আত্মা এবং মনের মধ্যে পার্থক্য কী?
আত্মা এবং মনের মধ্যে পার্থক্য কী?
অদ্বৈত বেদান্তের পরিসরে উত্তর দিচ্ছি ।
অদ্বৈত বেদান্তে আত্মা হল শুদ্ধচৈতন্য যে জ্ঞাতা, কর্তা, বা ভোক্তা কোনোটাই নয় । অর্থাৎ আত্মা জ্ঞানলাভ করতে পারে না, কর্ম করতে পারে না, কর্মফলও ভোগ করতে পারে না । কিন্তু তাহলে প্রশ্ন ওঠে— আত্মার পক্ষে জাগতিক জ্ঞানলাভ কীভাবে সম্ভব?
অদ্বৈতবেদান্তীর উত্তর হল এর জন্য আত্মার উপর অনাত্মার অধ্যাস বা আরোপ প্রয়োজন যার ফলে আত্মার উপর জ্ঞাতৃত্ব, কর্তৃত্ব, ও ভোক্তৃত্বর ধর্ম আরোপিত হবে । এই অনাত্মা হল “অন্তঃকরণ” আর এই অন্তঃকরণের মাধ্যমেই জ্ঞাতারূপী আত্মা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করে । বেশ, কিন্তু এই অন্তঃকরণের সাথে মনের সম্পর্ক কী?
মন হল অন্তঃকরণের একপ্রকার বৃত্তি । বৃত্তি কী? আগেই বলেছি অন্তঃকরণ হল জ্ঞাতারূপী আত্মার বিষয়জ্ঞান (objective knowledge) লাভের মাধ্যম । কীভাবে এই জ্ঞানলাভ হয়? অদ্বৈতবেদান্তীর বক্তব্য অনুযায়ী কোনো বিষয়ের প্রত্যক্ষের সময় অন্তঃকরণ সেই বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিষয়টির আকার ধারণ করে । আর এই আকারগ্রহণই হল অন্তঃকরণের “বৃত্তি” । মন হল অন্তঃকরণের সংশয়াত্মক বৃত্তি*, অর্থাৎ যখন বিষয়ের জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞাতার সংশয় থাকে (“ওটা কি গাছ না মানুষ?”) ।
তবে আধুনিক পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে অনেক সময় “অন্তঃকরণ”কেই “মন” বলা হয় এবং উপরে যাকে “বৃত্তি” বলেছি তাকে “মনঃসংযোগ” বা “মনোযোগ” বলা হয় ।
*অন্তঃকরণের বৃত্তি মোট চার রকমের— বুদ্ধি (নিশ্চয়াত্মক বৃত্তি), মন (সংশয়াত্মক বৃত্তি), চিত্ত (স্মরণাত্মক বৃত্তি) এবং অহংকার (অভিমানাত্মক বৃত্তি বা যা থেকে “আমি”র জ্ঞান হয়) ।
তথ্যসূত্র: ভারতীয় দর্শন, ডাঃ দেবব্রত সেন