আপনার জীবনের ব্যর্থতাগুলো কী কী?

    আপনার জীবনের ব্যর্থতাগুলো কী কী?

    Default Asked on February 27, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

      প্রশ্নটা বেশ লেগেছে। সারাক্ষণ এটা নেই, ওটা হয়নি, অমুকটা হলে আরও ভালো হত, এই সমস্ত কথা বার্তা মাথার মধ্যে এমন ভাবে চলতে থাকে যে মাঝে মাঝে ভুলেই যাই কী নিয়ে ঠিক এত অসন্তোষ আমার মধ্যে। এখন ব্যর্থতার গল্পগুলো একজায়গায় লিখে রাখলে মনে থাকবে অন্তত।

      বাঙালি হয়ে জন্মেও ছোটো বেলা থেকে “বাই ডিফল্ট” নাচ গান শেখা হয়নি। অল্প বিস্তর ছবিটাই শুধু আঁকা হত, তাও নিতান্তই নিজের খেয়াল খুশিতে। শিখছি বলতে শুধু মার্শাল আর্ট। কিন্তু স্কুলের স্টুডেন্ট ফেস্টে স্টেজে উঠে নাচ – গান না করেে, কবিতা না বলে, শুধু হাত পা ছুড়ে তো আর ক্যারাটে দেখানো যায় না। তাই স্টেজ আমার কাছে বরাবরই বাঁকা উঠোন ছাড়া আর বেশি কিছু নয়। একে ইন্ট্রোভার্ট মানুষ, তায় আবার এই সমস্ত চারুকলায় বিরাট অপারদর্শী, ব্যর্থ হওয়ার জন্য একেবারে deadly combo। ছোটবেলার প্রথম ব্যর্থ হওয়ার অনুভূতি পেতাম ওই স্টুডেন্ট ফেস্টের সময়টা। তবে তার আয়ু বছরের ওই তিন চার দিনের বেশি থাকতো না।

      এরপর একটু সিরিয়াস ব্যর্থতার সাথে সাক্ষাৎ হল উচ্চমাধ্যমিকের পর। মেডিক্যালে চান্স পেলাম না (ভীষন কমন ব্যর্থতা, কোনো অভিনবত্ব নেই)। যাই হোক প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার পর বুঝলাম এই ব্যর্থতাটা ভাগ্যিস এসেছিল, না হলে মলিকিউলার বায়োলজী আর জেনেটিক্সের প্রতি প্রেমে পড়ার অনুভূতিটা পেতাম না। (এই প্রথম মনে হয়েছিল, ভগবান যা করেন ভালোর জন্যই করেন)। জীবনের কিছু অসাধারণ মুহূর্তের ভাগীদার হতে পারতাম না যদি না ওই কলেজে, ওই বিষয়, ওই সমস্ত বন্ধুদের সাথে পড়তাম।

      আর একটু বড় হয়ে গেলাম। বিএসসি, এমএসসি করে পিএইচডির জন্য শহর ছেড়ে বাইরে চলে গেলাম। ব্যর্থতা এবার একটু নড়ে চড়ে বসল। কাছের বন্ধুগুলো ধীরে ধীরে দূরে চলে যেতে শুরু করল, সাত বছরের একটি সম্পর্ক আর সম্পর্কে থাকা মানুষটির অকাল মৃত্যু দেখলাম চোখের সামনে। নিজের মনে অবসাদকে একটা পাকাপাকি জায়গা দিয়ে দিলাম। Work/life ব্যালেন্স করতে করতে চোখের সামনে তখন দেখতে পাচ্ছি কী ভাবে ব্যর্থতা নিজের কোর্টে বল নিয়ে এক গোল দু গোল করে জিতে যাচ্ছে। ম্যাচ তখন পুরোপুরি আমার হাতের বাইরে। এদিকে “ভগবান যা করেন ভালোর জন্য করেন” এই থিওরির validityও শেষের মুখে। তবুও এগিয়ে যাচ্ছি। এগোতে তো হবেই। ধীরে ধীরে সময় আমাকে কিছুটা হলেও ব্যর্থতা থেকে টেনে তুললো। হবে না হবে না করেও পিএইচডিটা শেষ করলাম। ব্যর্থতা একটু পিছিয়ে পড়েছে তখন।

