জরায়ুর ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় কী?

    জরায়ুর ক্যান্সার কেন হয়? এর লক্ষণ কী? এটি প্রতিরোধের উপায় কী? 

    Vice Professor Asked on February 26, 2015 in স্বাস্থ্য.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      জরায়ুর ক্যান্সার :

      আজকাল জরায়ু ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা অধিকতর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেখা গেছে রোগীদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ সারভিকের ক্যান্সার, ৩০-৩৫ ভাগ জরায়ুর ক্যান্সার এবং বাকি গুলি সারকোমা। সারকোমার চেয়ে ক্যান্সার এত বেশি হয় যে জরায়ুতে Malignant growth হলেই ভয়ের কারণ হয়ে দাড়ায়। প্রথম দিকে লক্ষণ তেমন প্রকাশ পেলেও অতি সামান্য। পরবর্তীকালে রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে পেটের আকার বড় হয় এবং ঋতু বন্ধ হয়ে যায়। দূর্বলতা এবং জ্বর বৃদ্ধি পায়। কোমরে, পেতে ব্যথা হয়। কখনো জরায়ু বেঁকে পেটের দিকে ঠেলে যেতে পারে।

      আক্রান্তের সংখ্যা :

      সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, ৩০ শতাংশ নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। পৃথিবীতে ক্যান্সারে যত মহিলার মৃত্যু হয়, তার এক-তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রেই ঘাতক হল জরায়ু মুখের ক্যান্সার। প্রতি দিন অন্তত ২০০ মহিলার মৃত্যু হচ্ছে এই অসুখে। প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছেন অন্তত আট জন। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তারপরও মনে করা হয়, দেশে মোট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর মধ্যে ২২ থেকে ২৯ শতাংশই জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। আলোচনার শুরুতেই বলে নেয়া ভাল যে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, নারীর জরায়ু আবরণীর কোষগুলোতে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে এবং এ সব পরিবর্তন ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নিতে অনেক সময় ১০-১৫ বছর পর্যন্তও লেগে যায়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগটি চিহ্নিত করা সম্ভব হলে খুব সহজেই হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগটি সারিয়ে তোলা সম্ভব।

      প্রকারভেদ :

      জরায়ুর ক্যান্সার দু’ধরনের। এক ধরনের ক্যান্সার জরায়ুর মুখে হয় আরেক জাতের ক্যান্সার হয় জরায়ুর ভেতরে । মেয়েরা ভিন্ন দুটি বয়সে জরায়ুর দুই ধরণের ক্যান্সারের শিকারে পরিণত হয়। আর এ কারণেই জরায়ুর ক্যান্সারকে দুই ভাবে ভাগ করা হয়। এ ছাড়া এই দুই ক্যান্সারের উপসর্গ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন।

      কারণ ও প্রতিকার :

      সাধারণভাবে জরায়ুর মুখের ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে অল্প বয়সে এবং জরায়ুর ভেতরে যে ক্যান্সার তা বেশী বয়সে হয়। বহুল প্রচলিত একটি কথা হলো, ক্যান্সার নো এ্যান্সার। আসলে যে কোনো ক্যান্সার দেহে ছড়িয়ে পড়লে তার হাত থেকে নিস্কৃতি পাওয়া খুবই কষ্টকর । তবে জরায়ু-মুখের ক্যান্সার নিয়ে একটু ব্যতিক্রম আছে। কারণ এই ক্যান্সারকে সূচনাতেই শনাক্ত করা সম্ভব। আর সূচনাতে শনাক্ত করা গেলে সঠিক হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা যায় ।

      অন্যদিকে জরায়ুর ভেতরে যে ক্যান্সার হয় তা মহিলাদের বেশি বয়সে দেখা দেয়। এ ছাড়া এ রোগ শনাক্ত করাও সহজ নয়। সব মিলিয়ে যদি এ রোগ যখন ধরা পড়ে তখন দেখা যায় এরই মধ্যে রোগটি দেহে ছড়িয়ে পড়ছে। মাথা ব্যাথার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকেই মাথা কেটে ফেলার কথা বলেন। মাথা কাটা তো কোনোভাবেই সম্ভব না। তবে এখানে এ কথাটি টেনে আনার কারণটা হলো, জরায়ু কেটে ফেলা হলে জরায়ুর ক্যান্সারের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। তবে মনে রাখতে হবে, একটি বিশেষ বয়সের পর নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা আর থাকে না। এটি সাধারণ ভাবে ৪৫ থেকে ৫০ বছরের হয়ে থাকে। কিন্তু জরায়ুর মুখের ক্যান্সার এই বয়সে পৌঁছানোর আগেই দেখা দেয়। তাই হোমিওপ্যাথি হলো এই রোগের উৎকৃষ্ট চিকিৎসা।

      যে সব মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয় বা যাদের ঘন ঘন সন্তান হয় তাদের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার বেশি হয়। অন্যদিকে পাশ্চাত্যে নারীদের অধিকা হারে সঙ্গী থাকার কারণে এই ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আংশকা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের প্রকোপ খুব বেশি হলেও জরায়ুর ভেতরের ক্যান্সারের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম। এই ক্যান্সার সাধারণভাবে একটি বিশেষ বয়সের পরে দেখা দেয়। এ কারণে আগে ভাগে জরায়ু ফেলে দিয়ে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা ভাবা হয়ত ঠিক হবে না।

      জরায়ুর মুখের ক্যান্সারে প্রথম দিকে তেমন কোনা উপসর্গ থাকে না। কিন্তু এই রোগ একটু ছড়িয়ে পড়লে তখন কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের সেরা পদ্ধতি হলো প্যাপ টেস্ট। জরায়ুর মুখের লালা নিয়ে এই পরীক্ষা করা হয় এবং এটি অতি সাধারণ একটি পরীক্ষা। ২০ বছরের পর প্রতিটি মেয়ের এই পরীক্ষা নিয়মিত করানো উচিত। যদি কোনো মেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে, অর্থাৎ তিন বা ৫ বছর অন্তর অন্তর এই পরীক্ষা করান তবে তার জরায়ুর মুখে ক্যান্সার সূচনাতেই ধরা পড়বে। প্রাথমিকভাবে এ রোগের কোনো উপসর্গই আর সুচনাতেই ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মু্ক্তি পাওয়া সম্ভব।

      এ ছাড়া জরায়ু ক্যান্সারের টিকা বের হয়েছে-যা ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে নিয়ে নেয়া যায়। তবে এ টিকা পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে তার ব্যাপক প্রচলন ঘটে নি। অন্যদিকে জরায়ুর ভেতরের ক্যান্সার নারীর বেশি বয়সে হয়। সাধারণভাবে সন্তান ধারণের বয়স পার হওয়ার পর এই ক্যান্সার দেখা দেয়। এই ক্যান্সারের অন্যতম উপসর্গ হলো, বয়সের কারণে যে নারীর পিরিয়ড বা মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে। তা আবার দেখা দেয়। কিংবা নির্দিষ্ট বয়সের পরে যাদের পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কথা তা বন্ধ না হয়ে বরং নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে তা চলতে পারে। এ রকম কোনো উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

      একটি বিষয় নিশ্চিত করে আমরা বলতে পারি যে, জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের প্রকোপ এখন অনেক বেশী এবং এ রোগ সূচনাতেই ধরা পড়লে তা প্রপার হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর এ রোগ হয়েছে কিনা সেটি নির্ণয় করা মোটেও কষ্টসাধ্য বা ব্যয় বহুল নয়। তাই সবাই এ রোগের ব্যাপারে সচেতন হোন এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করুন ।

      Professor Answered on February 26, 2015.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.