আপনার প্রিয় ৫ টি বই কোনগুলো?

    আপনার প্রিয় ৫ টি বই কোনগুলো?

    Default Asked on March 17, 2024 in অনুসরণ.
    Add Comment
    1 Answer(s)

       

      কিছু বই আছে যা আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, আত্মাকে প্রসারিত করে, জীবনরস-সাহিত্যরসের সুরা পান কর‍তে দেয়। ‘আরণ্যক’ হল সে-রকম একটা বই, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বই। ‘আরণ্যক’ আমাকে প্রকৃতির অন্তরঙ্গ বন্ধু বানিয়ে দিয়েছে আজীবনের জন্য।

      জীবনে ‘আরণ্যক’ এর মতো ভয়ানক সুন্দর উপন্যাস আর পড়তে পারব না এই কষ্টে চোখের অশ্রু ফেলে শেষের পাতাটা পড়ে শেষ করেছিলাম

      লবটুলিয়া-ফুলকিয়া-নাঢ়া বইহার, মোহনপুরা রিসার্ভ ফরেস্ট, মহালিখারূপ পাহাড়, সরস্‌বতী হ্রদ এর বন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গভীর অরণ্য বনাঞ্চল, এর সাথে কুন্তা, ভানুমতী, মঞ্চী, মটুকনাথ, গিরধারীলাল, যুগলপ্রসাদ এর গভীর জীবনবোধ, সাথে বন্যজন্তুর অভয়ারণ্য এবং জ্যোৎস্না রাত, বাতাসে ফুলের সুভাস, শৈলশ্রেণী, নক্ষত্র-চাঁদ-সূর্যের লাল আভা, গাঢ় নীল আকাশ। সবমিলিয়ে ‘আরণ্যক’ আমায় মদের নেশার চেয়ে তীব্রতম নেশায় মাতাল করেছে।

      কী করে বনাঞ্চল থেকে পক্ষীকুল, জন্তু-জানোয়ার, সর্পকুল বিতাড়িত হয়ে, বনাঞ্চল, ঘন অরণ্য, পাহাড় বিনাশ হয়ে মানববসতি গড়ে ওঠে তার দৃশ্যলীলা যেন ৮৩ বছর আগের বই ‘আরণ্যক’ পড়ে একা নির্জন রুমে বসে জানালা দিয়ে দূর দিগন্তের সীমারেখা পর্যন্ত মনকে প্রসারিত করে দেখতে পেলাম। আর আমার চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে ‘আরণ্যক’ বইয়ের ‘কাচারি’ শব্দের উপর পড়ে পাতাটি ভিজে গেল।

      কীভাবে বস্তুবাদ-ভোগবাদের প্রত্যাশায়, উন্নতির লোভে মানুষ সৌন্দর্য ও আনন্দকে বিসর্জন দিয়েছে তা যেন বিশদ চোখে দেখলাম।

      আমার কষ্ট হচ্ছে লবটুলিয়া-ফুলকিয়া-নাঢ়া বইহার, মোহনপুরা রিসার্ভ ফরেস্ট, মহালিখারূপ পাহাড়, সরস্‌বতী হ্রদ এর বন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গভীর অরণ্য বনাঞ্চল এর জন্য।

      কুন্তা, ভানুমতী, মঞ্চী, মটুকনাথ, গিরধারীলাল, যুগলপ্রসাদ এর জন্য শ্রদ্ধা আর বেদনা অনুভূত হচ্ছে।

      ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে প্রকৃতিকে নিয়ে লেখকের বলা কিছু লাইনঃ

      “প্রকৃতি তার নিজের ভক্তদের যা দেন তা অতি অমূল্য দান। অনেকদিন প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্যার স্বভাব প্রকৃতিরানীর— প্রকৃতিকে যখন চাহিব, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোনো দিকে মন দিয়াছি যদি অভিমানিনী কিছুতেই তার অবগুন্ঠন খুলিবেন না।

      কিন্তু অনন্যমনা হইয়া প্রকৃতিকে লইয়া ডুবিয়া থাক, তার সর্ববিধ আনন্দের বর, সৌন্দর্যের বর, অপূর্ব শান্তির বর তোমার উপর অজস্রধারে এত বর্ষিত হইবে, তুমি দেখিয়া পাগল হইয়া উঠিবে, দিনরাত মোহিনী প্রকৃতিরানী তোমাকে শতরূপে মুগ্ধ করিবেন, নূতন দৃষ্টি জাগ্রত করিয়া তুলিবেন, মনের আয়ু বাড়াইয়া দিবেন, অমরলোকের আভাসে অমরত্বের প্রান্তে উপনীত করাইবেন।”

