আজ আমি আপনার কাছে কি জানতে পারি ?

    আজ আমি আপনার কাছে কি জানতে পারি ?

    Default Asked on May 7, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      দক্ষিণ সুদানের গরুপ্রেমী মুন্দারি গোত্রের আজব বিবাহ রীতি।

      এ গোত্রের কোনো পুরুষ নির্দিষ্ট কোনো নারীকে বিয়ে করার মনস্থির করলে, অবশ্যই সেই নারীকেই জানাতে হবে। অত:পর, নারীটি যদি সেই নির্দিষ্ট পুরুষটিকে নিজের বিবাহের যোগ্য মনে করে, তাহলে নিজের জামাকাপড় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিশপত্র নিয়ে, পুরুষটির বাড়িতে গিয়ে থাকতে আরম্ভ করবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায়, একটিবারের জন্যও, কোনোভাবেই, পছন্দের কনেটিকে বিয়ে করার আগ্রহের কথাটি কনের বাবাকে জানাবে না পুরুষটি। একদম না। ভুল করেও না। যদি বাবাকে জানায়, তাহলে, বাবা তার আত্মীয়স্বজন নিয়ে এসে কন্যার পাণিপ্রার্থী পুরুষটিকে ইচ্ছেমতোন পেটাবে; বেদম প্রহার যাকে বলে। এই পেটানোটি সেই গোত্রের আইনে বৈধ, এর জন্য কোনোই শাস্তি নেই। এবং এই পেটানোর একমাত্র কারণ─ কোনো নারীকে বিয়ের আগ্রহের কথাটি সেই নারীকে না-জানিয়ে তার বাবা বা অন্য অভিভাবককে জানানোর অর্থ: বাবা ও কন্যা উভয়কেই অপমান করা, যেহেতু, পুরুষটি বিয়ে তো বাবাকে করছে না, করতে চাইছে তার কন্যাকে।

      মুন্দারি গোত্রের ঐতিহ্য, এবং নারী ও সংসারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের গভীর দর্শন এটি। ভাবা যায়?

      তো, নারীটি জামাকাপড় নিয়ে চলে এলো হবু স্বামীর বাড়িতে। এরপর, ব্যাপারটি বুঝে নিয়ে, সেই বাড়িতে আসবে নারীর পরিবারের অভিভাবকেরা। এসে, তারা তাদের কন্যার, অর্থাৎ কনের, পণ নির্ধারণ করে জানিয়ে দেবে পুরুষটির কাছে। সেই নির্ধারিত পণ পরিশোধ করতেই হবে পুরুষটিকে; না-করে বা না-পেরে, হবু স্ত্রীকে বাপেরবাড়ি ফেরত পাঠানোর বা বিয়ে না-করার আর কোনোই সুযোগ নেই পুরুষটির কাছে। নেই মানে নেই। কারণ─ নারীটির যোগ্যতার ভিত্তিতে তার যোগ্য-পণমূল্য জেনেবুঝেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে পুরুষটি, এবং নির্দিষ্ট যোগ্যতার নারীর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পণমূল্য নির্ধারণ করাই থাকে মুন্দারি সমাজে─ এটাই নিয়ম। উল্লিখিত এই পণের পরিমাণ, তাকে বিয়েতে আগ্রহী পুরুষটির ক্ষমতার বাইরে নয় কখনোই। একারণে, মুন্দারি সমাজে, কোনো পুরুষই স্বেচ্ছাচারীভাবে যাকেতাকে বিয়ের জন্য পাগলামি করতে পারে না, নিজের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক যোগ্যতার আওতার মধ্যকার নারীকেই বিয়ে করতে পারে সে। ফলে, মুন্দারি সমাজে নারীপুরুষের মধ্যে পরস্পরকে পাওয়ার অসম আগ্রহ, কিংবা না-পেয়ে আত্মহন বা নির্যাতন, এসবের উদাহরণ নেই। অর্থাৎ─ তুমি যাকে নিয়ে সংসার করবে, তার সামাজিক মূল্য তোমাকে জানতেই হবে। সে তো খেলনা নয়। সংসার ছেলেখেলা নয়।

      এবং, উল্লিখিত এই পণমূল্যটি মোটেই পুরুষের উপরে অর্থনৈতিক চাপের মতো পরিমাণের নয়─ সৌন্দর্যটি এখানেই! এটা স্রেফ নিজের ও আকাঙ্ক্ষিতা নারীর সামাজিক অবস্থান জেনে রাখার পদ্ধতি মাত্র। মুন্দারি গোত্রের সভ্যতা ভাবুন তো এবার!

      এবার আসি পণমূল্যে। কনের এই পণ কখনোই নগদ অর্থে নির্ধারিত হয় না, লেনদেনও নগদে হয় না। হবু স্বামী তার হবু স্ত্রীকে এই পণ দেবে গরুতে। হ্যাঁ, গরু। কনেপক্ষের অভিভাবকেরা তাদের কন্যার পণ নির্ধারণ করবে গরুর সংখ্যায়। যতোটি গরু দাবি করা হবে তাদের কন্যার শিক্ষাদীক্ষা ও মানমর্যাদা অনুযায়ী, ততোটি গরুই দিয়ে দেবে হবু জামাই তার শ্বশুরপক্ষকে। এবং, পণের গরুর সংখ্যা নিয়ে পুরুষকে প্রকৃতপক্ষে মোটেই চাপে ফেলা হয় না─ এই পণের সৌন্দর্যটি এখানেই। মুন্দারি গোত্রের প্রত্যেক বাড়িতে গরু গিজগিজ করছে! ওরা গরু খায় না, বিক্রিও করে না। গরুতে ভরপুর প্রতিটি বাড়ি।

      মুন্দারি গোত্রের একজন কন্যার বিয়ের পণের গরু সর্বোচ্চ ৭০টি পর্যন্ত হতে পারে।

      এ গোত্রের পরিবারে, পুত্রসন্তানের চেয়ে কন্যাসন্তান বেশি আরাধ্য; কারণ─ যতো বেশি কন্যাসন্তান, ততো বেশি গরুর মালিক হওয়ার সম্ভাবনা। এবং, এ গোত্রের চমৎকার একটি সংস্কৃতি হচ্ছে─ এরা নগদ অর্থের পরিমাপে কাউকে ধনী এবং মর্যাদাসম্পন্ন গণ্য করে না, এ গোত্রে সে-ই বেশি ধনী ও সম্ভ্রান্ত যার মালিকানায় বেশি সংখ্যক গরু আছে।

      তথ্যসূত্র: আফ্রিকান হিস্ট্রি আর্কাইভ

       

      Professor Answered on May 7, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.