ডায়েরি লেখা কি খারাপ না ভাল? ডায়েরি লিখলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে বা কী ধরনের উপকার হতে পারে?

    আমি ডায়েরি লিখতে পছন্দ করি। কিন্তু অনেকেই ডায়েরি লিখতে নিষেধ করেন। তারা বলেন এর ফলে ক্ষতি হতে পারে। আবার অনেকেই উৎসাহ দিয়ে থাকেন। ডায়েরি লেখার ভালো-মন্দ উভয় দিক সম্পর্কেই জানতে চাই। 

    Doctor Asked on March 1, 2015 in সাধারণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      সাধারণত একজন মানুষ ডায়েরি লেখে কেন? জীবনের কোনো ভালোলাগার মুহূর্ত বা খুব কষ্টের মুহূর্তগুলো ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করার কিছু কারণ রয়েছে, যেমন মনকে হালকা করা এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ বা অতীত জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মনে রাখা। এক কথায় শেয়ার করা। কিন্তু অনলাইনের এই যুগে ২ সেকেন্ড আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মুহূর্তেই শেয়ার করে ফেলি অনলাইন বন্ধুদের কাছে। অথবা ধরুন খুব কষ্টের একটি বিষয় যা আপনার মনকে ছিন্নভিন্ন করে চলেছে। তা প্রকাশ দরকার কেননা এতে মন হালকা হবে। আবার এমন একটি কথা যেটা কারও সাথে শেয়ার করাও যায় না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যা করি তা হল মনের কথাগুলোকে পরোক্ষ উক্তিতে বা প্রতীকের সাহায্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই। এতে করে মনও হালকা হয় আবার শেয়ারিংয়ের বিষয়টাও হয়।

      সুতরাং দেখা যাচ্ছে অনলাইনের যুগে ডায়রি লেখার ব্যাপারটাও বেশ বদলে গেছে। তবে কাগজ-কলমে হোক বা ভার্চুয়াল জগতের পাতায়, অনেকেই নিজের জীবনের রেকর্ড রাখেন ডায়রির মাধ্যমে। যতই তাদের বাইরের জগত থাকুক না কেন, ডায়েরির অন্দরমহলে দিনে একবার হলেও তারা প্রবেশ করবেন।

      ডায়েরি লেখার ক্ষতিকর দিক :

      ব্যক্তিগত বিষয়ের বহিঃপ্রকাশ অমঙ্গলকর হতে পারে :
      আপনার জীবনের অনেক বিষয়ই একান্তই ব্যক্তিগত হয়ে থাকে যা কারও সাথেই শেয়ার করা যায় না, এমনকি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছেও না। তা হয়তো আপনি আপনার আপন ডায়েরিটাতে প্রতিদিন লিপিবদ্ধ করে রাখছেন। কিন্তু এমনও তো হতে পারে ডায়েরিটি হঠাৎ আপনার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেল। তখন বিষয়টি কেমন হবে? তারচেয়ে কী দরকার ডায়েরিতে এসব ব্যক্তিগত বিষয় লিখে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে জানানো। এর চেয়ে মনের কথা মনেই থাকুক। তা একমাত্র আপনিই জানুন।

      ব্যক্তিত্ব নষ্ট হতে পারে :
      ডায়েরি লেখার অভ্যাস আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করে দিতে পারে। ধরুন আপনি খুবই সুন্দর একটি ব্যক্তিত্বের মানুষ, যাকে সবাই পছন্দ করেন সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু এটা স্বাভাবিক যে প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু ভুল বা দোষ থাকতে পারে। এগুলো যদি ডায়েরিতে লিখে রাখেন আর সেটি যদি দ্বিতীয় ব্যক্তি দেখে ফেলে, তাহলে তার কাছে স্বাভাবিকভাবেই আপনার ব্যক্তিত্বটি নষ্ট হবে। এ কারণে ডায়েরি না লেখাই নিরাপদ।

      কোনো অপরাধের প্রমাণ থেকে যায় :
      ডায়েরি লেখা এই সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি করতে পারে। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর এই ভুলের বশে আপনি হয়ত কোনো একদিন কোনো অপরাধ করে বসলেন এবং তা লিপিবদ্ধ করলেণ ডায়েরিতে। সেই অপরাধের একটি বলিষ্ঠ প্রমাণ রেখে দিলেন। তাহলে?

      সংসার জীবনের শান্তি নষ্ট হতে পারে :
      তরুণ বয়সে অনেক মজাই আপনি করে থাকতে পারেন। সম্পর্কে জড়িয়েও থাকতে পারেন ২/১ টি। কিন্তু এখন আপনি পরিবারের সিদ্ধান্তেই বিবাহিত। আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনার অতীতের কোনোকিছুই জানেন না। সেক্ষেত্রে আপনার সুখী পরিবার। কিন্তু তরুণ বয়সে করা সব ধরনের ঘটনার সাক্ষী আপনার ডায়েরিটা যদি তার মুখটি খুলে দেয় তাহলে? কি আর হবে সংসারে কিছুটা অশান্তি আর দাঙ্গা হাঙ্গামা চলবে।

      অতীতের কথা মনে পড়তে পারে :
      অতীত প্রতিটি মানুষেরেই থাকে। কেউ ভুলে যায়, কেউ ভুলতে পারে না। অতীত যেহেতু চলেই গেছে এবং তা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না তাই তাকে চিরতরে ভুলে যাওয়াই ভালো। অতীতকে মনে করে শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে নেই। কিন্তু আপনার ডায়েরিটা? সেটি আপনার অতীতকে বারবার মনে করে দিবে এবং আপনাকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে বেড়াবে। এ কারণেই ডায়েরি লেখা আপনার জীবনের জন্য হতে পারে অমঙ্গলকর।

      ডায়েরি লেখার উপকারী দিক :

      মানসিক চাপ কমে : 
      সব কথা সবাইকে বলা যায় না। আবার কিছু কিছু কথা কাউকে না বলেও থাকা যায় না। কিন্তু সবাইকে কি আর ভরসা করা যায়? আপনার সবচেয়ে ভরসাযোগ্য ব্যক্তি আপনি নিজেই! ডায়েরি লেখা মানে নিজের কাছে নিজের স্বীকারোক্তি, নিজের সাথে নিজে কথা বলা। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে মানসিক চাপ তাই অনেকাংশেই কমে যায়। মনের চাপা উদ্বেগ নিজের জন্য লিখে ফেলা কথাগুলোতেই বন্দি হয়ে থাকে।

      স্মরণশক্তি বাড়ে : 
      বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে, আমরা তত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছি। আগে যখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না তখন কিন্তু খুব সহজেই আমরা অনেকগুলো ফোন নম্বর মনে রাখতে পারতাম। কিন্তু মোবাইল ফোন সহজলভ্য হবার পর এবং তাতে ফোন নম্বর সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ থাকায় আমাদের ফোন নম্বর মনের রাখার অভ্যাসটি চলে গেছে। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে জরুরি বিষয়গুলো ভুলে যাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। ছোটবেলায় পড়ার পর লিখলে তা সহজেই মনে থাকত। একই ব্যাপার ঘটে ডায়েরি লিখলেও। এতে সারাদিনের বিশেষ ঘটনাবলি মস্তিষ্ক মনে রাখে এবং ধীরে ধীরে স্মরণশক্তি বাড়তে থাকে।

      হাতের লেখা ভালো হয় : 
      অনেকেরই হাতের লেখা ভীষণ সুন্দর থাকে। কিন্তু ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেলে হাতে লেখার অভ্যাস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তখন লেখালেখি সীমাবদ্ধ থাকে কম্পিউটার আর মোবাইলের এসএমএস-এর মধ্যেই। হাতে বলতে লিখতেই হয় না। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে কাগজে-কলমে লেখার অভ্যাস বজায় থাকে এবং হাতের লেখা ভালো হয়।

      মন হালকা হয় : 
      প্রত্যেকেরই মনের মাঝে কিছু গোপন যন্ত্রণা থাকে যা মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। এই যন্ত্রণার কথাগুলো কাউকে বলাও যায় না। ডায়েরি হতে পারে আপনার সেই বন্ধু যাকে আপনি আপনার মনের কথা খুলতে বলতে পারবেন। নিয়মিত ডায়েরি লিখলে মনের কথাগুলো বেরিয়েও আসে আবার তা অন্য কেউ জানতেও পারে না। ফলে মন হালকা হয়।

      ভুল শোধরানো যায় : 
      কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেকটা মানুষই জীবনে কোনো না কোনো ভুল করে থাকে। নিজের কর্মকান্ড নিয়মিত ডায়েরিতে লিখে রাখলে নিজের ভুলগুলোতে আলোকপাত করা যায়। সেগুলো পুনর্বিবেচনা করা যায়। যে ভুলগুলো শোধরানো সম্ভব সেগুলো শুধরে নেওয়া যায়। ভবিষ্যতে যেন একই ভুল আর না হয় সেদিকেও সতর্ক থাকা যায়।

      আত্মশুদ্ধির সুযোগ থাকে : 
      নিয়মিত ডায়েরি লেখা মানে নিজেকে আত্মশুদ্ধির সুযোগ দেওয়া। নিজের ইতিবাচক, নেতিবাচক দিকগুলো, নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ডায়েরিতে লিখে রাখা অতীত কর্মকান্ড থেকে নিখুঁতভাবে বোঝা যায়। নিজেকে জানা, নিজেকে বোঝা, নিজের আত্মশুদ্ধিতে আপনার লেখা পুরনো ডায়েরিগুলো অনেক সহায়তা করবে।

      জীবন সুসংগঠিত হয় : 
      ডায়েরিতে যদি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম নিয়মিত লিপিবদ্ধ করেন অর্থাত্‍ কী করেছেন, কী করতে চান – এসব লিখলে জীবন অনেকখানিই গুছিয়ে আসে। নিজের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ এবং তার ফলাফল যদি ডায়েরিতে লেখা থাকে, তাহলে পরবর্তী কাজগুলোতে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। জীবন হয়ে ওঠে সুসংগঠিত।

      Professor Answered on March 1, 2015.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.