      আসলে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সকল সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবে। আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, পথের পাঁচালী, চাঁদের পাহাড়, ইছামতী, অপরাজিত ও অশনি সংকেত এই সাতটা বই আমার কাছে রংধনুর সাত রং। বাংলা সাহিত্যের সাত ধ্রুব তারা।


      আমরা যত কিছু চিন্তা করি না কেন, আমরা সারাজীবন একা একা থাকব, ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াব পুরো দুনিয়া। তবে দিনশেষে আমাদের চিন্তার জগত থেকে বের হয়ে বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে আমাদের পৃথিবীর নিয়মে জীবন যাপন করতে হয়। আমাদের একটা সংসার পাততে হয়। মেয়েদের নতুন জায়গা হয় তার স্বামীর কাছে। আর ছেলেদের প্রিয় জায়গা দখল করে নেয় তার প্রিয়তমা স্ত্রী। এভাবে চলতে থাকে পুতুল নাচের ইতিকথা মান-অভিমান, আশাভঙ্গ, হতাশা, দুঃখ-কষ্ট, সুখ-শান্তি, প্রতারণা, বিরহ-বেদনা নিয়ে।

      পুতুল নাচের ইতিকথায় শশীকে নিজের জায়গায় কল্পনা করতে কষ্ট হয় নি। যদিও শিক্ষিত যুবক গ্রাম্য ডাক্তার তবে অতি আবেগি এক ছেলে। নিজেকে সে যত জানতে চাই, ততই সে দুঃখী হতে থাকে। মাঝে মাঝে জগতকে তার বিস্বাদ লাগে আবার মাঝে মাঝে জগতকে স্বাদ লাগে।

      যাধব নিজেকে মহাপুরুষ প্রমাণ করতে যেয়ে নিজেই বিপদে পড়ে যায়। যার সর্বশেষ পরিণতি হয় নিজ ইচ্ছায় মৃত্যু। যাধবের মতো রহস্যময় মানুষের রহস্য সত্য-মিথ্যায় জড়ানো। যাধবের মিথ্যা চিরকালের জন্য সত্য হয়ে যায় তার মৃত্যুর মাধ্যমে। তবে যাধবের মৃত্যুর জন্য কী শশীকে দায়ী করা যায়? মনে হয়, আবার মনে হয় না।

      শশীর বন্ধু কুমুদ। কুমুদকে আসলে জগতের জন্য সহনশীল করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। সে সবকিছুতেই আনন্দ আনন্দ খুঁজে পায়। জগতের কোনো দুঃখ-কষ্ট তাকে স্পর্শ করতে পারে। প্রকৃত সুখী যাকে বলে। মতিকে কী দারুণভাবে বশ করিয়ে নিয়েছে তার জীবনের সাথে। সত্যি বলতে কুমুদকে আমার খুব ভালো লেগেছে।

      কুসুম, বিন্দু, নন্দ, জয়া, বনবিহারী, নন্দলাল, যামিনী কবিরাজ ও সেনদিদির কথা নিয়ে আমি আর কিছু লিখছি না। আশা করি পাঠকবৃন্দ আমার রিভিউটা পড়ার পর বইটা পড়ে নিবে(যারা এখনো পড়েনি)।


      জীবনে যখন একটু অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয়, যখন জীবন অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যেতে থাকে, যখন মনে হয় এই জীবন রেখে কোনো ফায়দা নেই, তখন এই বইটা শান্তি দেয়, অনুপ্রেরণা দেয় সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার।

      হাজারি ঠাকুর চরিত্রে ৩টি সদগুণ দেখা যায়; অধ্যবসায়, আশা এবং বিনয়। যে গুণ গুলো সাফল্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। তাছাড়া নিজের শক্তিশালী জায়গা খুঁজে বের করা; হাজারির ক্ষেত্রে ছিল রান্নায় ভাল দক্ষতা। যদিও হাজারির জীবনে তিনজন মেয়ে এসেছিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।

      আশা মানে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। সে অনিশ্চয়তার হাত ধরে অধ্যবসায় এর সহিত নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যেতে হয়। হাজারি ঠাকুরের তীব্র আশা তার আসল বয়স কমিয়ে দিয়েছিল এবং তার মনে-দেহে শক্তি-অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।

      তাছাড়া হাজারি ছিল কর্মঠ; সে বিশ্বাস করত; কর্ম ছাড়া সুখ নাই। সে তার জীবনে অভিজ্ঞতাকে চরম গুরুত্ব দিয়েছিল। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করে হোটেলের ব্যবসা শুরু করেছিল।

      গ্রামাঞ্চলের মানুষের অতিথিসেবা এখন প্রায় হারিয়ে গেছে; হাজারি যা পেয়েছিল নিঃস্বার্থভাবে। এখন গ্রামেও শহরের ছায়া, ভদ্রলোক সম্প্রদায়ের বাস; যারা একটু শিক্ষিত-ধনবান হয়ে অহংকারে পেটে ভুঁড়ি গজিয়ে নাক সিটকে পথ চলে। আহ্‌, আগের গ্রাম আর নেই।
      ……………..

