হজ্ব থেকে ফেরার পর কোনো এক হাজী সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হলো, মক্কায় কেমন দেখলেন? তিনি একটু ভাব নিয়ে বললেন, মক্কায় গিয়ে দেখি, খালি আযানটা দেয় বাংলায়, আর বাকি সবই কেমন যেন মনে হলো।
বেচারা হাজী সাহেব যে আযান সবসময় নিজের গ্রামে শোনেন, সে আযানই মক্কায় শুনতে পেয়ে ভাবলেন, এটা তো বাংলাদেশের বাংলা আযান। বাকি নামায অন্যান্য ইবাদত তো অন্যরকম- তাই এ নিয়ে তিনি সন্দিহান।
সাধারণত বাংলাদেশের কোনো মসজিদে যদি কেউ হানাফি ছাড়া অন্য মাযহাবের নিয়মে নামায পড়ে তবে সবাই হা করেতাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ ভাবে, আহা বেচারা! কী কষ্ট করে ভুল নামায পড়ছে!!
আমরা বাংলাদেশিরা প্রায় সবাই হানাফী মাযহাবের মতে আমল করি। কিন্তু তাই বলে কি বাকি তিনটি মাযহাব অন্য ধর্মের মতো ভিন্নরকম? তাদের ইবাদতও কি আমাদের মত শুদ্ধ ও কবুল হয়? তাদের সাথে কি বিয়ে শাদী ও অন্যান্য লেনদেন বৈধ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নামায আদায় করেছেন। সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে যখন যে যেভাবে দেখেছেন, তারা সেভাবেই নামায পড়তেন। অন্যান্য ইবাদতের বেলায়ও তাই। যে সাহাবি যে পদ্ধতি রাসূলের কাছ থেকে শিখেছেন ও দেখেছেন, তিনি বাকি জীবন ওভাবেই আমল করেছেন। এ পার্থক্য শুধু অর্থ অনুধাবনে ও আদায়ের পদ্ধতিতে, অন্য কিছু নয়।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে, কেউ এক রাকাতে দুই রুকু কিংবা তিন সিজদা করেছেন। রমযানের রোযা কেউ কম বা বেশি রেখেছেন, যাকাতের হিসেবে চল্লিশ ভাগের একভাগের চেয়ে কেউ কম বা বেশি করেছেন- এমন কিছুই নেই। যেটুকু পার্থক্য রয়েছে- তা কেবলই আদায় করার পদ্ধতি নিয়ে। কোনো সন্দেহ নেই যে এর সবগুলোই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা আদায় করেছেন, তবে বর্ণনাগত দূরত্ব বা নৈকট্যের তারতম্যে চার ইমাম সেখান থেকে কোনো একটিকে বাছাই করেছেন। কখনো কখনো বহু অর্থবোধক শব্দের আসল অর্থ নির্ধারণের তারতম্যে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ আভিধানিক অর্থ নিয়েছেন কেউ পরিভাষার অর্থ। তাই কোনো এক মাযহাব সঠিক আর বাকিগুলো ভুল- এমন ধারণা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
ইমামরাও তাদের মাযহাবের কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে কুরআন, হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামদের বর্ণনায় যেটি সর্বাধিক সহি সেটি গ্রহণ করার কথা বলেছেন।
তাই বলে কি আমরা সুবিধা মত সব মাযহাবের ওপর আমল করা শুরু করব? না, তা নয়। কারণ এতে দ্বীন ও ইবাদত আমাদের সুবিধামত খেলার উপকরণে পরিণত হবে। বরং যে যে মাযহাবের পদ্ধতি শিখেছে, তার সেভাবেই পুরো দ্বীন মানা উচিত।
এ কথাও মনে রাখতে হবে, হানাফী মাযহাবের অনুসারী মানে কিন্তু ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ নয়, আমরা ইমাম আবু হানিফার মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা কেই অনুসরণ করছি। ইমাম এখানে নিছক মাধ্যম ছাড়া আর কিছু নন।