আপনি প্রাণীদের বিষয়ে কী কী মজার তথ্য জানেন?
আপনি প্রাণীদের বিষয়ে কী কী মজার তথ্য জানেন?
প্রাণীজগৎ নিয়ে মজার তথ্যের কোনো অন্ত নেই। জানা – অজানা কত্তকিছু নিয়ে বিচিত্র এই প্রাণীজগৎ। এমনই কিছু মজার তথ্য চলুন আজ ভাগ করে নিই আপনাদের সাথে, মন্তব্যে জানান কোন তথ্য গুলো আজ আপনি প্রথম জানলেন।
১. বাঘের মুখ স্থলভাগের সবচেয়ে শক্তিশালী মুখগুলোর মধ্যে একটি -এ তো আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু আপনি জানেন কি, বাঘের জিভ ঠিক কতটা মারাত্মক? এই জিভ দিয়ে আপনার শরীরে একবারমাত্র চেটে দিলেই আপনার চামড়াসুদ্ধ অনেকটা মাংস উঠে আসবে! কারণ, এর জিভে থাকে অজস্র কাঁটার মতন প্রবর্ধক।
২. ক্যাঙারুর পেছন পা সবচেয়ে উপযোগী লাফানোর জন্য। এই পা দিয়েই তো ক্যাঙারু এক লাফে ২৬ ফুট দূরত্ব পার হয়ে যায়! কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল বেচারারা এই পায়ের জন্যই পেছন দিকে হাঁটতে পারে না!
৩. আফ্রিকার হাতির ছবি তো দেখেছেন। কিন্তু খেয়াল করেছেন কি ওদের কানের সাথে আফ্রিকার ম্যাপের কত মিল!!!
৪. জিরাফ বাবাজিকে তো শান্তশিষ্ট নিরীহ প্রাণী হিসেবেই জেনে এসেছি সবাই। কিন্তু ওর তাকৎ এর আন্দাজ করতে পারবেন কি? জিরাফের পায়ের এক লাথির জোর এতটাই যে তা কোনো সিংহের ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দিতে পারে!!!! সুতরাং, নিরীহ মানেই দুর্বল ভাববেন না যেন।
৫. সঙ্গীদের নজর কাড়ার কত্তরকম কায়দা। কি ভাবছেন, শুধু মানুষেরাই পারে? আরে না মশাই, না! এই দেখুন–
পুরুষ গ্রেটার ফ্রিগেট পাখি গলার থলে কতটা ফোলায় সঙ্গিনীর সামনে পৌরুষ জাহির করার জন্য।
পুরুষ অ্যানোল টিকটিকি তার সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করার জন্য এক ঝটকায় রঙিন গলকম্বলখানা বের করে দেয়।
মেয়ে খরগোশ কিন্তু তার পুরুষ সঙ্গীর শরীর, স্বাস্থ্য, ক্ষমতা সব বুঝে নেয়। পুরুষ সঙ্গীর পৌরুষ বোঝার জন্য তাকে একেবারে ছুটিয়ে মারে।
ময়ূরীকে আকৃষ্ট করার জন্যই তো ময়ূর পেখম মেলে এত সুন্দর নাচে। যে ময়ূরের যত ভালো পারফরম্যান্স, তার সঙ্গিনী পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি।
৬.গণ্ডার কে দেখে ভয় পান? আপনি জানেন, ওদের দেখার ক্ষমতা মানুষের থেকে ৫ গুণ কম। ৩০০ ফুট দূর থেকে ওরা একটা জিপগাড়ি আর গণ্ডারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।
৭. বেবুনরা প্রায়ই অন্য বেবুনদের খুন করে। কেন জানেন তো? আরে না মশাই, মাংস খাওয়ার লোভে নয়। নিজে দলের নেতা হয়ে বসার জন্যে!
৮. বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মাংসাশী প্রাণী কি? বেজি(Dwarf Mongoose)। এদের ওজন ৩০ গ্রামের (তথ্য ভুলও হতে পারে) সামান্য বেশি। কিন্তু ভাবতে পারেন, এরা ১ কেজি বা তার চেয়েও বেশি ওজনের খরগোশ হেলায় বহন করতে পারে!!!
