অপ্রমাণিত কাল্পনিক উদ্দেশ্য ছাড়া কী জীবন অর্থহীন?
অপ্রমাণিত কাল্পনিক উদ্দেশ্য ছাড়া কী জীবন অর্থহীন?
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বাস্তব উদ্দেশ্য চাইলে হাতের কাছেই আমাদের জৈবিক উদ্দেশ্য রয়েছে— স্বল্পমেয়াদে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের জিনোমের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা । পৃথিবীতে প্রাণের উন্মেষের সাথে-সাথেই এই উদ্দেশ্যের উদ্ভব হয়েছে । বলতে গেলে “প্রাণ” এবং “নিষ্প্রাণ”এর মধ্যে সাধারণ অর্থে প্রভেদই করা হয় উদ্দেশ্যময়তা ও উদ্দেশ্যহীনতার মাধ্যমে । কেউ চাইলে এই উদ্দেশ্যকে জীবনের অর্থ হিসেবে গ্রহণ করতেই পারেন ।
কিন্তু অভিজ্ঞতায় বলে যে বাস্তবিক এবং প্রতিষ্ঠিত হলেও খুব কম মানুষই এমন উদ্দেশ্যকে যথেষ্ট এবং অর্থপূর্ণ বলে মনে করেন । কিন্তু কেন? এই উদ্দেশ্য তো সমগ্র মানবজাতির জন্য, এমনকি সমস্ত প্রাণী তথা যা কিছু প্রাণ, সবার জন্য । এরকম একটা নৈর্ব্যক্তিক, বিষয়গত (objective) উদ্দেশ্যই কি আমরা কামনা করি না?
নিশ্চই করি না, কারণ করলে তথাকথিত “অপ্রমাণিত কাল্পনিক” উদ্দেশ্যের প্রয়োজন পড়তো না । কিন্তু যদি বিষয়গত উদ্দেশ্যে আমাদের মন না ভরে তবে মানতে হয় যে “উদ্দেশ্য” হিসেবে গ্রাহ্য হতে হলে এমন কিছুর প্রয়োজন যা আমাদের জৈবিক উদ্দেশ্যে অনুপস্থিত । সেই “এমন কিছু” হল বিষয়ীর উপস্থিতি । কারণ যে উদ্দেশ্যে বিষয়ীর (subject) নিজের কোনো অবদান নেই, তা বিষয়ীর কাছে অর্থবহ হবে কী করে? একজন ঝাড়ুদারের সন্তানকে সমাজ বিধান দিতে পারে যে ঝাড়ুদার হওয়াই তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য, কিন্তু এই উদ্দেশ্য তাঁর জীবনকে পূর্ণতা দেবে কিনা সেটাও সমাজ ঠিক করতে পারে কি? নাকি সেখানে ব্যক্তিগত উপলব্ধিই প্রধান বলে গণ্য হওয়া উচিত?
অর্থাৎ যাকে আমরা “অপ্রমাণিত কাল্পনিক” উদ্দেশ্য বলছি তা আসলে বিষয়ীগত (subjective) উদ্দেশ্য, যা বিষয়ী দ্বারা নির্ধারিত এবং বিষয়ীর “স্বাক্ষর” বহন করে । তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে এই উদ্দেশ্য ভিত্তিহীন, কাল্পনিক মনে হতে পারে কিন্তু বিষয়ীর দৃষ্টিকোণ থেকে সেটাই তাঁর জীবনকে পরম অর্থবোধ প্রদান করতে পারে ।
সুতরাং, উদ্দেশ্য কাল্পনিক না বাস্তব তাতে কী আসে যায়? জীবনকে পরিপূর্ণতা দেওয়াই উদ্দেশ্যের একমাত্র উপযোগিতা নয় কি?