একটা মেয়ের জীবনে কেমন মানুষ দরকার?
একটা মেয়ের জীবনে কেমন মানুষ দরকার?
একটা ভালো মানুষ দরকার। মানবিক এবং হৃদয়বান। যার মধ্যে জটিলতা কুটিলতা নেই। যে সহজ সরল জীবন যাপন করে। সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী, হাসিখুশি এবং অবশ্যই বুদ্ধিমান। শিক্ষিত তো বটেই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, স্বামী যার অবাধ্য জীবন তাহার দুর্বিষহ। স্ত্রীর ক্ষেত্রেও একই কথা। যে ছেলে বা মেয়ে সঠিক পারিবারিক শিক্ষা পাবে তার জীবন সুন্দর হবেই। পারিবারিক শিক্ষার উপরই নির্ভর করে ভবিষ্যৎ কেমন হবে। নারীদের সম্মান করতে হবে। হোক সে বুয়া অথবা গার্মেন্টসের কোনো মেয়ে। নারী ভালো থাকলে, ভালো থাকবে পুরো পরিবার।
নারীরা হচ্ছে ধরনী, তাদের মাঝেই আমাদের বসবাস। একটা মেয়েকে বাবা মিলে জন্ম দেয়। অনেক আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করে। মেয়েটাকে খাইয়ে পড়িয়ে নানান সমস্যা থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখে। এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে একসময় মেয়েটা বড় হয়। তার বিয়ের বয়স হয়। তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। স্বামী যদি ভালো হয়, তাহলে মেয়েটার জীবন আনন্দময় হয়। একটা মেয়ের জীবনে একজন মানুষ দরকার। যে মানুষ মেয়েটাকে সমস্ত বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখিবে। স্বামী হবে বন্ধুর মতো। যাকে যা খুশি বলা যাবে। মন খারাপ হলে যার কাধে মাথা রাখা যাবে। একটা মেয়ে তো খুব বেশি কিছু চায় না। শুধু একটা মানুষ চায়। যে ছায়া দিবে, মায়া দিবে, ভরসা দিবে, সাহস দিবে, প্রেরণা দিবে।
মেয়েরা মূলত সহজ সরল হয়। মায়াবতী হয়। জগত সংসারের জটিলতা কুটিলতা বুঝে না। মেয়েরা চায় সহজ সরল সুন্দর জীবন। যে জীবন হবে আনন্দময়। ঝগড়া হবে না। স্বামী খুব ভালোবাসবে। আদর দিবে, আহ্লাদ করবে। সমুদ্রে পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে যাবে। শপিং করাবে। ছোট্ট একটা জীবন হেসে খেলে উড়িয়ে দেওয়াই উচিৎ। শুধু স্ত্রী সাংসারিক হলেই হবে না। স্বামীকেও সাংসারিক হতে হয়। আমার এক বন্ধু আছে, শাহেদ জামাল নাম। শাহেদের স্ত্রীর নাম নীলা। মাঝে মাঝে আমি শাহেদের বাসায় যাই। ওদের দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বেচে থাকতে ইচ্ছে করে। স্বচ্ছ পবিত্র একটা পরিবার। যে পরিবারে নীলার কখনো মন খারাপ হয় না। আড়ালে কাদতে হয় না। শাহেদ অফিস ছুটির পর, একটাই চিন্তা করে কখন বাসায় যাবো। বাসায় অপেক্ষা করে আছে নীলা। ব্যলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
