নেগেটিভ মানুষ বলতে কী বোঝায় আসলে?
নেগেটিভ মানুষ বলতে কী বোঝায় আসলে?
নেগেটিভ মানুষ বলতে, তাঁকে বুঝায়, যিনি সব কিছুতেই, ইতিবাচকতার কোনো সম্ভাবনাই খুঁজে পান না।
তিনি ?
১। তিনি আকাশে মেঘ দেখলে, বন্যার আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, বৃষ্টি যে দেহ, মন কে শীতল করে, প্রকৃতিকে সজীব করে দিয়ে যায়, সেটা বুঝতে চান না,
২। তিনি বেকার ছেলে মেয়ে কে দেখলে, অকর্মণ্য বলে ভাবেন।
বেকার ছেলে মেয়েই যে সমাজের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিতে জানেন, সে সম্ভাবনাকে তিনি, আমল দেন না,
৩। তিনি, অবিবাহিত কারোর জীবন, সংসার করা হলো না বলে, ব্যর্থ হলো বলে, নিশ্চিত হয়ে যান।
বিয়ে না করে, সংসার না করেও যে জীবন সার্থক করা যায়, সেটা তিনি ভাবতে জানেন না,
৪। তিনি অন্যের দানের মহিমা কে স্বীকার করতে পারেন না।
তিনি দানের উৎস বা দানের পেছনে কোনো অনৈতিক কারণ আছে কী না, সেটার বিস্তৃত অন্বেষণে নিজেকে নিয়োজিত করেন,
৫। তিনি কোনো কাজ সফল হওয়ার সম্ভাবনার থেকে, অসফল বা ব্যর্থতার দিকটিকে স্পষ্টভাবে দেখতে পান,
৬। তিনি, একটি মেয়ে রাত করে বাড়ীতে ফিরলেই, মেয়েটির স্বভাব চরিত্র নিয়ে, মুহূর্তেই থিসিস লিখে ফেলতে পারেন,
মেয়েটি যে, সঙ্গত কারণেই দেরী করে রাতে বাড়ী ফিরতে পারে, সে সম্ভাবনার দিকটি, তিনি দেখতেই তিনি রাজী নন,
৭। তিনি, অন্যকে কোনো ব্যাপারে উৎসাহ দিতে গিয়ে, নিজের ব্যর্থতার কাহিনী সবিস্তারে বলে, নিরুৎসাহ সৃষ্টি করতে পারঙ্গম,
৮। তিনি, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে দেখলেই, তাঁদের প্রেমিক, প্রেমিকা বলে নিশ্চিত হয়ে যান।
তাঁরা যে প্রেমিক প্রেমিকা না ও হতে পারেন, সেটা তিনি, ভাবতেই পারেন না। যদি বা প্রেমিক, প্রেমিকা হয় ও, তাহলেও প্রেমের সুন্দর দিকটি দেখতে, তাঁর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়,
৯। তিনি তাঁর পরিচিত কোনো স্ত্রী বা পুরুষকে, কোনো পরপুরুষ বা পরস্ত্রীর সাথে দেখা মাত্রই, মুহূর্তেই হিসেব, নিকেশ করে, “পরকীয়া” শব্দটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন।
১০। তিনি পরীক্ষায় ফেল করাকে, বিশাল গুরুত্ব দিয়ে দেখেন, পরীক্ষায় পাশ করার জন্য যে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিলো, সেটাকে নস্যাৎ করে দিতে জানেন।
১১। তিনি, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই নির্ঘাত মৃত্যুর সম্ভাবনাকে দৃপ্তস্বরে ঘোষণা করেন, কোন দেশে কত লক্ষ লোক মারা গেছে, সেটার পরিসংখ্যান নির্ভুল ভাবে বলে যান, কিনতু, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও কতজন যে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন, সে পরিসংখ্যানটা বলেন না।
১২। তাঁর ঠোঁটের আগায় সর্বক্ষণ লেগেই থাকে, “না” শব্দটি।
যেখানে হ্যাঁ বলার প্রয়োজন, সেখানে ও যে, তাঁর মুখ থেকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই চলে আসেই, “না”।
এই নেতিবাচকতাকে ঝেড়ে ফেলতে না পারলে, এটা নিজের জীবনে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে।
তেমনি ছিলেন, আমার এক পরিচিত ব্যক্তি।
সরকারী চাকরী করেন। সরকারী গুদামে, চাল, ডাল, খাদ্যশস্য দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করার চাকরী।
প্রতি বছর ওই অঞ্চলে অতি বৃষ্টির কারণে, বন্যা হয়, সরকারী গুদামের চাল, ডাল সব বন্যায় ভেসে যায়।
ক্ষতিপূরণ, সরকারীভাবেই বহন করা হয়।
তো, একবছর তেমনই একনাগাড়ে ক’দিন ধরে, খুবই বৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি ও প্রস্তুত, এ বছর ও সিওর বন্যা হবে, বৃষ্টিতে সব ভেসে যাবে, সরকারী ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতভাবেই পাওয়া যাবে, এসব ভেবে, বন্যা হওয়ার আগেই তিনি, সরকারী গুদামে মজুত, সমস্ত খাদ্যশস্য দিলেন, কালোবাজারে বেচে।
রিপোর্ট বানিয়ে ফেললেন, বন্যায় সব ভেসে গেছে।
রিপোর্ট জমা করার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনি, এরই মাঝে কী সর্বনাশ !
অবিশ্রান্ত বর্ষণ গেলো থেমে, আর অন্যান্য বছরের মতো, এবার বন্যা ও হলো না।
এখন কী উপায় হবে গুরু ?
বিভাগীয় তদন্ত (departmental enquiry) দিয়ে শুরু, শেষ হলো টার্মিনেশন অর্ডারে, চাকরিচ্যুতি।