স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য শ্রেষ্ঠ যোগাসন কী?
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য শ্রেষ্ঠ যোগাসন কী?
1. বজ্রাসন
পদ্ধতি : হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা মুড়ে গোড়ালি ফাঁক করে তার ওপর নিতম্ব রেখে বসুন। হাঁটু দু’টি পাশাপাশি জোড়া থাকবে। শিরদাঁড়া সোজা থাকবে। দু’ হাত দু’ হাঁটুর ওপর থাকবে। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে তিরিশ সেকেন্ড থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে দু’ মিনিট থাকুন। এ রূপ তিন বার অভ্যাস করুন। প্রতি বারের পর শবাসনে বিশ্রাম নিন।
দ্রস্টব্য : পায়ের গোড়ালি জোড়া রেখেও এই আসন অনেকে অভ্যাস করেন।
2. Exercise বা এরবিক ব্যায়াম:
Exercise বা এরবিক ব্যায়াম লুপাস রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আপনাকে সতেজ ঝরঝরে করবে /এরবিক ব্যায়াম নিয়মিত করার চেষ্টা করুন অথবা ৩০ মিনিট হাটুন সকালে বা বিকেলে।
3.
আপনি হয়তো খেয়াল করে দেখবেন কিছু লোক চমৎকার ভাবে মনে রাখতে পারছে কোনো ঘটনা বা বিষয়বস্তুর পুঙ্খনাপুঙ্খ। আবার খুব সহজেই শিখে নিচ্ছে নতুন কিছু। আর আপনি মনে মনে আক্ষেপ করেন সেই লোকের মতো কেন আপনার স্মরণশক্তি নেই? তবে কি আপনার মেধা কম! না, আপনার মেধা অবশ্যই কম নয়। সকলে একভাবে মনে রাখতে পারে না। কারণ, সবার মস্তিষ্কের গঠন একরকম নয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্মৃতিশক্তি, যুক্তি তৈরির ক্ষমতা, দ্রুত জবাব তৈরির মতো মানসিক ক্ষমতা কমতে থাকে। নাম, ফোন নাম্বার, জায়গা মনে রাখতে সমস্যা হয়। তবে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়লেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। সহজ কিছু নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানো যায়।
4. ব্যায়ামে মস্তিষ্কের আকার বাড়ে
এটা খুবই সত্য। শরীরচচার্ দেহের পেশির সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়। আর কাডির্ওভাসকুলার ব্যায়ামের ফলে মগজে বেশি হারে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়। আর আপনি যদি খোলা জায়গায় ব্যায়াম করেন, তাহলে বাড়তি হিসেবে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি।
টিপস : শরীর চচার্র পাশাপাশি নতুন জায়গায় বেড়াতে যান, নতুন ধরনের কাজ শুরু করুন। অথবা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে কাজ করুন।
5. হাঁটাচলায় বাড়ে স্মৃতিশক্তি
বহু গবেষণায় এটা প্রমাণিত। অভিনেতারাও এই কাজটা করে থাকেন। কোনো শব্দ বা বাক্য যদি আপনি হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা বহুদিন ধরে আপনার মনে থাকবে।
টিপস : এরপর কোনো বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করতে হলে সেটা হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। কিংবা একটু বাইরে ঘুরে আসুন।
6. বেছে নিন সঠিক খাবার
আপনার খাবারের শতকরা ২০ ভাগ শকর্রা এবং শক্তি আপনার মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের কাজের পুরোটাই নিভর্র করে তার গ্লুকোজের মাত্রার ওপর। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রায় হেরফের হলে আপনার মনেও দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যেসব খাবার আপনার খুব পছন্দ সেগুলো খেলে আপনার মস্তিষ্কের ‘রিওয়াডর্ এরিয়ায়’ ডোপামিন রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আপনার মনে খুশি খুশি ভাব হয়।
কিন্তু মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার পেটের দিকেও নজর রাখতে হবে। মানুষের দেহের পরিপাকতন্ত্রে একশো ট্রিলিয়নেরও বেশি অণুজীব বসবাস করে। এরা আপনার মস্তিষ্কের সঙ্গেও সংযোগ রক্ষা করে। মগজের সুস্থতার জন্য এসব অণুজীবগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জরুরি। পাকস্থলীকে অনেক সময় ‘দ্বিতীয় মগজ’ বলে ঢাকা হয়। পেটে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার ঢুকলে এসব অণুজীবের মাধ্যমে তার সুফল মস্তিষ্কে পযর্ন্ত পৌঁছায়।
টিপস : মস্তিষ্কের কোষ ফ্যাট অথার্ৎ স্নেহ পদাথর্ দিয়ে তৈরি। তাই খাবার থেকে তেল-চবির্ একেবারে বিদায় না করাই ভালো। বাদাম, তেলের বীজ, মাছ ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
7. খুঁজে নিন অবসর