সংসারে সমস্যা হয়, তৃতীয় পক্ষ প্রবেশ করলেই। মূলত মানুষের জীবন সহজ সরল। কিন্তু মানুষই তার সস্তা বুদ্ধি দিয়ে জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করে। সংসার জীবনে শান্তির জন্য ছাড় বা ত্যাগ করার মানসিকতা থাকতে হয়। এই ছাড় স্বামী স্ত্রী দুজনকেই দিতে হয়। যত ছাড় দেওয়া হবে, সংসার তত আনন্দময় হয়ে উঠবে। আপনার জীবন আপনি আপনার মনের মতো করে সাজিয়ে নিন। আপনার জীবন অন্য কেউ এসে সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়ে যাবে না। যা করার আপনাকেই করতে হবে। আপনি পিঠ নিচু না করলে কেউ আপনার পিঠে চড়তে পারবে না। এখন আপনিই ঠিক করুন আপনার জীবন আপনি কি করে সাজাবেন। মানব জীবন তো একটাই, তাই ভুলভাল করা যাবে না। দশ জন যে ভুল করেছে আপনি সে ভুল করবেন না।
ছেলে গুলোর সমস্যা আছে। তারাই বিয়ের পর বদলে যায়। কিছু কুকুর আছে, ঘরে হাজার ভালো খাবার থাকলেও বাইরে গিয়ে গু’তে মুখ দিবে। ঘরে স্ত্রী থাকলেও বাইরে সুযোগ পেলেই ইটিস পিটিস করবে। এজন্য গরু ছাগলকে ছেড়ে দিলে আইল ভেঙে অন্যের জমিতে ঢুকে যায়, ঠিক তেমনি ছেলেরাও। এজন্য এদের ধরে বেধে রাখিতে হয়। মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে ভালোবাসা। স্বচ্ছ পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু জয় করা সম্ভব। জীবন থেকে লোভ এবং চাহিদা বাদ দিতে পারলে, জীবন একা একাই অর্ধেক সুন্দর হবে যাবে। আপনি ভালো হলেই আপনার স্বামী ভালো হবে। আপনার উপর নির্ভর করে সবকিছু। মুরুব্বীদের সম্মান করতে হবে। ছোটদের স্নেহ করতে হবে। কৃপনতা করা যাবে না। হতাশ হওয়া চলবে না। শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে বোঝা ভাববেন না। দেবর ননদ কে দূর দূর ছাই ছাই করবেন না।
মেয়েদের চিন্তা ভাবনার ব্যপক পরিবর্তন দরকার। এখন যুগ বদলেছে। মেয়ে এবং মেয়ের বাপ মা মনে করে মেয়ের বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ। আর চিন্তা নাই। এবার যা বুঝার স্বামী বুঝবে। এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। বাবা মায়ের উচিৎ মেয়েকে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা। মেয়েরা আর কতকাল বিয়ের আগে বাবার আর বিয়ের পর টাকার জন্য স্বামীর কাছে হাত পাতবে? মেয়েদের আয় করা শিখতে হবে। উপার্জন করা শিখতে হবে। মেয়েরা কেন শুধু ঘরসংসার করবে আর বাচ্চা লালন পালন করবে? তাহলে তাদের এত লেখাপড়া করে লাভ কি? মেয়েদের কাজ করতে হবে। তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি করবে, বিজনেস করবে। শুধু ঘরসংসার করলে চলবে না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ভূমিকা রাখিতে হবে পরিবারে, সমাজে এবং দেশের জন্য। পুরোনো ধ্যান ধারণা বাদ দিতে হবে।
আপনার জীবনে যেরকম পুরুষই আসুক। সেটা বড় কথা নয়। পুরুষ মানুষকে আদর ভালোবাসা দিয়ে অসাধ্য সাধন করা যায়। আমার এক শিক্ষক সব সময় বকতেন, বাবারা লাইনে থাকিস। আপনি যদি আপনার ভালোবাসা দিয়ে একজন পুরুষকে লাইনে রাখিতে না পারেন সেটা আপনার ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার জন্য আপনাকেই ভূগতে হবে। আদর ভালোবাসা পেলে বনের টিয়া পাখি পর্যন্ত কথা বলে উঠে। পুরুষ মানুষ ঘরে শান্তি পেলে, বাইরে থাকতে চায় না। ছুটে যায় স্ত্রী আর পুত্র কন্যার কাছে। আপনার প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে চিন্তা করুন। একটা পুরুষের জীবনে কেমন মেয়ে দরকার?