অহংকার কীভাবে কমানো সম্ভব?

    অহংকার কীভাবে কমানো সম্ভব?

    Add Comment
    1 Answer(s)

      অহংকার কমিয়ে আনা বা একদমই অহংকার না করা নিশ্চিতভাবেই সাধু উদ্দেশ্য । সেটা করার জন্য নিজেকে তৈরী করতে হবে । তৈরী করতে হলে নিজেকে ভুলে যেতে হবে । “আমিত্ব” বোধ থাকলে, সে চেষ্টাটা কার্যকরী হবে কি না সন্দেহ আছে । এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে, কেউ লিখেছেন “যতদিন দেহ থাকবে ততদিন অহম বোধ বা অহঙ্কার থাকবে” । কথাটা অনুধাবন করার মতো । ঘর থেকে বেরোবার সময় যে পোশাক পড়ে, বার বার আয়নার দিকে তাকাই এটা নিশ্চিত করতে যে আমাকে দেখতে ঠিকঠাক লাগছে তো ?, সেটা কিনতু প্রাথমিক ভাবে আমিত্বকেই জাগিয়ে রাখে । সংসারে থেকে বিনয়ী হওয়া যায়, কিনতু, অহংকার ত্যাগ করা খুবই কঠিন । এই যে বলি “আমি বিনয়ী” বা “আমি অহংকার করি না”, এও কিনতু অহংকারেরই জানান দেয় , কারণ, এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে আমি আমার গুণেরই অহংকার করি, অন্যের সামনে “অমিত্বের” ধ্বজা উড়াই । একটা তৃপ্তি বোধ করি । সুতরাং, যতদিন দেহ থাকবে, অহংকার থাকবে । তাহলে, সাধুসন্তরা যে নিরহংকারী হন, তাঁদের তো দেহ আছে এই প্রশ্নটা আসবে । এখানে বলা যেতে পারে, তাঁদের ক্ষেত্রে দেহ থাকলেও, দেহের অস্তিত্ব তাঁরা অনুভব করেন না । আর সেকারণেই, আমরা যখন একটু শীতেই কাতর হয়ে পড়ি, তাঁরা তখন হিমালয়ে মৃত্যুসম ঠান্ডায় খালি গায়ে বসে সাধনা করেন , কারণ, শীত গ্রীষ্মের অনুভুতির উর্দ্ধে থাকে তাঁদের দেহ ।

      এতো সুন্দর একটি প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর আগে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা খুবই প্রাসঙ্গিক ভাবেই মনে পড়ে গেলো । একবার আমি বোম্বে থেকে ট্রেনে করে কোলকাতা ফিরছি । আমার ঠিক উল্টোদিকের বার্থে বসে আছেন শান্ত, সৌম্যকান্তি এক সাধুবাবা, আশেপাশের বার্থে তাঁর শিষ্যরা । তাঁরাও কোলকাতা কোন একটা আশ্রমের উদ্বোধনে যাচ্ছেন । আমি সাধুবাবাকে নমস্কার জানালাম, তিনি প্রতি নমস্কার করলেন, মুখে তাঁর বিনয়ের হাসি । একথা,সেকথার পর জানতে পারলাম, সংসারে নিরাসক্ত হয়ে সন্ন্যাস নিয়েছেন প্রায় কুড়ি বছর আগে । জিজ্ঞেস করলাম, অনুতাপ হয না সংসার না করার জন্য ? মাথা নাড়লেন, বললেন, না । আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাগ কমানোর উপায় কি ? বললেন, অহংকার ত্যাগ করলেই রাগ কমে যাবে । প্রশ্ন করলাম, অহংকার ত্যাগের রাস্তাটা কি ? উত্তর দিলেন, দেহত্যাগ করতে হবে ।বললাম বেঁচে থাকা অবস্থায় কেমন করে দেহত্যাগ করবো ? বললেন, সংসারে থেকে হবে না । শুরু করলেন নিজের কথা, বলতে লাগলেন সন্ন্যাস নেয়ার পর তাঁর সংস্কার হয়েছিল । মস্তক মুন্ডন করে তাঁকে নিজের শ্রাদ্ধকর্ম নিজেকেই করতে হয়েছে, শ্রাদ্ধকর্ম করার মাধ্যমে তাঁকে ষড়রিপু, যথা কাম, ক্রোধ,লোভ,মোহ,মদ,মাতষর্য এবং নিজের দেহ ত্যাগ করতে হয়েছে । বললেন, তিনি দেহের কোন অস্তিত্বই বোধ করেন না । মনে হলো হয়তো তিনি ঠিকই বলেছেন , কারণ, বোম্বে স্টেশনে ট্রেনে উঠে তিনি বার্থে যে আসনে বসেছিলেন, ঠিক একই আসনে বসা অবস্থায় তিনি তখনও, যখন ট্রেন হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলো । এত ঘন্টার মধ্যে তাঁকে এক মুহূর্তের জন্য আসন পাল্টাতে দেখলাম না, বা আসন ছেড়ে উঠতে দেখলাম না । বুঝতে পারলাম, কেন তিনি এতো বিনয়ী, নিরহংকারী, কারণ দেহের অনুভূতিটাই তাঁর নেই । ধন্যবাদ,

      Professor Answered 6 hours ago.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.