স্বল্প মাত্রার মানসিক চাপ এলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে বিপদের সময় বা জরুরি প্রয়োজনে পরিস্থিতিকে দ্রæত মোকাবেলার শক্তি পাওয়া যায়। কটির্সল বলে হরমোনের কারণে দেহ-মন চাঙ্গা হয় এবং মনোযোগের একাগ্রতা বাড়ে। কিন্তু দীঘির্দন ধরে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিষ্কের জন্য খুবই খারাপ।
সুতরাং কাজের ফাঁকে অবসরের সময় বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। আপনার মস্তিষ্ককে অবসর দিয়ে এবং নিজেকে মূলত সুইচ অফ করে, আপনি আপনার মগজের ভিন্ন একটি অংশকে ব্যায়াম করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। এরপর যদি কেউ দেখে যে আপনি কাজের মধ্যে বসে দিবাস্বপ্ন দেখছেন তখন আপনি বলতে পারবেন যে আপনি মস্তিষ্কের ভিন্ন একটি অংশের ব্যায়াম করছিলেন।
টিপস : রিল্যাক্স করতে অসুবিধে হলে যোগব্যায়াম কিংবা মাইন্ডফুলনেস চচার্র সাহায্য নিতে পারেন। এগুলো আপনার দেহের স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করবে।
8. নতুন কিছু করুন
মগজের শক্তি বৃদ্ধির একটা পথ হলো নতুন কোনো কাজ করার জন্য মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করা। ছবি অঁাকা কিংবা বিদেশি ভাষা শিক্ষার মধ্য দিয়ে এটা করা সম্ভব।
টিপস : নিজে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে অনলাইন গেমস খেলুন। শুধু নিজেকে চ্যালেঞ্জ করাই না, এর মধ্যদিয়ে অন্যদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগও বাড়বে।
9. সুরের মাঝে লুকিয়ে আছে শক্তি
সংগীত যে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে, তার প্রমাণ রয়েছে। কেউ গান শোনার সময় যদি তার মস্তিষ্কের ছবি তোলা যায়, তাহলে দেখা যাবে পুরো মস্তিষ্ক সুরের প্রভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মস্তিষ্ক সংগীতের স্মৃতি দীঘির্দন ধরে রাখতে পারে। এটা ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক অবস্থা ঠেকাতে বেশ কাযর্কর।
টিপস : গানের দল বা কয়্যারে যোগ দিন। আপনার প্রিয় ব্যান্ডের গানের অনুষ্ঠান দেখতে যেতে পারেন।
10. বিছানায় শুয়ে পরীক্ষার পড়া
দিনের বেলা যখন আপনি নতুন কিছু শিখছেন, তখন আপনার মস্তিষ্কে এক স্নায়ুকোষের সঙ্গে নতুন একটি স্নায়ুকোষের সংযোগ তৈরি হয়। আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন সেই সংযোগ আরও জোরদার হয় এবং যা শিখেছেন তা স্মৃতি হিসেবে জমা হয়। এক পরীক্ষায় জানা গেছে, আপনি যদি শোবার আগে কাউকে একটা লিস্ট দিয়ে বলেন সেটা মুখস্থ করতে, তাহলে পরদিন সকালে সে সেটা খুব সহজেই মনে করতে পারবে।
কিন্তু যদি সেই একই লিস্ট সকাল বেলা দিয়ে বলেন সন্ধ্যের সময় মুখস্থ বলতে তাহলে সেটা মনে করা বেশ কঠিন হবে। তবে কোনো দুঃখের স্মৃতি নিয়ে শোবার সময় চিন্তাভাবনা না করাই ভালো। এতে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একই কারণে শোবার আগে হরর ছবি দেখাও বারণ। এর বদলে সারা দিনের যেসব ভালো ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো মনে করার চেষ্টা করুন।
টিপস : পরীক্ষার পড়ার সময় প্রশ্নের জবাবগুলো শোবার সময় মনে করার চেষ্টা করুন এবং চেষ্টা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়–ন।
11. ঘুম যখন ভাঙল
ঘুমের গুরুত্ব সম্পকের্ নতুন করে কিছু বলার নেই দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুম হলে মস্তিষ্ক সজাগ হওয়ার সময় পায় না। কিন্তু দিনের পুরোটাকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে কীভাবে আপনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তার মধ্যে।
সবচেয়ে ভালো হয় ঘুমাতে যাওয়ার সময় ঘর অন্ধকার থাকলে এবং প্রভাতে দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠতে হয়। সূযের্র কিরণ যখন আপনার বন্ধ চোখের পাতা ভেদ করে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা মস্তিষ্ককে কটির্সল হরমোন ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে। এর ফলে আপনি জেগে ওঠেন। তাই কী পরিমাণ কটির্সল হরমোন আপনার দেহে ছড়িয়ে পড়ে তার ওপর নিভর্র করবে দিনটা আপনার কেমন যাবে।
টিপস : এমন অ্যালার্ম ক্লক ব্যবহার করুন সূযোর্দয়ের সঙ্গে সঙ্গে যার সুর ক্রমেই বাড়তে থাকে। তবে যাদের ঘুম কুম্ভকণের্র মতো তাদের প্রয়োজন জেলখানার পাগলা ঘণ্টির মতো অ্যালার্ম ক্লক।