বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কীভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে?
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কীভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে?
আধুনিককালের এই সময়ে এসেও বাল্যবিবাহের প্রভাব থেকে যেন বাংলাদেশ এখনও মুক্ত হতে পারে নি। এখনও গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের গুপ্ত খবর শোনা যায়। গোপনীয়তা রক্ষা করে এই ধরনের বিয়েগুলো সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রত্যেকেই সচেতন নাগরিক হিসেবে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত আমাদের সকলেরই।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সাথে ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিয়েকেই বাল্যবিবাহ বলা হয়। ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বাল্যবিবাহ বলতে বোঝায়, বাল্যকাল বা নাবালক বয়সে ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিয়ে। এছাড়া বর-কনে দুজনেরই বা একজনের বয়স বিয়ের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সের কম হলে অর্থাৎ বিয়েতে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে অথবা ছেলের বয়স ২১ বছরের নিচে থাকলে সেটাও আইনের চোখে বাল্যবিবাহ বলে চিহ্নিত হবে।
১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী-
১. বাল্যবিবাহ আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
২. পিতা-মাতাসহ এই বিয়ের সাথে যুক্ত সকলেই শাস্তি পাবেন
৩. বাল্য বিবাহ একটি বাতিলযোগ্য বিবাহ
শাস্তি :
ক) শিশু বিবাহকারীর শাস্তি
১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ধারা -৪ অনুযায়ী
২১ বছরের বেশি বয়সের কোন পুরুষ অথবা ১৮ বছরের বেশি বয়সের নারী কোন বাল্যবিবাহের চুক্তি করলে, তারা দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
খ) বিয়ে সম্পন্নকারীর শাস্তি
১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ধারা-৫, অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা বা নির্দেশ প্রদান করলে তিনি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। যদি তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে বিবাহটি বাল্যবিবাহ হিসেবে বিশ্বাস করার কোন কারণ ছিল না, সেক্ষেত্রে তিনি এই অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
গ) অভিভাবকের শাস্তি
১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ধারা -৬ অনুযায়ী, যেক্ষেত্রে কোন নাবালক বাল্যবিবাহের চুক্তি করে, সেক্ষেত্রে ঐ নাবালকের পিতা-মাতা, অভিভাবক যদি উক্ত বিবাহে উৎসাহ দেয়ার কাজ করে অথবা বিবাহ বন্ধ করতে অবহেলার কারণে ব্যর্থ হয়, তবে ঐ ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। শর্ত থাকে যে এক্ষেত্রে কোন নারীকে কারাদন্ড দেয়া যাবে না।
সুতরাং একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার চোখে পড়া যেকোনো বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। প্রয়োজনে সন্নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন।
তথ্যসূত্র : বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক