‘অন্যকে খুশি করা’ থেকে কিভাবে বিরত থাকা যায়?
‘অন্যকে খুশি করা’ থেকে কিভাবে বিরত থাকা যায়?
অন্য কে খুশি করতে পারা খুব মুশকিল। আমরা জানি, আমাদের প্রিয় মানুষ গুলো কে ভালো রাখার দায় আমাদের উপরে নির্ভর করে। আমাদের উচিত কাছের মানুষ গুলো কে ভালো রাখা,তাঁদের সখ, আল্লাদ গুলো পূরণ করা। তার জন্য আমরা অনেক চেষ্টাও করি।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের পক্ষে অন্য কে ভালো রাখা, খুশিতে রাখা সম্ভব নয়, যদি না সে নিজের ইচ্ছায় ভালো থাকতে চাই তবে।
আমরা যদি, পরিবারের বা অন্য যে কারো, যতই সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিই না কেন, যখনই একটা ভুল করে ফেলব তখনই আমাদের ভালো কাজ গুলো মাটি চাপা পড়ে যাবে এবং আমরা কষ্ট পেতে থাকব। তখন আমরা ভাবি, এদের জন্য এতো কিছু করলাম, তবুও কারো মন পেলাম না।
তাই, আমি বলব— অন্য কে নয়, আগে নিজেকে আমাদের খুশিতে রাখতে হবে। আমরা যদি, নিজে হাসি খুশি থাকি, ভালো থাকি, তাহলে অন্য মানুষ আমাদের সম্পর্কে কি ভাবল, কি মনে করল তাতে আমার কিছু যাস আসবে না। তবে, আমরা আমাদের কর্তব্য করে যাব। সবার জন্য যেটা করণীয় সেটা করব। কিন্তু বিনিময়ে কিছু আশা করব না। মানে, আমাকে কেউ ভালো বলবে, প্রশংসা করবে এই আশা করব না।
আপনি যখন আপন মনে নিজের কাজ করে যাবেন তখন আপনার আর মনে হবে না, আমি যে কাজ গুলো করছি, মানে, যাঁদের ভালো রাখতে, মন রাখতে কাজ করছি সে খুশি হল কি হল না, তাতে আমার কিছু যায়ও আসে না।আমি স্রেফ আমার কর্তব্য করছি।
আমরা কষ্ট পায় কেন বলুন তো?
আমরা কারো জন্য কিছু করলে তাঁর কাছ থেকে ভালো ব্যবহার, ভালো কথা শুনতে চাই। কিন্তু আমরা এটা ভুলে যায়, আমি যাঁদের জন্য এতো কিছু করছি, তাঁরা তো এটাকে আমার কর্তব্য মনে করছে। যখন তাঁদের ভালো রাখছি, তখন খুশি হচ্ছে, কিন্তু যখনই পারছি না, তখন আমার উপরে আস্থা টা সরে যাচ্ছে। এবং আমরা কষ্ট পাচ্ছি।
চলুন, কিছু উদাহরণ দেখি—
1.স্ত্রী সারাদিন ঘেমেনেয়ে গরমে বসে স্বামীর জন্য রান্না করছে। আজকে স্বামীর পছন্দ অনুযায়ী অনেক পদ করেছে। আর মনে মনে ভাবছে—
আজ ও অনেক খুশি হবে। আমাকে ভালো বলবে।
স্বামী ঘরে ফিরল। স্ত্রী খেতে দিয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে— কখন একটু বলবে, বাহ্ আজ দারুণ রান্না করেছ। খুব ভালো করে তৃপ্তি সহকারে খেলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু স্বামী ব্যস্ত নিজের কাজে। সে হয়তো ভালো করে লক্ষ্যেই করল না, কত রকম পদ আজ রান্না হয়েছে। কারণ এখন লোকে খেতে খেতেও ফোন ঘাটতে থাকে। সে খেয়ে উঠেও গেল, কিন্তু কিছু বলল না। এখানে একটা কথা প্রতিটা ছেলের উদ্দেশ্য বলে রাখি- সব মেয়ে কিন্তু রান্নার শেষে এই কথাটি শুনতে চাই। কেউ এখানে কৃপণ হবেন না। একটু মন খুলে স্ত্রীর রান্নার প্রশংসা করবেন। তাহলে দেখবেন সে একদিন খুব ভালো রান্নি হয়ে গেছে। যাইহোক উত্তরে ফিরি-
এখানে বলুন, এই স্ত্রীর চাওয়া কি ভুল ছিল? কিন্তু যাঁকে খুশি করার জন্য এতো কষ্ট করল, সে ভাবল এটা স্ত্রীর ধর্ম। স্ত্রীর কর্তব্য । তাই এটা নিয়ে নতুন করে আর কি বলার আছে!
