যৌন হয়রানির মত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে শিশুদের কী করা উচিত হবে?

আজকে একটি ১৩ বছরের মেয়ের সাথে কথা হল। মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, আপু যৌন হয়রানি কি? পরে আমি ওকে সব বুঝিয়ে বললাম। তারপর ও মন খারাপ করে আমাকে বলছিলো, আপু তোমাকে কিছু কথা বলবো, প্লিজ কাউকে বল না। কথাগুলো ছিলো এমন- “আমি যখন আরবী শিখতাম হুজুরের কাছে তখন আমি আর আমার চাচাতো বোনকে হুজুর খাটের উপর বসে পড়াতো। পড়ানোর সময় বলত উনার হাত ব্যথা। আমি যেন হাতের উপর বসি। আমি তখন আরো ছোট ছিলাম, কিছু বুঝতাম না। উনি হাত দিয়ে কেমন যেন করত। তারপর থেকে আমি হুজুরের কাছে পড়তে চাইতাম না। এর এক মাস পর তার কাছে পড়া বন্ধ করে দেই।

আমার দুই চাচা। সেঝো চাচার ছোট ছেলে যখন আমি পকেট আছে এমন প্যান্ট পরতাম তখন পকেটে হাত দিয়ে বলত, তোমার পকেটে টাকা আছে। এই বলে আমার পকেটে হাত দিয়ে নিচে ধরত। আমার খারাপ লাগত কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। ঐ দিন আম্মু আর চাচী বাইরে গিয়েছিলো। তখন আরেক চাচাতো ভাই খেলার কথা বলে আমাকে আর চাচাতো বোনকে ডেকে বলল, তুমি আরেক রুমে যাও। ২মিনিট ওর সাথে, ২মিনিট ওর সাথে খেলবো। আমি যখন যাই সে আমার সব খুলে ফেলে” মেয়েটার কথায় যা বুঝলাম সব না হলেও কিছুই বাকী রাখেনি।

এগুলো ওর জীবনের ৪ বছর আগের কথা। কিন্তু এখনও এগুলো মনে পড়লে ও খুব কষ্ট পায়। ওর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই আপনাদের লেখা যাতে সব বাবা মা এসব ব্যাপারে সতর্ক হয়। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি কেউ পড়লে তার কি করনীয় থাকবে বলবেন প্লিজ?

Train Asked on October 12, 2015 in সাধারণ.
Add Comment
1 Answer(s)

    ভাবতেই খারাপ লাগে আমরা এই পৃথিবীকে ফুলের মত নিষ্পাপ শিশুদের জন্যও নিরাপদ করে রাখতে অক্ষম! দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে অধিকাংশ শিশুই ছেলেবেলায় কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা আপন মানুষদের দ্বারাই। এজন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে বাবা-মাকে।

    বোঝার বয়স থেকেই শিশুদের বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা যা ঘটতে পারে সে বিষয়ে কিছুটা হলেও অবহিত করতে হবে। যে কোনো ঘটনা যা তার ভালো লাগবে না তা বাবা মা কে জানাতে যেন সে কুন্ঠাবোধ না করে। স্কুল থেকে ফেরার পরে, বা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পর বাড়ি ফিরলে বাবা মার উচিত তার সাথে গল্প করা, কি হয়েছে স্কুলে, দিন কেমন গেল এসব জিজ্ঞেস করা। ছেলেমেয়ে যেন বাবা মা কে সম্মান করে কিন্তু ভয় না পায়, যে কোন কিছু শেয়ার করতে কুন্ঠিত না হয়। শিশু যতই ছোট হোক না কেন বাড়িতে গেস্ট আসলে কখনই যেন গেস্টের সামনে, সে আত্মীয় হলেও, যেন পোশাক ছাড়া বাচ্চাকে না বের করে মা। সাবধানতা। কারণ আজকালকার যুগে আপন কাউকেও বিশ্বাস করা বোকামি। কাউকে অবিশ্বাস করতে বলছি না কিন্তু কাউকে সুযোগ দেবার দরকার কি? মেয়েকে কখনো কোন আঙ্কেলের সাথে একা বেড়াতে যেতে না দেয়া সাবধানতা। দিলেও চিন্তা করে। যত ছোটই হোক বাচ্চাকে একা একা কোথাও ছুটি কাটাতে না যেতে দেয়া ভালো। বাবা/মা ছাড়া একা একা অন্য কোন বাড়িতে যেন রাতে না থাকে।সাবধানতা। প্রাইভেট টিউটর পড়ালে যেন বন্ধঘরে না পড়ায়। ওপেন স্পেসে পড়ায় বা মা বাবা যেন একটু পরপর দেখে আসতে পারে। বাচ্চারা কোন বন্ধুদের সাথে মিশছে খেয়াল রাখতে হবে। বন্ধুদের বাড়ি গেলে আপনিও যাবেন, বন্ধুর মা বাবার সাথে গল্প করবেন। পরিচয়টা রাখবেন। দেখবেন, যেন সন্তান অসৎ সঙ্গে না পড়ে যায়। সর্বোপরি বাচ্চাকে বিভিন্ন বিপদ আপদ থেকে সাবধান থাকার শিক্ষা দিতে হবে, বয়স অনুযায়ী যৌন হয়রানি কি, কি রকম এসব একটু হলেও জানাতে হবে। আর কোনো শিশু যদি এরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়ে যায় তাহলে কালবিলম্ব না করে তার বাবা মা কে জানাতে হবে। ছোট মরিচের গুঁড়ার স্প্রে রাখতে হবে সাথে, যেন কেউ কিছু করতে আসলেই ছড়িয়ে দিতে পারে। আর আশেপাশে মানুষ থাকলে চিৎকার করে মানুষ জড়ো করতে হবে। লজ্জ্বা বা ভয় পেলে চলবে না। ধন্যবাদ

    পরামর্শ দিয়েছেন :
    অথই নীলিমা
    প্রভাষক
    পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

    Professor Answered on October 12, 2015.
    Add Comment
  • RELATED QUESTIONS

  • POPULAR QUESTIONS

  • LATEST QUESTIONS

  • Your Answer

    By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.