৯. আবার গুবরে পোকার শক্তি তো ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিজের ওজনের চেয়ে ১০০০ গুণ বেশি ওজনের জিনিসও টানতে পারে ওই পুঁচকে পোকাগুলো!!!
১০. বাড়ি বানানো শিখতে চান? শিখুন উইপোকার কাছ থেকে। ওইটুকু ছোট্ট পোকা, তারা কিনা প্রায় ১০ মিটার উঁচু বাড়ি বানায়!!!! একজন মানুষের সাথে তুলনা করলে যা একেকটি স্কাইস্ক্র্যাপার বানানোর সাথে সমতুল্য।
শুধু তাই নয়, মাটির ওপর যে উইপোকার ঢিবি আপনি দেখতে পান, তার বেশিরভাগই রোদে পোড়া ফাঁপা চিমনির মতো। এদের কাজ কি জানেন? মাটির নিচে ওদের বাসায় এয়ার কন্ডিশনের কাজ করে এই ঢিবি!!!!
আজ এই পর্যন্তই। তবে মজার তথ্য আরো অনেক আছে, রঙ- বেরঙের পৃথিবীতে। এরকম আরও বহু বিচিত্র তথ্য শেয়ার করার ইচ্ছে রইলো ভবিষ্যতে।
সংযোজন : এই উত্তরের প্রতি অনেকের আগ্রহ আর ইতিবাচক মতামতের কারণে মনে হল, আরো কিছু তথ্য যোগ করলে কেমন হয়? বেশ ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে আরো কতগুলো বিচিত্র তথ্য যোগ করছি। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন।
১১. পেটুক সর্দার : এমনিই কি আর ‘হাতি পোষা’ প্রবাদে পরিণত হয়েছে? মানছি অতো বড় প্রাণী, কিন্তু একদিনে কত খায় জানেন? রোজ প্রায় ১৫০ কেজি খাবার যা প্রায় দুজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওজনের সমান!
১২. আপনি রোজ খাবার খাওয়ার পেছনে মোট কত সময় ব্যয় করেন, হিসেব করে দেখেছেন? হলপ করে বলতে পারি বন্যঘোড়া আর টাট্টুঘোড়াকে টেক্কা দিতে পারবেন না। এরা ঘাস, পাতা, ফুল, ফল এসব খেতেই নাকি দিনে প্রায় ১৬ ঘন্টা সময় নেয়!
১৩. স্পিটিং স্পাইডার হল এমন এক মাকড়সা, যারা শিকারের জন্য জাল বানায় না। মুখের লাগোয়া বিষের উপাঙ্গ থেকে আঠার মতো রাসায়নিক পদার্থ বের হয়। শিকারের দিকে তাক করে তা ছুঁড়লেই সেটা আঠালো সুতোর মতো হয়ে গিয়ে শিকারকে বন্দি করে!
১৪. আফ্রিকান রক পাইথন তো আশ্চর্য ভক্ষক! ৪-৫ মিটার লম্বা এই অজগর কিনা ৬০ কেজি ওজনের ইমপালাকে (একশ্রেণির হরিণ) শিং সমেত অনায়াসে খেয়ে ফেলতে পারে!!!
১৫. সুমাত্রাদ্বীপের কোমোডো ড্রাগন থেকে সাবধান! ওজনে ১৫০ কেজি এই চার পা -ওয়ালা সরীসৃপ, হরিণ আর শুকরের মত প্রাণীর গোটা শরীর অনায়াসে গিলে ফেলতে পারে!!!
১৬. আপনি কতরকমের ভাষা জানেন? কিংবা কতরকম আওয়াজ করে ডাকতে পারেন? জানেন কি, পরস্পরের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদানের জন্য কাকেরা কমপক্ষে ৩০০ রকমভাবে ডাকতে পারে! এমনকি এক জায়গার কাক অন্য জায়গার কাকের ডাকের অর্থও বোঝেনা!!!!