2.একজন বাবা অনেক কষ্ট করে, তাঁর সন্তানের পড়াশোনার সব চাহিদা পূরণ করে। বিনিময়ে চাই তাঁর সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়।
বাবা, মা সন্তানের খুশির জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করে। কিন্তু আমরা এগুলো কে কেবলমাত্র কর্তব্য ভাবি।
3.অনেক সন্তান ও বাবা মা কে ভালো রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। মা বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চাই। কিন্তু সব সময় হয়তো হয়ে ওঠে না।
তবে বাবা মা, সন্তানের এই কাজ গুলো কে কর্তব্যই ধরে।
4.প্রতিটি পুরুষ চাই- তাঁর প্রিয় মানুষ টিকে ভালো রাখতে তাঁর সব চাহিদা পূরণ করতে, প্রিয় মানুষটির মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
কিন্তু,চুন থেকে পান খসলেই আমরা আমাদের স্বমূর্তি ধারণ করি। আমরা তাঁর দিকটা বুঝতে পারি না বা চাই না।
এমন হাজার ও উদাহরণ দেওয়া যায়।
তাই বলব, এই পৃথিবী যতদিন থাকবে এই বিষয় গুলোও ততদিন থাকবে। এগুলো যাবে না, কেউ কাউকে বুঝবেও না। তবে অন্যের কাছে বোকার মতো আশা করাটা ছাড়তে হবে।
অন্য কে খুশি করব, এই কথাটি মাথা থেকে সরাতে হবে। আর এই কথাটি মাথা থেকে সরবে তখনই যখন আমরা নিজের থেকে নিজেকে নিয়ে ভীষণ সুখী অনুভব করব, আমাদের কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা থাকবে না তখন। আমি নিজেকে এতো কিছু দেব যে আমার মন শান্ত থাকবে, বাইরের কারো কাছে কিছু চাইবে না।তার জন্য নিজেকে সব সময় ভালো রাখতে হবে। কি করে নিজেকে ভালো রাখতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল টি পড়তে পারেন—
১৫ টি উপায়ে নিজেকে ভালো রাখুন
উপরোক্ত বিষয় গুলি বা কাজ গুলি, কি না করে থাকা যাবে?
না, যাবে না। আমাদের যা যা কাজ সেগুলো করতেই হবে। তবে অন্য কে খুশি রাখতে নিজেকে বলি দেব না। নিজে খুশি থাকার জন্য কারো কাছে হাত পাতব না।
মানুষের চাহিদার কোন শেষ থাকে না। আপনি যাঁকে খুশি করার জন্য রাতদিন এক করে দিচ্ছেন তাঁর চাহিদাও দিনকে দিন বাড়ছে।
তাই এর হাত থেকে রেহাই পেতে, নিজেকে সময় দিন, নিজের কাজে মন দিন।নিজের একটা ব্যাক্তিত্ব পূর্ণ পরিচয় তৈরি করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর কাউকে খুশি করতে যেতে হচ্ছে না, বা কে খুশি হল কি না হল তা নিয়ে আর ভাবতে হচ্ছে না । আপনাকে দেখেই সবাই খুশি হচ্ছে।
ধন্যবাদ।