আমি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে চাই, কীভাবে দিব?
আমার স্বামী আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। তাছাড়া ওর আরেকটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে বলে জানতে পেরেছি। আমি আর ওর সাথে এক মুহুর্তও থাকতে চাই না। ডিভোর্স দিতে চাই। তবে ঠিক জানি না ডিভোর্স দেয়ার প্রক্রিয়াটি কী। জানাবেন প্লিজ?
বলা হয়ে থাকে বিয়ে, জন্ম আর মৃত্যু মানুষের জীবনের ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দুজন মানুষের মনের মিল থেকেই সাধারণত তাদের মাঝে বিয়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু এমন অনেক বিয়ে রয়েছে যেগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না। সাংসারিক নানা ধরনের ঝামেলার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে প্রতিনিয়তেই। আপনার সমস্যাটিও খুবই সাধারণ একটি ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
আপনি চাইছেন আপনার স্বামীকে ডিভোর্স দিতে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি ইসলাম ধর্মে নারীদের ডিভোর্স দেয়ার নিয়মটি বেশ জটিল করে তৈরি করা হয়েছে। পুরুষদের জন্য বিষয়টি অনেক বেশি শিথিল। যদি দুই পক্ষের মধ্যে কোনোভাবেই পুনঃমিলন সম্ভব না হয় তবে তালাক নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচাপাতি বহন করবেন স্বামী। তালাকের ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, যদি তালাক দেওয়ার সময় স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে তার গর্ভাবস্থার পরিসমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মুসলিম আইনে স্ত্রীর তালাক দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই, যদি না কাবিননামার ১৮তম কলামে স্ত্রীর তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া থাকে।
তবে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ অনুযায়ী মুসলিম আইনে বিবাহিত কোনও মহিলা নিচের এক বা একাধিক কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন।
১. চার বছর পর্যন্ত স্বামীর কোনও খোঁজখবর পাওয়া না গেলে।
২. দুই বছর যাবত স্বামী কর্তৃক অবহেলিত এবং স্বামী ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।
৩. মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১’র বিধান লঙ্ঘন করে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে।
৪. স্বামী ৭ বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য কারাদণ্ড প্রাপ্ত হলে।
৫. স্বামী কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে বিবাহিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
৬. বিয়ে করার সময় স্বামী পুরুষত্বহীন হলে এবং এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে।
৭. দুই বছর ধরে স্বামী অপ্রকৃতিস্থ থাকলে বা, কুষ্ঠ রোগ বা, সংক্রামক যৌন ব্যাধিতে ভুগলে।
৮. ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই যদি অভিভাবকের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয় এবং স্বামী-স্ত্রী সহবাস বা, বসবাস না করে তাহলে ১৯ বছর বয়স হওয়ার আগেই এই বিয়ে প্রত্যাখ্যান করলে।
৯. স্ত্রীর প্রতি স্বামী নিষ্ঠুর আচারণ করলে।
এক্ষেত্রে নিষ্ঠুর আচরণগুলো হল:
ক) স্বভাবগতভাবে তাকে মারপিট বা, শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও নিষ্ঠুর আচরণ করে স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ করে তুললে।
খ) খারাপ চরিত্রের মহিলাদের সঙ্গে মেলামেশা করলে বা অনৈতিক জীবনযাপন করলে।
গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপানে বাধ্য করার চেষ্টা করলে।
ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করলে বা, তার স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকারে বাধা প্রদান করলে।
ঙ) স্ত্রীর ধর্মকর্ম পালনে বাধা দিলে।
চ) একাধীক স্ত্রী থাকলে পবিত্র কোরআনেরর বিধান মোতাবেক সমভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে।
এসব নিষ্ঠুর আচরণের জন্য কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা না থাকা সত্বেও স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক প্রদান করতে পারবেন।
অন্য যে কোনও সংগত কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে, উল্লেখিত যে কোনও একটি কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে হলে স্ত্রীকে আদালতের মাধ্যমে যেতে হবে।
তালাক স্বামী বা, স্ত্রী যেই দিক না কেন, স্ত্রী তার প্রাপ্য মোহরানা যে কোনও সময় দাবী করতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে যে, তালাক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক আর তাই যে এলাকায় তালাক কার্যকর করা হয়েছে সেই এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার দিয়ে তালাক নিবন্ধন করাতে হবে।
তবে বাংলাদেশের আইনে নারীদের জন্য বিষয়টি অনেকটাই শিথিলযোগ্য। আপনি চাইলে একজন আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্ম নিতে পারেন। ধন্যবাদ