অতিরিক্ত ঘাম হওয়া কি কোনো অসুস্থতার লক্ষণ?
অতিরিক্ত ঘাম হওয়া অসুস্থতার লক্ষণ কি না :
অতিরিক্ত ঘাম হওয়াটা অত্যন্ত বিরক্তিকর। বাইরে বের হওয়ার পর জামাকাপড় ভিজে একাকার। তবে এটি ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং এই গরম আর আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘাম তাপ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনাকে প্রচণ্ড তাপমাত্রার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করছে।
আসলে লোমকূপের গোড়ায় লুকিয়ে থাকা ঘর্মগ্রন্থি আমাদের দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করার কাজটি গোপনে করে যাচ্ছে। এ ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম, জ্বর, ব্যথা বা ধুশ্চিন্তায় দেহের সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র উজ্জীবিত হওয়ার মাধ্যমে প্রচুর ঘাম সৃষ্টি করে। এ সবই স্বাভাবিক ঘটনা।
তবে হঠাৎ অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া কোনো সমস্যা বা রোগের উপসর্গও হতে পারে। নারীরা গর্ভাবস্থায় বেশি ঘামেন। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নারীরা হঠাৎ গরমে অস্থির হন, ঘাম হয়, সঙ্গে বুক ধড়ফড়ও করতে পারে। এই বিশেষ সমস্যার নাম হট ফ্লাশ। এমনিতে সেরে না গেলেও এর জন্য হরমোন থেরাপি লাগতে পারে। থাইরয়েডের বা গ্রোথ হরমোনজনিত জটিলতায় অনেক ঘাম হতে পারে। রাতে ঘাম হয় যক্ষ্মা রোগীদেরও, যখন জ্বর ছেড়ে যায়। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঘাম হতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগী যারা ওষুধ খাচ্ছেন বা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাঁদের রক্তের শর্করা হঠাৎ কমে গেলে ঘামতে পারেন। সঙ্গে বুক ধড়ফড় করা, অস্থির লাগা, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা বা উল্টাপাল্টা কথা বলতে পারেন। এটি একটি বিপৎসংকেত। সঙ্গে সঙ্গে চিনির সরবত বা মিষ্টি কিছু খেয়ে নিলে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ঘামের সঙ্গে বুকে চাপ বা ব্যথা হার্ট অ্যাটাকেরও লক্ষণ হতে পারে।
লক্ষ্য রাখুন:
কেবল রাতে অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে কি না, কেবল এক পাশে বেশি হচ্ছে কি না। বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড়ানি, কাশি, জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ আছে কি না। ডায়াবেটিক রোগী হলে খেতে অনেক দেরি হয়ে গেছে কি না।
সাধারণ গরম আবহাওয়ায় অনেক ঘেমে গেলে শরীর যাতে পানি ও লবণশূন্যতায় আক্রান্ত না হয়, সে জন্য এ সময় প্রচুর পানি খান। প্রয়োজনে লবণ পানি বা স্যালাইন খান। l মেডিসিন বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল।
অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে যা যা করতে পারেন :
ভিনিগার ও তেলের সংমিশ্রণ
১২০ মিলি লিটার লাল ভিনেগার ও ৩০ ফোঁটা তিলের তেল/অলিভ অয়েল/পিপারমিন্ট অয়েল একসাথে ভালো করে মিশিয়ে একটি বোতলে মুখ শক্ত করে লাগিয়ে রাখুন। ১ সপ্তাহ বোতলটি না খুলে ঠাণ্ডা, শুষ্ক ও অন্ধকার স্থানে রেখে দিন যাতে মিশ্রণটি একসাথে মিশে যায়। এরপর ১ সপ্তাহ পর প্রতিবার গোসল স্নান করার সময় স্নানের জলে ৩ টেবিল চামচ এই মিশ্রণটি মিশিয়ে নিন। অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার হাত থেকে আপনি অনায়াসে মুক্তি পাবেন।
আপেল সিডার ভিনিগার ও বেকিং সোডার সংমিশ্রণ
টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে এতে ১/৮ চা চামচ বেকিং সোডা ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিনে ১ বার করে পান করুন, যদি ঘেমে যাওয়ার সমস্যা অতিরিক্ত হয় তাহলে দিনে ৩ বার পান করতে পারবেন। কিন্তু এর চেয়ে বেশি পান করবেন না। ভালো ফল পাবেন।
বাথসল্ট
আধা কাপ বোরাক্স, ১ কাপ সি সল্ট, ১ কাপ বেকিং সোডা এবং ১ কাপ তিলের তেল/অলিভ অয়েল/পিপারমিন্ট অয়েল একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রতিবার স্নানের সময় ২ বালতি জলে মিশ্রণটির ১/৪ কাপ পরিমাণে মিশিয়ে স্নান করুন। এছাড়াও যদি পারেন তাহলে বাথটাবে গরম জলে এই মিশ্রণটি মিশিয়ে ২০ মিনিট গা ডুবিয়ে থাকুন। এতেও দারুন ফল পাবেন।