আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায় কী?
আত্মবিশ্বাসী এমন একটি শব্দ যার অধিকারী সবাই হতে পারেন না। অনেকেই এই মহান গুণটির অভাবে জীবনে সফলতার মুখ দেখতে পারেন না। সাবেক ফরচুন ৫০০ এক্সিকিউটিভ ও লেখক বেকি ব্ল্যালক জানান যে কেউ আত্মবিশ্বাসী হতে শিখতে পারে। এটা এমন একটা দক্ষতা যা নিজেই শেখা যায়। আসুন বেকি ব্ল্যালকের তাত্ত্বিক ব্যাখায় কীভাবে আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় তা জেনে নিই।
১. তাদের স্থানে আপনার চিন্তাটা নিয়ে নিন
গড়ে প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন ৬৫ হাজার চিন্তা করে থাকে। ব্ল্যালক বলেন, এসব চিন্তার ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই নেতিবাচক। এগুলো হতে পারে কোনো ভয়ের বিষয়বস্তু বা সম্ভাবনার কথা কল্পনা। কোনো আগুন ধরলে আপনার হাত যদি পুড়ে যায়, তাহলে মস্তিষ্ক পরবর্তীতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার জন্য খুবই সতর্ক হয়ে যায়। এ সতর্ক হওয়ার ফলে তৈরি হয় ভয়ের। যা পরবর্তীতে নিজের বিপক্ষে কাজ করা শুরু করে।
কিন্তু আপনি যদি বুঝতে পারেন, মস্তিষ্ক এভাবে কাজ করে এবং সেই নেতিবাচক ভাবনাকে সরিয়ে রাখেন তাহলে তা সত্যিই কাজের হয়। এজন্য আপনাকে বুঝতে হবে যে, এগুলো শুধুই চিন্তা। এগুলো সবসময় সত্যিকার অবস্থা তুলে ধরে না।
২. শেষের মাঝে শুরু
‘আপনি কি করতে চান?’ বা ‘আপনি কি হতে চান?’ বহু মানুষকে এমন জিজ্ঞাসা করলে তারা পরিষ্কার করে কোনো উত্তর দিতে পারে না। কিন্তু এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার উত্তর জানা উচিত। আপনি যেখানে যেতে চান, তার একটি পথনির্দেশ থাকা উচিত আপনার।
৩. কৃতজ্ঞতা দিয়ে দিন শুরু করুন
প্রত্যেক দিন শুরু করুন কিছু কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে। আপনি যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তা পৃথিবীর সাতশ’ কোটি মানুষের অধিকাংশেরই নেই। আপনি যদি দিনের শুরুতেই এসব বিষয় আপনার দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রবেশ করাতে পারেন, তাহলে তা নিঃসন্দেহে আপনার সারা দিনের কার্যক্রমে ভালো প্রভাব রাখবে।
৪. প্রতিদিন একবার নিজের গণ্ডীর বাইরে বের হন
আপনার নিজস্ব এলাকার একটি মজার বিষয় হলো, একে বাড়ানো যায়। প্রতিদিন যদি আপনি নিজস্ব এলাকার বাইরে বের হন, তাহলে তা প্রতিদিন বড় হবে। আর যদি সে এলাকার ভেতরেই থাকেন, তাহলে তা ক্রমে ছোট হতে থাকবে। এ কারণে নিজের গণ্ডীর বাইরে বের হওয়া হতে পারে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অন্যতম পদক্ষেপ।
৫. থামানো গাড়িকে কেউ তাড়া করে না
আপনি যদি এগিয়ে যেতে থাকেন তাহলে বিরোধী পক্ষ আপনাকে প্রশ্ন, সমালোচনা, সন্দেহ এবং নানাভাবে তাড়া করবে। এটা হতে পারে একটা ভালো বিষয় যে, আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন।
তবে পাশাপাশি আপনার সমালোচনাকে গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে হবে।
৬. উত্থান-পতনের জন্য প্রস্তুত থাকুন
আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার জন্য ব্যর্থতা দায়ী নয়, দায়ী নয় সাহায্য পাওয়ার অভাবও। আমরা কোনো প্রচেষ্টার পর জানতে পারি ঠিক কী কারণে তা ব্যর্থ হলো। এরপর আমরা তার জন্য অন্য কোনো প্রচেষ্টা শুরু করতে পারি। যত বেশি উত্থান-পতন হবে, আপনার লক্ষ্য ততই নিকটে আসার মতো আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।
