14182
Points
Questions
3
Answers
7076
সাম্প্রতিক সময়ে ‘সিভিল সোসাইটি’ প্রত্যয়টির সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত হয়েছি। প্রত্যয়টি এখন আর কোনভাবেই বইয়ের পাতায় কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক মহলের চর্চায় আটকে নেই বরং ‘সিভিল সোসাইটি’ ময়দানে নেমে এসেছে। বুঝুক কিংবা নাই বুঝুক, সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আমজনতা বলে যারা চিহ্নিত, সেই সমস্ত সাধারণ (সাধারণ এই অর্থে, সিভিল সোসাইটির নামও তারা কখনো শোনেনি, এর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা সম্পর্কেও তারা অবগত নন) মানুষজন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে অন্তত এতটুকু জানেন, সিভিল সোসাইটি নামে একটা কিছু বাংলাদেশে আছে। ‘সুশীল সমাজ’এর অন্তর্ভুক্ত যে তারা নন, এটাও তারা বোঝেন। কেননা পত্রিকায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বিবৃতি আসে, কিংবা বিভিন্ন চ্যানেলে বক্তৃতার ঝড় তোলে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈ, সুলতানা কামাল সহ আরও অনেকে। মানুষ এতোটুকু বুঝতে শুরু করেছে, এরা ব্যক্তিবর্গই সুশীল সমাজের মালিক। এই ব্যক্তিরাই আবার, কেউ আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মী, কেউ নিজেই গড়ে তুলেছেন এনজিও প্রজেক্ট, আবার কেউ মানবাধিকার কর্মী। কি প্রসঙ্গে তারা বিবৃতি দিলেন, কেন দিলেন সেটা মাঠের কৃষক, গার্মেন্টস্ শ্রমিক, দিনমজুর কিংবা আরও ‘উপরে’ যদি চলে আসি ছাত্রসমাজ, অনেক শিক্ষক, চিকিৎসক- কেউই জানেন না। সবমিলিয়ে এক ঘেরাটোপে বন্দী বাংলাদেশের সুশীল সমাজ। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক কতিপয়ের সুশীল হয়ে ওঠা, একভাবে বাকীদের দুঃশীল করে কি? প্রশ্ন সূক্ষè বা স্থূল যাই হোক না কেন, আমরা বুঝি বাংলাদেশে সুশীল সমাজ, বুর্জোয়া অধিকৃত; যেখানে প্রবেশাধিকার নেই সবার। একভাবে ‘সামাজিক পুঁজি’ যেমন একই মুদ্রার এপিঠ ও পিঠের মতো এক পিঠে রেখেছে অন্তর্ভুক্তি, আর অন্যপিঠে বিচ্যুতি; একই বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই সুশীল সমাজের ক্ষেত্রেও।
‘আমাদের সুশীল সমাজ’ কি দেশীয় নির্যাস থেকে গড়ে উঠেছে, নাকি বাইরে থেকে কারোও ফরমায়েশে করা; কোন প্রকল্পের অংশ? পুরোটা রহস্য আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়নি সত্য, কিন্তু যখন আমরা দেখি ‘সুশীল সমাজের’ প্রতিটি প্রতিনিধি বৈদেশিক দাতা সংস্থাগুলোর সাথে কোননা কোনভাবে জড়িত; তখন এ ব্যাপারের আর সংশয় থাকেনা যে ‘সুশীল সমাজ’ আমাদের দেশীয় নির্যাস থেকে তৈরি হয়নি, কিংবা সরকারের কোন অংগ সংগঠন নয়।
এরকম একটি প্রেক্ষাপটে জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিসরে এই ‘সুশীল সমাজকে’ ব্যবচ্ছেদকরণ আবশ্যিক হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের জন্য জানা এবং বোঝা গুরুত্বপূর্ণ, কি এই ‘সিভিল সোসাইটির’ ইতিহাস; যেমনটা আজকের বাংলাদেশে দেখছি, সিভিল সোসাইটির চরিত্রকি সবসময় এমনই ছিল; কারা কারা সিভিল সোসাইটির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে অবদান রেখেছেন; বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে সিভিল সোসাইটির কোন জরুরত আদৌ আছে কি; থাকলে সেটা যেমন আছে এমন সিভিল সোসাইটি, নাকি ভিন্ন কোন ধরন – ইত্যাদি হাজারও প্রশ্ন এবং এর উত্তর। মূলত এই প্রেক্ষিতগুলোকে সামনে রেখেই আমি আমার আলোচনাকে পরবর্তীতে বি¯তৃত করবো।
সারসংক্ষেপিত আলোচনা:
পূর্ব ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে সিভিল সোসাইটি একটা সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সময়টা ১৯৮০’র দশকের শেষদিকে। ১৯৮৯-এর কথা, যখন প্রতীকী বাইপোলার বা দ্বিমেরুর পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটে এবং এককমেরুর পৃথিবীর সূচনা, মূলত সে সময়ে আমরা একটি পুনরুত্থান দেখতে পাই এই সিভিল সোসাইটির। একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হচ্ছে এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান হচ্ছে। ফলে সবকিছু নতুন ভাবে বিশ্লেষণ শুরু হয়। সামনে চলে আসে নতুন নতুন তাত্ত্বিকেরা। মূলত এরই ধারাবাহিকতায় সামনে চলে আসে সিভিল সোসাইটির মতো ধারণাগুলো। দুটো ব্যাপার লক্ষ্যণীয, এসময় প্রাচ্যের জন্য আসে উন্নয়নবাদ এবং পাশ্চাত্যের জন্য আসে চিন্তার রূপান্তর। আর এজন্যই উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নকে বোঝার জন্য পশ্চিমের ট্রান্সফরমেইশন অব থট্ কে বোঝা আমাদের জন্য জরুরী। মূলত ষাটের দশকের পর থেকেই একটা নতুন বৈশ্বিকতা আদল পেতে শুরু করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেয়া হয় এবং রাষ্ট্র যে ব্যর্থ, সেটি তাদের জনগণকে বোঝানো হয়। রাষ্ট্রকে কেন্দ্রীয় জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে রাষ্ট্রের জায়গা দখল করে নেয় বাজার। এসময় ট্রেড ইউনিয়নের মতো বিভিন্ন সংঘের মধ্যদিয়ে সংগঠিত হতে থাকে মানুষ এবং সমাজে শক্তিশালী স্টেকহোল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সিভিল সোসাইটি।বিস্তৃত বিশ্লেষণ:
নিরা চান্দহোক বলছেন, সিভিল সোসাইটির ধারণা এসেছে মূলত একসেট সামাজিক ও রাজনৈতিক চর্চাকে নির্দিষ্ট করতে- যেগুলো রাষ্ট্র ক্ষমতার সাথে যুক্ত হবার পথ খুঁজবে। সিভিল সোসাইটি ধারণার পুনরুত্থান এবং আধিপত্যশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থার পতন সিভিল সোসাইটিকে একটি আকর্ষণীয় ধারণা হিসেবে আমাদের সামনে হাজির করেছে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই ধারণাটি সামনে আনে এর বিভিন্ন এজেন্ডা—-ক) রাষ্ট্রের বাজার ব্যবস্থাকে বি¯তৃতকরণ
খ) বি¯তৃর্ণ রাজনৈতিক ইস্যুগুলো থেকে যেকোন একক রাজনৈতিক ইস্যুতে আসা
গ) নির্দিষ্ট সীমানায় প্রচারণা চালানো- ইত্যাদি।তবে এর ব্যাপারে সতর্ক হবারমতো বেশকিছু বিষয় রয়েছে।
সিভিল সোসাইটি ধারণার মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে পুনঃআবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে: পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের স্টালিনীয় রাষ্ট্রগুলো, যেগুলো তাদের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকে অবজ্ঞা করেছে এবং ল্যাটিন আমেরিকাতে সামরিক সরকার একইভাবে তাদের শাসন কায়েম করেছে। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর অত্যাচার আর নিপিড়নের প্রেক্ষাপটে সিভিল সোসাইটি ধারণাটি দ্রুত নাশকতার একটি সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। সেই উত্তাল সময়ে সিভিল সোসাইটির মধ্য দিয়েই ব্যক্তি এবং দলগুলো জনগণের কথা না শোনা কর্তৃত্বপরায়ন রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে শান্তিপূর্ণ ও অসহিংস প্রক্রিয়ায়। অনশন, প্রতিরোধ মার্চ, নির্দেশনা, অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে তথ্য আদান-প্রদানের নেটওয়ার্ক গড়ে, সাংগঠনিক জীবন (যেমন: রিডিং ক্লাব, আলোচনার জন্য ফোরাম ইত্যাদি) গঠন করে জনগণ তাদের কার্যক্রম চালায়। সিভিল সোসাইটির এই জালের মতো ক্রিয়াশীলতার ফলাফল আমাদের সবার জানা: প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বসে পড়ে প্রবাদের সেই তাসের ঘরের মতো।
