খারাপের সাথে কি ভালো কখনো পেরে উঠে না?
খারাপের সাথে কি ভালো কখনো পেরে উঠে না?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাস্তবে লক্ষিত কিছু ব্যাপারের কথা দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব—
১. ক্ষমতাশালীর সাথে অক্ষম বা দুর্বল কখনই পেরে ওঠে না ।
২. একাধিকের সাথে এক/অধিকের সাথে অনধিক কখনই পেরে ওঠে না ।
৩. অসহিষ্ণুতার সাথে সহিষ্ণুতা কখনই পেরে ওঠে না ।
উপরোক্ত তিনটি বক্তব্যর সাথে সম্পর্কিত আরেকটি যে ব্যাপার বাস্তবে প্রায়ই লক্ষিত হয় তা হল ক্ষমতা, সংখ্যাধিক্য এবং অসহিষ্ণুতা এগুলো আমাদের প্রধানত “খারাপ”এর দিকে চালিত করে (“অসহিষ্ণুতা”কে হয়তো কোনো-কোনো পাঠক “খারাপ”এর সমার্থক বলেই ভাবতে পারেন, কিন্তু এটা আবশ্যিক নয়; অন্যায় ও অবিচারের প্রতিও অসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা যায়) যদিও এই “খারাপ” টা কিন্তু যারা ক্ষমতাবান, সংখ্যাগরিষ্ঠ বা অসহিষ্ণু তাঁদের নিজেদের কাছে “খারাপ” নয় (বরং তাঁদের দৃষ্টিতে সেটা আদতে “ভালো”) ! এটা “খারাপ” তাঁদের প্রতিপক্ষের জন্য । তেমনই বিপরীত দৃষ্টিতে আবার দুর্বল, সংখ্যালঘু বা সহিষ্ণুদের দৃষ্টিতে যা “ভালো” সেটা তাঁদের প্রতিপক্ষের দৃষ্টিতে “খারাপ” ।
এখানে একটু বিভ্রান্তির নিরসন হয়তো প্রয়োজন কারণ পাঠকের মনে হতে পারে আমি দু’রকম কথা বলছি— একবার বললাম ক্ষমতা আমাদের খারাপের দিকে নিয়ে যায়, আবার বললাম খারাপ-ভালো দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার ! তাহলে “ক্ষমতা খারাপের দিকে চালিত করে” এটাও (দুর্বলের) দৃষ্টিভঙ্গিমাত্র নয় কি?
এর উত্তর হল “খারাপ” বা “ভালো” কেবলমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নয় কারণ আমাদের মূল্যবোধের ভিত্তিতে দৃষ্টিভঙ্গির মূল্যায়ণ সম্ভব । যেমন জনগণকে ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে নিপীড়ন আমার ক্ষমতায় থাকার জন্য ভালো হলেও মানবকল্যাণের জন্য ভালো নয়; নারীদের শিক্ষা ও আর্থিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে রাখা ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য ভালো হলেও তা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের অন্তরায় । মূল্যবোধের মানদণ্ডের প্রয়োগে অতএব বলা চলে কিছু দৃষ্টিভঙ্গি অধিক বাঞ্ছনীয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেগুলো বাস্তবে ক্ষমতাশালী, সংখ্যাগুরু কিংবা অসহিষ্ণুদের দৃষ্টিভঙ্গি হতে দেখা যায় না ।