      বর্তমান প্রজন্ম বই বলতে শুধু বুঝে সেলফ হেল্প আর মোটিভেশন। ফিকশন বই পড়াকে তারা সময়ের অপচয় মনে করে। তারা যদি বুঝত; ফিকশন গল্পের মাধ্যমে মনে যে অনুপ্রেরণা ঢুকিয়ে দেয়; একমাত্র তা মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

      আর ইউটিউব চ্যানেলগুলোতেও শুধু মোটিভেশনাল বইয়ের রিভিউ হয়। কারণ ইউটিউবাররা জানে ফিকশন বইয়ের রিভিউ করলে ভিডিও-তে ভিউ আসবে না। তাছাড়া বর্তমান ইউটিউবাররা মনে হয় ফিকশন বই পড়েই না।

      যাই হোক, যার যেমন ইচ্ছা সে তেমন বই পড়ুক। আমি গল্পের বইয়ের পোকা। জীবন উন্নত করার জন্য যা যা লাগে সব জানা। মোটিভেশনে আমার সুখ নেই। একমাত্র ফিকশনই আমায় সুখ-অনুপ্রেরণা দিতে পারে।


      ইন্দ্ৰিয় স্পৰ্শাতীত রোমান্টিক প্রেমের উপন্যাস সপ্তপদী। পার্থিব প্রেম অপার্থিব লোক আশ্ৰয় করে এক অতীন্দ্রিয় জগতে পৌঁছে দিয়েছে। তারাশঙ্করের উপন্যাস গুলো এত মাতাল করে কেন! আসলেই; Truth is stranger than fiction.

      ঈশ্বরের জন্য প্ৰিয়তম মানুষকে বর্জন করে। রিক্ততাই সাধারণভাবে মানবিক। পূর্ণতা অসাধারণ। অস্বাভাবিক না হলেও দুর্লভ। কোনো কিছুর আসাটাই স্বপ্ন—আর যাওয়াটা কঠোর বাস্তব। খুব কম জিনিসই কাছে আসে; কিন্তু যায় প্রায় সব কিছুই। পড়া শেষ করে আমি শুধু আপনমনে বলছি আর বলছি —

      “লেট মি লুক অ্যাট ইয়োর আইজ, লুক ইন মাই ফেস্‌ — ইউ আর দি কজ, ইউ আর দি কজ, মাই সোল!—পিস্ অ্যান্ড বি স্টিল, রিনা। লর্ড, আই ক্রাই আন্টু দি : মেক হেস্ট আন্টু মি।”…..


      ‘শেষের কবিতা’ পড়ে আমার মধ্যে মিশ্র অনুভূতির জন্ম হয়েছিল।

      “পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য অতি ভয়ংকর।”

      উপরের লাইনটা আঘাত করেছিল। তবে সব ভালোর মধ্যেও মন্দ কিছু থাকবেই। কিংবা কবিগুরু হয়তো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে কথাটা বলেছে। হয়তো এটা কবিগুরুর নিজের মনের কথা নয়।

      তবে অমিত আর লাবন্যকে আমার প্রাণে ধরেছে। সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য একটা উপন্যাস। আশা করি যারা এখনো পড়েননি তারা পড়ে নিবেন ধীরেসুস্থে।

      অমিত বলে, ফ্যাশানটা হল মুখোশ, স্টাইলটা হল মুখশ্রী।

      কী সুন্দর কথা! উপরের লাইনটা আজীবন প্রাণে বেঁধে রাখব।

      কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই; কিন্তু সে যেন ঘড়ায়-তোলা জল, প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি; সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।’

      উপরের এই লাইনটা নিয়ে যে আমি কত্ত অধিক সময় চিন্তা করেছি তা বলে বুঝাতে পারব না। অনেক ভেবেছিলাম অনেক। যদিও এখন মর্মোদ্ধার কর‍তে পেরেছি

      ‘শেষেরকবিতা’ উপন্যাসে ১৪ টার মতো কবিতা রয়েছে। সবগুলো কবিতা আমার প্রিয়।

      Professor Answered on March 17, 2024.
      Add Comment
    • RELATED QUESTIONS

    • POPULAR QUESTIONS

    • LATEST QUESTIONS

    • Your Answer

      By posting your answer, you agree to the privacy policy and terms of service.