      এবার শুরু হল পোস্ট ডক করার প্রস্তুতি। প্রসঙ্গত বলে রাখি, পিএইচডির ওই বিষাক্ত সময়টাতে গোবরে পদ্মফুল ফোঁটার মত ঘটনাচক্রে কিছু ভালো পেপার পাবলিশ করেছিলাম। তার সুবাদে ভারতের মধ্যেই বেশ কিছু ভালো প্রফেসরের কাছে এপ্লাই করলাম। কিছুটা হলেও কনফিডেন্স ফিরে এসেছিল মনের মধ্যে। কিন্তু শুরু হল অন্য সমস্যা। আমার সমসাময়িক পিএইচডি করা বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে ফ্যাকাল্টি, প্রফেসর সকলে আমাকে বোঝাতে শুরু করল আমার বিদেশেই যাওয়া উচিত, এই দেশে পোস্ট ডক করে কোনো ভবিষ্যত নেই। এইরকম সিভি নিয়ে নাকি কেউ এই দেশে থাকে না। হয়তো সত্যিই থাকে না। হয়তো সত্যি কোনো ভবিষ্যত নেই। হয়তো বা কোনোদিন চাকরি পাব না। না পেলে সেই ব্যর্থতার গল্প আবার আপনাদের অন্য একদিন শোনাতে আসবো। কিন্তু আমার যে তখন কেরিয়ারের থেকে বেশি নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে মন চেয়েছিল। তাই মন আর মাথার ক্রমাগত সংঘর্ষ নিয়েও বেশ কিছু জায়গায় অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দিলাম। অবাক হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল। একাধিক সায়েন্টিস আমাকে ব্যাক্তিগত ভাবে ফোন করে জানালেন যে আমাকে তাঁরা নিতে পারবেন না, কারণ তাতে নাকি আমার প্রতি ‘ অবিচার ‘ করা হবে। যে কটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম তাতে আমাকে প্রশ্ন করে করে জেরবার করে দেওয়া হল যে আমি কেন বাইরে যেতে চাইছি না। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কী বলা উচিত? আমি কি বলবো যে আমার ভালো লাগছে না তাই বাইরে যাবো না, জাস্ট ভালো লাগছে না? স্বাভাবিক ভাবে যে কেউ বিশ্বাস করবে না এ কথা। তাই বাধ্য হয়েই বলতে হত ফ্যামিলি প্রবলেম। এটা কে কি ব্যর্থতা বলা যায় নাকি সাফল্যেরও অত্যাচার হয়? যাই হোক সবশেষে নিজের পছন্দের জায়গায় পোস্ট ডক করার একটা সুযোগ পেয়ে ব্যর্থতার সাথে আপাতত ১-০ গোলে জিতে আছি।

      কিন্তু খেলা তো শেষ নয়। তৃনমূল বিজেপি দ্বন্দ্ব মিটে গেলেও আমার আর ব্যর্থতার এই খেলা তো আজীবন চলবে। কখনও ও জিতবে তো কখনও আমি। এই খেলাটা না থাকলেই হয়তো জীবনে আর মজা থাকবে না, উত্তেজনাও থাকবে না। তাই, “খেলা হবে”, খেলা হোক, পাওয়া না – পাওয়ার হিসেব চলতে থাকুক আজীবন। কিন্তু খেলার মাঠ ছেড়ে চলে যেতে আমি আপাতত রাজি নেই। বরং দাড়িপাল্লার এই ওঠা নামাটাকেই উপভোগ করে চলেছি প্রতিনিয়ত। শেষ পর্যন্ত, ব্যর্থতা তার ঘোড়ার আড়াই চালে কিস্তিমাত করে না কি আমিই ওস্তাদের মার দিয়ে শেষ রাতে ট্রফিটা জিতে নিই, এখন এটাই শুধু দেখার।

      Professor Answered on February 27, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.