আপনার পড়ালেখা করার উদ্দেশ্য কি?
আপনার পড়ালেখা করার উদ্দেশ্য কি?
আমার বর্তমানে পড়াশুনো করার উদ্দেশ্য কৌতূহল নিরসনের বেশি হয়তো কিছুই নয় তবে এর মাধ্যমে আমার অল্পবয়সের একটা বদভ্যাসের প্রায়শ্চিত্ত করছি এটাকেও একটা আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্য বলা যায় । যদিও বদভ্যাসটা সম্পূর্ণ আমার একার নয় ।
পদার্থবিজ্ঞানীদের মাঝে দর্শনচিন্তা কিংবা দর্শন নিয়ে আগ্রহ সাধারণতঃ বিরল । যদিও সেটা তাঁদের মেধার অভাবের কারণে এমনটা কখনই বলা যায় না । বরং এই সাধারণ অনীহার কারণ হয়তো মূলত দর্শনকে আধ্যাত্মিকতা বা রহস্যবাদের (mysticism) সাথে এক করে দেখা । আর আমি নিজে এই কারণেই একাডেমিক স্তরে পদার্থবিজ্ঞান চর্চা করাকালীন দর্শনে একেবারেই আগ্রহ পাইনি । শুধু তাই নয়, দার্শনিক প্রশ্নগুলোও আমার কাছে তখন হাস্যকর বলে মনে হয়েছে ।
কিন্তু দর্শন সম্পর্কে পড়াশুনো শুরু করার পর যেটা স্পষ্ট উপলব্ধি করেছি এবং করে চলেছি তা হলো বিজ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে বুঝতে হলে বিজ্ঞানের দর্শনকেও বোঝা জরুরি । সেটা না বুঝলে বিজ্ঞানের শক্তি বা সীমাবদ্ধতা কোনটা সম্পর্কেই পরিষ্কার ধারণা গড়ে ওঠে না । আর বলা বাহুল্য যে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পরিসরকে বিস্তৃত করতে হলে বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে জানার ও স্বীকার করার প্রয়োজন পড়ে ।
যেটা একেবারেই হয়নি তা হল দর্শনচর্চার কারণে বিজ্ঞানের প্রতি উদাসীনতা কিংবা অরুচি জন্মানো ( পাঠক যদি মনে-মনে আধ্যাত্মিকতার সমর্থনে বিজ্ঞানের সমালোচনা আশা করে থাকেন তবে একটু হতাশ হবেন) । বরং আধুনিক বিজ্ঞানের দর্শনের সাথে চার্বাকদের আদি জড়বাদী দর্শনের মিল দেখে মুগ্ধ হয়েছি । আবার অন্যধারে আধ্যাত্মিক দর্শনেও চমৎকৃত হয়েছি। বিশেষত, নাগার্জুনের শূন্যবাদ এবং শঙ্করের অদ্বৈত বেদান্তের দর্শন যে খুবই উচ্চস্তরের তা নিয়ে আমি নিঃসন্দেহ কারণ পাশ্চাত্যে এদের সমকক্ষ কোনো দর্শনের খোঁজ আমি এখনও অবধি পাইনি (যদিও কাছাকাছি যেতে পারে এমন দর্শন আছে, যেমন হেগেলের পরম অধ্যাত্মবাদ) ।
পদার্থবিজ্ঞানের নেশায় দর্শন নিয়ে জ্ঞান না রাখা তো বটেই, সেইসাথে তাকে খাটো দেখার বদভ্যাসকে যে তাই অতিক্রম করতে পেরেছি এটা আমার বর্তমান পড়াশুনোর অর্জন বললে হয়তো অত্যুক্তি করা হবে না । এমন জিনিস ছেড়ে দেওয়ার অভিপ্রায় আপাতত নেই ।