সিভিল সোসাইটির আলোচনায় দু’টি বিষয় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমটি রাজনৈতিক অধিকারের দাবী, আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে নাগরিক অধিকারের দাবী।
দ্বিতীয়টি সেই সমস্ত শব্দভান্ডার থেকে মোহমুক্তি ঘটানো, যেগুলো বলে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতাকে হাতিয়ে নেবার, রাষ্ট্রকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবার কিংবা রাষ্ট্রকে পাল্টে দেবার কথা।সিভিল সোসাইটির ধারণা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত। সিভিল সোসাইটি বলে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে পর্যবেক্ষণ করার কথা, এর সাথে সম্পৃক্ত থাকবার কথা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সম্পৃক্ত নাগরিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার কথা। তবে এ ব্যাপারে কারোও কোন সংশয় নেই যে, সিভিল সোসাইটি তাদের সবচেয়ে স্মরণীয় বিজয় পেয়েছে কর্তৃত্বপরায়ন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ সংগ্রামে। আর এজন্যই সিভিল সোসাইটি আজ সবার মুখে মুখে। শতকোটি জনতা একটি সুন্দর আগামীর সংগ্রামে সিভিল সোসাইটিকে তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনার আঁকড় হিসেবে খুঁজে পায়।
বিতর্কিত/ প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ধারণা থেকে ঐক্যমত্যের বিজয়উল্লাস:
একটা সময় ছিল, যখন রাজনৈতিক তাত্ত্বিকদের জন্য সিভিল সোসাইটি ছিল প্রচন্ড আগ্রহের একটি জায়গা। যার কারণ ছিল কেবল ধারণাটির গঠন, তাত্ত্বিকায়ন, দ্বন্দ্বপূর্ণতা এবং সবসময় কটু ব্যাখ্যা প্রদান- ইত্যাদি চরিত্র। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের সিভিল সোসাইটির চরিত্রকে সেসময়কার সিভিল সোসাইটির চরিত্রের সাথে মেলানো যায়না। বর্তমান সময়ে সিভিল সোসাইটি অনেক বেশি ঐক্যমত্যের কথা বলে।সিভিল সোসাইটির এই রূপান্তরের ইতিহাস দেখা আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ে এসে সিভিল সোসাইটির উত্থান এবং কর্তৃত্বশীল সাম্রাজ্যের মৃত্যুর ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারে বহু বহুপাক্ষিক এজেন্সী ও ডোনার এজেন্সীগুলো। সিভিল সোসাইটির স্কলার ও একটিভিস্টরা গভীর গণতন্ত্রের পথে সমাজের অপরাপর বিষয়গুলোতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে থাকে। এই সমস্ত প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সিভিল সোসাইটি দলীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক ধারার বিপরীতে একটি সুষ্ঠ বিকল্পের পথ বাতলে দেয়।
আবার বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক সমর্থিত পোস্ট-ওয়াশিংটন কনসেনশান- যার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রকে পেছনে সরিয়ে আনা হয়; এখানে প্রত্যাশা করা হতো যে, রাষ্ট্র তার কার্যক্রমগুলোকে সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ভাগাভাগি করবে। অন্যভাবে বললে, সিভিল সোসাইটির ঘাড়ে চাপা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র বহুত্বে বিভাজিত হয় এবং বহু সংখ্যক এনজিও-র আবির্ভাব ঘটে।
ডোনার এজেন্সীগুলোর এজেন্ডার প্রেক্ষিতে এবং সিভিল সোসাইটির সমসাময়িক লক্ষ্য বিবেচনায় এটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সিভিল সোসাইটি এর মধ্য থেকে সামাজিক আন্দোলন বা রাজনৈতিক সংগ্রামের মতো বিষয়গুলোকে সমূলে ধূয়ে মুছে ফেলেছে। লক্ষ্যকরবার মতো বিষয়, জনগণ কর্তৃত্বপরায়ন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সিভিল সোসাইটির দাবীতে সংগ্রাম করেছিল। কিন্তু পরিবর্তে, বিনিময়ে তারা যা পেল, তা কেবল কতগুলো এনজিও। সিভিল সোসাইটি নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে যা পাওয়া যাচ্ছে, রাষ্ট্র কাজ করে চলেছে তার ক্ষমতার যুক্তিতে, বাজার চলছে মুনাফার যুক্তিতে, আর সিভিল সোসাইটির ধারণা বিমূর্ত হয়ে গেছে সমস্ত বিতর্ক, এর অন্ধকার সীমা সম্পর্কে সচেতনতা থেকে। বর্তমানে আমাদের সামনে সিভিল সোসাইটি উপস্থিত সৌহার্দ্র, স্ব-সাহায্য আর শুভকামনার চরিত্র নিয়ে।
বর্তমান সময়ের সিভিল সোসাইটিকে দেখা যেতে পারে ফান্ডপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর রাষ্ট্র ও বাজারকে পাশকাটিয়ে ‘তৃতীয় বিশ্বে’ পৌঁছানো এবং তাদের কার্যক্রম পরিচালনার বাইপাস হিসেবে। পরিস্তিতি এখন এরকম যে, ‘তৃতীয় বিশ্বের’ স্বার্বভৌমত্বও আপস করে চলে এর সাথে।
সিভিল সোসাইটির সংজ্ঞায়ন:
এ পর্যায়ে আমরা সিভিল সোসাইটির সাম্প্রতিক কিছু সংজ্ঞানকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হবো। তবে, বলে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সিভিল সোসাইটির এই বোঝাবুঝি সার্বজনীন কোন বোঝাবুঝি নয়।ক্যারলের (২০০০) মতে সিভিল সোসাইটি হচ্ছে, “একটি সাধারণ লক্ষ্যকে ঘিরে মানুষের সম্মিলন, যে লক্ষ্য বৃহত্তর সমাজর স্বার্থকে প্রতিফলিত করবে এবং রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঐ লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি দিতে বাধ্য করবে”।
ডায়মন্ডের (১৯৯৪) মতে, “সিভিল সোসাইটি হচ্ছে এমন এক সংগঠিত সামাজিক জীবনের রাজ্য যা স্বেচ্ছাসেবামূলক, স্ব-পরিচালিত এবং রাষ্ট্র হতে স্ব-শাসিত এবং বৈধতা ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত। সিভিল সোসাইটি সাধারণ অর্থে সমাজ ধারণা হতে স্বাতন্ত্র্য, কেননা এটি নাগরিকদের পাবলিক ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে নিজেদের আগ্রহ, ধৈর্য্য প্রকাশ এবং ধারণা, তথ্য বিনিময়, লক্ষ্য অর্জন, রাষ্ট্রের কাছে দাবী ইত্যাদির সাথে সংয্ক্তু করে এবং একই সাথে সরকারী কর্মকর্তদের জবাবদিহিতা তৈরি করে। সিভিল সোসাইটি এমন একটি মধ্যবর্তী সত্ত্বা, যা রাষ্ট্র এবং ব্যক্তিগত ক্ষেত্র – এই দুইয়ের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করে।” ডায়মন্ডের ভাষ্যমতে সিভিল সোসাইটি জীবন্ত হয়ে ওঠে যখন চার্চ, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, মানবাধিকার গ্র“প ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকেরা রাষ্ট্রের উপর অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য চাপ দেয় এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সকল প্রতিষ্ঠানকে তাদের বিশাল সীমানায় যুক্ত করে নেয়।
কুমারের (১৯৯৩) মতে, “সিভিল সোসাইটি হচ্ছে এমন একটি জায়গা, যার অবস্থান পরিবার ও রাষ্ট্রের মাঝখানে, অথবা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মাঝখানে, যাকিনা অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নাগরিকদের রাজনীতিতে অংশনেবার জন্য শিক্ষা-দীক্ষা দেয়।”
সিভিল সোসাইটির তাত্ত্বিকেরা:
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সিভিল সোসাইটিকে অনুধাবন করা হয়েছে রাষ্ট্রের বিকল্প, স্বাধীন সংগঠন হিসেবে। যেমন, ডি টোকোয়েভেলির (১৮৩৫, ১৮৪০) মতে, সিভিল সোসাইটি রাষ্ট্রকে সীমায়িত করে। আবার কার্ল মার্ক্স বলছেন, সিভিল সোসাইটি হলো রাষ্ট্রের ক্ষমতার উৎস। আবার গ্রামসী (১৯২৯-৩৫) বলছেন সিভিল সোসাইটি হলো সেই পরিসর, যেখানে রাষ্ট্র তার আধিপত্যশীল শ্রেণীগুলো দ্বারা হেজিমনি তৈরির চর্চা করে। গ্রামসীর মতে সিভিল সোসাইটি কেবল একে অন্যের পূর্বশর্তই নয়, বরং একের যুক্তি অপরকে বিশিষ্টায়িত করে।লক্ষ্য করবার মতো বিষয়টি হলো, সিভিল সোসাইটি যখন সকলের দ্বারাই আমন্ত্রিত হয়, তখন ধরে নিতে হবে অবশ্যই এখানে কিছু গলদ আছে। বর্তমানের সিভিল সোসাইটি যেমটিই হোক না কেন, সিভিল সোসাইটি সার্বজনীন কোন চরিত্র নিয়ে বিরাজ করেনি। আজকের সিভিল সোসাইটির মূল আমরা খুঁজে পাই দু’হাজার বছরেরও অধিক পুরনো গ্রীক দর্শনে। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টোটলের কাজে আমরা প্রাথমিক সিভিল সোসাইটির ধারণাকে খুঁজে পাই। পর্যায়ে ঐতিহাসিক ধারাক্রম অনুসরণ করে সিভিল সোসাইটিতে অবদান রাখা তাত্ত্বিকাদের কাজ তুলে ধরতে প্রযাসী হবো।
এরিস্টোটল এবং তার সিভিল সোসাইটি:
সমসাময়িক সিভিল সোসাইটির আলোচনাকে তিনটি বিচ্ছিন্ন কিন্তু পরস্পর সহযোগিতাপূর্ণ ক্যাটাগরীতে বিভক্ত করা যায়: প্রথমত: সাংগঠনিক জীবন, দ্বিতীয়ত: পাবলিক পরিসর এবং তৃতীয়ত: ভাল সমাজ। লক্ষ্যনীয়, এ্যাসোসিয়েশনাল লাইফ বা সাংগঠনিক জীবনের ধারণা পাওয়া যায় সমাজ বিজ্ঞানের তত্ত্বে। এমতে, সিভিল সোসাইটিকে বলা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করা- যেটি স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক একটি সেক্টর তৈরি করে। পাবলিক স্পেহার বা জানগণিক পরিসর তত্ত্বে সিভিল সোসাইটিকে পাবলিক বিতর্কের পরিসরে দেখা হয়, যেখানে থাকবে স্বাধীন গণমাধ্যম, নাগরিক ফোরাম, কিংবা নাগরিকদের মধ্যে সাধারণ কথোপকথন। আর গুড সোসাইটি বা ভাল সমাজ তত্ত্বটি সিভিল সোসাইটিকে মূল্যবোধগত ধারণা হিসেবে বর্ণনা করে। এখানে ভাল সমাজ বলতে সেই সমাজকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে জনগণ থাকবে মুক্ত। তারা স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবনযাপন করতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে।লক্ষ্যণীয়, এরিস্টোটলের কাজে সিভিল সোসাইটির এই তিনটি আধুনিক ধারণারই উল্লেখ পাওয়া যায়। এরিস্টটল ‘সাংগঠনিক জীবন’ নিয়ে লিখেছেন তার ‘পলিটিক্স’ গ্রন্থে এবং এ্যাথেনিয়ান কন্সটিটিউশনে। ‘পাবলিক পরিসর’ নিয়ে আলোচনা এসেছে তার “রিথোরিক”এ। আর ‘গুড সোসাইটি’ বা ‘ভাল সমাজ’ নিয়ে আলোচনা করেছেন পলিটিক্স গ্রন্থে।
অ্যাডাম ফার্গুসন (১৭২৩-১৮১৬):
স্কটিশ এ্যানলাইটেনমেন্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক অ্যাডাম ফার্গুসন। মূলত তার দাপট ছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। কখনো কখনো অ্যাডাম ফার্গুসনকে ‘প্রথম সমাজতাত্ত্বিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফার্গুসনকেই মূলত সিভিল সোসাইটি টার্মটির আবিষ্কারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফার্গুসনের সিভিল সোসাইটির ধারণাই মূলত পরবর্তী সময়ের তাত্ত্বিকদের, বিশেষ করে এই ধারণাটি আরও বি¯তৃত করতে প্রভাবিত করেছে। ফার্গুসনের মতে, “সিভিল সোসাইটি হলো সামাজিক ক্রমের একটি দশা, একটি অবস্থা, যেখানে মানুষ সংগঠিত হয়- বিশেষত স্ব-সংগঠিত।ফার্গুসনের সাথে হেগেলের ভিন্নতার জায়গা হলো, হেগেল সিভিল সোসাইটিকে রাষ্ট্র থেকে পৃথকীকৃত, বিচ্ছিন্ন একটি ধারা হিসেবে দেখেছেন। রুশোর বক্তব্য ছিল, প্রাক-সামাজিক ‘মানুষ’ (‘পুুরুষ’) স্বাধীনভাবে বসবাস করতো। কিন্তু ফাগূসনের বক্তব্য, মানুষ সবসময়ই দলে বাস করেছে এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন, মানুষ সবসময়ই রাজনীতিক ও প্রগতিশীল ছিল। মোদ্দা কথা ফার্গুসন তার ‘সিভিল সোসাইটি’তে মানুষের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান এবং পদাধিকারসুলভ সুষ্ঠু দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের কথা বলেছেন। ফার্গুসনের কাছে সভ্যতার সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাজনৈতিকতা। সভ্যতার মধ্য দিয়েই প্রকৃত আইনের শাসন, কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। ফার্গুসের মতে সিভিল সোসাইটির কর্মকান্ড পরিচালরার মাধ্যমে মানবজাতি তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে। শুধু তাই নয়, সর্বোত্তম সম্প্রীতির নিদর্শনও এখানে সুস্পষ্ট। আর এ ধরনের পরিস্থিতির বিকাশ তখনই ঘটবে, যখন রাষ্ট্র প্রকৃত অর্থে স্বাধীন- যাকে মুক্ত মানুষের রাজনৈতিক অবস্থা বলে গণ্য করা যেতে পারে।
জর্জ ফ্রেডরিখ উইলহেম হেগেল:
সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে হেগেলের বক্তব্য বোঝার আগে আমাদের আগে বোঝা উচিত হেগেলে রাজনৈতিক দর্শন। ১৯২১ সালে প্রকাশিত হেগেল তার ‘ফিলসোফি অব রাইট’ গ্রন্থে তিন ধরনের অধিকার কথা বলেছেন। এগুলো হলো ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট রাইট’ বা ‘বিমূর্ত অধিকার’; ‘মোরালিটি’ বা ‘নৈতিকতা’ এবং ‘ডাইমেনশন অব ইথিকাল লাইফ’ বা ‘যৌক্তিক জীবনের বৈচিত্র্য’। তিনি তার গ্রন্থটিতে এই তিন ধরনের অধিকারের মধ্যে পার্থক্যকৃত আলোচনা উপস্থাপন করেন। প্রথম দু’টিকে এড়িয়ে আমরা যদি হেগেলের ‘য়ৌক্তিক জীবনের বৈচিত্র্য’ সম্পর্কিত আলোচনা দেখি, এখানে হেগেল পরিবার, সুশীল সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্কিত আলোচনাকে উপস্থাপন করেছেন।হেগেল বলছেন, সিভিল সোসাইটি মূলত পরিবার এবং রাজনৈতিক রাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে হেগেল বলছেন, “এমন একটি দশা বা অবস্থা, যেটির সৃষ্টি হবে প্রয়োজন এবং কারণকে ভিত্তি করে”; যেখানে “এই দশায় থাকা প্রতিটি নাগরিক প্রাইভেট ব্যক্তি এবং তাদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদেরই আগ্রহ থাকবে”।
হেগেলের সিভিল সোসাইটি সম্পর্কিত আলোচনায় আমরা এভাবে সমাপ্তি টানতে পারি যে, হেগেল সিভিল সোসাইটিকে রাষ্ট্র এবং পরিবার বা ব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা হিসেবে দেখেছেন। মূলত এই বিচ্ছিন্ন সত্ত্বাটির কাজ হলো মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা। অন্যদিকে ফার্গুসনের কাছে, সিভিল সোসাইটি এসবেরই একটি অংশ, সামাজিক ক্রমের একটি দশা।
এলেক্সিস ডি টোকোয়েভেলি (১৮০৫-১৮৫৯):
টোকোয়েভেলির ‘ডেমোক্রেসি ইন এ্যমেরিকা’ কে সমসাময়িক সিভিল সোসাইটির আলোচনায় হলমার্ক ক্রিয়েশন বলা হয়। এখানে আমি একটি প্রশ্ন আগেভাগেই উত্থাপন করে রাখছি, কেন গ্রামশী না হয়ে টোকোয়েভেলি আমাদের আজকের সিভিল সোসাইটি বুঝবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন, এই প্রশ্নটির উত্তর সঠিকভাবে খুঁজতে পারলে আমারা আজকের সিভিল সোসাইটি কেন এমন হলো, সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পাবো।
১৮০৫ সালে অভিজাত ফরাসী পরিবারে টোকোয়েভেলির জন্ম। ২৫বছর বয়সে তিনি প্রথম আমেরিকা ভ্রমণ করেন। তার ডেমোক্রেসী ইন এ্যমেরিকা গ্রন্থটি দুই খন্ডে প্রকাশিত। এর প্রথম খন্ডে তিনি কথা বলেন আমেরিকান ভূখন্ডে সেটেলারদের নিয়ে। আমেরিকার সেটেলার অভিবাসীরা পাল তুলে অতলান্তিক পাড়ি দিয়ে দলে দলে এসে হাজির হ্িচ্ছলেন মূল আমেরিকান ভূ-খন্ডে। প্রথমদিকে আসা আমারিকানরা এখানে সংঘ গড়ে তুলেছিল। সেখানে সংঘের ভিত ছিল সমতা। টোকোয়েভেলি পর্যবেক্ষণ করেন, এই সমতাকে মূলমন্ত্র হিসেবে ধরে নিয়েই আমেরিকায় গণতন্ত্রের সূচনা। প্রথম দিকে আমেরিকার উপশহর এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত সরকার সম্পর্কে টোকোয়েভেলির বক্তব্য ছিল, অত্যাবশ্যকীয়ভাবে এটি ফ্রান্সের অভিজাত আমলাতন্ত্রের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। টোকোয়েভেলি তার লেখায় এমন এক পৃথিবীর কথা বর্ণনা করেন, যেখানে স্বধীনতা কর্তব্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণই উপযুক্তভাবে শাসন করে।