১৭. বন্যজন্তু ও পাখিরা প্রকৃতির প্রতি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়। হঠাৎ বিপদ এলেই দলের অন্যদের সাবধান করে দেওয়ার জন্য প্রাণীদের মধ্যে বিচিত্র আচার আচরণ দেখা যায়। যেমন —
- খরগোশ জোরে জোরে মাটিতে পা ঠুকতে থাকে।
- পাখিরা আসন্ন বিপদ বুঝে চিৎকার করতে শুরু করে।
- বেজি একরকম কর্কশ আওয়াজ করে।
- বিভার শিকারীকে আশেপাশে দেখামাত্রই তার লেজকে জলের ওপর জোরে জোরে আছড়াতে থাকে!
১৮. হিসু দিয়ে যায় চেনা : নেকড়ে আর বন্যকুকুর মূত্রের গন্ধ দিয়ে স্বজাতির এলাকা চিনে নেয়। যদি পরিচিত গন্ধ না পায়, তাহলে বঝে নেয় যে এলাকায় কোনো স্বজাতি নেই।
১৯. পুরুষ গণ্ডার তো আরও এককাঠি ওপরে। এরা চারদিকে মূত্র ছিটিয়ে নিজেদের বাসস্থানের সীমানা নির্দেশ করে দেয়! এই মূত্রের গন্ধ ১ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলজুড়ে থাকে। মূত্রের গন্ধ থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রাণীর বয়স, লিঙ্গ এবং সুস্থতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
২০. আপনি কি জানেন, ঝিনুক হল এমন প্রাণী যে নাকি প্রতি বছর নিজের লিঙ্গের পরিবর্তন ঘটায়! ভাবুন তো একবার, মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা হলে ঠিক কেমন হতো? লিঙ্গ-বৈষম্যের ব্যাপারই হয়তো থাকত না!
২১. ৪৪০ ভোল্টের তো এত জনপ্রিয়তা…. গানও তৈরি হয়ে গেছে এ নিয়ে, বাব্বা, ৪৪০ ভোল্ট বলে কথা। জেনে রাখা ভালো, বৃহৎ সামুদ্রিক ইল মাছ কিন্তু ৫৫০ ভোল্টেরও বেশি শক্তির শক দেয়!!! আপনিই বলুন, ওদের প্রেমিক -প্রেমিকাদের গানটা কি হওয়া উচিত?XD
২২. ডলফিনই একমাত্র জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী, যে একচোখ খোলা রেখে ঘুমোয়!
২৩. তারা মাছ দেখেছেন? এদের কিন্তু মস্তিষ্ক নেই। আবার এরা দেহের ভেতরের অংশকে বাইরে বের করে আনতে পারে! এও কি কম আশ্চর্যের?
২৪. মধ্য আমেরিকার বনভূমিতে অ্যারো পয়জন ফ্রগ নামে যে ব্যাং পাওয়া যায়, তার ত্বকে থাকে মারণ বিষ। স্থানীয় আদিবাসীরা এই বিষ সংগ্রহ করে তাদের তীরে ব্যবহার করে। একেকটি পুঁচকে ব্যাঙের দেহে এত বিষ থাকে, যে তা ২০০ জন মানুষকে খতম করে ফেলার জন্য যথেষ্ট!!!
২৫. কি জানতেন এতদিন, মায়ের অপর নাম গর্ভধারিণী? না মশাই, এ কথা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে যদি এই অবাক করা তথ্যটা না দিই।
প্রাণীরাজ্যের সমস্ত প্রজাতির মধ্যে সিন্ধুঘোটক মাছই একমাত্র, যাদের পুরুষ প্রজাতি গর্ভধারণ করে!!!! অর্থাৎ, তাদের জন্যে গর্ভধারিণী মা নয়, গর্ভধারক পিতা!!!
ভালো থাকুন। ধন্যবাদান্তে –
সোমনাথ দত্ত
তথ্যসূত্র:
- আজব দুনিয়ার খোঁজে – Discovery Channel /Miles Kelly
- Book of Knowledge -Chhaya Prakashani
চিত্রসূত্র: গুগল
সম্পাদনা: আন্তরিক ধন্যবাদ সমস্ত আপভোটদাতা বন্ধুদের ১০০ টি আপভোটের জন্যে। আসলে এটাই আমার প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানো উত্তর কিনা!!! এভাবেই যেন আরো সুন্দর সুন্দর উত্তর উপহার দিতে পারি আপনাদেরকে , সেই প্রচেষ্টাই থাকবে।