মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?
মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?
কল্পনা করুন আপনি কোন এক মরুভূমিতে সফররত অবস্থায় হঠাৎ বালির মধ্যে একটি মোবাইল ফোন কুড়িয়ে পেলেন। আমরা জানি মোবাইল ফোন তৈরি করতে কাঁচ, প্লাস্টিক, লোহা এবং বিভিন্ন রকম ধাতু ব্যবহার করা হয়। আমরা এও জানি কাঁচ তৈরি হয় বালি থেকে, তেল থেকে প্লাস্টিক এবং বিভিন্ন উপকরণ বিভিন্ন ধাতু থেকে তৈরী হয়। বালি, তেল ও সবরকম ধাতু মরুভূমির ভিতর পাওয়া যায়। তাহলে আপনি কি বিশ্বাস করে নেবেন যে, আপনার কুড়িয়ে পাওয়া মোবাইল ফোনটি বালির ভিতরে থাকা বিভিন্ন উপাদান নিজে নিজেই একত্রিত হয়ে নিজে থেকেই তৈরি হয়ে গেছে এবং কয়েকশ বছর পর হঠাৎ বালির মধ্য থেকে বের হয়ে আপনার সামনে হাজির হয়ে গেছে?
স্পষ্টতই, কেউই এই ব্যাখ্যা মেনে নেবেন না। মোবাইল ফোন এমন একটি জিনিস যা তৈরি করার জন্য রীতিমতো বিশেষ ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে এবং তারপর বিভিন্ন উপাদান একত্রিত করে সেটিকে বানানো হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তির দাবি হল, মোবাইল ফোনটি বানানোর পিছনে কোন ম্যানুফ্যাকচারার বা উৎপাদনকারী তো অবশ্যই সংশ্লিষ্ট আছেন। এভাবে যখন আমরা এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনার বিধি- বিধান সমূহ অবলোকন করি তখন একথা বুদ্ধিসম্মত ভাবেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, নিশ্চয়ই এটিরও সৃষ্টির পিছনে কেউ তো অবশ্যই আছে।
মানুষের বিবেক স্বতঃই একথার সাক্ষ্য দেয় যে, কোন বস্তুই নিজে থেকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে চলে আসেনা। এটা যুক্তি সংগত বিষয় যে, প্রতিটি জিনিসেরই সৃষ্টির কোন না কোন কারণ থাকে অর্থাৎ সেটির সৃষ্টির পিছনে কোন কারিগর অবশ্যই থাকেন। তার সঙ্গে এটাও সত্য যে অগোছালো অবস্থা থেকে কোন কিছু নিজে থেকে সুগঠিত স্তরে উন্নীত হতে পারেনা। এজন্য একথা বিশ্বাস করা অত্যন্ত জরুরি ও যুক্তিসম্মত যে বিশ্বের সূচনা হয়েছিল এবং অবশ্যই কোন বুদ্ধিমান সত্তা এই সূচনার মূল হোতা। এখন একটা প্রশ্ন এসে যায়, যদি এই বিশ্বের কেউ একজন সৃষ্টিকর্তা থেকেই থাকেন তাহলে তাঁকে কে সৃষ্টি করেছেন? আবার তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁকে বা কে সৃষ্টি করেছেন?….. এভাবে এই প্রশ্ন অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকবে। কিন্তু আমরা এ প্রশ্নকে অনন্তকাল যাবত চলতে দিতে পারিনা। তাছাড়া স্রষ্টার যদি স্রষ্টা থাকেন তাহলে তিনিও তো সৃষ্টি হিসাবেই পরিগণিত হবেন।
সুতরাং এই প্রশ্ন অবান্তর। সৃষ্টিকর্তার কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তিনি আদি থেকেই আছেন। তিনি অনন্তকাল ধরে আছেন। সেই সঙ্গে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, এই বিশ্বের স্রষ্টা প্রবল শক্তিশালী এবং বুদ্ধিমান একসত্তা। কারণ তিনি এই বিশ্বকে অস্তিত্বে নিয়ে এসেছেন এবং তাকে পরিচালনা করার জন্য বৈজ্ঞানিক নিয়ম বানিয়ে দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা স্থান-কাল-পাত্রের গণ্ডি থেকে উর্ধ্বে অবস্থান করেন। কারণ স্থান-কাল-পাত্রের ধারণা বিশ্বের অস্তিত্বে আসার পরে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ স্থান, কাল বা পাত্র সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং সময় সৃষ্টির আগে তিনি কোথায় ছিলেন এ প্রশ্নও সংগত নয়।
সৃষ্টিকর্তার এই সমস্ত গুণ ঈশ্বরের ধারণার ভিত্তি। ঈশ্বর এই বিশ্বের স্রষ্টা যাকে কেউ সৃষ্টি করে নি। তিনি একক, তিনি অসীম, কারণ তিনি কারো সৃষ্টি নন।
বিশ্বের সম্পূর্ণ ভারসাম্য
এই বিশ্বের এমন বহুবিধ বিশেষত্ব রয়েছে যা একথার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করে যে একে মানব জীবনের সহায়তার জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। যেমন সূর্যের থেকে পৃথিবীর দূরত্ব, পৃথিবীর বহির্বিভাগের যে স্তর রয়েছে তার পুরুত্ব, যে বেগে পৃথিবী ঘূর্ণন করছে তা, পরিবেশের অক্সিজেনের উপযুক্ত মাত্রা, এমন কি সেই কোণ যে কোণে অবস্থান করে পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ভ্রমণ করছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব বা অন্য সমস্ত উপকরণগুলির সামান্য পরিবর্তন সাধিত হলে এই পৃথিবী আর প্রাণীর বসবাসের উপযুক্ত থাকবে না। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিধান এবং ব্যবস্থাপনার এইসব বিষয় একজন সৃষ্টিশালী শক্তিশালী স্রষ্টার বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ ডিজাইনের সংকেত প্রদান করে।
স্রষ্টা সৃষ্টির থেকে আলাদা
মনুষ্য কি ঈশ্বর হতে পারে?
কিছু মানুষের ধারণা ও বিশ্বাস যে মানুষ ঈশ্বর হয়ে গেছেন। ঈশ্বরের কিছুগুণ এবং বিশেষত্ব রয়েছে। যেমন তাঁর সর্বজ্ঞতা (সবকিছু তিনি জানেন), সর্বশক্তিমান এবং শাশ্বত। এ সমস্ত গুণ মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়না। মানুষের জ্ঞান এবং শক্তি সীমিত। তাহলে তারপক্ষে কিভাবে ঈশ্বর হওয়া সম্ভব? একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, একথা কিভাবে সম্ভব যে একই সত্তার মধ্যে একই সময়ে দুটি পরস্পর বিরোধী বিশেষত্ব উপস্থিত থাকবে? নিশ্চিতভাবেই একথা সমর্থনযোগ্য নয়। কিছু মানুষ বলেন ঈশ্বর যখন সবকিছুই করতে পারেন তাহলে তিনি কেন মনুষ্যরূপ ধারণ করতে পারবেন না? ঈশ্বরের সত্তা পূর্ণাঙ্গ। এটা তাঁর স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় যে তিনি এমন কোন কাজ করবেন যার মধ্যে কোন ত্রুটি বিদ্যমান। নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বর কোন অনৈশ্বরিক কার্য সম্পাদন করবেন না। পূর্বে উল্লেখিত প্রশ্নগুলির ব্যাপারে এই উত্তরই সঙ্গত।
অনেক ঈশ্বর হওয়া কি সম্ভব?
যদি একের অধিক খোদা বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকত তার মানে এটাই প্রতীয়মান হত যে তাঁর ক্ষমতায় এবং অধিকারের মধ্যে ত্রুটি ও দুর্বলতা রয়েছে। আর সেই কারণেই একাধিক খোদার জন্ম হয় এবং তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যান এবং পরস্পরকে একে অপরের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়। কিন্তু আমরা এ সমগ্র বিশ্বে এক অদ্ভুত সামঞ্জস্য লক্ষ্য করি। সে কারণে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এ বিশ্বের স্রষ্টা একজনই – যিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বাধিকারী।
ঈশ্বর সঠিক পথপ্রদর্শন করেন
আমাদের সৃষ্টিকর্তার পরিচয় লাভ করার পর আশা করা যায় যে, তিনি নিশ্চয় আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করবেন। আমরা কিভাবে জানব যে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কি চান? আমরা কি কোন শাস্তি বা পাপের ফলস্বরূপ এই পৃথিবীতে আসতে বাধ্য হয়েছি, না আমাদের এখানে আসার পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে? আমরা কি অন্যদের অনুসরণ করে সময়ের স্রোতের সঙ্গে ভাসতে থাকবো? না তা নয় বরং ঈশ্বর আমাদেরকে আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করার জন্য দূত (পয়গম্বর) এবং গ্রন্থ (ওহী) প্রেরণ করেছেন।
ঈশ্বরের পয়গম্বর বা বার্তাবাহক
ঈশ্বর লক্ষাধিক পয়গম্বর প্রেরণ করেছেন। কমপক্ষে প্রতিটা জাতির ভেতর একজন করে পয়গম্বর এসেছেন। সকলের বার্তা একটাই ছিল। হে লোকেরা! তোমরা সেই এক ঈশ্বরের দাসত্ব কর এবং তারই আদেশ- নিষেধ পালন করো। এইসব পয়গম্বরদের মধ্যে রয়েছেন আদম, নুহ, ইব্রাহিম, মুসা, ঈসা এবং মুহাম্মদ (এঁদের সকলের প্রতি ঈশ্বরের করুণা-ধারা বর্ষিত হোক)। পয়গম্বরদের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ পয়গম্বর হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ছিলেন সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া এবং সাহসিকতার এক অতুলনীয় নমুনা। তার প্রতি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে অন্তিম বার্তা কুরআন প্রেরণ করা হয়। যাতে তিনি লোকদের জানাতে পারেন, কিভাবে কোন কাজ করা উচিত। পয়গম্বর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লেখা পড়া জানতেন না এবং তিনি কোন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র থেকে কোন শিক্ষা অর্জনও করেন নি। একথা সাক্ষ্য দেয় যে তিনি কুরআনের লেখক হতে পারেন না।
কুরআন যে ঈশ্বরের গ্রন্থ তা কিভাবে বিশ্বাস করব?
কোন গ্রন্থ ঈশ্বর প্রদত্ত একথার প্রমাণ করার জন্য এটা আবশ্যক যে বাস্তবে এই গ্রন্থ ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এসেছে তা প্রমাণ করা। ইসলাম এই পুস্তক অর্থাৎ কুরআন সম্পর্কে কি বলছে। আসুন সে কথা জেনে নিই:
বৈজ্ঞানিক তথ্য
একমাত্র কুরআন মাজীদ এমন এক পবিত্র গ্রন্থ যা দীর্ঘদিন ধরে পড়ানো এবং পঠিত হয়ে আসছে। ১৪০০ বছর আগে এটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় থেকে এখনো পর্যন্ত আরবী ভাষায় যেমনটি ছিল তেমনটি আছে। এর মধ্যে কিছু বাড়ানোও হয়নি, কিছু কমানোও হয়নি এবং এভাবে গ্রন্থটি ভুল-ভ্রান্তি এবং পরস্পর বিরোধীতা থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।
কুরআন সপ্তম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে অবতীর্ণ হয়। এর মধ্যে এমন বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে সে সময়ের মানুষেরা সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলেন। আজকের আধুনিক টেকনোলজির প্রয়োগের মাধ্যমে সে সব তথ্যের বাস্তবতা জানা সম্ভব হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি এখানে পেশ করা হলো।
সমস্ত জীবন – এর উৎপত্তি হয়েছে জল থেকে। (কুরআন, ২১:৩০)
সমগ্র বিশ্ব ক্রমশঃ সম্প্রসারিত হচ্ছে। (কুরআন, ৫১:৪৭)
সূর্য এবং চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে। (কুরআন, ২১:৩৩)
মানবভ্রূণের বিস্তারিত বিবরণ। (কুরআন, ২৩:১২-১৪)
ঐতিহাসিক অলৌকিক তত্ত্ব এবং ভবিষ্যৎবাণী
ইতিহাস বর্ণনা প্রসঙ্গে ও কুরআন মাজীদ সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ১৯ শতাব্দীতে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপির ডিকোডিং করে জানা যায় যে মিশরে হামান নামের এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিল। ওই ব্যক্তি ফেরাউনের দরবারে নির্মাণ কাজে জড়িত কর্মচারীদের প্রধান ছিল। এই তথ্য ১৪০০ বছর আগে কুরআনের ২৮ নম্বর সূরার ৩৮ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) এবং তাঁর সাথীরা এবিষয়টা জানতেন।
ভবিষ্যতে ঘটতে চলেছে এমন বহু ঘটনার ভবিষ্যৎবাণী কুরআনে করা হয়েছে, যে গুলির সবগুলোই প্রায় প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, ফেরাউনের মৃতদেহকে কেয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত করে রাখা হবে (কুরআন, ১০: ৯১-৯২)। মিশরের কায়রো মিউজিয়ামে মমি করে রাখা ফেরাউনের দেহ সবার জন্য প্রমাণ।
অনুপম ভাষাশৈলী এবং সার্বভৌমিক বার্তা
কুরআনের অনুপম ভাষাশৈলী এবং তার বার্তা একথার প্রমাণ পেশ করে যে এটি ঈশ্বরের পক্ষ থেকেই এসেছে। এই গ্রন্থ শিক্ষা দেয় স্রষ্টা কেবল একজনই এবং তাঁর গুণ বৈশিষ্ট্য তাঁর সৃষ্টির চেয়ে ভিন্ন। এই ধারণায় কুরআন কোন প্রকার আপোষ বা বিকৃতি করেনা। এই ধারণা ঈশ্বরের সম্পর্কে মানুষের জন্মগত ধারণার সমর্থন করে।
আমরা এখানে কেন এলাম?
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন- আমাদের চোখ, কান, হৃদয় এবং মস্তিষ্ক সমস্ত কিছুরই বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে।
মহাজ্ঞানবান ঈশ্বর আমাদেরকে উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানোর জন্য বা কেবল নিজের খেয়ালবশে সৃষ্টি করেননি। বরং আমাদেরকে সৃষ্টি করার পেছনে তাঁর এক সুউচ্চ উদ্দেশ্য ছিল তা হলো এক ঈশ্বরকে জানা এবং তার উপাসনা বা দাসত্ব করা। যাতে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারে একটি সফল এবং সুখী জীবন যাপন করতে পারি। এই উপাসনা বা দাসত্বের মধ্যে আমাদের ভালো কাজগুলোও অন্তর্ভুক্ত। যেমন নামাজ পড়া, দোয়া করা, সমাজ কল্যাণের কাজ – যেমন ভালো প্রতিবেশী হয়ে জীবন যাপন করা, নিজের পরিবারের ভরণপোষণ করা, এমনকি জন্তু-জানোয়ারের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
ঈশ্বর আমাদের নির্দেশ দেন, যেন আমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কোন মূর্তি, সূর্য, চন্দ্র, সাধুসন্ত বা নবী (অবতার), অলি-আওলিয়া কারো উপাসনা না করি। তিনি বলেন, ঈশ্বরের কারো সঙ্গে অংশীদারী নেই। পার্টনার অথবা মধ্যসত্তাকারীর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কোন ব্যক্তি যেকোন সময় সরাসরি তাঁর কাছে নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে। তাঁর পূজা করতে পারে।
ঈশ্বর বলেন, এই জীবন একটি পরীক্ষা মাত্র এবং বিভিন্ন ভাবে লোকেদেরকে পরীক্ষা করা হবে। আমাদের সঙ্গে যা কিছু সংঘটিত হয়, তার প্রতি আমাদের কোন প্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই। কেবলমাত্র আমরা ঘটনার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারি। কেবলমাত্র এইটুকুতেই আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বিপরীত পরিস্থিতিতে সবর বা ধৈর্যধারণ করে কাজ করা এবং পুরস্কার তথা অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানুষকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী করে। যা চিরন্তন জান্নাত তথা স্বর্গ অর্জনের কারণ হয়। আমাদেরকে তিনি সতর্ক করেছেন যদি আমরা খোদাকে অস্বীকার করি এবং তাঁর আদেশকে অবহেলা করি, তাহলে ভয়ানক শাস্তি হিসেবে আমাদেরকে জাহান্নাম তথা নরকে নিক্ষেপ করা হবে।
তাহলে! এখন আমাদের কি করনীয়?
কোন মানুষের বিশ্বাস তথা তার নিষ্ঠার পরীক্ষা নেন ঈশ্বর। মানুষ তাঁর নিদর্শন সমূহ দেখে সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাঁর আদেশ-নির্দেশ অনুসারে জীবন-যাপন করে কিনা সেটাই তিনি দেখতে চান। একজন মানুষ যখন নিজেকে ঈশ্বরের (আরবি ভাষায় যাকে আল্লাহ বলা হয়) আদেশের নিকট সঁপে দেবে। তিনি ইসলামকে সবার জন্য গ্রহণ যোগ্য হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তাতে কোনো ব্যক্তি যে দেশ এবং যে জাতির মধ্যেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন। যে ব্যক্তিই এই কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সাক্ষী দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ পূজা উপাসনার যোগ্য নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর পয়গম্বর” সেই ব্যক্তিই মুসলিম হতে পারে।