আপনাকে যদি কয়েকটি উপদেশ দিতে বলা হয়, কী উপদেশ দেবেন?
আপনাকে যদি কয়েকটি উপদেশ দিতে বলা হয়, কী উপদেশ দেবেন?
১। রাতের ট্রেনে, পাশের ঘুমন্ত যাত্রীর প্রবল নাক ডাকার আওয়াজে, তীব্র প্রতিবাদী হয়ে না উঠে, নি:শব্দে নিজের কানে তুলো গুঁজে শুয়ে পড়া।
২। এটিএম বা গ্যাসের অফিস, এ জাতীয় স্থানে, নিজে পরে এসে, দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে অপেক্ষা করা লোকজনের সাথে, এই কথা, সেই কথা বলে, আলাপ জমিয়ে, লাইনের মাঝখানে ঢুকে পড়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকা।
৩। চায়ের দোকানে বসে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার পর্যালোচনা করতে গিয়ে, “ধুর, ওই সাধারণ ক্যাচটা মিস করে গেলো, চার ইঞ্চি এগিয়ে, একটু ডানদিকে ঘুরে গেলেই তো হতো” বলে, চায়ের কাপে তুফান না তোলা। (কারণ, যিনি ক্যাচটা মিস করেছেন, তিনি ক্যাচটা ধরার জন্য, তাঁর জীবন বাজি রেখেছিলেন।)
৪। শীতকালে, রাত্রিবেলা আপাদমস্তক শীতের কাপড়ে ঢেকে, মাথায় টুপি (মাঙ্কি ক্যাপ জাতীয়), মাফলার বা হ্যালমেট এসব লাগিয়ে, সেরকম জরুরী প্রয়োজন না হলে, রাস্তায় দেখা কোনো পরিচিতকে ডাকাডাকি না করা, বা কোনো পরিচিত বাড়ীতে না যাওয়া। (কারণ, এরকম শীত প্রতিরোধকারী কঠোর ব্যবস্থা, চেনা লোকের কাছেও, আত্মপরিচয় ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। টুপি, হ্যালমেট ইত্যাদি, চেনা লোককে অচেনা বানিয়ে দিতে, মন্ত্রশক্তির মতো কাজ করে।)
৫। কেউ অসুস্থ শুনে, নিজের মন থেকেই কোনো নির্দিষ্ট ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া থেকে বিরত থাকা।
৬। রোগীর মৃত্যু হলেই, “চিকিত্সকের ভুলে মৃত্যু” এই বাক্যটিকে সম্বল করে, লাঠি-সোটা, ভাঙচুরের আয়োজন থেকে বিরত থাকা। (এ ধরণের ভুলের ক্ষেত্রে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ উন্মুক্ত আছে।)
৭। ধর্ম নিয়ে বিতর্কে অংশ গ্রহণ না করা বা গ্রহণ করলেও, নির্বাক শ্রোতার ভূমিকা অবলম্বন করা। (কারণ, বিতর্কমূলক আলোচনা, ধর্মকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়।)
৮। যতক্ষণ স্ত্রী সাথে আছেন, ততক্ষণ, অন্য কোনো সুবেশিনীর দিকে, গভীর মনোযোগের সাথে দৃষ্টিপাত না করা।
৯। অফিস থেকে বা কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ীতে ফিরে, নিজের মানিব্যাগ, এটিএম কার্ড ইত্যাদিকে “জেড ক্যাটাগরি” জাতীয় নিরাপত্তার মোড়কে, মুড়ে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১০। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ীর মানসিক, দৈহিক অত্যাচারে যে গৃহবধু, প্রতিদিনই একবার করে মরে যান, তাঁর কানে, “ধৈর্যই পরম ধর্ম” বাণী শোনানো থেকে, বিরত থাকা।
আমার পাড়ায় এমনই এক গৃহবধূর জন্যে, আমি পুলিশ তথা আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হই। কথা বলি, আমারই এক বন্ধু, পেশায়, ক্রিমিনাল ল ইয়ার এর সাথে। প্রতিজ্ঞা করি, এদের জেলে পাঠাতে, যা করতে হয়, তাই করবো। শুনতে পেয়ে, দল বেঁধেই আসেন, পাড়ার কতিপয় হিতৈষী, আমাকে বারণ করেন।
আমাকে, তাঁরা জ্ঞান বিতরণ করেন, ” পুলিশ আর আইন দিয়ে, সবকিছু হয় না, একমাত্র যথাযথ উপায় হচ্ছে, কাউন্সেলিং। কাউন্সেলিং দ্বারাই এর সমাধান সম্ভব “।
শুরু হয়, “কাউন্সেলিং”। নিজের ভুল বুঝতে পেরে, পিছিয়ে আসি, আমি। কাউন্সেলিং, কাজ করে।
থেমে যায়, বাড়ীতে প্রতিদিনের চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্না-কাটি, মারপিটের আওয়াজ।
দিন পনেরো পরে দেখি, এসে হাজির, পুলিশ। বাড়ীতে ঢুকে, ঘরের সিলিং থেকে ঝুলতে থাকা দড়ি কেটে, নামানো হয়, সেই গৃহবধূর “লাশ”।
যে বাড়ীতে গৃহবধূর গায়ে হাত উঠে, সে বাড়ীর লোকজন, “কাউন্সেলিং” শব্দটিকে জুতোর তলা দিয়ে পিষে, তার উপর দিয়েই হেঁটে যান, বার বার, হাজার বার, লক্ষ বার।
১১। একশোটি উত্তর কোরাবাংলায় লিখেও যদি, একটি আপভোট ও না আসে, তবু ও লিখতেই থাকা, লিখতেই থাকা। (নিজের লেখার ইচ্ছেটাই, কোরাবাংলায় হাজার, লক্ষ, কোটি আপভোটের চাইতেও, নিজের জীবনের জন্য, মহামুল্যবান একটি “আপভোট”।)
ধন্যবাদ।