সর্বোপরি টোকোয়েভেলির বক্তব্য অনুযায়ী সিভিল সোসাইটি, সিভিক এ্যসোসিয়েশনের চাইতে অনেক বেশি রাজনৈতিক সংগঠন। তিনি অভিভূত ছিলেন যে, কিভাবে এ্যমেরিকানরা কোন একটা সাধারণ সমস্যায় সবাই একত্রিত হয়। প্রয়োজনে সাহায্য করতে, সামাজিক অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়তে, সংখ্যালঘুর উদ্দেশ্য পূরণে সরকারের সাথে আতাত করতে সিভিল সোসাইটিকে তিনি অপরিহার্য হিসেবে দেখেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ও সামাজিক গঠনে সংঘের গুরুত্ব ছিল টোকোয়েভেলির বিশ্লেষণের কেন্দ্রীয় বিষয়। বিভিন্নভাবে তিনি এসবকে ব্যাখ্যা করেন। তিনি কোন ধরনের সংশয় ছাড়া, কোন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন ছাড়াই সিভিক সংঘের বন্ধু ছিলেন।
কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩):
হেগেলীয় দর্শন এবং হেগেল উত্তর হেগেলীয় সমালোচনা দ্বারা মার্ক্স ভীষণভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ইয়ং হেগেলিয়ান সার্কেলের সদস্য। মার্ক্স তার লেখালেখিতে প্রথম দিকে সামাজিক অসমতাকে গোঁড়াভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে সমালোচনা করেন। প্রথম দিকে মার্ক্সের বক্তব্য ছিলো এমন, যে আইনী সম্পর্ক এবং সরকারের গঠনকে বুঝতে হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বসবাসের প্রেক্ষিতে। মূলত এসবের প্রেক্ষিতেই মার্ক্স সিভিল সোসাইটি সম্পর্কিত তার বিশ্লেষণকে দাঁড় করান।আন্তোনীও গ্রামসী (১৮৯১-১৯৩৭):
গ্রামসী মূলত ইতালীর সাংবাদিক এবং ইতালীয় কমিনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। তিনি মারা যান ফ্যাসিস্টদের কারাগারে। গ্রামসীকে সিভিল সোসাইটির একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গ্রামসী বলছেন, সমাজের সুপার স্ট্রাকচারের মধ্যেই সিভিল সোসাইটি বিদ্যমান। তিনি বলছেন এই সুপার স্ট্রাকচার হলো ব্যাপকতর সাংস্কৃতিক ও মাতদর্শিক পুনরুৎপাদনের স্থল। গ্রামশীর কাজ মূলত রাষ্ট্র, সুশীল সমাজ এবং হেজিমনির মধ্যকার জটিল সম্পর্ককে বুঝতে সাহায্য করে। মূলত গ্রামসীর সিভিল সোসাইটির ধারণায় হেজিমনি একটি কেন্দ্রীয় প্রত্যয়। এর ভিত্তি মূলত মার্ক্সের ‘ফলস্ কনসাসনেস’-এর ধারণা। গ্রামসী তার হেজিমনির ধারণাকে ব্যবহার করেছেন মতাদর্শগত আধিপত্যের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে বোঝানোর জন্য। তিনি দেখান, কিভাবে আধিপত্যশীল এলিটরা জনপ্রিয় সংস্কৃতি, মিডিয়া, শিক্ষা, ধর্ম এগুলোকে ব্যবহার করেন তাদের অবস্থানের মতাদর্শিক বৈধতা তৈরি করার জন্য।‘সিভিল সোসাইটির’ আবির্ভাবের অনুসন্ধানে:
আগে বলা হয়েছে, সিভিল সোসাইটির ধারণাটি মূলত প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে ওঠে ১৯৮০’র দশকে। পূর্ব ইউরোপের বুদ্ধিজীবীরা অনুভব করতে শুরু করেন, ঐতিহাসিক কাল থেকে মানুষ রাষ্ট্রের অসহনীয় অবস্থা থেকে মুক্ত পেতে দু’টি পথকে খুঁজে নিয়েছে। এর প্রথমটি উপর থেকে রাষ্ট্র ক্ষমতার পুনর্গঠন এবং দ্বিতীয়টি: নীচ থেকে সংগ্রাম। যেমন, তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে কখনো কোন ধরনের সংশয় প্রকাশ করেনি। যেখানে প্রয়োজন হয়েছে, যখন প্রয়োজন হয়েছে, তারা হস্তক্ষেপ করেছে। একগুঁয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা এবং সাম্রাজ্যতান্ত্রিক আমলাতন্ত্রের কবলে জনগণ নিজেদের নাগরিক ও রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতাহীন মনে করেছে। ফলে একমাত্র উপায় হিসেবে খোলা ছিল বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যেই একটি ‘ফ্রি জোন’ – যেখানে জনগণ নির্ভয়ে, নিঃসংশয়ে তাদের আবেগের কথা প্রকাশ করতে পারবে। আর পূর্ব ইউরোপীয়রা এই ‘ফ্রি জোন’ কেই বলতো সিভিল সোসাইটি।পূর্ব ইউরোপে সিভিল সোসাইটির উত্থানের পেছনে তিনটি ফিচার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত:
এটি সেই সমস্ত জনগণের নির্ধরণবাদীতাকে ঘোষণা করে যারা এতোকাল রাজনৈতিক পরিসর থেকে বিলুপ্ত ছিল। তাদেরকে তাদের নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক ডিসকোর্সের সাথে যুক্ত হবার সুযোগ করে দেয় সিভিল সোসাইটি। ফলে সাধারণ মানুষজন তাদের জীবনকে সাজাতে সক্ষম হয়।
দ্বিতীয়ত:
সংগঠনের মধ্যদিয়ে স্ব-সাহায্য এবং সৌহাদ্রকে লালন করতে শেখে মানুষ। যেমন বই পড়ার ক্লাব, আলোচনাসংঘ, ট্রেড ইউনিয়ন, স্ব-শিক্ষার দল ইত্যাদি।
তৃতীয়ত:
তারা রাষ্ট্র-সমাজ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠানিকীকৃত করতে পথ খোঁজে। সর্বোপরি সামাজিক জীবনে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে স্বচ্ছ ও সীমায়িত করবার পথ খোঁজে।
সামাজিক রূপান্তরণ হিসেবে রাজনীতির সমাপ্তি:
যে ফ্রি জোনের কথা বলা হচ্ছিল, সেখানে ক্রমাগত মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে এবং সেখান থেকেই বিকশিত হয় শক্তিশালী রাজনৈতিক আন্দোলন। ১৯৮৯-এর কথা যখন পূর্ব ইউরোপের বহু শক্তিশালী রাষ্ট্র – রাজপথে সামিল হওয়া লক্ষ মানুষের ভিড়ে দুর্বল হয়ে ওঠার আগেই কিংবা সেই দোলায় আক্ষরিক অর্থেই ভেঙ্গে পড়ে।
স্ব-নিয়ন্ত্রিত সামাজিক সংগ্রাম নিজেকে শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগ্রামে পরিণত করতে পারে। সাধারণ জনগণ, যারা রাষ্ট্রের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, মুহূর্তেই ভোজবাজির মতো রূপ পাল্টে হয়ে যেতে পারেন রাজনৈতক জনগণ। তখন সিভিল সোসাইটির ‘সিভিল’ কোনভাবেই আর অরাজনৈতিক কেউ থাকেনা। পূর্ব ইউরোপের ক্ষেত্রে আমরা দুটো বিষয় দেখতে পাই। প্রথমত: সেখানে একচ্ছত্র রাষ্ট্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডের মতো করে বুর্জুয়া সংগ্রাম পুনর্গঠিত হচ্ছিল। ১৯৮০ -দশকের পূর্ব ইউরোপের প্রেক্ষিতে জনলক-কে সিভিল সোসাইটির চিতনার অন্যতম একজন লেখক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত: পূর্ব ইউরোপের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আমরা যে বার্তাটি পাই, ১৯৩০-এর দশকের আন্তনিও গ্রামসীর ধারণায়নের একটি প্রতিফলন হিসেবে সেটি দেখা যায়: যেখানেই, যখনই কোন রাষ্ট্র, হোক সেটা পরমক্ষমতাবাদী কিংবা সমাজতান্ত্রিক- তার জনগণের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারকে অবজ্ঞা করবে – তখন আমরা এর বিরুদ্ধে নাগরিকদের মধ্য থেকে অসন্তোষের প্রতিফলন দেখতে পাই।উন্নয়ন বিতর্কের প্রেক্ষিতে সিভিল সোসাইটির উত্থান:
পূর্ব ইউরোপের অভিজ্ঞতা পৃথিবীর অন্যান্য অংশের মানুষদের অবস্থাকে ধারণায়নে জ্ঞানতাত্ত্বিক ও এ্যাকটিভিস্টদের ব্যাপক সাহায্য করে। সিভিল সোসাইটির আর্গুমেন্টকে আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রাষ্ট্র ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে ব্যবহার করতে পারি। এখানে রাষ্ট্র তার জনগণকে জীবনযাত্রার নূন্যতম মান প্রদানে ব্যর্থ। ভারতীয় জ্ঞানতাত্ত্বিকরা তাদের রাষ্ট্রের দুর্নীতি পরায়ন আমলাতন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন, ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলেন। তারা বলেন, এদের কুকর্মের কারণেই রাষ্ট্র পরিচালিত উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো হতাশাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই জ্ঞানতাত্ত্বিকরা একভাবে যেন তাদে র রাজনৈতিক দেওলিয়ত্বের ঘোষণাই দিয়েছেন। তারা আশাহতের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, সামর্থ্যে আস্থার অভাবকে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন ছিল। মূলত এখানে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার পেছনে কাজ করেছে বৈদেশিক পলিসির অবাধ প্রবেশ এবং পশ্চিমা বিশ্বের হস্তক্ষেপ।প্রজেক্ট হিসেবে সিভিল সোসাইটি:
সিভিল সোসাইটিকে এক অর্থে প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যায়। অ্যাডাম স্মিথ ও জর্জ হেগেলের মতো তাত্ত্বিকেরা যারা সিভিল সোসাইটিকে প্রথমদিকে প্রত্যক্ষ করেন, তারা এটিকে গভীরভাবে সমস্যায়িত একটি পরিসর হিসেবে দেখেন। তারা এমন অনেক অনাগরিকতার গুণাবলী সম্পর্কে অবগত, যেগুলো সিভিল সোসাইটিতে বিদ্যমান ছিল।আমাদের ফিরে তাকানো উচিত পূর্ব-ইউরোপের ভেলভেট-রেভ্যুলেশনের দিকে, যখন সিভিল সোসাইটির উদ্যাপনী বাইবেলে একটি সতর্কতা সংকেত ঢুকে যায়। কেননা এসময়ে সিভিল সোসাইটির ব্যবহার পুনরায় চালু হয়েছিল। এসময়ে মানুষজন খুঁজে পায় যে তারা সত্যি সত্যি সিভিল সোসাইটি চায়না। তার পরও সিভিল সোসাইটির সাথে যুক্ত প্রগলভ অহংকারের কারণেই এটি মূল্যবান একটি টার্ম হিসেবে থেকে যায়। বিষয়টি এজন্য না যে এটি গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিকায়নের পূর্বশর্ত, বরং এটি এমন একটি পরিসর, যেখানে বিভিন্ন ধরনের দল যেকোন ধরনের প্রজেক্টে সম্পৃক্ত হতে, এক হতে পারে। এর অনুপস্থিতে মনে হতে পারে গণতন্ত্রের অনুপস্তিতি বা গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অনুপস্থিতি।
উপসংহার:
যেভাবেই বলিনা কেন, একথা সত্য যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকাংশই প্রাথমিকভাবে গ্রামীণ আবহের। আর সিভিল সোসাইটিতে সবচেয়ে ভালোভাবে সুরক্ষিত এজেন্ডগুলো মূলত শহুরে মধ্যবিত্তদের এজেন্ডা। নিপীড়িত প্রান্তিক কৃষকের এজেন্ডা, আদিবাসী দলগুলো- যারা স্বাধীনতার জন্য, মুক্তির জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে, তাদের এজেন্ডা সিভিল সোসাইটির তত্ত্ব ও চর্চার পরিসরে অনুপস্থিত। প্রান্তিক দলগুলোকে সিভিল সোসাইটিতে তাদের কন্ঠস্বর খুঁজে পেতে, তাদের উচিত সিভিল সোসাইটি নামক দুর্গের দেয়ালে আঁছড়ে পড়া। প্রয়োজন সিভিল সোসাইটির লৌহ কপাট ভেঙে ফেলার- প্রয়োজন ঐ পরিসরে জোরপূর্বক প্রবেশ।- 8936 views
- 1 answers
- 0 votes
ইভ টিজিং :
ইভটিজিং বলতে কোন মানুষকে বিশেষ করে কোন নারী বা কিশোরীকে তার স্বাভাবিক চলাফেরা বা কাজ কর্ম করা অবস্থায় অশালীন মন্তব্য করা, ভয় দেখানো, তার নাম ধরে ডাকা এবং চিৎকার করা, বিকৃত নামে ডাকা, কোন কিছু ছুঁড়ে দেয়া, ব্যক্তিত্বে লাগে এমন মন্তব্য করা, ধীক্কার দেয়া, তার যোগ্যতা নিয়ে টিটকারী দেয়া, তাকে নিয়ে অহেতুক হাস্যরসের উদ্রেক করা, রাস্তায় হাটতে হাটতে ধাক্কা দেয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেয়া, সিগারেটের ধোয়া গায়ে ছাড়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পিছু নেয়া, অশ্লীলভাবে প্রেম নিবেদন করা ইত্যিাদি।এছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে গান, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করা, চিঠি লেখা, পথরোধ করে দাঁড়ানো, প্রেমে সাড়া না দিলে হুমকি প্রদান ইত্যাদিও ইভটিজিং-এর মধ্যে পড়ে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে মোবাইল ফোন এবং ই-মেইলের মাধ্যমেও ইভটিজিং হয়ে থাকে।কীভাবে এল :
খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থের নাম বাইবেল। বাইবেলের আরেক নাম ইনজিল। খ্রিষ্টান ও মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল একটি আসমানী কিতাব। বাইবেলের প্রধান চরিত্র Adam ও Eve, পবিত্র কোরানে তাঁদেরকে বলা হয়েছে আদম ও হাওয়া। বাইবেলের Eve ও কোরানের হাওয়া একই ব্যক্তি। কাজেই Eve শব্দটির উৎপত্তি বাইবেলে। বাইবেলে Eve শব্দ দ্বারা হাওয়াকে বুঝালেও বর্তমানে শব্দটির অর্থের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। Eve শব্দটির যৌগিক অর্থ হাওয়া, কিন্তু রূরার্তে রমনী, নারী, নায়িকা, প্রিয়তমা। ব্যবহারিক অর্থে আরো আছে। আমাদের লক্ষ্য ‘Eve’ শব্দটির প্রায়োগিক অর্থ তুলে ধরা। এ ক্ষেত্রে শব্দটি যোগজয় অর্থের দিকে নজর দিব। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদেরকে বোঝায়, যাদের বলা হয় ‘teen ager’। Eve teasing বলতে নারীকে বিরক্ত করা অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইয়ার্কি ঠাট্রার মাধ্যমে আমরা দাদি নানিকেও বিরক্ত করি। কিন্তু সেটা Eve teasing এর মধ্যে পড়ে না। বিরক্ত করার মধ্যে দিয়ে যদি কোন অনৈতিক প্রস্তাব, প্রেম ভালোবাসার প্রস্তাব, লোভ লালসার ইঙ্গিত, ভয় দেখিয়ে বা জিম্বি করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা, অবৈধ কাজে প্রলুব্ধ করা।Eve teasing যে কেবল টিন এজারের মধ্যেই ঘটে তা নয়। যে কোন মেয়ে বা নারী- যে বয়সের হোক না কেন, অন্য কোন পুরুষ কর্তৃক আপত্তিকর আচরণের শিকার হলেই তা Eve teasing। বিবাহ-পূর্ব ভালোবাসা অশালীন কথাবার্তা বলা, প্রেমপত্র, মোবাইল ফোনে শ্রুতিকটু আলাপ, জনতার ভিড়ে পরপুরুষ কর্তৃক ইচ্ছাকৃত ধাক্কা ধাক্কি, ষ্পর্শ করা, চোখের ভাষায় অশুভ ইঙ্গিত করা, কথনে, ইঙ্গিতে ইন্দ্রীয় অনুভুতি উপলব্ধি করবার দূরভিসন্ধিকে Eve teasing বলা হয়।
- 1354 views
- 1 answers
- 0 votes
জেনারেল ডায়েরির সংক্ষিপ্ত রূপ। এই ডায়েরীতে থানার বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন আসামী কোর্টে চালান দেয়া, এলাকার বিভিন্ন তথ্য, থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগমন ও প্রস্থানের তথ্য ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।
কাউকে ভয় ভীতি দেখানো হলে বা অন্য কোন কারণে যদি তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, কিংবা কোন ধরনের অপরাধের আশঙ্কা করেন তাহলে তিনি জিডি করতে পারেন। জিডি করার পর পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রয়োজনবোধে তদন্ত করা, নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও জিডির বিষয়টি মামলাযোগ্য হলে পুলিশ মামলা করে থাকে। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য জিডি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আদালতেও জিডিকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জিডি করা
থানার ডিউটি অফিসার জিডি নথিভুক্ত করেন। এক্ষেত্রে তিনি একটি ডায়েরীতে জিডির নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। জিডির দুটি কপি করা হয়। একটি থানায় সংরক্ষণ করা হয় এবং অন্যটিতে জিডির নম্বর লিখে প্রয়োজনীয় সাক্ষর ও সীলমোহর দেয়া হয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হয়।অভিযোগকারী নিজে জিডি লিখতে পারেন, আবার প্রয়োজনে থানার কর্মকর্তাও লিখে দিয়ে থাকেন।
প্রতিটি জিডির বিপরীতে একটি নম্বর দেয়া হয়, ফলে কোন অবৈধ প্রক্রিয়া মাধ্যমে কেউ আগের তারিখ দেখিয়ে জিডি করতে পারেন না।
পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া দেবার প্রয়োজন নেই এমন ক্ষেত্রে যেমন পাসপোর্ট হারানো, বাখাটে বা মাদক সেবীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান বা এজাতীয় ক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করা যেতে পারেন বা সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরে ফ্যাক্স বা ই-মেইল করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনলাইনে জিডি করার পর ই-মেইল বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডি নম্বরটি জিডিকারীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
- 793 views
- 1 answers
- 0 votes
মানহানি এমন এক ধরনের ধরনের অপরাধ, যেটি ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় প্রকারের হতে পারে। ফৌজদারি আদালতে মানহানি মামলা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ডপ্রাপ্ত হন। পক্ষান্তরে দেওয়ানি আদালতে মামলা হলে এবং সেই মামলায় বাদি জয়ী হলে বিবাদী থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ আদায় করতে পারেন।
বাংলাদেশের দন্ড-বিধির ৪৯৯ ধারা অনুসারে যে ব্যক্তি মানহানির উদ্দেশ্যে বা মানহানিকর জেনে বা পাঠের জন্য উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান কল্পস্মৃতির সাহায্যে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমনভাবে কোনো নিন্দাবাদ প্রণয়ন বা প্রকাশ করে যে, সেই নিন্দাবাদ উক্ত ব্যক্তির সুনাম নষ্ট করবে, সেই ব্যক্তি কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা ছাড়া উক্ত ব্যক্তির মানহানি করেছে বলে ধরা হবে। আইনে এমন কিছু ব্যতিক্রম অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নামে মানহানিকর কিছু বললে, লিখলে বা প্রচার করলেও দন্ড-বিধির ৪৯৯ ধারার অধীনে মানহানির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হবে না। যেমন :
(১) জনগণের কল্যাণার্থে কারো প্রতি সত্য দোষারোপ করলে, তাতে মানহানি হবে না।
(২) জনগণের প্রতি সরকারি কর্মচারীর আচরণ সম্পর্কে সৎ বিশ্বাসে অভিমত প্রকাশ করলে তা মানহানির শামিল হবে না।
(৩) আদালতসমূহের কার্যবিবরণী প্রতিবেদন প্রকাশ করা মানহানির অন্তর্ভুক্ত হবে না।
(৪) যে কোনো জনসমস্যা সম্পর্কে কোনো ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে সৎবিশ্বাসে অভিমত প্রকশ করা মানহানির শামিল নয়।
(৫) আদালতে সিদ্ধান্তকৃত মামলার দোষ, গুণ বা সাক্ষীদের সম্পর্কে বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আচরণ সম্পর্কে অভিমত মানহানির পর্যায়ে পড়বে না।
(৬) গণঅনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানাবলি সম্পর্কে কোনো মতামত প্রদান মানহানি নয়।
(৭) কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে সৎবিশ্বাসে কারো সম্পর্কে অভিযোগ করা হলে সেটিও মানহানি হবে না। যেমন- পুলিশের কাছে কারো ব্যাপারে সৎ বিশ্বাসে অভিযোগ।
(৮) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার বা অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার্থে দোষারোপ করা মানহানি নয়।
(৯) গণকল্যাণার্থে সতর্কতা প্রদানের উদ্দেশ্যে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হলে, সেটিও মানহানি হবে না।বাংলাদেশের দন্ড-বিধির ৫০০ ধারায় মানহানির শাস্তি বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয়বিধ দন্ড হতে পারে। ৫০১ ও ৫০২ ধারা অনুসারে, মানহানিকর বলে পরিচিত বিষয় মুদ্রণ বা খোদাইকরণ সম্পর্কে এবং এর শাস্তি বর্ণিত হয়েছে।
- 986 views
- 1 answers
- 0 votes
সম্পত্তিতে নিঃসন্তান বিধবার উত্তরাধিকারঃ
মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্ত্রীর অংশ ১/৪ এবং সন্তান থাকলে ১/৮। স্ত্রীর অংশ একাধিক হলে তাদের প্রাপ্য অংশের মোট পরিমাণে কোনো তারতম্য হয়না। তারা তাদের প্রাপ্যাংশ (১/৪বা ১/৮) সমানভাবে ভাগ করে নিবে। একজন শিয়া মুসলিম মারা যায় চার স্ত্রী রেখে । যেমন: ক-১,ক-২,ক-৩,ত-৪ । ক-৪ এর সন্তান আছে। প্রত্যেক স্ত্রী ১/৩২ পাবে,তবে যাদের সন্তান নেই তাদের উত্তরাধিকার মরহুমের সব সম্পত্তির উপর প্রযোজ্য হবে না ।
মুসলিম নিঃসন্তান নারী স্বামীর মৃত্যুর পর ৪ আনা এবং সন্তানবতী নারী মাত্র দুই আনার অংশীদার হন। বিশেষ করে নিঃসন্তান নারী যখন নিজ সংসারে মাত্র ৪ আনার মালিক এবং বাকি ১২ আনা স্বামীর ভাই-বোন, মা-বাবার মধ্যে বণ্টন হয় তখন ঐ সংসারে টিকে থাকা একজন মর্যাদাসম্পন্ন নারীর জন্য কেবল দুর্ভাগ্যই বয়ে আনে। বিধবাবিবাহ সকল ধর্মমতে বৈধ হলেও এরূপ বিবাহ নির্ভর করে বিধবাটির বয়সের ওপর। প্রৌঢ়া বিধবার পক্ষে ২য় স্বামী গ্রহণ করা অসম্ভব। সুতরাং স্বামীর মৃত্যুর পর এরূপ অসহায় নিঃসন্তান মহিলাদের স্থান কোথায়? গ্রামের মহিলাদের চিত্র আরো করুণ। কখনও কখনও সম্পত্তি রক্ষার্থে পারিবারিক চাপে তাঁরা দেবরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হন।
স্বামীর কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করে এবং কোনো ওছিয়ত করা থাকলে তা পূরণ করার পর তির সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন কতে হবে। স্বামী-স্ত্রী নিঃসন্তান থাকা অবস্থায় স্বামীর মৃত্যু হলে, স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে। স্বামী সন্তান রেখে ইন্তেকাল করলে, স্ত্রী পাবে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ। স্ত্রী নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে এবং মৃত্যুকালে তার রেখে যাওয়া কোনো সম্পত্তি থাকলে, উক্ত সম্পত্তি থেকে স্বামীর অংশ হবে আধা অংশ। স্ত্রী সন্তান রেখে ইন্তেকাল করলে, স্বামী পাবে স্ত্রীর সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। এক্ষেত্রে দাফন-কাফনের খরচ, ঋণ পরিশোধ এবং ওছিয়ত পূরণ করার পরই সম্পত্তি বন্টন করতে হবে।
- 976 views
- 1 answers
- 0 votes
কোনো কারণে জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করানোকে বলে মিউটেশন বা নামজারি। উত্তরাধিকারসূত্রে, বিক্রয়, দান, খাসজমি বন্দোবস্তসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তান্তরের কারণে জমির মালিকানা বদল হয়। কিন্তু জমির নামজারি না করানো হলে মালিকানা দাবি করার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। জমি রেজিস্ট্রেশন, জমি ক্রয়-বিক্রয়, খাজনা প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় নামজারি। জমি হস্তান্তর হওয়ার পর নামজারি করা অনেকটাই বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কীভাবে আবেদন করতে হয়
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করতে হবে। এতে নির্ধারিত জায়গায় জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হবে। আবেদনে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে মূল দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিল, পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি, ভূ-উন্নয়ন কর পরিশোধের দলিল, ওয়ারিশান সনদপত্র (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা), বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে। কোনো রায় বা ডিক্রির কারণে নামজারি করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি জমা দিতে হবে। আবেদনকারী নিজেও আবেদন করতে পারেন অথবা আবেদনকারী কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করেও আবেদন করতে পারেন। আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারী অথবা আবেদনকারীর প্রতিনিধির পাসপোর্ট আকারের ছবি সংযুক্ত করে দিতে হবে আবেদনের নির্ধারিত জায়গায়। খেয়াল রাখতে হবে নামজারি করাতে গিয়ে কোনো দালালের খপ্পরে যেন না পড়েন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগরে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিয়ম করা হয়েছে।
কোথায় করা হয় নামজারি
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন সহকারী পদের একজন দায়িত্বে থাকেন। নাজির পদের একজন নামজারির জন্য ফি জমা নেন। তহশিলদারেরা (সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা) নামজারির তদন্তের দায়িত্বে থাকেন। কোনো আবেদন করা হলে এ নামজারি করা জমির ওপর তদন্ত করার নিয়ম আছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারি আবেদন করে থাকেন। এটা ঠিক নয়।
নামজারি কেন করাবেন
নামজারি করাটা খুবই জরুরি। নামজারি না করলে রেকর্ডে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভূক্ত হবে না। আপনি নিজ নামে খাজনাও দিতে পারবেন না। অর্থাৎ ভূমি অফিস বা তহসিল অফিসের রেজিস্টারে আপনার নামই উঠবে না। রেকর্ডই মালিকানার প্রকৃত দলিল। ধরুন আপনি রেকর্ডিয় মালিক জনাব আজিজুর রহমানের নিকট হতে জমি কিনেছেন। এরপর আপনি যতক্ষণ না আপনার নামে নামজারি করাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারি রেকর্ডে আপনার নামই উঠবে না। আপনার কেনা জমি সরকারি খাতাপত্রে পূর্ববর্তী মালিক আজিজুর রহমানের নামেই রয়ে যাবে। আপনি জমি কিনলেন অথচ মালিক হিসেবে গণ্য হবেন না। কাজেই নামজারি করাটা খুবই জরুরি।
নামজারিতে যা যা প্রয়োজন হয়ঃ
১. নির্ধারিত ফর্মে আবেদন
২. ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৩. জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি
৪. মালিকানার প্রমাণস্বরূপ দলিলাদি ও অন্যান্য কাগজপত্র (দলিলের ফটোকপি, সিএস/এসএ/আরএস/মহানগর পড়চা ইত্যাদি)
৫. ওয়ারিশ হিসেবে নামজারির ক্ষেত্রে কোর্টের সাকসেশন সার্টিফিকেট বা নির্ধারিত জনপ্রতিনিধি (ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কমিশনার, পৌরসভার চেয়ারম্যান ইত্যাদি) কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশ সনদ
নামজারি প্রক্রিয়া
১। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নামজারির আবেদন এসি (ল্যান্ড) অফিসে জমা দিতে হবে। জমা প্রদানকালে কেস নম্বর যুক্ত একটি টোকেন বা স্লিপ আপনাকে দেয়া হবে। এটি সাবধানে রাখতে হবে। সতর্কতার জন্য নম্বরটি অন্য কোন নিরাপদ জায়গায় লিখে রাখুন;
২। আপনার আবেদনের বিপরীতে একটি নামজারি কেস নথি তৈরী হবে। এসি (ল্যান্ড) আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্রের যথার্থতা এবং জমির মালিকানা যাচাই পূর্বক নামজারির প্রস্তাব বা প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা তহসিলদারের নিকট প্রেরণ করবেন।
৩। তহসিলদার কেস নথিটি পাওয়ার পর আপনার কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য দলিল এবং কাগজপত্রের মূল কপিসহ তার কার্যালয়ে (তহসিল অফিস) উপস্থিত হওয়ার জন্য বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে তহসিল অফিসে যেয়ে মূল কাগজপত্র দেখাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তহসিলদার বা এসি (ল্যান্ড) অফিসের সার্ভেয়ার সরেজমিনে গিয়ে আপনার জমি পরিদর্শন করতে পারেন।
৪। জমির মালিকানার বিষয়ে সন্তুষ্ট হলে তহসিলদার নামজারির প্রস্তাব এসি (ল্যান্ড) এর নিকট প্রেরণ করবেন।
৫। এসি (ল্যান্ড) তহসিলদারের নিকট হতে নামজারি প্রস্তাব পাওয়ার পর আবেদনকারী, জমির বিক্রেতা বা পূর্ব মালিক, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ওয়ারিশগণকে শুনানীর জন্য নোটিশ করবেন। এসি (ল্যান্ড) প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যে কাউকে শুনানীর জন্য নোটিশ করতে পারেন। আবেদনকারীর উচিৎ সকলে যেন নোটিশ পায় এজন্য সঠিক নাম ঠিকানা বা ফোন নম্বর দিয়ে এসি (ল্যান্ড) অফিসকে সহযোগিতা করা। এতে করে আপনার শুনানী পর্বটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
৬। সকল পক্ষের শুনানী অন্তে এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র ও রেকর্ড যাচাইপূর্বক সন্তুষ্ট হলে এসি (ল্যান্ড) নামজারি কেসটি মঞ্জুর করবেন।
৭। নামজারি মঞ্জুর হওয়ার পর আপনাকে অবশ্যই কতগুলো কাগজ বা ডকুমেন্ট সাবধানে বুঝে নিতে হবে। অনুমোদিত নামজারি প্রস্তাবের একটি ফটোকপি, নামজারি পড়চা এবং ডিসিআর। এসি (ল্যান্ড) অফিসের নাজিরের নিকট হতে নির্ধারিত সরকারি ফী (বর্তমানে ২৫০/- টাকা) প্রদানপূর্বক ডিসিআর (Duplicate Carbon Receipt DCR)এবং নামজারি পড়চা সংগ্রহ করতে হবে।
৮। নামজারি পড়চা, ডিসিআর এবং নামজারি প্রস্তাবের ফটোকপি বুঝে নেয়ার পর অবশ্যই তহসিল বা ভূমি অফিসে গিয়ে জোত খুলে খাজনা প্রদান করবেন। জোত খোলা মানে খাজনার রেজিস্টারে আপনার নাম ও মালিকানার বিবরণসহ একটি এ্যাকাউন্ট খোলা। কাজটি তহসিলদার বা সহকারী তহসিলদার করবেন। খাজনা প্রদানের প্রমাণস্বরূপ খাজনার রশিদ বা আর আর (rent receipt) বুঝে নিবেন। খাজনার রশিদকে অনেকে দাখিলাও বলে থাকেন। এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। অনেক সময় আবার এসি (ল্যান্ড) অফিসে নামজারি প্রস্তাব মঞ্জুরের পর প্রস্তাবপত্রের ফটোকপি বা ডুপ্লিকেট কপি দিয়ে আপনাকে তহসিল অফিসে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করার জন্য বলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাই করবেন। খাজনা পরিশোধের পর খাজনার রশিদ দেখিয়ে এসি (ল্যান্ড) অফিসের নাজিরের কাছ থেকে নামজারি পড়চা এবং ডিসিআর বুঝে নিবেন।
নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হলে কী করবেনযেকোনো কারণেই নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হতে পারে। কোনো দলিল-দস্তাবেজে ত্রুটির কারণে হতে পারে, আবার অন্য কোনো উদ্দেশ্যেও নামঞ্জুর হতে পারে। কিন্তু আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। নামজারি নামঞ্জুর হলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) কাছে এবং তা করতে হয় আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডে আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়। এ ছাড়া রিভিশনের পথও খোলা রয়েছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। এ ছাড়া রিভিউর পথও খোলা আছে। রিভিউ মানে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা করা। দলিলপত্রে কোনো ভুল পর্যবেক্ষণ হয়েছে বলে মনে করলে কিংবা আবেদন বাতিল করলে রিভিউর আবেদন করতে হয়। যে কর্মকর্তা আদেশ দিয়েছেন, তাঁর বরাবরই রিভিউ করতে হবে। রিভিউ করতে হয় ৩০ দিনের মধ্যে। তবে রিভিউ আবেদন করা হলে আর আপিল করা যায় না।
- 819 views
- 1 answers
- 0 votes
জামিন :
ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের কোন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। সাধারণত সংশ্লিষ্ট আদালতে সময়মত হাজির করার শর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে আইনগত হেফাজত থেকে মুক্তি প্রদান করে জামিনদারের নিকট সম্পন্ন করাকে জামিন বলে। মামলার যেকোন পর্যায়ে জামিন মঞ্জুর করা যায়। এমনকি বিচার শুরু হবার পরও জামিন মঞ্জুর করা যায়।কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ থাকলেই তাকে দোষী বলা যায় না। আদালতে দোষী প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ ধরতে হবে এটাই আইনের নীতি। তাই দোষী প্রমানিত হবার পুর্বে কাউকে আটকে রাখা হলে তা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি হবে। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি আটক থাকলে তার সামাজিক, পারিবারিক, শারিরিক, মানসিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। তাই অহেতুক তাকে আটক রাখা আইনে সমর্থনীয় নয়। আবার বিচারের সময় অপরাধীকে আদালতে থাকা প্রয়োজন, তাই বিচারের সময় তার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে জামিনের বিধান রাখা হয়েছে।
ফৌজদারি আইনে অপরাধগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক) জামিন যোগ্য (bailable) এবং
খ) জামিন-অযোগ্য (Non bailable)।ফৌজদারী কার্যবিধি অনুসারে আসামী যে অবস্থায় মুক্তি পেতে পারে তা নিম্নে প্রদান করা হলো :
জামিন যোগ্য অপরাধ :
ধারা ৪৯৬। জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তি কোন থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে, বা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে, সে যদি উক্ত অফিসারের হেফাজতে থাকার সময় বা উক্ত আদালতের কার্যক্রমের কোন পর্যায়ে জামানত দিতে প্রস্তুত থাকে তা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে হবে।তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অফিসার বা আদালত উপযুক্ত মনে করলে তার নিকট হতে জামানত গ্রহণের পরিবর্তে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
তবে আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোন বিধান ১০৭ ধারার (৪) উপধারা বা ১১৭ ধারার (৩) উপধারার কোন বিধানকে প্রভাবিত করবে বলে গণ্য হবে না।
জামিন-অযোগ্য অপরাধ :
ধারা ৪৯৭। যখন জামিনের অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন মঞ্জুর করা যাবে।(১) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কর্তৃক বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হলে বা আটক থাকলে অথবা আদালতে হাজির হলে বা তাকে হাজির করা হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে; কিন্তু সে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধে দোষী বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে উক্তরূপে দেওয়া যাবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, আদালত এইরূপ অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তি ষোল বৎসরের কম বয়স্ক বা স্ত্রীলোক বা পীড়িত বা অক্ষম হলে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন।
(২) ক্ষেত্রমতে তদন্ত, ইনকোয়ারী বা বিচারের কোন পর্যায়ে উক্ত অফিসার বা আদলতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, আসামী জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ করেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই, কিন্তু তার অপরাধ-সম্পর্কে আরও ইনকোয়ারির পর্যাপ্ত হেতু রহয়েছে, তাহলে এইরূপ ইনকোয়ারী সাপেক্ষে আসামীকে জামিনে, অথবা উক্ত অফিসার বা আদলত বা আদালতের ইচ্ছানুযাসারে সে অতঃপর বর্ণিতভাবে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদন করলে তাকে মুক্তি দিতে পারবেন।
(৩) কোন অফিসার বা আদালত (ক) উপধারা বা (খ) উপধারা অনুসারে কোন ব্যক্তিকে মুক্তি দিলে তার ঐরূপ করার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।
(৪) জামিনের অযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার সমাপ্ত হবার পর এবং রায় দানের পূর্বে কোন সময় আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী উক্ত অপরাধে দোষী নয় বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, তা হলে আসামী হাজতে থাকলে রায় শ্রবণের উদ্দেশ্যে হাজির হবার জন্য জামিনদার ব্যতীত মুচলেকা সম্পাদনের পর তাকে মুক্তি দিবেন।
(৫) হাইকোর্ট বিভাগ বা দায়রা আদালত এবং নিজে মুক্তি দিয়ে থাকলে অন্য কোন আদালত এই ধারা অনুসারে মুক্তিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে ও তাকে হাজতে প্রেরণ করতে পারবেন।
- 1605 views
- 1 answers
- 0 votes
বাংলাদেশে বিদ্যমান ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১’ এর ৭ ধারার বিধান অনুসারে একজন পুরুষের তালাক প্রদানের পদ্ধতি নিম্নরূপ :
১) ধারা ৭, উপধারা মোতাবেক কোন ব্যাক্তি স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যত শীঘ্র সম্ভব চেয়ারম্যনকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিস দিতে হবে এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিসের কপি প্রদান করতে হবে।
২) যে ব্যাক্তি উপধারা ১ এর বিধান লংঘন করবে তাকে এক বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার শাস্তি প্রদান করা যাইতে পারে।
৩) নিম্নের ৫ উপধারার মাধ্যম ব্যাতিত প্রকাশ্য বা অন্যভাবে প্রদত্ত কোন তালাক পুর্বাহ্নেই বাতিল না হলে উপধারা ১ অনুযায়ী চেয়ারম্যনের নিকট নোটিস প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ হবেনা।
৪) উপধারা ১ অনুযায়ী নোটিস প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষ গণের মধ্যে সমঝোতার জন্য সালিশি পরিষদ গঠন করবেন।
৫) তালাক ঘোষণা কালে স্ত্রী অন্তঃসত্তা থাকলে ৩ উপধারার উল্লেখিত সময় বা গর্ভাবস্তা এই দুটির মধ্যে দীর্ঘতরটি অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবেনা।
৬) উক্ত ধারা অনুযায়ী কার্যকর তালাক দ্বারা যার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে সেই স্ত্রীর একই ভাবে ৩য় বার বিবাহ বিচ্ছেদ না ঘটলে মধ্যবর্তি অন্য কোন পুরুষ কে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে পারবে।
৭) এই ধারা অনুযায়ী কার্যকর তালাক দ্বারা পর পর তিনবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে হলে মধ্যবর্তি বিবাহ করা প্রয়োজন।
তালাক ব্যতীত অন্যভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ :
ধারা ৮ অনুযায়ী, যেখানে তলাকের অধিকার স্ত্রীকে যথাযথভাবে প্রদান করা হয়েছে এবং স্ত্রী যেখানে উক্ত অধিকারটি প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক অথবা স্বামী বা স্ত্রী তালাক ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চায় সেখানে ৭ ধারার বিধান সমূহ যথা সম্ভব প্রযোজ্য হবে।
- 1436 views
- 1 answers
- 0 votes
ধর্ষণের প্রমাণ হল :
১. ধর্ষিতার স্বীকারোক্তি
২. ঘটনাস্থল এবং
৩. চিকিৎসক কর্তৃত প্রেরিত ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট- 1075 views
- 1 answers
- 0 votes
এটা আসলে একটা স্টান্টবাজী! আমি নিজে অনলাইনে জিডি করেছি, সাথে সাথে অটো উত্তরও পেয়েছি, কিন্তু কয়েক মাস পরে থানায় খোঁজ নিলে তারা তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এমনকি জিডির নাম্বার দিলেও তারা কোন খোঁজ দিতে পারেন নাই। পুরাটাই ভাওতাবাজী !
- 969 views
- 1 answers
- 0 votes