নামজারি কীভাবে করতে হয়?

    নামজারি কীভাবে করতে হয়? এ বিষয়ে তথ্য পেলে উপকৃত হবো।

    Doctor Asked on March 4, 2015 in আইন.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      কোনো কারণে জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরোনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করানোকে বলে মিউটেশন বা নামজারি। উত্তরাধিকারসূত্রে, বিক্রয়, দান, খাসজমি বন্দোবস্তসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তান্তরের কারণে জমির মালিকানা বদল হয়। কিন্তু জমির নামজারি না করানো হলে মালিকানা দাবি করার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা তৈরি হয়। জমি রেজিস্ট্রেশন, জমি ক্রয়-বিক্রয়, খাজনা প্রদানসহ নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় নামজারি। জমি হস্তান্তর হওয়ার পর নামজারি করা অনেকটাই বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

      কীভাবে আবেদন করতে হয়

      সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করতে হবে। এতে নির্ধারিত জায়গায় জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হবে। আবেদনে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে। একই সঙ্গে মূল দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিল, পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি, ভূ-উন্নয়ন কর পরিশোধের দলিল, ওয়ারিশান সনদপত্র (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা), বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে। কোনো রায় বা ডিক্রির কারণে নামজারি করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি জমা দিতে হবে। আবেদনকারী নিজেও আবেদন করতে পারেন অথবা আবেদনকারী কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করেও আবেদন করতে পারেন। আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারী অথবা আবেদনকারীর প্রতিনিধির পাসপোর্ট আকারের ছবি সংযুক্ত করে দিতে হবে আবেদনের নির্ধারিত জায়গায়। খেয়াল রাখতে হবে নামজারি করাতে গিয়ে কোনো দালালের খপ্পরে যেন না পড়েন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগরে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নিয়ম করা হয়েছে।

      কোথায় করা হয় নামজারি

      সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন সহকারী পদের একজন দায়িত্বে থাকেন। নাজির পদের একজন নামজারির জন্য ফি জমা নেন। তহশিলদারেরা (সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা) নামজারির তদন্তের দায়িত্বে থাকেন। কোনো আবেদন করা হলে এ নামজারি করা জমির ওপর তদন্ত করার নিয়ম আছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারি আবেদন করে থাকেন। এটা ঠিক নয়।

      নামজারি কেন করাবেন

      নামজারি করাটা খুবই জরুরি। নামজারি না করলে রেকর্ডে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভূক্ত হবে না। আপনি নিজ নামে খাজনাও দিতে পারবেন না। অর্থাৎ ভূমি অফিস বা তহসিল অফিসের রেজিস্টারে আপনার নামই উঠবে না। রেকর্ডই মালিকানার প্রকৃত দলিল। ধরুন আপনি রেকর্ডিয় মালিক জনাব আজিজুর রহমানের নিকট হতে জমি কিনেছেন। এরপর আপনি যতক্ষণ না আপনার নামে নামজারি করাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারি রেকর্ডে আপনার নামই উঠবে না। আপনার কেনা জমি সরকারি খাতাপত্রে পূর্ববর্তী মালিক আজিজুর রহমানের নামেই রয়ে যাবে। আপনি জমি কিনলেন অথচ মালিক হিসেবে গণ্য হবেন না। কাজেই নামজারি করাটা খুবই জরুরি।

      নামজারিতে যা যা প্রয়োজন হয়ঃ

      ১. নির্ধারিত ফর্মে আবেদন

      ২. ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

      ৩. জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি

      ৪. মালিকানার প্রমাণস্বরূপ দলিলাদি ও অন্যান্য কাগজপত্র (দলিলের ফটোকপি, সিএস/এসএ/আরএস/মহানগর পড়চা ইত্যাদি)

      ৫. ওয়ারিশ হিসেবে নামজারির ক্ষেত্রে কোর্টের সাকসেশন সার্টিফিকেট বা নির্ধারিত জনপ্রতিনিধি (ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কমিশনার, পৌরসভার চেয়ারম্যান ইত্যাদি) কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশ সনদ

      নামজারি প্রক্রিয়া

      ১। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নামজারির আবেদন এসি (ল্যান্ড) অফিসে জমা দিতে হবে। জমা প্রদানকালে কেস নম্বর যুক্ত একটি টোকেন বা স্লিপ আপনাকে দেয়া হবে। এটি সাবধানে রাখতে হবে। সতর্কতার জন্য নম্বরটি অন্য কোন নিরাপদ জায়গায় লিখে রাখুন;

      ২। আপনার আবেদনের বিপরীতে একটি নামজারি কেস নথি তৈরী হবে। এসি (ল্যান্ড) আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্রের যথার্থতা এবং জমির মালিকানা যাচাই পূর্বক নামজারির প্রস্তাব বা প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বা তহসিলদারের নিকট প্রেরণ করবেন।

