মুখের দুর্গন্ধ দূর করবো কীভাবে?
কথা বলার সময় অনেকের মুখ থেকে বেশ দুর্গন্ধ বের হয়। আপাতদৃষ্টিতে মুখটা হয়তো পরিষ্কার, দাঁতগুলো ঝকঝকে। তার পরও গন্ধটা বেরোয় মুখ থেকে। ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে এ দুর্গন্ধটা সুস্থ ও স্বাভাবিক মুখের ভেতরেই উৎপন্ন হয়। কোনো কোনো অসুখেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, শ্বাসনালির ইনফেকশন, ফুসফুসের ইনফেকশন, লিভারের অসুখ, ডায়াবেটিসের জটিলতা ও যেকোনো জ্বর হলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
আমাদের মুখে স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করে হাজারো ব্যাকটেরিয়া। এ জীবাণুগুলোর বেশির ভাগই থাকে খসখসে জিহ্বার পেছনের অংশের উপরিভাগে, দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে ফাঁকে। আমরা যে খাবার খাই, সে খাবারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা জিহ্বার উপরিভাগে আর দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে ফাঁকে লেগে থাকে। মুখের ভেতরে বসবাসরত জীবাণু বেঁচে থাকে এসব খাদ্যকণা খেয়ে। জীবাণুগুলো যখন এসব খাদ্যকণা খেতে থাকে, তখন খাদ্যকণা ভেঙে দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। এই গ্যাস কথা বলার সময় দুর্গন্ধ হয়ে বেরিয়ে আসে।
দুর্গন্ধটা হতে পারে সাময়িক। অল্পক্ষণ থাকে, কিছু খাওয়ার পর বা পান করার পর বা দাঁত মেজে মুখ ধোয়ার পর গন্ধটা চলে যায়। রসুন, পেঁয়াজ, মুলা খাওয়া কিংবা ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদির পর মুখে সাময়িক দুর্গন্ধ লেগে থাকতে পারে। কিন্তু প্রায় ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মুখের দুর্গন্ধটা হয় দীর্ঘস্থায়ী। দুর্গন্ধটা দিনের বিভিন্ন সময় কমবেশি হতে পারে। সাধারণত ঘুমের পর এটা বৃদ্ধি পায়। ঘুমের সময় মুখ বন্ধ থাকে বলে মুখ কম অক্সিজেন পায়। আর যদি মুখ খোলা থাকে, তবে জিহ্বা হয়ে যায় অপেক্ষাকৃত শুষ্ক। কম অক্সিজেনযুক্ত কিংবা শুষ্ক পরিবেশে মুখের ভেতরে বাস করা জীবাণুগুলো মুখে অবস্থিত খাদ্যকণা ভাঙে বেশি। সুতরাং দুর্গন্ধও হয় বেশি।
দুর্গন্ধটা অনেক সময়ই ভীষণ বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিরক্তি লাগে নিজের কাছে। কাছাকাছি যাঁরা থাকেন তাঁদেরও। ব্যক্তিগত সমস্যার পাশাপাশি এটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীর সামনে কথা বলতে ইতস্ততবোধ হয়। কথা হয় নিচু স্বরে। কথা বলতে গিয়ে যদি মুখের দুর্গন্ধটা বের হয়ে যায়! লজ্জার ব্যাপার, বিব্রতকর পরিস্থিতি। মুখের দুর্গন্ধ দূর করাটা তখন জরুরি হয়ে ওঠে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
– নিয়মিত মুখের পরিচর্যা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুখের ভেতর খাবারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা যেন লেগে থাকতে না পারে সে জন্য প্রতিবার খাবারের পর অবশ্যই দাঁত মেজে মুখ পরিষ্কার করুন। জিহ্বাও পরিষ্কার করুন সেই সঙ্গে। মাউথওয়াশও উপকারী।
– ঘন ঘন পানি বা অন্য কোনো তরল পানীয় পান করুন। এতে কিছু খাবারের কণা ধুয়ে যাবে। দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী গ্যাস ধুয়ে যাবে। মুখ পরিষ্কার থাকবে।
– মুখের লালা, খাদ্যকণা, জীবাণু ও দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী গ্যাস ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। মুখে লালা তৈরি করতে লবঙ্গ, আদা, চুইংগাম (চিনিমুক্ত হলে ভালো) ইত্যাদি চিবোতে পারেন।
– বাইরে লোকসমাগমে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি খাবার পরিহার করুন।
– ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
– নিয়মিত মুখ ও দাঁতের চেকআপ করুন।
– দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, শ্বাসনালির ইনফেকশন, ফুসফুসের ইনফেকশন, লিভারের অসুখ, ডায়াবেটিসের জটিলতা—এসবের কোনোটির কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়ে থাকলে তার চিকিৎসা নিন।