মৃত্যুর পর কি আদৌ কোনো কিছু আছে?

    মৃত্যুর পর কি আদৌ কোনো কিছু আছে?

    Add Comment
    1 Answer(s)

      মৃত্যুর পরবর্তী বিষয় বা আখেরাত সম্পর্কে দুনিয়ায় তিন রকমের বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছেঃ

      • এক দলের ধারণা মরার পর মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর আর কোন জীবন নেই। এ হচ্ছে নাস্তিকের বিশ্বাস যারা নিজেদেরকে বিজ্ঞানী বলে দাবী করে।
      • দ্বিতীয় দল বলে, মানুষ নিজস্ব কর্মফল ভোগ করার জন্য বারবার এ দুনিয়ায় দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অসৎ কাজ করলে পরজন্মে তারা কুকুর বিড়ালের মত কোন জানোয়ার হয়ে আসবে, অথবা কোন গাছ হয়ে জন্মাবে, অথবা কোন নিকৃষ্ট স্তরের মানুষের আকৃতি ধারণ করবে। আর যদি ভাল কাজ করে তাহলে আরো উঁচু স্তরের জীবনে পৌঁছবে। কোন কোন জড়ত্ব প্রাপ্ত ধর্মে এ ধরনের ধারণা প্রচলিত রয়েছে।
      • তৃতীয় দল কিয়ামত, পুনর্জীবন লাভ, আল্লাহর আদালতে উপস্থিতি এবং কৃতকর্মের প্রতিদান ও প্রতিফলের উপর ঈমান পোষণ করে। এ হচ্ছে সকল নবীর সাধারণ বিশ্বাস।

      এবার প্রথম বিশ্বাস সম্পর্কে চিন্তা করা যাক। তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ ‘মরার পর কাউকে জীবিত হতে আমরা দেখিনি। আমরা বরং দেখি মানুষ মরার পর মাটিতে মিশে যায়। সুতরাং মৃত্যুর পর আর কোন জীবন নেই। কিন্তু চিন্তা করে দেখলে বুঝা যায় যে, এ কথার মধ্যে কোন যুক্তি নেই। মরার পর কাউকে জীবিত হতে দেখা যায়নি, এ জন্য বড় জোর বলা যায়ঃ মরার পর কি হবে আমরা জানিনা’ এর চেয়ে এগিয়ে গিয়ে যে দাবী করা হয়, মরার পর কিছুই হবে না, আমরা জানি এর স্বপক্ষে কি প্রমান পেশ করা যেতে পারে? যে পল্লিবাসী কখনো উড়োজাহাজ দেখেনি, সে বলতে পারেঃ উড়োজাহাজ কি জিনিস, আমার জানা নেই। কিন্তু সে যখন বলেঃ ‘আমি জানি উড়ো জাহাজ বলতে কোন জিনিসই নেই।’ তখন বুদ্ধিমান লোকেরা তাকে নির্বোধ বলবেন। কারণ কোন বিশেষ জিনিস না দেখবার অর্থ এ হতে পারে না যে, তা কোন জিনিসই নয়। একটি মানুষ কেন, বরং সারা দুনিয়ার মানুষ ও যদি একটা বিশেষ জিনিস না দেখে থাকে, তবুও এ দাবী করা চলে না যে সে জিনিসটির অস্তিত্ব নেই অথবা তা থাকতেই পারে না।

      এরপর দ্বিতীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বিবেচনা করা যাক। এ বিশ্বাস অনুযায়ী ব্যক্তি বিশেষ যখন মানুষ হিসেবে বর্তমান জীবন যাপন করেছে, তখন তার কারণ হচ্ছে, বিগত জীবনে সে জানোয়ার থাকা অবস্থায় সৎকার্য করেছিল আর যে জানোয়ার বর্তমান জীবন জানোয়ার হিসেবে অতিবাহন করছে, অতীত জীবনে মানুষ হিসেবে বসবাস করে সে অসৎকার্য করেছিল। অন্য কথায় মানুষ জানোয়ার অথবা বৃক্ষ হওয়া প্রকৃতপক্ষে অতীত জীবনের কর্মফল।

      এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ প্রথমে কি জিনিস ছিল? যদি বলা হয় যে সবার আগে ছিল মানুষ তাহলে মেনে নিতে হবে যে, তারও আগে ছিল জানোয়ার অথবা বৃক্ষ নইলে প্রশ্ন উঠবেঃ মানুষের আকৃতি কোন সৎকর্মের বদলায় পাওয়া গিয়েছিল? যদি বলা হয় সবার আগে পশু অথবা বৃক্ষ ছিল; তাহলে মেনে নিতে হবে যে তারও আগে ছিল মানুষ নইলে প্রশ্ন উঠেঃ বৃক্ষ অথবা পশুর আকৃতি কোন অসৎকর্মের শাস্তি স্বরূপ পাওয়া গিয়েছিল? সোজা কথা এ বিশ্বাসের অনুসারীরা সৃষ্টির প্রারম্ভিক রূপ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেনা, কেননা যে কোন রূপের আগে অপর এক রূপ পরিকল্পনা তাদের পক্ষে অপরিহার্য, যাতে পরবর্তী রূপকে পূর্ববর্তী রূপসম্পন্ন সৃষ্টির কর্মফল বলে ধরে নেয়া যায়। এ বিশ্বাস সোজাসুজি যুক্তি বিরোধী।

      এবার তৃতীয় বিশ্বাস সম্পর্কে বিবেচনা করা যাক। এতে সবার আগে বলা হয়েছেঃ একদিন কিয়ামত আসবে এবং আল্লাহ নিজেই তার এ কারখানাকে ভেঙ্গে চুরে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তার জায়গায় গড়ে তুলবেন আর এক উচ্চতর পর্যায়ের উৎকৃষ্টতর কারখানা। এ হচ্ছে এমন একটি বিষয় যার সত্যতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ ও অবকাশ নেই। দুনিয়ার এ কারখানা নিয়ে যত চিন্তা করা যায়, তত বেশী করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এটা একটি স্থায়ী কারখানা নয়, কারণ যেসব শক্তি এর ভিতরে কাজ করে যাচ্ছে, তারা সবাই সীমাবদ্ধ ও একদিন তাদের সমাপ্তি নিশ্চিত। এ কারণে সকল বিজ্ঞানী এ সম্পর্কে এক মত যে, একদিন সূর্য শীতল ও জ্যোতিহীন হয়ে যাবে, গ্রহ উপগ্রহসমূহের পরস্পরের মধ্যে ঘটবে সংঘাত এবং দুনিয়া হয়ে যাবে ধ্বংস।

      দ্বিতীয় কথাটি বলা হয়েছেঃ ‘মানুষকে দ্বিতীয়বার জীবন দান করা হবে।’ এও কি সম্ভব? যদি অসম্ভব হয়, তা হলে মানুষ বর্তমানে যে জীবন উপভোগ করছে, তা কি করে সম্ভব হল? স্পষ্টত যে আল্লাহ এ দুনিয়ায় মানুষকে পয়দা করেছেন, অপর কোন দুনিয়ায়ও তিনি মানুষকে আবার নতুন করে পয়দা করতে পারেন।

      তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছেঃ ‘মানুষ এ দুনিয়ার জীবনে যা কিছু কাজ করেছে, সবকিছুর রেকর্ড সংরক্ষিত হয়ে রয়েছে এবং হাশরের দিন তা পেশ করা হবে। এ দুনিয়ায়ও এর প্রমাণ আজ আমরা পাচ্ছি। আগেকার দিনের চলতি ধারণা ছিল যে, যে আওয়ায মানুষের মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, হাওয়ার উপর তা কিছুটা তরঙ্গ সৃষ্টি করে মিলিয়ে যায়। কিন্তু আজকের দিনে আমরা জানতে পারছি যে, প্রত্যেক আওয়ায় তার গতি পথে বিভিন্ন জিনিসের উপর দাগ রেখে যায়। সে আওয়ায আবার নতুন করে সৃষ্টি করা যায়। অবশ্যি এ নীতির উপরই উদ্ভাবন করা হয়েছে গ্রামোফন রেকর্ড।

