ধনুষ্টংকার কি এবং তার লক্ষণ গুলো কি কি?
ধনুষ্টংকার কি এবং তার লক্ষণ গুলো কি কি?
টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার কি?
টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা প্রধানত মাংসপেশী ও স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। প্রাণঘাতী এই সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াটির নাম ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি। এর বাসস্থান হল মাটি ও ময়লা আবর্জনা। যে কোন ছোটখাটো কাটাছেঁড়ার মধ্য দিয়ে এটি মানুষের শরীরে ঢুকে পড়তে পারে। মানবদেহে এসে এটি এমন একটি টক্সিন তৈরী করে যার প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয় এবং চোয়াল ও কিছু নির্দিষ্ট স্থানে মাংসপেশীর সংকোচন ঘটে।
ধনস্টংকার হয় ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এই ব্যাকটেরিয়াটি এক ধরনের স্পোর তৈরিকারী এনেরবিক ব্যাকটেরিয়া। অর্থাৎ এটি বংশবৃদ্ধি করে অক্সিজেন শূন্য মাধ্যমে (এনেরবিক) এবং এটি স্পোর তৈরি করতে পারে। এ কারণে এটি আমাদের শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায়, যেখানে কলা (টিস্যু) ধ্বংস হচ্ছে, সেখানে বংশবৃদ্ধি করে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে কোষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় অথবা অন্যান্য এরবিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে অক্সিজেন শূন্য পরিবেশ তৈরি হয়। ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি যখন আমাদের শরীরে আক্রমণ করে তখন এক বিশেষ ধরনের টক্সিন (বিষ জাতীয় পদার্থ) তৈরি করে। উক্ত টক্সিন আমাদের শরীরের রক্তের মধ্য দিয়ে ঢুকে স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। আর যেহেতু আমাদের শরীরের মাংসপেশি স্নায়ুতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত, মাংশপেশি শক্ত হয়ে যায়। এ রোগে রোগীর মুখম-ল, ঘাড় ও পিঠের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। ফলে রোগী মুখ খুলতে পারে না এবং ঘাড় নাড়াতে পারে না। পিঠ বাঁকা হয়ে ধনুকের মতো হয়ে যায়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীদের খিঁচুনিও হতে পারে।
টিটেনাস বা ধনুষ্টংকার এর লক্ষণ :
এ রোগের জীবাণু এক থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
- প্রথম দিকে ঘাড়, শরীরের পেছন দিক এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
- জ্বর থাকতে পারে।
- মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হতে থাকে এবং প্রচ- খিঁচুনি হতে পারে। মুখের মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে হাঁ করতে অসুবিধা হয়।
- শরীরের পেছনের মাংসপেশিগুলো সংকুচিত হয় বলে পুরো শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যায়।
- যে কোনো ব্যথা, শব্দ, আলো ইত্যাদির কারণে খিঁচুনি আরম্ভ হয় এবং ৩-৪ মিনিট স্থায়ী হয়।
- শ্বাসকষ্ট হয় এবং রোগী ঢোক গিলতেও পারে না।
- শরীরের কাটা জায়গা, যার মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, সেখানে ইনফেকশন হতে পারে।
ধনুষ্টংকারের জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে এমনকি মাসখানেকও লেগে যেতে পারে। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ছোট একটি ক্ষত বা কাঁটার খোঁচার কথা ভুলে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। আর এ কারণেই টিটেনাস সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরী, যাতে আঘাত সামান্য হলেও আমরা এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাক্সিনটিকে উপেক্ষা না করি। এটি টিটেনাস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার টক্সিনের বিরুদ্ধে আমাদের দেহকে সুরক্ষিত করে এবং সম্ভাব্য সংক্রমণ থেকে বাঁচায়।