      ৩। তহসিলদার কেস নথিটি পাওয়ার পর আপনার কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য দলিল এবং কাগজপত্রের মূল কপিসহ তার কার্যালয়ে (তহসিল অফিস) উপস্থিত হওয়ার জন্য বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে তহসিল অফিসে যেয়ে মূল কাগজপত্র দেখাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে তহসিলদার বা এসি (ল্যান্ড) অফিসের সার্ভেয়ার সরেজমিনে গিয়ে আপনার জমি পরিদর্শন করতে পারেন।

      ৪। জমির মালিকানার বিষয়ে সন্তুষ্ট হলে তহসিলদার নামজারির প্রস্তাব এসি (ল্যান্ড) এর নিকট প্রেরণ করবেন।

      ৫। এসি (ল্যান্ড) তহসিলদারের নিকট হতে নামজারি প্রস্তাব পাওয়ার পর আবেদনকারী, জমির বিক্রেতা বা পূর্ব মালিক, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ওয়ারিশগণকে শুনানীর জন্য নোটিশ করবেন। এসি (ল্যান্ড) প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট যে কাউকে শুনানীর জন্য নোটিশ করতে পারেন। আবেদনকারীর উচিৎ সকলে যেন নোটিশ পায় এজন্য সঠিক নাম ঠিকানা বা ফোন নম্বর দিয়ে এসি (ল্যান্ড) অফিসকে সহযোগিতা করা। এতে করে আপনার শুনানী পর্বটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।

      ৬। সকল পক্ষের শুনানী অন্তে এবং দাখিলকৃত কাগজপত্র ও রেকর্ড যাচাইপূর্বক সন্তুষ্ট হলে এসি (ল্যান্ড) নামজারি কেসটি মঞ্জুর করবেন।

      ৭। নামজারি মঞ্জুর হওয়ার পর আপনাকে অবশ্যই কতগুলো কাগজ বা ডকুমেন্ট সাবধানে বুঝে নিতে হবে। অনুমোদিত নামজারি প্রস্তাবের একটি ফটোকপি, নামজারি পড়চা এবং ডিসিআর। এসি (ল্যান্ড) অফিসের নাজিরের নিকট হতে নির্ধারিত সরকারি ফী (বর্তমানে ২৫০/- টাকা) প্রদানপূর্বক ডিসিআর (Duplicate Carbon Receipt DCR)এবং নামজারি পড়চা সংগ্রহ করতে হবে।

      ৮। নামজারি পড়চা, ডিসিআর এবং নামজারি প্রস্তাবের ফটোকপি বুঝে নেয়ার পর অবশ্যই তহসিল বা ভূমি অফিসে গিয়ে জোত খুলে খাজনা প্রদান করবেন। জোত খোলা মানে খাজনার রেজিস্টারে আপনার নাম ও মালিকানার বিবরণসহ একটি এ্যাকাউন্ট খোলা। কাজটি তহসিলদার বা সহকারী তহসিলদার করবেন। খাজনা প্রদানের প্রমাণস্বরূপ খাজনার রশিদ বা আর আর (rent receipt) বুঝে নিবেন। খাজনার রশিদকে অনেকে দাখিলাও বলে থাকেন। এটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। অনেক সময় আবার এসি (ল্যান্ড) অফিসে নামজারি প্রস্তাব মঞ্জুরের পর প্রস্তাবপত্রের ফটোকপি বা ডুপ্লিকেট কপি দিয়ে আপনাকে তহসিল অফিসে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করার জন্য বলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাই করবেন। খাজনা পরিশোধের পর খাজনার রশিদ দেখিয়ে এসি (ল্যান্ড) অফিসের নাজিরের কাছ থেকে নামজারি পড়চা এবং ডিসিআর বুঝে নিবেন।

      নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হলে কী করবেন

      যেকোনো কারণেই নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হতে পারে। কোনো দলিল-দস্তাবেজে ত্রুটির কারণে হতে পারে, আবার অন্য কোনো উদ্দেশ্যেও নামঞ্জুর হতে পারে। কিন্তু আবেদন নামঞ্জুর হলে প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। নামজারি নামঞ্জুর হলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) কাছে এবং তা করতে হয় আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (রাজস্ব) আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডে আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়। এ ছাড়া রিভিশনের পথও খোলা রয়েছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। এ ছাড়া রিভিউর পথও খোলা আছে। রিভিউ মানে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা করা। দলিলপত্রে কোনো ভুল পর্যবেক্ষণ হয়েছে বলে মনে করলে কিংবা আবেদন বাতিল করলে রিভিউর আবেদন করতে হয়। যে কর্মকর্তা আদেশ দিয়েছেন, তাঁর বরাবরই রিভিউ করতে হবে। রিভিউ করতে হয় ৩০ দিনের মধ্যে। তবে রিভিউ আবেদন করা হলে আর আপিল করা যায় না।

      Professor Answered on March 4, 2015.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.