      তা থেকেই বুঝা যায় যে, যেসব জিনিস আমাদের গতি পথে আসছে, তার সব কিছুতেই আমাদের গতিবিধির চিহ্ন অংকিত হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সম্পূর্ণ আমলনামা যে সংরক্ষত হয়ে আছে এবং তা যে পুনরায় হাযির করা যেতে পারে তা এ অবস্থা থেকে প্রত্যয় সহকারে উপলব্ধি করা যেতে পারে।

      চতুর্থ বিষয় হচ্ছেঃ ‘আল্লাহ হাশরের দিনে আদালত বসাবেন, ন্যায়নীতি অনুযায়ী আমাদের ভাল মন্দ কাজের পুরস্কার ও শাস্তি বিধান করবেন। একে কে অসম্ভব বলতে পারে? এর মধ্যে কোন কথাটি যুক্তি বিরোধী? যুক্তির দাবীই হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাঁর ন্যায়ের আদালতে ন্যায়নীতি অনুযায়ী সবকিছুর সিদ্ধান্ত করবেন। আমরা দেখতে পাই, এক ব্যক্তি ভাল কাজ করে, অথচ দুনিয়ায় তার কোন লাভ সে পায় না। আবার এক ব্যক্তি খারাপ কাজ করে যায়, অথচ তার কোন ক্ষতি সে ভোগ করে না। শুধূ তাই নয়, বরং আমরা এমনি হাজার হাজার দৃষ্টান্ত দেখতে পাই, ব্যক্তি বিশেষ ভাল কাজ করে যাচ্ছে অথচ উল্টা তার ক্ষতি হচ্ছে। পাক্ষন্তরে; অপর ব্যক্তি খারাপ কাজ করেও বেশ মজা লুটছে। এ ধরনের সব ঘটনা লক্ষ্য করে যু্ক্তি দাবী করে যে, কোন না কোন জয়গায় সৎকর্মশীল ব্যক্তির সৎকার্যের ও দুস্কৃতি পরায়ণ ব্যক্তির দুস্কৃতির প্রতিফলন পাওয়া প্রয়োজন।

      সর্বশেষ জিনিস হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। তার অস্তিত্ব অসম্ভব নয়। যে আল্লাহ চন্দ্র, সূর্য, মঙ্গল গ্রহ ও যমীন সৃষ্টি করতে পারলেন, শেষ পর্যন্ত—তিনি কেন জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করতে পারবেন না? তিনি যখন আদালত বসিয়ে মানুষের ভাল মন্দের পুরস্কার ও শাস্তি বিধান করবেন, তখন পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য লোকদের কোন বিশেষ সম্মান, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের এবং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য লোকদের জন্য অপমান দুঃখ বেদনা ভোগের জন্য স্থান নির্দিষ্ট থাকাও প্রয়োজন।

      এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে যুক্তি আপনিই বলে উঠবে যে, দুনিয়ার মানুষের পরিণাম সম্পর্কে যত ধারণা রয়েছে, তার মধ্যে এ ধারণাই হচ্ছে সবচেয়ে যুক্তিসংগত এবং এর ভিতরে অযৌক্তিক অথবা অসম্ভব কিছুই নেই।

      আল্লাহর সত্য নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) যখন একে সত্য বলে বর্ণনা করে গেছেন এবং এর সবকিছুই আমাদের জন্য কল্যাণকর, তখন বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে এর উপর প্রত্যয় পোষণ করা এবং বিনা যুক্তিতে এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ না করা।

      Professor Answered on February 28, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.