৭. একজন পরামর্শদাতা বের করুন
আপনি যে পথেই থাকুন না কেন, সে পথে পাবেন আপনার পূর্বসুরী। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। তাদের মাঝ থেকে খুঁজে নিন আপনার আদর্শ।
৮. সতর্কভাবে বেছে নিন সঙ্গী
আপনার বেশভূষা, ইতিবাচকতা-নেতিবাচকতা ইত্যাদি তৈরি হয় আশপাশের পাঁচজন মানুষের গড় থেকে। এ কারণে কাদের সঙ্গে আপনি ঘোরাঘুরি করছেন, এ বিষয়ে সতর্ক হোন। যেসব মানুষ আপনাকে উৎসাহ দেয় এবং উচ্চ স্থানে যেতে উৎসাহিত করে তাদের সঙ্গে যাতায়াত করুন।
৯. আগেই প্রস্তুতি নিন
প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য খুবই দরকারি। আপনার কি বক্তব্য দিতে হবে? অনেকবার অনুশীলন করুন, রেকর্ড করুন ও শুনুন। প্রথমবার গুরুত্বপূর্ণ কারো সঙ্গে দেখা করবেন? সম্ভাব্য সমস্ত পদ্ধতিতে তার সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করুন। ইন্টারনেট এ ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। যেকোনো বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুত থাকলে তা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে।
১০. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও অনুশীলন করুন
বহু তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, পর্যাপ্ত ঘুম, অনুশীলন ও পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাবার আপনার মুড ভালো করবে এবং কর্মক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। প্রতি সপ্তাহে তিনবার মাত্র ২০ মিনিটের শারীরিক অনুশীলন আপনাকে বিষণ্ণতা ও অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগ থেকে দূরে রাখবে।
১১. বড় করে শ্বাস নিন
এ উপায়টি খুবই সহজ। শ্বাস নিলে আপনার দেহ অক্সিজেন গ্রহণ করে। বড় করে শ্বাস নিলে আপনার রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবেশ করে। এতে আপনার মস্তিষ্কের চেতনা বৃদ্ধি পায়। কোনো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বড় করে শ্বাস নেওয়া এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বড় করে শ্বাস নিতে অভ্যস্ত না হন, তাহলে এখনই তার অভ্যাস করুন।
১২. সামান্য গড়মিল থাকলেও এগিয়ে যান
একটি চাকরিতে নিয়োগদাতারা নারীদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত আবেদনপত্র না পাওয়ায় তার অনুসন্ধান শুরু করে। তারা জানতে পারে, পুরুষরা পদটির জন্য সব শর্ত পূরণ না করলেও তাতে আবেদন করে। কিন্তু নারীরা সম্পূর্ণ শর্ত পূরণের জন্য অপেক্ষায় থাকে।
তার মানে এই নয় যে, কোনো চাকরিতে আপনার যোগ্যতা না থাকলেও আবেদন করতে হবে। কিন্তু বিষয় হলো আপনি যদি কোনো চাকরির জন্য উল্লেখিত শর্তগুলোর অধিকাংশ পূরণ করতে পারেন তাহলে আপনি নিজেকে সে পদের জন্য যোগ্য মনে করতে পারেন।
১৩. কারো সাহায্য চাইতে ভুলবেন না
আপনি যা চাইছেন, তা মানুষকে অনুমান করতে দেবেন না। এ বিষয়ে আপনার অনুমান করতে হবে বিষয়টি কী। কোনো বিষয়ে মানুষের সাহায্য চাইলে তাদের আগ্রহ দেখে আপনি অবাক হবেন। বেশিরভাগ মানুষই সাহায্য করার জন্য আগ্রহী থাকেন এবং খুব কম মানুষই ‘না’ বলেন।