অবসর সময় কিভাবে কাটানো উচিত?

    অবসর সময় কিভাবে কাটানো উচিত?

    Train Asked on July 13, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      অবসর সময় আমরা আনন্দ বিনোদনের মাধ্যমে কাটাতে চাই কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তার সম্ভব হয় না কারণ :

      নাসির সাহেব চাকরি থেকে অবসর গিয়েছেন। সকালবেলা নাস্তা করার পর তিনি আর তার স্ত্রী বারান্দায় বসে চা পান করতে করতে গল্প করছিলেন। নাসির সাহেব আলমারি গুছাতে গিয়ে ছাত্র জীবন আর চাকুরী জীবনে লেখা দুটো ডায়েরী আজ বের করেছেন। ডাইরিতে জীবনের অনেক পর্যবেক্ষণ আর ছোট ছোট গল্প লিখেছিলেন। ভাবছিলেন সেগুলো টাইপ করে ধীরে ধীরে ফেসবুকে পোস্ট করবেন।

      এমন সময় বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে নাসির সাহেবের স্ত্রী দরজা খুলতে গেলেন। নাসির সাহেবের মেয়ে এসেছে, অফিসে যাবে তাই নাতিকে নানুর কাছে রেখে যেতে এসেছে। দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়ে মাকে সারাদিন নাতির যত্ন কিভাবে নিতে হবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছিল। বলছিল আজকে নাকি তার এবং তার জামাই উভয়ের নানান রকমের প্রেজেন্টেশন, ওয়ার্কশপ রয়েছে ফিরতে রাত হবে। এরই ফাঁকে নাতি দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করে বারান্দায় চলে এলো। তারপর বেতের টেবিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে গেল আর টেবিলের উপরে রাখা চা ছলকে নাসির সাহেবের বহু স্মৃতি লেখা পুরনো হলুদ হয়ে যাওয়া ডায়েরি দুটোর উপরে পরলো। তবে নাতির উৎসাহের কমতি নেই। সে পরে যাওয়া থেকে উঠে ব্যথা পাইছি বলতে বলতে ডায়েরী দুটোকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে সেখানে দুপুরে রান্নার জন্য ফ্রিজ থেকে বের করে ভিজিয়ে রাখা মাছের পাতিলের পানিতে চুবিয়ে দিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথায় বলতে লাগল, নানা ভাই তোমার ডাইরি ধুয়ে পরিষ্কার করে দেই।

      নাসির সাহেব তাই দেখে হাহা করে উঠলেন। ডাইরি দুটি তুলে দেখলেন ঝর্ণা কলমে লেখা সব পাতা ভিজে লেপ্টে গেছে, পড়ার আর উপায় নেই। সকালের চা খাওয়া হলো না। দীর্ঘদিনের পুরনো ডাইরি দুটো পানি লেগে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়াতে তিনি মন খারাপ করে বসে রইলেন।

      নাসির সাহেবের স্ত্রী নাতিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। নাতির বয়স তিন বছর,ঘর গুলোতে এখন সে দৌড়ে বেড়ায়, দুরন্তপনার মাঝে কখনো সে ব্যথা পায়। এইতো সেদিন দুপুর বেলায় নাসির সাহেবের স্ত্রী রান্না করছিলেন, ওদিকে নাতি কোন ফাঁকে ছুটে গিয়ে ডাইনিং রুমের চেয়ারে ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে পরে গেল, আর ঠোঁট খানিকটা কেটে গেল। রোজ দুপুর বেলা লাঞ্চের সময় মেয়ে অফিস থেকে ভিডিও কল দিয়ে ছেলের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। এর মধ্যে মেয়ে ভিডিও কল করলো ছেলের ঠোঁটের কাছে খানিকটা কেটে গেছে লক্ষ্য করে সে হাহা করে উঠলো। বলল, মা তুমি আমার ছেলেটাকে ঠিক মতো দেখে রাখছো না। কিছুক্ষণ পরে জামাই ফোন করলো। সে বলতে লাগলো, আম্মা ওর ঠোঁট তো বেশ খানিকটা কেটে গেছে। এখনই নিচে রাস্তার ঐ পাশের ফার্মেসীতে নিয়ে ধনুষ্টংকার প্রতিরোধী এটিএস দিয়ে নিয়ে আসেন।

