জীবনের উদ্দেশ্য কী?
বড়ো মাপের মানুষই এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন। আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে এ ধরনের প্রশ্নের তো কোনো অসাধারণ উত্তর পাওয়া যাবেনা!!এক এক জনের উত্তর একেক রকম! তবে উদ্দেশ্য সময় ও পরিস্থিতি ভেদে বদলে যায়।
জ্ঞান হবার পর থেকে মেয়ে হয়ে (একা নই তিন বোন) জন্মানোর কারণে অবহেলা এবং অত্যাচার সয়ে (কথায় কথায় গরুপিটুনি) । মায়ের হাত থেকে পরিত্রাণ এর আশায় ঠাকুমা হতে চেয়েছিলাম!! তখন জীবনের উদ্দেশ্য রচনা দিলে নিশ্চয়ই লিখতাম ঠাকুমা হওয়া।!
ঠাকুমা হলে সন্ধ্যে হলেই মুড়ি, মিছ্রি,আর লেবু লজেন্স নিয়ে সাদা রং এর সুতির মশারির ভেতর ঢুকে পড়া যায়। কেউ দেখতেও পায় না। কিচ্ছু বলেও না।কিছুক্ষণ কুটুর কুটুর করে আওয়াজ ব্যাস ঘুম! ঘুম আর ঘুম!! একদম সকাল অব্ধি।কি নিশ্চিন্ত মজার জীবন!!!
বছর যখন বারো, পড়াতে এলেন তিনি।🕴 প্রথমে হাতে স্কেলের বাড়ি,নীলডাউন, কান ধরে থাকা ইত্যাদি উপযুক্ত শাস্তির গুরুদায়িত্ব মায়ের হাত থেকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে মায়ের ভরসা জিতে পড়ানোর সময় সকালের বদলে সন্ধ্যে করে নিলেন।শাস্তি বদলে গেলো পুরস্কারে—বাদাম চকোলেট !! আর মাথায় হাত রাখা টাই কিন্তু পেড়ে ফেলেছিলো আমায়!! কি ভীষণ নিশ্চিন্ত লেগেছিলো সেদিন।। কিন্তু জেনেছিলাম মাথায় হাত রেখে নয়, অন্য আদরেরও নেশা আছে! প্রথম আদরে অবশ্য মা জেনে ফেলতে পারে এই ভয়ে বালতি বালতি কুয়োর জলে ঠোঁট ধোওয়া!! কিন্তু তবুও আবার জীবনের উদ্দেশ্য বদলে গেলো।
নিজের একটি ঘর,শাড়ি চুড়ি খাট বিছানা আর সেই মানুষ সেই আদর !!! হায় কিশোরী!!
পাঁচ বছর পরে ঘর খাট নিজের হলেও মানুষ টা নিজের হলো না। তার সাথে সাথে ঘর ও যায় যায়!শাড়ি চুড়ির ও মন রইলো না। উদ্দেশ্য বদলে গেলো -খুব কষে পড়তে হবে! বিয়ের পরে পড়া!! কিন্তু এবার উদ্দেশ্য খুব টাইট। পড়তেই হবে।
কিন্তু 🤰!!
সদ্যোজাত মেয়ের কাঁথা সেলাই ভরা জুলাই এ। দরজার ডাঁসা চাপা দিয়ে। ” সাথে এ ভরা বাদর, মাহ ভাদর ও চলছে। ” বিদ্যাপতি জানতেন!!
মেয়ে বড়ো হচ্ছে, মা ও । উদ্দেশ্য বদলে চলেছে। মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে হবে!!যা বাধা হবে সব দূর করতে হবে!!
যেদিন তেজ দেখানোর অপরাধে (শোওয়ার পরে) নিজের স্থলন কে আমার ছাড়া কাপড়ে মুছে আমারই মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বলা হয়েছিলো —“কোথায় যাবি!! মোল্লার দৌড়…..! “সেদিন ওই মাখামাখি কাপড়েই মুখ গুঁজে ঠিক করলাম- যাবো আমি যাবোই!!! ঘুমন্ত মেয়েকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম তোকে নিয়ে আমি যাবোই সব অপমানের বাইরে!!
সেদিন থেকে আর উদ্দেশ্য বদলায় নি!!
পরবর্তী বাইশ বছর উদ্দেশ্য একই ছিলো!! সফল এক্ষেত্রে।
জীবনের ঋন যদি শোধ হয়ে থাকে তবে আরও বেশি কিছু হোক!!
এখন আমি আর আমার উদ্দেশ্য ঠিক করি না,আমাকে এভাবে ঠেলে খাদের কিনারায় নিয়ে এসেও যিনি ঠেলে ফেলে দেন নি এবার উদ্দেশ্য তাঁর!!!!
“মেলাবেন তিনি মেলাবেন “