ত্বক তৈলাক্ত হওয়ার কারণ কী?
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারি অনেকেই আছেন যারা জানেন না এই তৈলাক্ত ত্বকের আসল কারণটা কী। জেনে নিন তৈলাক্ত ত্বকের কিছু লক্ষণ, কারণ এবং যত্ন সম্পর্কে।
তৈলাক্ত ত্বকের উপসর্গ
– চকচকে এবং পিচ্ছিল একটা ভাব থাকে কপালে, নাকে এবং থুতনিতে।
– ত্বকটি নরমাল বা স্বাভাবিক ত্বকের চেয়ে ঘন ,মোটা থাকে।
– মুখের পোরগুলো বড় থাকে এবং খালি চোখেই দেখা যায়।
– ব্রন ,ব্ল্যাকহেডস ,হোয়াইট হেডস এবং গুটিগুটি উঠে মুখে।
– মুখ ধোয়ার কিছু সময় পরেই মুখ তৈলাক্ত হয়ে যায়।
– ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকে।
– নাকের চারপাশে সাদা সাদা চামড়া থাকে।
– চুল তৈলাক্ত থাকে।
তৈলাক্ত ত্বকের কারণ :
তেল গ্রন্থিগুলো মানে সিবেসিয়াস গন্থি সক্রিয় হলে সেবাম উৎপন্ন হয়। সেবাম একটি তৈলাক্ত উপাদান যা এই গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়। এর কাজ মূলত আমাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং করা এবং আমাদের ত্বককে বাইরের শুষ্ক আবহাওয়া থেকে বাঁচানো। কিন্তু অতিরিক্ত সেবাম ত্বককে তৈলাক্ত করে এবং ব্রন বা ব্রন রিলেটেড সমস্যা তৈরি করে।
এই অতিরিক্ত সেবাম তৈরীর কারণ হল :
১.বংশগত :
যাদের পরিবারে কারো তৈলাক্ত ত্বক থাকে সাধারণত তাদেরও ত্বক তৈলাক্ত হয়।তবে সুসংবাদ যে ,বয়সের সাথে এই তেল গ্রন্থিগুলোর তেল উৎপাদন কমে যায়।
২.হরমোন অথবা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে :
বয়ঃসন্ধিকালে এন্ড্রোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ হয় যা সিবেসিয়ান গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে ফলে অতিরিক্ত সেবাম উত্পন্ন হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থা, মেনোপোজ এবং জন্মনিয়ত্রণ বড়ির জন্য সেবাম তৈরী বেশি হয়।
৩.কসমেটিক :
তেলযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণেও ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে।
৪.সাবান এবং অতিরিক্ত মুখ ধোয়ার কারণে :
বেশী ক্ষারযুক্ত সাবান ত্বকের স্বাভাবিক মেকানিজমকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং সিবেসিয়ান গ্রন্থিকে বেশি কার্যক্ষম করে, ফলে তেল উত্পন্ন হয়।যারা অতিরিক্ত বা বার বার মুখ ধোয় তাদের মুখের প্রয়োজনীয় তেল চলে যায় ফলে তেল গ্রন্থিগুলো ত্বককে বাঁচাতে আরো বেশী তেল তৈরি করে।
৫.খাবার :
বলা হয়ে থাকে যে, চকলেট, সফট ড্রিংকস এবং তেলে ভাজা খাবারের কারণে ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে। এছাড়া ভিটামিন বি২ এবং ভিটামিন বি৫ ও ভিটামিন এ এর অভাব হলেও ত্বক তৈলাক্ত হয়।
অন্যান্য কারণ:
-কিছু ওষুধ ব্যবহারের ফলে
-অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া
-কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ গরম থাকলে
-ধুমপান করলে
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন :
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন ২ভাবে করবেন। একটা হল বেসিক বা প্রাথমিক যত্ন। অন্যটি হল প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যত্ন। প্রথমেই আসা যাক বেসিক কি কি যত্ন করবেন। ৩টি প্রধান কাজ করতে হয় এই অংশে।
মুখ ভালভাবে পরিষ্কার করা :
মুখ ভালভাবে ধোয়া হল তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের মূল চাবিকাঠি। এমনভাবে মুখ ধুতে হবে যাতে মুখের অতিরিক্ত তেল উঠে যায় কিন্তু লিপিড অথবা গ্রন্থির ভিতরের পুরা তেল উঠে না যায়। কারণ একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল ও লিপিড আমাদের দরকার। তাই যেই ক্লিনজার ব্যবহার করবেন তা যেন মৃদু সিনথেটিক ডিটারজেন্ট হয় (মুখের জন্য তৈরী)। এটি মুখকে শুষ্ক না করেই অতিরিক্ত তেল ধুয়ে ফেলে। মৃদু সাবান এবং আইভরি অথবা প্রাকৃতিক সাবান ব্যবহার করা ভাল। দিনে ২/৩ বার মুখ ধোবেন এর বেশি না। মুখ ধোয়ার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। মুখ অনেক ঘসবেন না ধোয়ার সময়। শুধুমাত্র হালকা ম্যাসাজ করে নিবেন।
টোনার :
এটি মুখ ধোয়ার পর দিবেন। এটি ত্বকের কোষকে সংকুচিত করে ,টাইট করে ফলে পোর থেকে তেল কম বের হয় ।এটি ত্বকের ph কমায়। অ্যালকোহল যুক্ত টোনার ব্যবহার করবেন। এছাড়া যে টোনারে এসিটোন থাকে তা কেনার চেষ্ট করবেন। অ্যালকোহল মুখকে শুষ্ক করে ।
ময়েশ্চারাইজার :
মৃদু, তেল মোম ও লিপিডমুক্ত মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। যাদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত তাদের এটি ব্যবহারের দরকার নেই।
অন্যান্য:
-অয়েল ফ্রি কসমেটিক ব্যবহার করুন।
-ঘুমানোর আগে মেকাপ তুলুন।
-মুখ না ধুয়ে মুখে হাত দিতে ছোঁবেন না বা ঘসবেন না। এতে পোর বন্ধ হয়ে ব্রন হতে পারে।
-দরকার হলে ভিটামিন এ ক্রীম, রেটিনয়েডস, সালফার ক্রীম দিতে বলে ডার্মাটোলজিস্টরা।
-সুষম খাবার খান। প্রচুর ফলমুল, শাক সবজী, শিম, বাদাম যাতে ভিটামিন বি২ ও বি৫ ঘাটতি না হয়।
-ধুমপান পরিহার করুন। রিলাক্স থাকুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান ও পানি পান করুন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ও প্যাক
– আপেলের রস ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
– একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে চা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন এরপর মুখ গামছা দিয়ে ঢেকে গরম ভাব নিন মুখে ৩ মিনিট। ধন্যবাদ