      নাসির সাহেব নামাজের জন্য মসজিদে গিয়েছেন আসতে বেশ দেরি হবে, ওদিকে দুই চুলাতে ভাত এবং তরকারি চড়ানো রয়েছে। তিনি সেগুলো রান্না শেষ করবেন নাকি নাতিকে নিয়ে এই দুপুরে ফার্মেসিতে যাবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

      ষাট বছর বয়স হয়ে আসা নাসির সাহেবের স্ত্রী শিশুটিকে মানুষ করতে গিয়ে হয়রান হয়ে যান। তার মেয়ে বলে, মা ছোটবেলায় তো পুতুল খেলেছ। তোমাকে পুতুল দিয়েছি তার সাথে এখন খেলা করো, আর সময় কাটাও।

      নাসির সাহেবের স্ত্রী আর কি বলবেন। ভেবেছিলেন সারা জীবন ছেলে মেয়েদের মানুষ করার পেছনে ব্যয় করেছেন, এখন শেষ বয়সে এসে ফেসবুকে ছাত্রী জীবনের বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করে সময় কাটাবেন। পুরনো অনেক ম্যাগাজিনের ঈদ সংখ্যা জমা করে রেখেছেন সেগুলো বসে বসে মজা করে পড়বেন। ইচ্ছে হলে রান্না করবেন, যেদিন ইচ্ছা হবে না রান্না করবেন না, দুজনের জন্য কতটাই খাবার আর লাগে।

      কিন্তু সেই আয়সী সময় আর কাটাতে পারছেন কোথায়? এই বৃদ্ধ বয়সে কোমরের ব্যথা, হাটুর সমস্যা নিয়ে পুতুলের পেছনে পেছনে দৌড়াদৌড়ি করা, তাকে খাওয়ানো, গোসল করানো, বাথরুম করানো, ব্যথা যেন না পায় সেজন্য সর্বক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখা সহজ কথা নয়, তার উপরে গৃহকর্ম করা, শরীরে এখন আর কুলায় না।

      কিন্তু মেয়েকে কে বোঝায়? নাসির সাহেব মেয়েকে বলেছিলেন, একটা ভালো বুয়া ঠিক করে দেই, সেই বাবুকে দেখে রাখবে আর আমরা তো আছিই। কিন্তু মেয়ে এবং জামাতা রাজি হয়নি। তারা টেলিভিশনে দেখেছে কাজের বুয়ারারা নাকি পিতা মাতা বাসায় না থাকার সুযোগে শিশুদেরকে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ভিক্ষা করায়। নাসির সাহেব বুঝে উঠতে পারেন না, প্রতিদিন তো রাস্তায় দুর্ঘটনা হচ্ছে তাই বলে কি তোমরা অফিসে যাচ্ছো না? কোন এক বুয়া এমন করেছিল বলে সবাই তো আর এমন নয়।

      একটা শিশুকে সারাক্ষণ দেখে রাখতে তারা তো আর পারছেন না। ওদিকে তিনি শুনতে পান যে মেয়ে এবং জামাই পরিকল্পনা করছে তারা ইমিগ্রেশন নিয়ে বিদেশে চলে যাবে, এই দেশে নাকি থাকার মত অবস্থা নাই। সবকিছুতেই ভেজাল, দুর্নীতি আর স্বজন প্রীতির মত নানা সমস্যা। কিছু দিনের ভেতরেই তারা ছোট বাবুটিকে ইংরেজি মধ্যম স্কুলে ভর্তি করার চিন্তা করছে। নানা নানুকেই স্কুলে আনা নেওয়া করতে হবে, মেয়ে সেজন্য তাদের উভয়কে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে বলেছে। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়ে নাতিকে তারা ইউরোপ বা আমেরিকায় নিয়ে চলে যাবে। সেই সমস্ত দেশে নাকি বেজায় আমোদ ফুর্তি পূর্ণ জীবন রয়েছে। নাসির সাহেব বুঝে উঠতে পারেন না নাতি ভবিষ্যতে আমোদপূর্ণ জীবন কাটাবে হয়ত নাতির সঙ্গে আর দেখা হবার সম্ভাবনাও থাকবে না কিন্তু এর জন্য তার অবসরের সময় কেন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে?

      পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেব যিনি কি না ভালো ওয়াজ করতে পারেন, ইংল্যান্ডের বাংলাদেশী কমিউনিটির দাওয়াত পেয়ে সপ্তাহ তিনেক আগে লন্ডনে ওয়াজ করে এসেছেন। গত শুক্রবারে জুম্মার নামাজের আগে বয়ান কালে হুজুর বলছিলেন, ইংল্যান্ডে চমৎকার স্থান কিন্তু বাংলাদেশি ছেলে মেয়েরা সেখানে গিয়ে ইসলামী কায়দার জীবন যাপন থেকে সরে গিয়ে ইহুদী-নাছারাদের সাথে লিভটুগেদার করে, মদ্যপান করে, বিবাহ ছাড়াই বাচ্চা-কাচ্চা গ্রহণ করে। আমাদের ছেলেমেয়েদের ইউরোপ আমেরিকায় পাঠাচ্ছি কিন্তু কেয়ামতের দিন যখন সৃষ্টিকর্তা তাদের বিচার করবে তখন তারা কিন্তু আপনাদের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করবে। ওরা বলবে, পিতামাতা উন্নত জীবনের জন্য আমাদের এই সমস্ত দেশে পাঠিয়েছিল আর আমরা ঐ সমস্ত দেশের অনৈসলামিক রীতিনীতি গ্রহণ করেছি, আমাদের কি দোষ? এই বর্ণনা করতে করতে হুজুর হুংকার দিয়ে বলছিলেন, দেখেন এই দোষ কিন্তু আপনার কাঁধেই বর্তাবে কারণ আপনি মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে তাকে না রেখে ইউরোপে, আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়া পাঠিয়েছেন। শেষ বিচারের দিনে নাতির পরবর্তী বংশধরদের অনৈতিক জীবনের শাস্তিও আপনাকেই বহন করতে হবে।

      হুজুরেরই বয়ান শুনে নাসির সাহেব খুবই হতাশ হয়ে পরেন তিনি বুঝতে পারছিলেন না নাতির অনৈতিক, অনৈসলামিক ইহুদি নাসারাদের মত আমোদ পূর্ণ জীবন যাত্রার জন্য তাকে কেন দায় নিতে হবে? যদিও তিনি নাতিকে তার বিপদে আপদে বা অসুস্থতার সময় শয্যা পাশে পাবেন না। কেন তার ইহকাল এবং পরকাল এই উভয় জীবনে ভেজাল লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এই দুশ্চিন্তায় আজকাল প্রায়ই অস্থির ভাবে পায়চারি করেন কিন্তু মেয়ে জামাতাকে কিছু বলতেও পারেন না।

      দীর্ঘ ৩২ বছর চাকরিতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য পরিবার বড় শহরে রেখেছেন নিজে মফস্বলের ছোট শহরে একা বসবাস করেছেন। ভেবেছিলেন অবসরের পরে নিরিবিলি শান্ত জীবন কাটাবেন। চাকুরী করা কালীন কোথাও বেড়ানোর মতো সুযোগ হয়নি। ভেবেছিলেন এখন মাঝেমধ্যে ইন্ডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মত আশেপাশের দেশগুলোতে বেড়াতে যাবেন কিন্তু নাতির জীবনযাপন করতে গিয়ে তিনি তার স্ত্রী কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। নাতি এসএসসি পাস করা না পর্যন্ত তাকে বছরের পর বছর ধরে পাহারা দিয়ে যেতে হবে।

      বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে শুক্রবারের সকালবেলায় নাসির সাহেব এসবই ভাবছিলেন। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো, ভেবেছিলেন আজ স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন, কিন্তু কিসের কি? মেয়ে তার জামাই আর ছেলেকে নিয়ে ছুটির দিনটি আয়েশ করে কাটানোর জন্য চলে এসেছে।

      Professor Answered on July 13, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.