জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
জাতীয় পতাকা অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও জাতীয় পতাকার আকৃতি, গড়ন, রং ও পতাকা উত্তোলনের ধরনের কিছু অনুমোদিত নিয়মকানুন অনুসরণ করে। পতাকা বিধি (১৯৭২) অনুসারে জাতীয় পতাকার রং হবে গাঢ় সবুজ এবং ১০:৬ অনুপাতে আয়তাকার, তাতে থাকবে সবুজ অংশের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত। লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে পতাকার মোট দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ। বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর অবস্থান হবে পতাকার দৈর্ঘের ৯/২০ অংশ থেকে টানা লম্বের এবং প্রস্থের মাঝখান দিয়ে টানা আনুভূমিক রেখার ছেদবিন্দুতে। পতাকার সবুজ অংশ হবে প্রসিয়ন গাঢ় সবুজ এইচ-২ আর.এস, হাজারে ৫০ ভাগ হিসেবে, লাল বৃত্তের অংশ হবে প্রসিয়ন উজ্জ্বল কমলা রং এইচ-২ আর.এস, হাজারে ৬০ ভাগ হিসেবে।
ভবনের আকারভেদে পতাকার আকার হবে ১০´ × ৬´; ৫´ × ৩´; ২১/২´ × ১১/২´। মোটরগাড়িতে ব্যবহূত পতাকার সাইজ হবে ১২১/২´´ × ৭১/২´´ এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠানে ব্যবহূত টেবিল পতাকার সাইজ হবে ১০´´ × ৬´´। প্রথম অবস্থায় পতাকার কেন্দ্রস্থলে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ছিল। পরে তা বিলোপ করা হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ছাত্রনেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পতাকা উত্তোলন করেন সে পতাকার আদলে মুজিবনগর সরকার জাতীয় পতাকার নমুনা নির্ধারণ করেন।
ইতিহাস
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত পতাকার উপর ভিত্তি করে এই পতাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন মধ্যের লাল বৃত্তে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল, পরবর্তীতে পতাকাকে সহজ করতেই, মানচিত্রটি বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাপানের জাতীয় পতাকার সাথে মিল রয়েছে, কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশের সবুজের স্থলে, জাপানীরা সাদা ব্যবহার করে। লাল বৃত্তটি একপাশে একটু চাপানো হয়েছে, পতাকা যখন উড়বে তখন যেন এটি পতাকার মাঝখানে দেখা যায়।
আদি পতাকাটি এঁকেছিলেন স্বভাব আঁকিয়ে ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ। ঢাকা নিউ মার্কেটে অবস্থিত অ্যাপোলো টেইলরের মালিক, বজলুর রহমান লসকর এই পতাকা তৈরীর জন্য কাপড় দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ছাত্র নেতা আ.স.ম. আব্দুর রব। তিনি সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের চিহ্ন চাঁদ তারা ব্যবহার না করার জন্য নতুন এই প্রতীক তৈরী করা হয়েছিল। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক অনুযায়ী বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি বুঝাতে পতাকায় সবুজ রং ব্যবহার করা হয়েছিল।
শেখ মুজিবর রহমান মার্চ ২৩ তারিখে তাঁর বাসভবনে, স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭২সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
যেসব অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করতে হবে
যেসব দিবসে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি ভবনে এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলেটসমূহে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে সেগুলি হলো স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদে মিলাদুন্নবী এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য দিবসসমূহ। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অনুমোদিত অন্যান্য দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উড্ডীন করা হবে।
বিদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন
বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলার ভবনগুলিতে সেসব দেশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
সরকারি ভবন, বাসস্থান, মোটরগাড়ি ইত্যাদিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন
প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ও দপ্তর, যেমন রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রী ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন ইত্যাদিতে কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। সকল মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, হাইকোর্ট ভবন, জেলা আদালত ও সেসন জজের আদালত এবং বিভাগীয় কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার/কালেক্টর, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগার, থানা, শুল্ক ঘাঁটি এবং সময়ে সময়ে সরকারের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক এ ধরনের অন্যান্য ভবনে প্রতিটি কার্যদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ চ্যান্সারি ও দূতাবাসভবনে জাতীয় পতাকা উড্ডীন থাকবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, চীফ হুইপ, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস প্রধানদের সরকারি বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে। এদের প্রত্যেকে নিজস্ব গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারেন। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কিত বিস্তারিত বিধিমালা ও প্রটোকল রয়েছে।