বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কেন

    আদিমকালে তো মানুষ মুখে মুখে গান্ধর্ব্য বিয়ে করত। এত ধরনের আইন কানুনের প্রয়োজন হত না। পরবর্তীতেই তো বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারটি চলে আসে। আমি জানতে চাই বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয় কেন? 

    Supporter Asked on March 4, 2015 in আইন.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      প্রশ্নটির উত্তর অতি ব্যাপক। সংক্ষেপে, সামাজিক মর্যাদা এবং আইনগত অধিকার রক্ষার জন্যই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা অতি জরুরী। রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত আপনি আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে সাক্ষ্যগত মূল্য বহন করে। রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত বিবাহ প্রমাণ করা কঠিন ফলে মেয়েদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় সবচেয়ে বেশী। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি দাবীর ক্ষেত্রে বিবাহ রেজিস্ট্রিশন বা বিবাহের কাবিননামা আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কাবিননামার গুরুত্ব ব্যপক। কাবিননামায় বয়স উল্লেখ করতে হয় বিধায় বাল্য বিবাহ রোধও সম্ভব। এটি বিবাহিত ছেলে-মেয়ে উভয়ের ভবিষ্যত আইনগত অধিকার সংরক্ষণ করে। বিবাহ সম্পর্কে উভয় পক্ষ থেকেই যে কোন সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তখন কাবিননামা প্রমাণ পত্র হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, আইনের দৃষ্টিতে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই সকল বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা আইনত আবশ্যক।

      বিবাহ রেজিস্ট্রেশন কী এবং কেন :

      বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে সরকারিভাবে বিবাহকে তালিকাভুক্তি করা। সরকারের নির্ধারিত ফরমে বিবাহের তথ্যবলী দিয়ে এই তালিকাভূক্তি করতে হয়। তালিকাভূক্তি ফরমটিকে কাবিননামাও বলে। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী বা নিকাহ রেজিস্ট্রার দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ২০০৫ সালের ৯ নং আইন দ্বারা ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনের সংশোধনী আনা হয় এবং বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। উক্ত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজী বিবাহ সম্পন্ন হবার সাথে সাথেই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন অথবা তিনি ব্যতিত অন্য কেহ বিবাহ সম্পন্ন করলে ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজীর নিকট বিবাহের তথ্য প্রদান করতে হবে এবং কাজী উক্ত তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথে বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। যদি কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের এসব বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে তার ২ (দুই) বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে। আইন অনুযায়ী কেউ যদি রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন তবে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। উল্লেখ যে, রেজিস্ট্রেশন না হলে বিবাহ বাতিল হয় না তবে আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভবনা থাকে।

      খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের কোন বিধি বিধান নাই। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও এরূপ বিধান নাই। এসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যত প্রয়োজনীয়তা কথা বিবেচনা করে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করে রাখা যেতে পারে।

      কখন এবং কিভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয় :

      ২০০৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) সংশোধিত আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হবার সাথে সাথে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তবে নিকাহ রেজিস্ট্রার ব্যতিত বিবাহ সম্পন্ন হলে ৩০দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হয়। রেজিস্ট্রি করতে রেজিস্ট্রেশন সরকারি ফি দিতে হয়। দেনমোহরের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হয়। ধার্য্যকৃত দেনমোহরের প্রতি হাজার বা তার অংশবিশেষের জন্য ১০ টাকা হারে রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি এর মোট পরিমাণ ১০০ টাকার কম হবে না এবং ৪০০০ টাকার উপর হবে না। এই ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং পরিবর্তন হয়ে থাকে। রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের।
      আইন অনুযায়ী বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বা শর্ত যেমন, বর কনের বয়স, উভয়ের সম্মতি, দেনমোহের, তালাক প্রদানের ক্ষমতা ইত্যাদি পূরণ সাপেক্ষে কাজী বা নিকাহ রেজিস্ট্রার বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। খ্রিস্টান বিবাহর ক্ষেত্রে যিনি বিবাহ সম্পাদন করবেন তিনিই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবার পর কাজী উভয়পক্ষকে রেজিস্ট্রেশন ফরম বা কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদান করবেন।

      বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সুফল-কুফল :

      বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করলে আইনগত কিছু সুফল পাওয়া যায় কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না করলে কুফলও রয়েছে অনেক
      যেমন রেজিস্ট্রেশনের ফলে,

      ১) বর বা কনে পক্ষ উক্ত বিবাহ অস্বীকার করতে পারেনা এবং একে অপরের প্রতি সামাজিক ও পারিবারিক দায়-দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়।

      ২) স্বামী/স্ত্রী উভয়ে উভয়ের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হতে পারে।

      ৩) স্ত্রী তার প্রাপ্ত দেনমোহার ও ভরণপোষণ আদায় বা দাবী করতে পারে।

      ৪) সন্তানের পিতৃত্ব দাবী/প্রমাণ করতে সহজ হয়।

      ৫) স্বামী দ্বিতীয় বিবাহর জন্য উদ্যোগী হলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

      আর বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে স্বামী বা স্ত্রী’র আইনগত বৈধতা প্রমাণ করা কস্টসাধ্য, অনেক ক্ষেত্রে যায় না। রেজিস্ট্রেশন না হবার ফলে পুরুষ অথবা স্ত্রী উভয়ই আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত বা প্রতারিত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এবং রেজিস্ট্রেশন না করা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে।

      লেখক: জয়নাল আবেদীন চৌধুরী রিগ্যান
      আইনজীবী

      Professor Answered on March 4, 2015.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.