ভাইয়েরা আমাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করছে আমি কী করব?
আমরা তিন ভাইবোন অর্থাৎ দুই ভাই এক বোন। আমার বিয়ে হয়েছে ৮ বছর আগে। কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। জমিজমার হিসেব করতে গিয়ে ভাইয়েরা আমাকে কোনো জমির ভাগ দিতে চাইছে না। তারা বলছে আমার বিয়েতে খরচ করেছে বলে আমাকে আর জমির ভাগ দিতে পারবে না। আমি যা পাই বিয়ের খরচেই সব শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি জমিজমা সংক্রান্ত তেমন কোনো তথ্য জানি না। মুসলিম আইনে মেয়েদের অংশ কতটুকু তাও জানি না। আমাকে কি বলতে পারেন এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত?
এমন ঘটনা প্রায়ই দেখা যায় যে বাবার অবর্তমানে বোনেরা সম্পত্তির অংশ পান না। তাদেরকে অনেক ধরনের ভূগোল বুঝিয়ে সম্পত্তি থে কে বঞ্চিত করা হয়। বোনেরাও অনেক সময় বাবার সম্পত্তির অংশ ছাড় দিয়ে দেন। অনেকে অজ্ঞতার কারণে, আবার অনেকে ভাইদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হবে ভেবে প্রাপ্য অংশটুকু ছেড়ে দেন। কিন্তু বোনেরা ইচ্ছা করলে তাঁদের অধিকারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
বোনদের সম্পত্তির অংশ
মুসলিম আইনে বাবা বা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ছেলেরা যা পাবেন, মেয়ে বা মেয়েরা তার অর্ধেক পাবেন। অর্থাৎ ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য নয়। বোনদের বিয়ে হয়ে গেলেও বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এমনকি বোনের বিয়েতে খরচ হয়েছে বলে বিভিন্ন অজুহাত দিলেও তা কখনই আইনিভঅবে গ্রহণযোগ্য না কেননা ভাইদের ক্ষেত্রেও এমন অনেক টাকা খরচ করা হয়ে থাকে।
যদি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় :
ভাই-বোনেরা আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে আপস করে বণ্টননামা সম্পন্ন করে নিতে পারেন। এই বণ্টননামা রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। যদি আপসের মাধ্যমে ভাইয়েরা বোনদের সম্পত্তি দিতে না চান কিংবা বোনদের সম্পত্তি কম দিতে চান তাহলে বোনেরা দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত বোনেরা বাঁটোয়ারা বা বণ্টনের মোকাদ্দমা করতে পারেন। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ-বণ্টন নিয়ে উত্তরাধিকারীদের নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হলে আদালতের মাধ্যমে এই ভাগ-বণ্টন দাবি করা যায়। একে বাঁটোয়ারা মামলা বলা হয়। কোনো যৌথ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেও কে কতটুকু অংশ পাবেন তা আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণের জন্য বাঁটোয়ারা মামলা করতে হয়। সাধারণত বিরোধ দেখা দেওয়ায় ছয় বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাঁদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন এবং অংশ চাইতে পারেন। অর্থাৎ শুধু বোনেরা নন, বোনেরা মারা যাওয়ার পর তাঁর উত্তরাধিকারীরাও এই মামলায় পক্ষ হতে পারেন। এ মামলায় দুবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পরে বা আগে নিজেরা নির্ধারিত সময়ে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দিতে পারেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন।
তানজিম আল ইসলাম
আইনজীবী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট