে বসবাস শুরু করলে এটি জজবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায় । জজ বাড়ি এখন কলাকোপার প্রাণ । বাড়িটির চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী দেখে যে কোন পথিকের পা থমকে যাবে । কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় বাড়িটিকে । প্রচুর গাছ গাছালির সমারোহ, পাখির কিচির মিচির শব্দ আর চিত্রা হরিণের পাল দেখতে দেখতে কখন যে আনেকটা সময় পার হয়ে যাবে টেরও পাওয়া যাবে না ।
কলাকোপায় রয়েছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান গান্ধী মাঠ । সর্বভারতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গান্ধীজি ১৯৪০ সালে এই মাঠে এসেছিলেন । সেই থেকে এই মাঠের নাম গান্ধী মাঠ । এখান থেকে কিছুদূর এগোলেই আরেকটি প্রাচীন বাড়ি আরএন হাউস । বাড়িটির অন্যতম মালিক রাধানাথ সাহা মুর্শিদাবাদ থেকে এসে প্রায় আড়াইশ বছর আগে এ বাড়ি তৈরি করেছিলেন । চরিদিকে কক্ষ ঘেরা এ বাড়ির সামনের অংশে ছিল অতিথিশালা, পেছনে অন্দরমহল এবং পাশেই মন্দির । বাড়িটির বয়স প্রায় ২০০ বছর ।
রাধানাথ সাহার বাড়ি ফেলে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে খেলারামের বিখ্যাত বিগ্রহ মন্দিরটি । জনশ্রুতি রয়েছে খেলারাম দাতা বজরাম ধনীদের ধনদৌলত ডাকাতি করে গরিবদের মাঝে দান করতেন । আরও শোনা যায় একরাতে এই তিনতলা বিশিষ্ট বিশাল মন্দিরটি মাটি থেকে উপরে উঠে এসেছে । কয়েকটি গম্বুজ বিশিষ্ট কয়েকশ বছরের কুঠিরের ভিতরের পরিবেশ অন্ধকার । এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল ইছামতির পাড়ে । নদীপথে ধন সম্পদ এসে এ সুড়ঙ্গ পথেই বাড়িতে নিয়ে আসত খেলারাম দাতা । বাড়ির পাশেই বিশাল পুকুর। প্রচলিত আছে যে, মাকে বাঁচাতে খেলারাম দাতা এই পুকুরে নেমেছিলেন । আর উঠে আসেননি ।
বান্দুরার একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো জমপালা রানীর গির্জা । খ্রিস্টানদের এ উপাসনালয়টি সর্বপ্রথম নির্মিত হয় ১৭৭৭ সালে । পরে ১৮৮৮ ও ২০০২ সালে এর সংস্কার করা হয় । গির্জার পরিবেশ ও নির্মাণশৈলী নজর কাড়ার মতো । পুরো গির্জাটি হলুদ বর্ণের সুন্দর কারুকাজে ভরা । গির্জার সামনেই জমপাল দেবীর নামাঙ্কিত ফলক তার স্মৃতি ধরে রেখেছে । বর্তমানে একজন ফাদার ও একজন ডিকন দ্বারা পরিচালিত হয় এ গির্জার কার্যক্রম । বড়দিন স্টার সানডেতে এখানে বড় উৎসবের আয়োজন থাকে ।
উল্লিখিত স্থানসহ এখানে দেখার আছে আরও অনেক কিছু । পোদ্দার বাড়ি, কালীবাড়ি, কলাকোপার কাছে সামসাবাদ তাঁতপল্লী, আলানপুর তাঁতপল্লী, জমিদার বাড়ি, জগবন্ধু সাহা হাউস প্রভৃতি । ভগ্ন বিলুপ্তির পথে এসব দালান কোঠা এখনই দেখতে যেতে পারেন । সংরক্ষণের অভাবে কালের আবর্তনে ইতিহাসের মতোই হারিয়ে যাবে এসব কালের সাক্ষী ।
যাতায়াত : কলাকোপা বান্দুরায় দিনে এসে দিনেই ফেরা যায় । ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার পথ । নিজস্ব পরিবহন থাকলে জায়গাগুলো বেড়ানো সহজ হবে । মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌছে যেতে পারেন । অথবা বাসে করে ঢাকার গুলিস্তান, বাবু মাজার কেরানীগঞ্জ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে । বাংলালিংক, মল্লিক, যমুনা ইত্যাদি পরিবহনে ভাড়া পড়বে মাত্র ৫০ টাকা ।